মুন্নির শোকে ঘুম ছুটেছে সনাতনের

Spread the love

মুন্নির শোকে কেঁদেই চলেছেন ভদ্রেশ্বরের কুমোরপাড়ার বাসিন্দা সনাতন পাল। হবে নাই বা কেন! সবে তিন দিন হল মেয়েটা মা হয়েছে। অশক্ত শরীর। আর তাকেই কিনা মাঝরাতে তালা ভেঙে তুলে নিয়ে গেল চোরেরা! অবশ্য বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে গিয়েছে।

সিঙ্গুরের গর্জি থেকে বছর চারেক আগে মুন্নিকে এনেছিলেন সনাতন। মুন্নি তখন একরত্তি।  আর এখন সে রীতিমতো হৃষ্টপুষ্ট।

মুন্নি-সনাতনের অতি প্রিয় গরু।  বাছুর হওয়ার পর থেকেই উপচে পড়ছে বালতি ভরা দুধ। সেই দুধ বেচে দু’পয়সা আসবে ভেবে ঘুমের মধ্যেও চমকে উঠছিলেন সনাতনবাবু। হওয়ারই কথা। ৩০ বছর ধরে গো-পালন করেন তিনি। আর মা হতেই মুন্নিকে নিয়ে পালাল চোরেরা!

বৃহস্পতিবার ঘুম থেকে উঠে পালবাড়ির সদস্যরা টের পান, গোয়াল থেকে গায়েব মুন্নি। একটু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আশপাশের আরও দু’টি গোয়াল থেকে গরু চুরি গিয়েছে। একটি পালারা গ্রামের কৃষ্ণচন্দ্র পালের। অন্যটি রায়পাড়‌ার রঞ্জিত রায়ের।

আর গোয়াল থেকে এমন গরু চুরি চিন্তায় ফেলেছে এলাকার সব গোয়ালাদেরই। প্রবল ঠান্ডাতেও তাই অনেকেই রাত জেগে গোয়াল পাহারা দিচ্ছেন। পালারা উত্তরপাড়ার সঞ্জয় শূর বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার সারা রাত জানলা খুলে গোয়ালের দিকে চেয়ে বসেছিলাম। আজও তাই থাকব।’’ নয়নতারা ন‌স্কর নামে রায়পাড়ার এক মহিলার ক্ষোভ, ‘‘রাস্তায় পোস্ট আছে, তাতে আলো নেই। অন্ধকারে রাস্তায় বেরিয়ে পাহারা দেওয়াও কঠিন। দু’টো পয়সার জন্য গরু-ছাগল পালন করি। এ ভাবে চুরি হলে তো বিপদ।’’

গরু-হারা তিন পরিবারই ভদ্রেশ্বর থানায় গিয়ে লিখিত নালিশ জানিয়ে এসেছে। পুলিশ অবশ্য তিন দিনেও গরু-চোরের হদিস পায়নি। চন্দননগর কমিশনারেটের অফিসারদের দাবি, গরু উদ্ধার এবং চোর ধরার চেষ্টা চলছে। ভদ্রেশ্বর থানা অবশ্য দিন পাঁচেক আগে  দু’টি গরু উদ্ধার করেছে। পুলিশের দাবি, টহলদারির সময় সন্দেহবশত একটি গাড়ি আটকে দেখা যায়, সিট খুলে কায়দা করে দু’টি গরুকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ দেখে গাড়ি ফেলে পালায় পাচারকারীরা। থানায় গরু রাখার ব্যবস্থা নেই। উদ্ধার হওয়া গরু দু’টির তাই ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় একজনের গোয়ালে। কমিশনারেটের এক অফিসার বলেন, ‘‘বোঝাই যাচ্ছে গরুগুলি পাচার করা হচ্ছিল। তবে কোনও দাবিদার আসেননি। গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে পাচারকারী পর্যন্ত পৌছনোর চেষ্টা করছি আমরা।’’

গরু তবে কার? বঙ্কিমচন্দ্রের কমলাকান্ত বলেছিলেন, “দড়ি ছিঁড়িবার সময়ে কারও নয়।” সে যে কী ষোলো আনা সত্যি, হাড়ে-হাড়ে টের পাচ্ছেন প্রৌঢ় সনাতন। কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘‘ওকে মেয়ের মতোই মানুষ করেছি। মঙ্গলবার বাছুর হওয়ার পরই এমন হল!’’ মুন্নির বাছুরকে ঝিনুক-বাটিতে দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে সনাতনের স্বগতোক্তি, ‘‘মা-হারা বাচ্চাটাকে দেখভাল করব কী করে?’’

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD