মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ: দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর ধরে সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি নেই। ফলে ঝিমিয়ে পড়েছে জেলার ক্রীড়াঙ্গন। নিয়মিত কোনো খেলাধুলার আয়োজন নেই। ফুটবল বা ক্রিকেটে হচ্ছে না কোনো লিগ। এতে ক্রীড়াপ্রেমী মেধা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সিরাজগঞ্জ জেলার কিশোর-তরুণরা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে সবশেষ ক্রীড়া সংস্থার চার বছর মেয়াদি কমিটি হয়েছিল। যার মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের মার্চ মাসে। এরপর কর্তৃপক্ষ জোরালো কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় নতুন কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অ্যাডহক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে বলা হলেও প্রায় আড়াই বছরে সেটি করা হয়নি। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে জেলার ক্রীড়াঙ্গন।
জেলা ক্রীড়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী পরিষদে ১২টি পদ রয়েছে। যার পদাধিকার বলে সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক, সহ-সভাপতি পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। এছাড়া বাকি চারজন সহ-সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক, একজন অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক, দুজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও একজন কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হবেন।বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় (বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ টিম) আব্দুল্লাহ পারভেজ আমাদের চলনবিল বার্তা কে বলেন, বর্তমান সরকার খেলাধুলার জন্য অর্থ বরাদ্দসহ অবকাঠামোগত বেশ উন্নয়ন করেছে। তবে সিরাজগঞ্জে ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কোনো কমিটি না থাকায় প্রায় আড়াই বছরেও পেশাদার কোনো লিগ হয়নি। ফলে জেলায় নতুন প্রজন্মের কোনো ভালো খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। তাই দ্রুত সাবেক খেলোয়াড়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন প্রয়োজন।
সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সিনিয়র ক্রিকেটার মিল্টন নির্বাচিত কমিটির দাবি করে চলনবিল বার্তা কে বলেন, কমিটির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। জেলায় ক্রিকেট লিগ হচ্ছে না প্রায় তিন বছর হলো। তাহলে কীভাবে ভালো খেলোয়াড় তৈরি হবে? এ কারণে আমাদের স্বপ্ন অনেকটাই ভঙ্গ হয়েছে। তবে আমরা চাই নতুন প্রজন্মের স্বপ্ন আর এভাবে ভঙ্গ না হোক। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দ্রুত কমিটি না দিলে সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাব ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করবো।
জেলা ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ক্রিকেটার সাকিল হায়দার চলনবিল বার্তা কে বলেন, আমরা চাই নতুন নির্বাচিত কমিটির মাধ্যমে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় প্রাণ ফিরে আসুক। দীর্ঘ সময়ে ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত কমিটি না থাকায় নিয়মিত খেলাধুলা হচ্ছে না। ঘরোয়া লিগসহ প্রথম বিভাগ খেলা না হওয়ায় নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা লজ্জিত।
জেলা ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম চলনবিল বার্তা কে বলেন, কমিটি থাকাকালে শহীদ শামসুদ্দিন স্টেডিয়ামে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা হতো। ক্রীড়া সংস্থার উদ্যোগে খেলোয়াড়দের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু কমিটি না থাকায় সিরাজগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গন প্রাণহীন হয়ে পড়েছে।সিরাজগঞ্জ জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কামরুল হাসান হিল্টন চলনবিল বার্তা কে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরির জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনো বিকল্প নেই। তবে দীর্ঘদিন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি না থাকায় সিরাজগঞ্জের ক্রীড়াঙ্গন স্থবির হয়ে পড়েছে।
এদিকে, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক এমদাদ চলনবিল বার্তা কে বলেন, কিছু রাজনৈতিক নেতার সদিচ্ছার অভাবে আমরা নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন দিতে পারিনি।
তবে নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি হওয়াটা খুবই জরুরি। ক্রীড়া সংস্থা পরিচালনার জন্য যে কেউ আসুক, কিন্তু আমি চাই তারা একটি নির্বাচনী ফরম্যাটের মধ্য দিয়ে আসুক। এতে তাদের দায়বদ্ধতা কাজ করবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া কর্মকর্তা মাসুদ রানা চলনবিল বার্তা কে বলেন, কার্যনির্বাহী কমিটির দায়িত্ব ছিল একটি নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা। কিন্তু তারা তাদের নির্দিষ্ট মেয়াদে সেটা করতে পারেনি। পরবর্তীসময়ে অ্যাডহক কমিটিতে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক সভাপতি ও আমি ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এখন জেলা প্রশাসক স্যার একটু সদিচ্ছা দেখালেই দ্রুত কমিটি করা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান চলনবিল বার্তা কে বলেন, অ্যাডহক কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনেকদিন আগেই মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করেছি। তবে সেটার উত্তর এখনো পাইনি, উত্তর পেলে নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ইনশা আল্লাহ ।