চলনবিল বার্তবা, বর্ষ ০৮ সংখ্যা ০৩ শুক্রবার ৯ জুলাই ২০২৪ ২৫ শ্রাবণ ১৪৩১ ০৩ সফর ১৪৪৬ হিঃ

Spread the love

উপ-সম্পাদকীয় কলাম …

দেশবাসী যেন এক দুঃশাসনের কবল থেকে  আরেক দুঃশাসনের ছোবলে না পড়ে
আবদুর রাজ্জাক রাজু

আমাদের সৌভাগ্য-দুর্ভাগ্য যাই বলি না কেন, আমরা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ স্বচোখে দেখেছি। এছাড়া স্বাধীনতা উত্তর নানা চড়াই-উৎরাইও প্রত্যক্ষ করেছি। ঘনিষ্ট পর্যবেক্ষণের সুযোগ হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তী গত পাঁচ দশকের রাজনৈতিক পরিক্রমা, ধারা-প্রবাহ এবং পট পরিবর্তন। যার নিবিড় ও গভীর প্রত্যক্ষদর্শী তথা সাক্ষী এদেশের আপামর জনসাধারণ।মনে রাখতে হবে, এদেশের মানুষ প্রকৃতিগতভাবে রাজনীতি সচেতন ও প্রতিবাদী, বিপ্লবী ধরনের।ঐতিহাসিকভাবে তারা অন্যায়-অবিচারের চির বিরোধী। শোষন-বঞ্চনাকে তারা বেশী দিন মেনে নেয় না, সহ্য করে না। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে তথা রক্ত দিতে তারা ভয় পায় না। ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শাসনকালের বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে সেই চিত্র সুস্পষ্ট ধরা পড়ে আজকের মতোই।
অথচ আমরা দু:খের সাথে দেখতে পেলাম, যে দল স্বাধীনতা সংগ্রামে গৌরবোজ্জল নেতৃত্ব দিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের উচ্চকণ্ঠ সমর্থক, একই চেতনার ধারণ এবং লালনে সদাসর্বদা ‘বাণী’ পাঠ অব্যাহত রেখেছে, তারাই দেশ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই কিভাবে ভুল করেছে।অথচ সে ভুল স্বীকারও করেনি কিংবা সংশোধনের কার্যকর পথেও হাটেনি। বাস্তবে তৎকালীন বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতার আসনে বসে হঠকরিতা, দ্বিচারিতা, অঙ্গীকার ভঙ্গ, স্বজনতোষণ, দলবাজি, পরিবারতন্ত্র ও স্বার্থপরতায় অন্ধের মতো নিমগ্ন হয়েছে। ভুলে গেছে বা উপেক্ষা করে গেছে স্বাধীনতার মূল চার মন্ত্র: গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। শুধু তাই নয়,স্বাধীনতার মূল চেতনা: সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথায় তারা মুখে সোচ্চার থাকলেও মনে প্রাণে উপেক্ষা করেছে এবং প্রয়োগে বাস্তবায়নে প্রতারনার ছাপ রেখেছে। অবশেষে গত প্রায় ১৫ বছরে একটানা একদলীয় একতরফা কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করে ভোট, নির্বাচন ও গণতন্ত্র বিসর্জন বা নির্বাসনে দিয়ে একটা ফ্যাসিবাদী রামরাজত্বের সরকার ও জনতুষ্টিবাদি শাসন কায়েম করে শেষমেষ মানুষের অধিকার ও বাক স্বাধীনতা হরণের নানা অগণতান্ত্রিক তথা স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিতে থাকে। এই অপশাসন তথা দুঃশাসনের ধারাবাহিকতায় ছাত্রদের কোটা বিরোধী একটা নীরিহ আন্দোলনে দমন,পীড়ন, জুলুম-নির্যাতনের চরম স্টিমরোলার চালিয়ে এক গণহত্যা তথা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে ছাত্র-জনতাকে একটি গণ বিপ্লবে রক্ত স্নাত আন্দোলনে ঠেলে দিয়েছে। তারই জের ধরে সবশেষে জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, দেশ থেকে অসম্মানজনক পলায়ন এসব তার জীবনে মৃত্যুর চেয়েও বড় লজ্জা ও কলঙ্কের কালি লেপন করেছে। ইতিহাসের এই অপমানের কালিমা তাকে আজীবন বয়ে বেড়াতে ও জীবনান্তেও সম্ভবত: প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। কোন দেশ প্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক যার মধ্যে ন্যূনতম মানবতা বোধ রয়েছে তার কাছে এই অমানবিক, নির্মম, নিষ্ঠুর মানংষ হত্যার দৃশ্যপট অবতারণার কল্পনাও করা যায় না। আর স্বাধীনতা পরবর্তী সময় হতে অদ্যাবধি জাতি অত্যন্ত বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছে, আওয়ামীলীগের শীর্ষ, মধ্যম ও নিম্ন কোন সারির সিংহভাগ নেতা-কর্মীরাই বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত আদর্শ ও গুণাবলী অনুসরণ না করে বরং তার পরিপন্থী বৈশিষ্ট্য বহন করে চলেছে যা জাতিকে মর্মাহত করেছে।দলটি দেশ পরিচালনায় গণতন্ত্র ও আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে অর্থবহ কাে তুলতে পারেনি। তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনী বই বিক্রির উপর গুরুত্ব দিয়েছে, কিন্তু শুধু বুলি আওড়ানো ছাড়া নিজেদের জীবনে তার চর্চা ,অনুসরণ ও প্রতিফলন ঘটাতে বিরত থেকেছে, ব্যর্থ হয়েছে। তাদের কথায় ও কাজে অনেক ফারাক, পার্থক্য, ব্যবধান এবং নীতি ও চরিত্রে বহু ব্যত্যয় দেখা গিয়েছিল। এই মিথ্যাচার এবং পরিণামে আজকে এই দুনিয়া জোড়া দুর্নাম সহ মর্মান্তিক অধঃপতন জাতির জন্য চরম লজ্জাজনক। যা সমকালীন আধুনিক বিশ্বে তুলনাহীন।
অপরদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র শাসনকাল ও তাদের রাজনৈতিক আমল-আখলাক পর্যালোচনা বা মূল্যায়ন করলে আওয়ামী লীগের চেয়ে কম মসিমলিন বা মন্দ মনে হবে না। ক্ষমতার মসনদে বসে বিভিন্ন সময়ে তারা গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, সাম্য-সমতাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছে। দুর্নীতি, অবক্ষয়, স্বজনপ্রীতি, পরিবারতন্ত্র ও বিভাজনের রাজনীতি বহাল রেখে সাম্প্রদায়িকতাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে অবশেষে মপল পর্যায়ে উগ্রতাকে উস্কে দিয়েছে। তারাও দলের ভেতরে-বাইরে ও রাষ্ট্র কাঠামোতে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি চালু তথা অনুশীলন না করে আওয়ামী লীগের মতোই সবকিছু রাজনৈতিকীকরণ, দলীয়করণ এবং নির্বাহী বিভাগ ও বিচার ব্যবস্থাকে কুক্ষিগত করে হীন উদ্দেশ্য হাসিল ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছে। বিএনপিও জিয়াউর রহমানের সততার ও নৈতিকতার বিশাল সুখ্যাতির মডেল ধরে রাখতে পারেনি। তাই দেশের মানুষের গড় দৃষ্টিকোন বা মন্তব্য হল, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে গুণগত তফাত বা পার্থক্য সামান্যই। দ্বন্দ্বটা আসলে ক্ষমতা ও নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে। প্রকৃতপক্ষে দেশ ও জনগণের কথা তারা কেউই ভাবেনি যেভাবে ভাবার কথা ছিল মুক্তিযুদ্ধ,স্বাধীনতা ও সংবিধানের আলোকে বা স্পিরিটে। সেজন্যই দেশবাসী তাদের একই মুদ্রার “এপিঠ আর ওপিঠ” হিসেবে মনে করে, আখ্যায়িত করে থাকে। দুই দলই স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংকীর্ণ স্বার্থে ও নিজস্ব ইস্যুতে ব্যবহার করেছে, সে মহান ইতিহাস নিয়ে টানাটানি ও বিতর্কিত করে ফেলেছে। পক্ষান্তরে জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ স্বাধীনতাকে কখনো হৃদয়ে-অন্তরে স্থান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভুলের জন্য ক্ষমা চাইতে পারেনি আজো।ধর্মের উদার, প্রগতিশীল, মুক্ত ও বৈজ্ঞানিক ধারা-প্রবাহকে ধারণ ও উৎকর্ষ করতে পারেনি। আধুনিক জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক সমাজ ব্যবস্থার সাথে তারা ইতিবাচক তাল মেলাতেও পারেনি।
তাই চলমান ছাত্র-জনতার বিজয়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টা হল, অন্তবর্তী সময়ের সরকারের পর আবার ‘ভেজাল’ অথবা তথাকথিত নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা যেন এক দুঃশাসন বা ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে আর একটা দুঃশাসনের কবলে না পড়ি যা বারবার ঘটে চলেছে। কারণ দেশের বড় দুটি দলেরই দেশ শাসনের তথা রাষ্ট্র পরিচালনার অতীত ইতিহাস আদৌসুখকর নয়, বরং কলঙ্কময়। তাদের মধ্যে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐকমত্য ও সংহতি দেখা যায় নি। জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নেই বললেই চলে। বরং পারস্পরিক হিংসা-প্রতিহিংসা, অনাস্থা-অবিশ্বাস, বিভক্তি-বিভাজন,আক্রমন-প্রতিআক্রমন প্রবল তথা পর্বত সমান। তাদের জিঘাংসা ও সাংঘর্ষিক অবস্থান আকাশ-পাতালের ব্যবধানের মতো সীমাহীন। সেই ব্যবধান কমিয়ে আগামীতে যদি বড় দুই দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সবাইকে নিয়ে একটি সর্বজনগ্রাহ্য ও বিশ্ব নন্দিত নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে সত্যকার সুশাসন তথা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না পায় তাহলে আমাদের অবস্থা হবে যথা পূর্বং তথা পরং। অর্থাৎ এক রাহুর করাল গ্রাস থেকে আর এক রাহুর করাল গ্রাসে পড়া। অতীতেও এ দেশের মানুষ এই বড় দুই দলের শাঁখের কড়াতের বা যাঁতা কলের মাঝে ঘুরেফিরে পিষ্ট-নিস্পেষিত হয়েছে। আগামীতেও হতে থাকবে। সবশেষে মনে রাখতে হবে, আমাদের তরুণ নবীন ছাত্র যুব সমাজ যে সাম্প্রতিক প্রলয়ংকারী বিপ্লব বা গণঅভ্যূত্থান ঘটাতে সমর্থ হয়েছে, যা রাজনৈতিক দলগুলো পারেনি দীর্ঘ সংগ্রাম-আন্দোলন করেও তাদের মূল আকাঙ্খার সার নির্যাস হচ্ছে, “রাষ্ট্র সংস্কার বা রাষ্ট্র মেরামত” করা। সামান্য এই বাক্যের মধ্যেই বাংলাদেশের গণমানুষের সার্বিক আশা-প্রত্যাশা, ভবিষ্যত মঙ্গল, কল্যাণ, উন্নতি ও সমৃদ্ধি নিহিত আছে। এই কঠিন ও পবিত্র কাজটি করার সার্বিক দায়দায়িত্ব এখন বর্তাবে আমাদের সুশীল, নাগরিক সমাজ ও সকল রাজনৈতিক দলের ওপর। এক্ষেত্রে পূর্বের সব বৈরিতা ও বিদ্বেষ-বিভক্তি ভুলে অন্যান্য সকল দলমতের সাথে সহমতের ভিত্তিতে সমন্বয় করে কেবলমাত্র দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে শুধুমাত্র দেশ ও জনগণের স্বার্থে সর্বাপেক্ষা সহনশীলতা, শ্রদ্ধা, পারস্পারিক সহযোগিতা ও মৈত্রী বন্ধনের ঐতিহাসিক নজির স্থাপনে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে আমাদের দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। বর্তমান ঘুনেধরা দুর্বৃত্তায়িক রাজনীতি ও দুর্নীতির আমূল পরিবর্তন হতে হবে।মনে হয় এর কোন বিকল্প আপাতত: চিন্তা করা যায় না। আর তানাহলে এই যে আমরা ছাত্র জনতার বিজয়-বিপ্লবকে বলছি, “২০২৪এ এটা যেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ, আর এক অন্যরকম স্বাধীনতা, আর একটি বিজয় দিবস” সেটা স্বার্থকতার মুখ দেখতে পাবে না।তা হবে অত্যন্ত হতাশা ও বেদনার। আর তেমনটি হলে জাতির ভাগ্য যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে যাবে এবং ফলশ্রুতিতে এদেশে শান্তি-স্বস্তি,উন্নতি, প্রগতি , সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অধরাই থেকে যাবে।

চলনবিলের শাঁখারী ব্যবসায়ীদের সরকারী সহায়তা প্রয়োজন
এম.আতিকুল ইসলাম বুলবুল

শঙ্খ হচ্ছে বড় আকৃতির সামুদ্রিক শামুক। আবার শামুকের অনেক নামের মধ্যেশাঁখ, শাখ, কম্বু নামেও এর পরিচিতি আছে। সামুদ্রিক শামুক বা শঙ্খের খোল দিয়ে নকশা করে চুড়ি, ব্রেসলেট, খোঁপার কাটা, আংটি, কানের টপ বোতামসহ নানা অলঙ্কার, বাদ্যযন্ত্র, প্রভৃতি তৈরি করা যায়। আবার শাঁখারীদের কাছে পাওয়া যায় এবং বিক্রি হয় এমন সামুদ্রিক শঙ্খের হরেক রকম নামও রয়েছে। যেমন- পিটকারি, রামেশ্বরী,জাটকী,পাটি, জাহাজী প্রভৃতি।ধমীয় অনেক কাজে শঙ্খের বিবিধ ব্যবহার জড়িত আছে প্রাচীণকাল থেকে আজ অব্দি। বিশেষ করে হিন্দু সধবা নারীদের হাতে শঙ্খের তৈরি “শাঁখা” শোভা পায়।এ ছাড়া বিভিন্ন পূঁজা-পার্বণ এবং প্রত্যাহিক শুভ কাজে কাঁটা শঙ্খের বাঁশি বাঁজানো হয়। আবার হিন্দু ধর্মে শঙ্খের ধ্বনি পবিত্র জ্ঞানে মেনে চলাও হয়। পূঁজা অর্চনা, ছেলে সন্তানের জন্ম, অন্নপ্রাশন, শ্মশানযাত্রারমতো সময় কালে শঙ্খধ্বনি দেবার ধমীয় রীতি আছে। আবার কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে পঞ্চপান্ডব ও শ্রীকৃষ্ণের ঠোঁটে শঙ্খধ্বনি ধ্বনিত হয়েছিল। তাছাড়া দেবী দুর্গাপ্রতিমার হাতেও শঙ্খ দেখা যায়।
সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে শঙ্খ খ্যাতি, উন্নতি, দীর্ঘায়ু এবং উর্বরতার প্রতিক হিসেবে পরিগনিত হয়। তাই ধমীয় রীতি এবং সৌন্দর্য প্রীতিসহ নানা কারণে উপমহাদেশের সনাতন ধর্মালম্বী বাঙালী নারীদের কাছে শত শত বছর ধরে শঙ্খের অলংকারচির সঙ্গী হিসেবে রয়ে গেছে।তারই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন কাল থেকে থেকে শুরু করে একুশ শতকের বর্তমান প্রজন্মেরসনাতন ধর্মের নারীদের কাছেও শাঁখা-পলা ছাড়া বিয়ে পূর্ণতা পায়না এটাই নিয়ম ও সত্য। যা তাঁরা মনে প্রাণে ধারণও করেন।
কিন্তু প্রশ্ন জাগে এই শঙ্খের শাঁখা হাতে পড়ার রীতি এলো কোথা থেকে? এর পেছনে আছে বিচিত্র কিছু গল্প। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের মতে, প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মহাভারতের সময়কাল থেকে নারীদের হাতে পড়ার শাঁখার ব্যবহার শুরু হয়। সেই সময়ে শঙ্খাসুর নামে এক অসুরের প্রতাপ প্রভাবে ত্রিভুবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে। এমনকি স্বর্গের দেবতারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শরণাপন্ন হন আরেক দেবতা বিষ্ণুর নিকট। বিষ্ণুদেব তখন ওই অসুরকে বধ করে দেবতাদের রক্ষা করেন। এরপর তার ধর্মপরায়ণ স্ত্রী তুলসী নারায়ণের কাছে স্বামীকে ফেরত পাওয়ার জন্য ধ্যান শুরু করেন। তুলসীর প্রার্থনায় নারায়ণ সারা দিলেও শঙ্খাসুরকে ফিরিয়ে দেওয়ার মনোবাঞ্ছা পূরণ করতে পারেন না। তখন নারায়ণ শঙ্খাসুরের প্রতিক হিসেবে তারই হাড় দিয়ে এই শাঁখা তৈরি করেন এবং তুলসীকে দেন। সেই থেকেই হিন্দু বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গল কামনায় এটি হাতে পড়া শুরু করেন। এ ছাড়াও আরো নানা মত ও গল্প আছে সনাতন ধর্মালম্বী বিবাহিত নারীদের স্বামীর মঙ্গল কামনায় হাতে পড়া শঙ্খে থেকে তৈরি শাঁখা নিয়ে।
শত বছর ধরে এই শাঁখা তৈরীর জন্যই পাবনা জেলার চলনবিলস্থচাটমোহর উপজেলার বর্তমানে হান্ডিয়াল থানার অন্তর্গত ডেফলচড়া নামের একটি গ্রাম বা জনপদ রয়েছে। আর এ গ্রামেই রয়েছে শাঁখারী পাড়া নামের একটি পাড়ার নামকরণও। যা আজও বিদ্যমান। হান্ডিয়াল মুলত: প্রাচীণ এক জনপদ। রাধারমণ সাহার লেখা ‘পাবনা জেলার ইতিহাস’ ও নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার আব্দুল হামিদ সাহেবএর লিখিত ‘চলনবিলের ইতিকথা’ গ্রন্থ দুটি থেকে জানা যায়, চলনবিলের প্রাচীন জনপথের মধ্যে হান্ডিয়াল একটি। এখানে পাইকপাড়ায় শাহ মখদুম বা বুড়া পীরে মাজার, সমাজ নামের গ্রামে শাহ মখলেছুর রহমানের মাজার অবস্থিত। পাশাপাশি ভারতের পুড়ির আদলে তৈরী করা জগনার্থ দেবের দেব মন্দির আছে। এ ছাড়া শিতলাই জমিদার বাড়ি, দো-চালা শেঠের বাংলো বা বাংলা মন্দির, ইংরেজ কুঠি বাড়ি বিদ্যমান। আর ইংরেজ শাসন আমলেও হান্ডিয়ালের নৌ-বন্দরও বিখ্যাত ছিল। পাশাপাশিইংরেজ কুঠিবাড়ি থেকে তৎকালিন সময়ে এলাকার পাট, নীলসহ নানা পণ্য রফতানি হতো অন্যত্র।আর বর্তমানে হান্ডিয়াল চাটমোহর উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এখানে আরো আছে পূর্ণাঙ্গ একটি পুলিশ ষ্টেশন বা থানা, স্কুল কলেজসহ শতবর্ষী হাট-বাজারসহ অনেক কিছু।সেই প্রাচীন জনপদের ডেফলচড়া নামের গ্রামটিতে ৩৪ টি পরিবার তাদের পৈত্রিক বা বাপ- দাদার রেখে যাওয়া শাঁখা তৈরীর এ পেশা এখনও ধরে রেখেছেন অনেকটা মায়া মমতার বন্ধনের মতই পেশার মর্যাদা দিয়েই।
কথা হয় ডেফলচড়ার শাঁখারী পাড়ার শাঁখারী প্রায় ষাট ছুই ছুই বয়সের মধুসূদন সেনের সাথে। তিনি জানান, শঙ্খ থেকে শাঁখা তৈরীর এ কাজ তার বাবা মৃত অনিল কান্ত সেন, বাবার বাবা রাখাল চন্দ্র সেনও করেছেন। এছাড়া এ পাড়ার শাঁখারী প্রয়াত বিরোজানার্থ, কালিপদ ধরসহ অনেক নাম ডাকের শাঁখারী ছিলেন। তাই একে শত বছরের পেশা বা ব্যবসা বলা যাবেনা। যা কয়েক শত বছরের একটি ঐতিহ্যবাহি শাঁখা তৈরী এবং ব্যবসার প্রসিদ্ধ নাম ডেফলচড়া শাঁখারী পাড়া এমনটিই প্রয়াত বাবা-দাদারা আমাদের জানিয়ে গেছেন গল্পের ছলে। এ কারণে আজ অব্দি ডেফল চড়ার শাঁখারী পাড়ার শাঁখারীরা নানা সিমাবদ্ধতার পরও এ পেশা আঁকড়ে ধরে দিনাতিপাত করছেন। যা আমাদের কাছে গর্বেরও বটে। কথাগুলো এক দমে বলার পর মধুসদূন সেন জানান, তার স্ত্রী নিলাবতী সেন এমন কি পাবনার চাটমোহর উপজেলার একটি কলেজে ¯œাাতকে পড়া ছেলে মনজিৎ সেনও লেখা পাড়ার পাশাপাশি শাঁখা তৈরীতে তাকে সহযোগিতা দিচ্ছেন। আর বাবা হিসেবে মধুসূদন সেন জানান, শাঁখার নকশা করতে তার ছেলে মনজিৎ সেন ভাল নঁকশাকারক। আর বলতে গেলে নঁকশার কাজে আমার ছেলে ‘বহুত আচ্ছা’ বলে এক গাল হাঁসি ঁেহসে দেন। আর চলতে চলতে ঢুকে পড়ি ডেফলচড়ার শাঁখারী পাড়ার শাাঁখারী বিকাশ ধরের বাড়িতে। সেখানে বিকাশ ধর ও তার স্ত্রী সীমাধর আপন মনে মিলেমিশে শাঁখা তৈরীর কাজ করছেন।আর এ কাজ তার বাবা বিনয় চন্দ্র ধরও করেছেন বলে জানান। শাঁখা তৈরীর খুঁটিনাটি জানতে গিয়ে বিকাশ ধরের স্ত্রী সীমাধর জানান, তারা বাজার দর জেনে অপেক্ষাকৃত কম দামে পাওয়া যায় এমন শঙ্খের বাজার যেমন- ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীর জামনগর খেকে প্রথমে শঙ্খ কিনে আনেন। আর ১০০ টাকা থেকে ১৫ এমনকি ১৮ হাজার টাকাও রয়েছে একেকটি শঙ্খের দাম। তা বাড়িতে নিয়ে এসে ড্রিল মেশিনে কেটে ছেটে র‌্যাত, কর্ণা, খুটনি মেশিনে শাঁখার আকৃতি এনে নিখুঁতভাবে নঁকশা করে পালিশ দিয়ে শাঁখা তৈরী করি। আর প্রতিদিন একজন শাঁখারী বায়না বা নঁকশা ধরনে শাাঁখায় বেশি নঁকশার কাজ থাকলে ৩ থেকে ৪ জোড়া আর নঁকশা ছাড়া ২০-২৫ টি শাঁখা তৈরী করতে পারেন। শাঁখার আবার নানা নামও আছে। যেমন বাউটি, চূড়, ববি, মানতাসা ইত্যাদি। তিনি আরো জানান, এখানে যে কেবল শাঁখাই তৈরী হয় এমন না। শাঁখা ছাড়াও ব্রেসলেট, কানের দুল, আংটিসহ অনেক বিছুই স্বল্প পরিমাণ তৈরী হয়। তবে তাদের মূল কাজ নানা ডিজাইনের শাঁখা তৈরী করা। তাদের তৈরী বাউটির জোড়া ৬০০ থেকে ৭০০, চূড় ২০০০ থেকে ৫০০০, ববি ৫০০০ থেকে ৭০০০, মানতাসা ৭০০০ থেকে ১০,০০০, ব্রেসলেট ৫০০ খেকে ৬০০ টাকায়ও বিক্রি হয়। তবে যে যেমন বায়না করেন তার চাহিদার উপর নির্ভর করে শাঁখার দাম কমে ও বাড়ে। আর স্বাভাবিক ভাবে এ অঞ্চলের হিন্দু নারীরা ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই এক জোড়া শাঁখা কিনে থাকেন বেশি।ডেফল চড়ার শাঁখারী পাড়ার শাঁখার মোটামুটি ভাল ব্যবসা হয় বাংলা সনের অগ্রায়ন থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত। কারণ তিথি মেনে এ মাস গুলোতে সনাতন ধর্মালম্বীদের ছেলে- মেয়েদের বিয়ে বেশি হয়।আবার গ্রীস্মকালে চলনবিল এলাকায় বৈশাখী মেলায় এবং গ্রামে গ্রামে ফেরি করে শাাঁখা বিক্রি হয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক। আর ডেফল চড়ার শাঁখারী পাড়ার শাঁখা বিক্রি হয় পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুরসহ আশেপাশের এলাকায়। আর শাঁখা তৈরীতে বাড়ির নারী পুরুষ মিলে মিশে কাজ করা এবং দক্ষ হলেও বিক্রির কাজটি বাড়ির পুরুষ সদস্যরাই করে থাকেন।আর শাঁখা তৈরীর আয়েই প্রাচীন জনপদ হান্ডিয়ালের ডেফলচড়া নামের গ্রামটির ৩৪টি শাঁখারী পরিবারের সদস্যদের ভড়ণ-পোষণ চলে সারা বছর।তবে কথা প্রসঙ্গে শাঁখারী বিকাশ ধর জানান, হান্ডিয়ালের ডেফলচড়ার শাঁখারী পাড়ার শাঁখার নাম-ডাক আগেও ছিলো এখনও আছে। আর এ পাড়ার বাড়ি স্থানান্তর ছাড়া তেমন কোন শাঁখারী এ পেশা ছাড়েনি। বরং বংশ পরম্পরায় শাঁখারী পাড়ার ৩৪টি পরিবার আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বাপ-দাদার চিরচেনা এ পেশা আঁকড়ে ধরে দিনাতিপাত করছেন। তাতেই বা কম কিসে ? তবে এ ব্যবসায় মুলধন বা পুঁজি এখন অনেক বেশি লাগে। যেমন ১০ থেকে ১৫ বছর পূর্বে শাাঁখার ব্যবসায় ৫০ হাজার টাকায় যা হতো তা এখন ১ লাখ টাকায়ও হয়না। আর প্রযুক্তির উন্নতিতে শহরে আধুনিক মেশিনে তৈরী মসৃণ বাহারী নঁকশার শাঁখার বাজার দখল করার প্রতিযোগিতা কিছুটা হলেও হান্ডিয়ালের ডেফলচড়া নামের গ্রমটির শাঁখারী পাড়ার ৩৪ টি পরিবারের শাঁখা তৈরীর কাজে নিয়োজিতদের কপালে ভবিষ্যতে এ পেশার কি হবে! তা নিয়ে ভাবনার ভাঁজ পড়ছে। যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তারা আশা করেন, সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে এই পেশা টিকিয়ে রাখা ও আরো সম্প্রসারিত করা সম্ভব হবে।

লেখকঃ এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল, প্রভাষক ও প্রাবন্ধিক।

সংসদ ভেঙে দিলেন রাষ্ট্রপতি 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান , বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে।
নির্বাহী আদেশে এই সংসদ বিলুপ্ত করা হলো। এর আগে বেলা তিনটার মধ্যে সংসদ ভেঙে দেওয়ার আলটিমেটাম দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁর টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে গতকাল বিকেলে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সূত্র ঃ প্রথম আলো

সর্বোচ্চ ১৫ জন শপথ নিতে পারেন: সেনাপ্রধান 

ডেস্ক রিপোর্টঃ সেনাবাহিনী প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের শপথ বৃহস্পতিবার হতে পারে।গত বুধবার সেনা সদরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সময় কম হলেও বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য চেষ্টা চলছে।তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামীকাল দেশে আসবেন। আমি তাকে বিমানবন্দরে রিসিভ করবো। আশা কারি আগামীকাল রাত ৮টায় অন্তবর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠিত হবে।’
সেনাবাহিনীর প্রধান বলেন, অন্তবর্তী সরকারে দায়িত্ব পালন করতে সর্বোচ্চ ১৫ জন শপথ নিতে পারেন। তবে এই সংখ্যা ২-১ জন বাড়তে পারে।শিগগির লুটতরাজ বন্ধ হয়ে দেশের পরিস্থিতি অবাধ সহজ পরিস্থিতিতে ফেরত চলে আসবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে। সবাই মিলে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ সক্ষম হবে ঘুরে দাঁড়াতে। তিন বাহিনী জনগণের সাথে আছে। সুন্দর ভবিষ্যতে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।সেনা প্রধান গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, গুজব চলছে, গুজবে কান দেবেন না। গুজব রটাবেন না। নিবৃত্ত থাকলে ভালো হবে। সূত্রঃ সংবাদ।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের দৃষ্টিতে
ড. ইউনূসের প্রথম দুই কাজ

ডেস্ক রিপোর্টঃ গণঅভ্যূত্থানে বাংলাদেশের স্বৈরাচারী নেতা শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর অন্তর্বতী সরকারের প্রধান হচ্ছেন ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে তার তাৎক্ষণিক কাজ হবে দু’টি। প্রথমত, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটিতে তাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃস্থাপন করতে হবে। দ্বিতীয়ত অন্তর্বতী সরকারের ভূমিকা কি হবে তা তাকে নির্ধারণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সহিংসতার আতঙ্ক দেখা দেয়া ও প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের সুপারিশে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের মূল সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সুপারিশে এই এই ঘোষণা এলো। মঙ্গলবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপের সঙ্গে অন্যদের উপস্থিতিতে যে মিটিং হয় তাতে উপস্থিত ছিলেন নাহিদ। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়েছে। এ অবস্থায় অস্থায়ী সরকারের নেতৃত্বে আসবেন ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস। সূত্রঃ মানবজমিন।

দ্রুত নির্বাচনের দাবি তারেক রহমানের

ডেস্ক রিপোর্টঃ ‘দ্রুততম সমযয়র মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে,’ এমন দাবি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত বুধবার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এই দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, উন্মুক্ত হয়েছে গণতন্ত্রের দ্বার। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিত করুন। ধর্ম, বর্ণের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে। মুলমান, হিন্দু ,খ্রিস্টান বৌদ্ধ যাই হোক না কেন তার নিরাপত্তায় ঢাল হয়ে দাঁড়ান। আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। সূত্রঃ নয়া দিগন্ত।

আমরা শান্তি চাই : খালেদা জিয়া

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আমরা ধ্বংস চাই না, শান্তি চাই। ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গত বুধবার (৭ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। রেকর্ডকৃত ভিডিও প্রচারে তিনি এ বক্তব্য রাখেন।
এ বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যোগ্যতা, মেধা, জ্ঞানভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। তবেই হবে শোষণহীন বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। আসুন আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, শান্তি আর জ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সূত্রঃ আমাদের সময়।

 

 

আওয়ামী লীগকে শেষ করা সম্ভব না: জয় 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা আওয়ামী লীগ ছাড়া সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন দলটির সভাপতি, সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কোথায় যাবে না, শেষ হয়ে থাকবে না।’গত বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।
২ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডের ভিডিও বার্তায় সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সারা দেশে ভাঙচুর হচ্ছে, লুটপাট হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন গণতান্ত্রিক বড় দল। আওয়ামী লীগ মরে যায়নি। আওয়ামী লীগ দেশকে স্বাধীন করেছে, আওয়ামী লীগ শেষ করা সম্ভব নয়।তিনি বলেন, আমি বলেছিলাম আমার পরিবার আর রাজনীতি করবে না। তবে, আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে হামলা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে আমরা হাল ছেড়ে দিতে পারি না।দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জয় বলেন, আপনারা সাহস নিয়ে দাঁড়ান। আপনারা একা না। আমরা আছি। বঙ্গবন্ধুর পরিবার কোথাও যায়নি। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি। সূত্রঃ সমকাল।

সহিংসতা নয়,সবাই শান্ত থাকুন ঃ ড. ইউনূস 

ডেস্ক রিপোর্টঃ নিজেদের কোনো ভুলের কারণে বিজয় যাতে হাতছাড়া না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল দেশবাসীর উদ্দেশ্যে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। ড. ইউনূসের লিখিত বক্তব্যটি ইউনূস সেন্টার থেকে প্রচার করা হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমি সাহসী ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই, যাঁরা আমাদের দ্বিতীয় বিজয় দিবসকে বাস্তব রূপ দিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিনন্দন জানাই দেশের আপামর জনসাধারণকে, যাঁরা ছাত্রদের এই আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন। আসুন, আমরা আমাদের এ নতুন বিজয়ের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করি। আমাদের কোনো প্রকার ভুলের কারণে এই বিজয় যেন হাতছাড়া হয়ে না যায়। আমি সবাইকে বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্ত থাকতে, সব ধরনের সহিংসতা এবং স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বিনষ্ট করা থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাচ্ছি এবং ছাত্র ও দলমতনির্বিশেষে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমাদের প্রিয় এই সুন্দর ও বিপুল সম্ভাবনাপূর্ণ দেশটিকে আমাদের নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রক্ষা করা এবং একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এখন আমাদের প্রধান কাজ। একটি নতুন পৃথিবী বিনির্মাণে আমাদের তরুণরা প্রস্তুত। অকারণ সহিংসতা করে এই সুযোগ আমরা হারাতে পারি না। সহিংসতা আমাদের সবারই শত্রু।অনুগ্রহ করে শত্রু সৃষ্টি করবেন না। সবাই শান্ত থাকুন এবং দেশ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসুন।’ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ড. ইউনূস বলেন, অনুগ্রহ করে নিজে শান্ত থাকুন এবং আপনার আশপাশের সবাইকে শান্ত থাকতে সহায়তা করুন।’ সূত্রঃ মানবজমিন।

তাড়াশে দীর্ঘ ১৬ বছর পর জামায়াতের আনন্দ মিছিল 

তাড়াশ প্রতিনিধি ঃ দীর্ঘ ১৬ বছর পর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা জামায়াত ইসলামী শোকরানা ও আনন্দ মিছিল করেছে। শেখ হাসিন সরকারের পতনের পর গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে দলটির নেতাকর্মীরা আজান দিয়ে উপজেলা জামায়াতের দলীয় কার্যালয় থেকে শোকরানা ও আনন্দ মিছিল বের করে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়কে প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনার চত্বরে আলোচনা সভায় করে।
দীর্ঘদিন পর কার্যালয়ে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নেতাকর্মীরা। পরে সকল শহীদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর খ.ম সাকলাইন, নায়েবী আমির মাওলানা মুক্তার হোসেন, সেক্রেটারী মো. শাহজাহান আলী, কর্মপরিষদ সম্পাদক বাসির খান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম ও পৌর সভাপতি কাওসার হাবীব , উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোঃ ইয়াহিয়া প্রমূখ।

ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাসের নতুন নেতা 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস তাদের নতুন নেতা হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নাম ঘোষণা করেছে। গাজার এই শীর্ষ হামাস কর্মকর্তা এখন থেকে দলটির রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে কাজ করবেন। গত ৩১ জুলাই তেহরানে ইসমাইল হানিয়া নিহত হলে পদটি শূন্য হয়।
গ্রুপটি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস আন্দোলনের রাজনৈতিক ব্যুরোর প্রধান হিসেবে কমান্ডার ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে নির্বাচনের কথা ঘোষণা করছে। তিনি শহিদ কমান্ডার ইসমাইল হানিয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন।’উল্লেখ্য, সিনওয়ারের নেতৃত্বে হামাস ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে ঢুকে নজিরবিহীন হামলা করে। ওই ঘটনায় ১১ শ’র বেশি লোক নিহত হয়, ২০০-এর বেশি লোককে বন্দী করে গাজায় নিয়ে আসা হয়।এরপর থেকে গাজায় হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, এর আরো কয়েকগুণ আহত ও নিখোঁজ হয়ে রয়েছে। সূত্রঃ নয়া দিগন্ত।

ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগ ও ক্ষোভ হিন্দু মহাজোটের। ভারতের মিডিয়ায় বাংলাদেশের হিন্দু সমাজের ওপর হামলা নিয়ে মিথ্যাচার করছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক। তিনি বলেন, ভারতের কিছু গণমাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক গুজব ছড়াচ্ছে, মিথ্যাচার করছে। নানা উদ্ভট কথাবার্তা বলছে। গত মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বাংলা আউটলুককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাডভোকেট গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, গতকাল শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর এ দেশের হিন্দু সমাজ মনে করেছিল যে তাদের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটবে। কিন্তু গতকাল বিকেলে জামায়াত ও বিএনপির নেতারা তাদের সব নেতাকর্মীকে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা-লুটপাট যাতে না হয় এবং মন্দিরে যেন পাহারার ব্যবস্থা করা হয় সেই নির্দেশ দেন। গতকাল থেকে দেখেছি, তারা পাহারা দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, যে কারণে সাধারণভাবে হিন্দুদের ওপর কোনো ধরনের হামলা হয়নি বা কোনো মন্দিরে ভাঙচুর হয়নি৷ সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।

আর একটি বিজয় দিবস !
আবদুর রাজ্জাক রাজু

ছাত্র-জনতার এমন অভাবিত বিপ্লব , বিস্ময়কর বিজয়
এখানে জীবন্ত ইতিহাস কথা কয়।

সেই বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন
উনসত্তুরের গণ অভ্যূত্থান
সত্তুরের স্বাধীনতার সংগ্রাম
একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধ সব বাঁক বদলেই তরুণ
ছাত্র সমাজের ত্যাগের ও বীরত্বের অবদান উজ্জল।

তারপর স্বাধীনতা উত্তর “এক দল-এক দেশ”
নীতিরও বিরোধিতা করেছিল এই তরুণ সমাজই সর্ব প্রথম।
আবার নব্বইএ স্বৈরশাসকেরও অগ্নিগর্ভ উত্তাল
বিরোধিতারও মূল নায়ক ছিল এদেশের তরুণেরাই
নূর হোসেন তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আজকের অসংখ্য
আবু সাঈদের মতোই।

অনুরুপ সাম্প্রতিককালে একচেটিয়া, একতরফা, একদলীয়
কর্তৃত্ববাদ আর দু:শাসনের প্রথম জোড়ালো প্রতিবাদ
২০১৮তে শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ‘কোটা
আন্দোলন এবং রাষ্ট্র সংস্কার ও মেরামতের নামে’।

সেই তরুণ নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী আমাদের ভবিষ্যতের
কর্ণধার জ্যোতিস্করাই আজ অসাম্য, বৈষম্য,অবক্ষয়, অবিচার,
দুর্নীতি, লুটপাট, নৈরাজ্য, অগণতন্ত্র, রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়ন,
মানবাধিকার ও বাক স্বাধীনতা খর্ব- এসব কিছুর বিরুদ্ধে
অবশেষে অগনিত জীবন ও রক্ত দিয়ে জেল-জুলুম সহ্য করে
বিজয় ছিনিয়ে এনে প্রমাণ করল যুগে যুগে তরুণ ও নবীনদের
আন্দোলন বৃথা যায় না বিশেষ করে যদি তা জন¯্রােতে মিশে
জনতার সাথে একাত্ম হয়ে যায়।
কেননা, দমন-পীড়ণ করে বাঙ্গালী জাতীকে বেশী দিন
দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় এবং বাড়াবাড়ি ও সীমা লংঘনের
ফলও ভাল হয় না। স্বৈরাচারের পতন অবশ্যম্ভাবী।

যারা স্বাধীনতা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের জোয়ার স্বচোখে
দেখে নাই তারা এই বিস্ফোরণ থেকে আঁচ করে নিতে পারে
কেননা এটা ৫ আগষ্ট ২০২৪এ যেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ
আর এক অন্যরকম স্বাধীনতা, আর একটি বিজয় দিবস।

০৫-০৮-২৪

তাড়াশে এখন তালাক যেন মামুলী ব্যাপার

এম.আতিকুল ইসলাম বুলবুল ঃ মাধাইনগর ইউনিয়নের গুড়মা গ্রামের উত্তর পাড়ার মো. শহিদুল ইসলামের মেয়ে পূর্নিমা খাতুন (১৭) এবং একই গ্রামের পশ্চিম পাড়ার মুনজিল হোসেনের ছেলে রাসেল হোসেন (২১) প্রেম করেছিলেন প্রায় দুই বছর। তারপর ২০২৩ সালের মে মাসের দিকে দু’পরিবারের অসম্মতিতে দু’জনে বিয়েও করেন। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই স্বামী-স্ত্রী’তে বনিবনা না হওয়ায় সংসারে বাঁধে চরম কলহ, অশান্তি। দু’জনে সিদ্ধন্ত নেন বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের। তাদের তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়ে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তি এবং দুই পরিবারের অভিভাবকরা সালিশ করেন। পরে কাবিন, খোরপোশসহ স্বামীর কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকাও বুঝে নেন পূর্নিমা। তারপর কাজী অফিসে গিয়ে তালাক নামায় দু’ জনেই স্বাক্ষর করে বাড়ি চলে যান। বাড়ি এসে এক পর্য্যায়ে তালাকের ২২ ঘন্টা পর গত বুধবার দুপুরে বাবার বাড়ির শোবার ঘরে দরজা বন্ধ করে ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আতœহত্যা করে প্রেমের জ্বালা মেটান গৃহবধূ পূর্নিমা খাতুন।এভাবেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও তালাকের ভয়াবহতা বাড়ছে। পাশাপাশি তালাক নিয়ে ঘটছে নানা অঘটন। যা কিছু প্রকাশ্যে এলেও বেশির ভাগ অপ্রকাশিতই থাকছে।

উপজেলার মাইনগর ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্টার এবং তাড়াশ উপজেলার নিকাহ্ রেজিষ্টার সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তালাক যেন এখন “মামুলী ব্যাপার” হয়েছে গেছে। কেননা, মাধাইনগর ইউনিয়নে গত ২০২৩ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ হয়েছে ৮৫টি। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত হয়েছে ৩৩ টি। এর মধ্যে ২০২৩ সালে তালাকের ৮৫টি ঘটনার মধ্যে ৩৮ টিই তালাক দিয়েছেন স্ত্রী নিজেই স্বামীকে। আর তালাকের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মানা হচ্ছে না রাষ্ট্রীয় বা ধমীয় আইনের কোনটাই।

অবশ্য, ইসলামে তালাক সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তালাক তিন প্রকার। রাজি তালাক। অথাৎ স্বামী-স্ত্রী দু’ জনের সম্মতিতে। রজিয়া তালাক বা স্ত্রীর পক্ষ থেকে মোহরানা পরিশোধ করে স্বামীকে তালাক। বায়ানে তালাক হলো স্বামী স্ত্রীকে মোহরানা পরিশোধ করে তালাক।

নিকাহ্ রেজিষ্টার সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আরো জানান, গত দেড় বছরে মাধাইনগর ইউনিয়ন এলাকায় তালাকের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে দেখেছেন, দরিদ্র পরিবারের বাল্য বিয়ের শিকার, বয়স না হওয়ায় বিয়ের অর্থ না বোঝা, প্রেম করে বিয়ে করা, মোবাইলে পরকিয়ায় আসক্ত কম বয়সি অশিক্ষিত বিয়ে বিচ্ছেদি নারী-পুরুষেরদের হার সবচেয়ে বেশি। যা চরম সামাজিক অবক্ষয়।

তা ছাড়া কাজী অফিসে এসেই যে স্বামী স্ত্রী তালাক দেন এটাও ঠিকনা। এ সংখ্যার বাহিরেও বহু তালাক হচ্ছে। যেমন- কাজী অফিসে বাহিরে পারিবারিকভাবে, গ্রাম্য সালিশে তালাকের ঘটনাও অনেক। কারণ কাজী অফিসে ফি দিতে হয় বা আইনী রেবর্ড থাকে। এ সকল ঝামেলা ও মান-সন্মানের ভয়ে অনেকেই বাড়িতেই মুখে মুখে তালাক দিয়ে কাবিন বা খোরপোষের টাকা কম বেশি করে মিমাংসা করে নেন। যা আমাদের রেকর্ডের বাইরে থাকে বলে জানান তাড়াশ সদর ইউনিয়নের কাজী মো. তাসাদ্দেক।

মুলত তালাকের আইনসিদ্ধ প্রত্রিয়া হলো- কাজী অফিসে বিয়ে বিচ্ছেদ বা তালাকের প্রক্রিয়ায় প্রথমে তালাকের জন্য স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই লিখিত আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রে তাদের নাম, ঠিকানা, বিয়ের তারিখ, দেন মোহরানার পরিমাণ, তালাকের কারণ ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে। আবেদনের সাথে ন্যায়পরায়ণ দু’ জন সাক্ষির স্বাক্ষর থাকতে হয়। স্বামী-স্ত্রী’র জাতীয় পরিচয় পত্র, দুই কপি ছবি জমা দিতে হবে। সংশ্লিট কাজী অফিসে নির্ধারিত পরিমাণ ফি দিতে হবে। যা অনেকেই মানেন না বলেই প্রকৃত তালাকের সংখাও না পাওয়ার অন্যতম কারণ মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারপরও রেকর্ডমূলে তাড়াশ উপজেলায় আটটি ইউনিয়ন এবং একটি পৌর এলাকার মধ্যে তাড়াশ পৌর এলাকা ও ৬ ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্টাদের কাছ থেকে ১ বছর ৬ মাসের তালাকের প্রাপ্ত চিত্র বেশ ভয়াবহ। যেমন- তাড়াশ পৌরসভা এলাকায় নয়টি ওয়ার্ডে ২০২৩ সালে মোট ৭৮ টি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। ২০২৪ সালে জুন পর্যন্ত হয় ৩৫ টি। তাড়াশ সদর ইউনিয়নে ২০২৩ সালে মোট ৩৯ টি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। ২০২৪ সালে হয় ৩১ টি। বারুহাঁস ইউনিয়ন এলাকায় ২০২৩ বিয়ে বিচ্ছেদ ৩২টি। আর ২০২৪ সালে হয় ২৭ টি। সগুনা ইউনিয়ন এলাকায় ২০২৩ বিয়ে বিচ্ছেদ ১১টি। আবার ২০২৪ সালে হয় ০৮ টি। মাধাইনগর ইউনিয়ন এলাকায় ২০২৩ সালে বিয়ে বিচ্ছেদ ৮৫টি। আর ২০২৪ সালে হয় ৩৩ টি। মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়নে ২০২৩ সালে ৫৬ টি। ২০২৪ সালে ৩০ টি বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। পাশাপাশি তালম ইউনিয়নে ২০২৩ সালে হয় ৫৩ টি। ২০২৪ সালে হয় ২৫ টি। অথাৎ ২০২৩ সালে ১ টি পৌর ও ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তালাক হয় মোট- ৩৫৪ জন স্বামী- স্ত্রীর। আর ২০২৪ সালের ৬ মাসে তালাক হয়েছে মোট ১৮৯ জনের।
তালম ইউনিয়ন এলাকার কাজী আবুল কাসেম বলেন, তিনি এ পেশায় আছেন, প্রায় দুই দশক। আর কর্ম জীবনের শুরুতে প্রথম ১০ বছরে তালম ইউনিয়নে এত তালাক দেখেননি যা সাম্প্রতিক ৭ থেকে ৮ বছরে যতগুলো তালাকের ঘটনা ঘটেছে।
এর সত্যতা পাওয়া যায় তাড়াশের বাসিন্দা যিনি ৪২ বছর যাবত আইন পেশায় রয়েছেন। তিনি হলেন সিরাজগঞ্জ জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবি এ্যাডভোকেট মো. রফিকুল ইসলাম বাটুল। তিনি জানান, জেলার আদালত গুলোতে গ্রাম এলাকার যে মামলা হয় তার প্রায় ৮০ ভাগই স্বামী স্ত্রীকে মারধর করেন, তাদের বনিবনা হচ্ছে না বা যৌতুক চান এ ধরনের। আর তাড়াশ উপজেলা এলাকার আদালতে মামলাগুলোর বেশির ভাগের ধরণ একই। তাই এ সব ঘটনায় তালাকের হারও বাড়ছে তাড়াশ এলাকায়ও।
তালম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক বলেন, তালম ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম আদালতে বিচারের জন্য যে বিষয়গুলো আসে তার মধ্যে তালাকের বিষয়ও অনেক থাকে। আর গ্রাম আদালতে তালাক সংক্রান্ত বিষয়গুলো যারা নিয়ে আসেন সে সকল স্বামী-স্ত্রীর বয়স ১৬ থেকে ২৪ এর মধ্যেই বেশি। যারা লেখা পড়া জানে না বললেই চলে। আবার আর্থিক অবস্থায় দিন-মজুর, ভ্যান চালক ইত্যাকার।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ ডিগ্রী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. মেহেরুল ইসলাম বাদল বলেন, সমাজে সু-শিক্ষার অভাব, বাল্য বিয়ের করুণ পরিণতি, যৌতুক দাবী, মারধর, মোবাইলের অপব্যবহার সহ নানা কারণে খুব দ্রুত শিথিল হচ্ছে সামাজিক বন্ধন। আর ভঙ্গুর সমাজ ব্যবস্থায় তালাক হার বাড়ছে। যা এখন ছড়িয়ে পড়ার কারণে তালাককে “মামুলী ঘটনার মতোই” মনে করা হচ্ছে। তালাক নিয়ে এখনই সর্তক না হলে গৃহবধূ পূর্নিমা খাতুনের মত মূল্যবান জীবনের করুণ পরিণতি আমাদের অনেকের জন্য আগামীতে অপেক্ষা করছে।

কেন দোয়া কবুল হয় না জানেন কি?
মুফতি খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ

দুআ মুমিনের বড় হাতিয়ার, কিন্তু দুআ কবুলিয়াতের কিছু বিষয় না জানার জন্য আমরা হতাশ হই, দুআ করা ছেড়ে দেই। নীচে শাইখ আব্দুল হামিদ ফাইযি আল মাদানী হাফিজাহুল্লাহর সহীহ দুয়া ও যিকর বই থেকে উল্লেখ করা হল: ১ . অনেকে দুআ করে, কিন্তু তাদের দুআ কবুল হয় না, চায় অথচ পায় না। এর কতকগুলি কারণ আছে, যেমন; শীঘ্রতা করা। দুআ করার পরই যে মঞ্জুর হবে তা জরুরী নয়। যেমন আল্লাহর রসূল বলেন, “তোমাদের কারো দুআ কবুল করা হয়, যতক্ষণ না সে তাড়াতাড়ি করে। বলে, ‘দুআ করলাম অথচ কবুল হল না।” (বুখারী ১১/১৪০, মুসলিম ৪- ২০৯৫)। ২. সৃষ্টিকর্তা সর্বজ্ঞ আল্লাহ তাআলার হিকমত। বান্দা দুআতে যা চায়, তা তার জন্য মঙ্গলদায়ক কি না, তা সে সঠিক জানে না। কিন্তু আল্লাহ পাক সব কিছু জানেন, বান্দা যা চাচ্ছে, তা তার জন্য কল্যাণকর বটে কি না, তা বর্তমানেই তার জন্য ফলপ্রসু, নাকি কিছুদিন বা দীর্ঘদিন পর? অথবা যা চাচ্ছে, তা তার জন্য যথোপযুক্ত নয়। বরং অন্য কিছু তার জন্য অধিক লাভদায়ক। অথবা কল্যাণ আসার চেয়ে আসন্ন বিপদ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া তার জন্য ভালো। তাই আল্লাহ বান্দার জন্য যা করেন, তা তার মঙ্গলের জন্যই করেন। বান্দার আসল মঙ্গলের প্রতি খেয়াল রেখে কখনো দুআ কবুল হয়, কখনো কবুল হয় না। তা বলে তার দুআ করাটা বৃথানষ্ট হয়ে যায় না। প্রিয় নবী (স.) বলেন, “কোন মুসলিম যখন আল্লাহর নিকট এমন দুআ করে, যাতে পাপ ও তিবন্ধন ছিন্নতা নেই, তখন আল্লাহ তাকে তিনটের একটা দান করে। থাকেন; সত্বর তার দুআ মঞ্জুর করা হয় অথবা পরকালের জন্য তা জমা রাখা হয়। অথবা অনুরূপ কোন অকল্যাণকে তার জীবন হতে দুর করা হয়।”লোকেরা বলল, তাহলে আমরা অধিক অধিক দুআ করব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহও অধিক দানশীল।” (আহমদ ৩-১৮, হাকেম ১৪৯৩ যদুল মাসীর ১-১৯০) ৩. কোন পাপ বা জ্ঞাতিবন্ধন ছিন্ন করার দুআ করলে তা কবুল হয় না। পাপের দুআ যেমন, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অভিনয়ে উন্নতির জন্য দুআ, চোরের চুরি করতে ধরা না পড়ার দুআ ইত্যাদি।৪.হারাম পানাহার ও পরিধান করা।৫. দুআয় দৃঢ়চিত্ত না হওয়া এবং আল্লাহর ইচ্ছায় ‘যদি যােগ করা। যেহেতু আল্লাহর ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু নেই। যেমন দুআর আদবে আলোচিত হয়েছে। ৬. সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজে বাধা দান ত্যাগ করা। মানুষ নিজে ভালো হলেই যথেষ্ট নয়। অপরকে ভালো করার চেষ্টা করাও তার সর্বাঙ্গীন ভালো হওয়ার পরিপূরক। তাই সর্বাঙ্গসুন্দর ভালো লোক হতে চাইলে সামর্থ্যানুযায়ী সৎকাজের আদেশ দিতে হবে এবং সম্মুখে বা জানতে কোন পাপকাজ ঘটলে, তাতে সাধ্যানুক্রমে (হাত দ্বারা, না পারলে মুখ দ্বারা) বাধা দিতে হবে। তাও না পারলে, অন্তর দ্বারা ঘৃণা করতে হবে। নচেৎ শাস্তিতে সেও তাদের দলভুক্ত হবে, আর তার দুআও মঞ্জুর হবে না। (বুখারী ১১-১৩৯, ৪-২০৬৩) ৭. কিছু পাপ বা নির্দিষ্ট অবাধ্যাচরণে লিপ্ত থাকা। যার অবাধ্যাচরণ করা হয় ও যার কথার অন্যথাচরণ করা হয় তার নিকট প্রার্থনা করে কিছু পাওয়ার আশা সব সময় করা যায় না। এ ব্যাপারে রসূল এর একটি ইঙ্গিত, তিনি বলেন, “তিন ব্যক্তি দুআ করে অথচ তাদের দুআ মঞ্জুর করা হয় না; (১) যে ব্যক্তির বিবাহ-বন্ধনে কোন দুশ্চরিত্রা স্ত্রী থাকে অথচ তাকে তালাক দেয় না, (২) এক ব্য

ক্তি অপর ব্যক্তির নিকট মালের অধিকারী থাকে অথচ তার উপর সাক্ষী রাখে না, (৩) যে ব্যক্তি নির্বোধকে তার সম্পদ দান করে অথচ আল্লাহ পাক বলেন, “আর তোমাদের সম্পদ নির্বোধদের হাতে অর্পণ করো না—” (কুঃ ৪-৫; হাকেম ২-৩০২)৮. ঔদাস্য, কুপ্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর বশবর্তী থাকা এবং মিনতি, ভক্তি, আশা ও ভীতির অভাব থাকা। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আল্লাহ অবশ্যই কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরাই পরিবর্তন না করে।” (কুঃ ১৩-১১) আর রসুল বলেন, যা পুর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনে রাখ যে, আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযােগী হৃদয় থেকে দুআ মঞ্জুর করেন না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন আমীন।

তাড়াশে ৩০ বছরেও রাস্তাটি পাকা হয়নি

শফিউল হক বাবলু ঃ তাড়াশ উপজেলার নওগা ঁইউনিয়নের নওগাঁহাট থেকে হামকুড়িয়া ওয়াবদাবাধ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ৩০ বছরেও পাকাকরন নাহওয়ায় ৪টি গ্রামের ১৮হাজারমানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।মহেশ রৌহালী গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মকবুল হোসেন জানান, নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাহাট থেকে হামকুড়িয়া ওয়াবদাবাধ পর্যন্ত মাটির রাস্তাটি আজ থেকে ৩০বছর আগেওয়াজেদ আলী চেয়ারম্যান নির্মান করেন। এর পর বিভিন œœসময় মাটি ফেলে সংস্কার করা হলেও আজও পাকা করন হয়নি।
ওই কর্দমাক্ত রাস্তাদিয়ে বি-রৌহালী,মহেশ-রৌহালী,হামকুড়িয়া ও পং-রৌহালী গ্রামের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ যাতায়াতের জন্য চরম বিপাকে পড়েছে।বর্ষা মৌসুমে কাদায়মাখা মাখি রাস্তাটি দিয়ে গ্রামবাসীকে পায়ে ঁেহটে চলাচল করতে হয়। ৪টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল।তাদের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য নওগাঁসহঅন্যান্য হাটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। এ দিকে বি-রৌহালীগ্রামে ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পং-রৌহালীগ্রামে ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।বর্ষা মৌসুমেছাত্র-ছাত্রীদেও আশ াযাওয়ার কষ্টের শেষ থাকেনা। তাড়াশ উপজেলা শহরে সরাসরি যাতায়াত করা যায়না।
বি-রৌহালী গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, মাত্র আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ৩০ বছওে ও পাকাকরন না হওয়ায় ওই ৪ গ্রামের কৃষক ও ছাত্র-ছাত্রী বর্ষা মৌসুমে চরম অসুবিধার সম্মুখিনহন।তিনিআর ও জানান, ভোট এলে সবাই রাস্তাটি পাকাকরনেরওয়াদা করেন কিন্ত ÍÍনির্বাচনের পর কেউ মনে রাখে না। পং-রৌহালীগ্রামের মোক্তার হোসেন জানান, আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি কিন্তু সেই উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গেলে আমরা বাজারমুল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। মাত্র আড়াই কিলোমিটার রাস্তাপাকা হলেই ওই ৪ গ্রামের প্রায় ১৮হাজার লোক সরাসরি উপজেলার যে কোনহাট- বাজারে যাতায়াত করতে পারবেন।তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুর রহমান জানান, হামকুড়িয়া থেকে নওগাঁ পর্যন্ত Íরাস্তার প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে,আশাকরি দ্রুতই পাস হয়ে আসবে। এলে রাস্তাটি পাকা করনের কাজ শুরু হবে।

তাড়াশে সুফলভোগীদের পুকুর প্রভাবশালীদের দখলে 

সাব্বির আহম্মেদ ঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সুফলভোগীদের সরকারী একটি পুকুর জাল কাগজ তৈরী করে নিজের দাবি করে জোড় পূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। এর প্রতিকার চেয়ে গত মঙ্গলবার তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বটগাড়ী সপ্তমী পুকুর সুফলভোগী দলের সভাপতি বলরাম উরাওঁ। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল বটগাড়ী সপ্তমী পুকুরটি নিমগাছী মৎস্য চাষ প্রকল্পের আওতায় সুফলভোগী সদস্যরা ২০১১ সাল থেকে লীজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি বটগাড়ী এলাকার প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম ও তার তিন ছেলে আমজাদ হোসেন, শামিম হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে রাঙ্গা জাল কাগজ তৈরী করে পুকুরটি নিজেদের মালিকানা দাবী করে তা দখলের চেষ্টা করেছেন।
সুফলভোগী অমল উরাওঁ, চিত্তরঞ্জন উরাওঁ, প্রদীপ উরাওঁ, রথন চরণ জানান, বর্তমানে লীজ নেয়া পুকুরে মাছের খাবার, ঔষধ ও পরিচর্যা করতে দিচ্ছে না। বরং প্রভাবশালীরা জোর পূর্বক পুকুরে থাকা সুফলভোগীদের চাষ করা প্রায় ৩ লাখ টাকা মাছ ধরে বিক্রি করেছেন। এ সময় আমরা বাধা দিলে প্রভাবশালীরা আমাদের উপর লাঠি সোঠা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে মারার আক্রমণ করে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে প্রাণনাশের হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
তাড়াশ উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তমীর পুকুরটি সরকারী সম্পত্তি। প্রভাবশালীরা জোর পূর্বক সুফলভোগীদের পুকুরটি দখলে বাধা দিচ্ছেন। বটগাড়ী সপ্তমী পুকুর সুফলভোগী দলের সভাপতি বলরাম উরাওঁ জানান, আমরা গরিব মানুষ। অথচ আমাদের পুকুরটি বেদখল দেওয়ায় আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
অভিযুক্ত প্রভাবশালী সাইফুল ইসলাম ওই পুকুরটি পৈতৃক সম্পত্তি দাবী করে বলেন, ভূমি অফিসগুলো টাকা খেয়ে আমার বিপক্ষে প্রতিবেদন দিয়েছে। ওই রায় আমি মানি না। প্রয়োজনে লাশ পড়বে তবুও এ পুকুরে কাউকে আসতে দিবো না। বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, সাইফুল ইসলাম গং কারো কথা মানে না। আমি যতটুকু জানি ওদের কাগজপত্র গুলো ঠিক নাই। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুইচিং মং মারমা লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই পুকুরের বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে

শেষের পাতার ফিচার

জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী তাড়াশের শবনম খন্দকার বাবু 

তাড়াশ প্রতিনিধি ঃ সিরাজগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী হিসেবে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মো. শবনম খন্দকার বাবু শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার লাভ করা করেছেন । শবনম খন্দকার বাবু তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মাটিয়ামালিপাড়া গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে। গত বুধবার (৩১ জুলাই) জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন-২০২৪ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা শেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে পুরস্কার তুলে দেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আরিফুল রহমান মন্ডল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. কেএম হোসেন আলী হাসান প্রমূখ।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে মাত্র দুই একর জলাশয়ে মাছ চাষ শুরু করে এখন তিনি ১৫০ একর জলাশয়ে মাছ চাষ প্রকল্প গড়ে তুলেছেন। মৎস্য উৎপাদনে সেরা হয়েছেন উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে। তার দেখাদেখি এখন অনেকেই মাছ চাষে ঝুঁকছেন। কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় তিনি জেলার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি জড়িত রয়েছেন রাজনীতি ও সমাজসেবায়। তার প্রকল্পে গেলে চোখ জুড়িয়ে যায়।প্রকল্প এলাকায় কলার বাগান ও সবজি চাষ সবার নজর কাড়ে। মাত্র ৫ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করে এখন তিনি সফল মৎস্যচাষী। এর আগে তিনি ২০১৯ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্য উৎপাদনকারী২০২১ও ২০২৪ সালে তাড়াশ উপজেলা সেরা মৎস্য উৎপাদনকারীর পুরস্কার অর্জন করেছেন।এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশগুল আজাদ বলেন, শবনম খন্দকার বাবু একজন সফল মৎস্য চাষি। তিনি উপজেলা ও জেলাপর্যায়ে শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষির পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক এই পেশায় আসছেন। আমরা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে সাধ্যমত সহযোগিতা করে আসছি।

ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা কি দেশে আছেন,
নাকি দিয়ে পালিয়ে গেছেন? 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত সোমবার পদত্যাগের পর সিলেট সীমান্ত দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন নেতা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শায়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসানসহ আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রনেতা সোমবার সিলেট সীমান্ত দিয়ে দেশ ছাড়েন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
ছাত্র ও জনতার ২৩ দিনের দেশ কাঁপানো আন্দোলনে পতন হলো আওয়ামী লীগ সরকারের। শেখ হাসিনা সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এরপর বঙ্গভবন থেকেই হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন। সে সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোন শেখ রেহানা। শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে তার টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান হলো। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় বসেছিলেন। এরপর নিজের শাসনামলে আর কোনো গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন তিনি হতে দেননি। সূত্র ঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন।

তাড়াশের চলনবিলে নিজ বাড়িতে চলে দেহ ব্যবসা 

তাড়াশ প্রতিনিধি ঃ সিরাজগঞ্জ তাড়াশের চলনবিলের মাঝে নিজ বাড়িতে পতিতাদের দিয়ে দেহব্যবসা পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে মো. শরিফ প্রমানিক (৬০) নামে এক বাড়ি-মালিকের বিরুদ্ধে। বাড়ি মালিকের নিয়ন্ত্রণে এই দেহ ব্যবসা পরিচালনা শুধু রাতের আধারেই নয় নিয়মিত চলছে দিনের আলোতেও। স্থানীয়রা বলছেন, এটা নতুন কিছু নয়। তবে চলনবিলের পাশে এই ধরনের নোংরা কাজের প্রতিকার চান তারা।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের ৯নং ব্রিজ পাশেই একটি টিনের বাড়িতে পতিতা দিয়ে এসব নোংরা কাজ পরিচালনা করানো হচ্ছে। শরিফ প্রমানিকের এই বাড়িতে নিয়মিত যৌন ব্যবসা পরিচালিত হয়। বিশেষ কৌশলে এবং গোপনীয়তার সাথে জমজমাট চলছে যৌন ব্যবসা। নিজেদের বাসায় কখনো নিজের বন্ধু আবার কখনো স্ত্রীর আত্মীয় বলে চলে চেনা-অচেনা মানুষের আনাগোনা।
নাম বলতে অনিচ্ছুক একজন জানান, তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করতে পারে না। যদি কেউ বলে তাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেয়। মান-সম্মানের ভয়ে কেউ কিছু বলে না। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়ত তাদের এই যৌন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। এ বিষয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রী বলেন, আজ থেকে আর বাড়িতে খারাপ কাজ হবে না। যদি খারাপ কাজ চলে তাহলে আপনাদের ফোন দেবো। অভিযুক্ত বাড়ির মালিক শরীফ প্রমানিক বলেন, আগে এ ব্যবসা চলতো কিন্তু কিছুদিন ধরে বন্ধ আছে। এ ব্যাপারে তাড়াশ থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে ঘটনাস্থলে এ ধরনের অনৈতিক কার্যক্রমের প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তাড়াশে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে র‌্যালি ও আলোচনা সভা 

আরিফুল ইসলাম ঃ “ভরবো মাছে মোদের দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ -২০২৪ইং উপলক্ষে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মৎস্য দপ্তরের আয়োজনে উপজেলা অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা, পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে নির্বাহী অফিসার সুইচিং মং মারমা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি, পৌর মেয়র আব্দুল রাজ্জাক, ভাইস চেয়ারম্যান ম.ম জর্জিয়াস মিলন রুবেল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাজ্জাক, মৎস্য অফিসার মশগুল আজাদ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সুলতান মাহমুদ সহ আরো অনেকে।

চলনবিলে নৌকায় চলছে অশ্লীল নৃত্য- প্রশাসন নিরব 

তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের তাড়াশের চলনবিলে নৌকায় ভ্রমনের নামে নারীদের ভাড়া করে অশালীন নাচ পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নাই। গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার মান্নাননগর এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একদল যুবক তিনজন নারীকে ভাড়া করে এনে নৌকায় অশ্লীল নাচের সঙ্গে ফুর্তি করছে এবং নৌকায় গান বাজনাসহ অল্লীলতা চলছিল। এসময় প্রশাসনকে অবগত করলেও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে না।
জানা গেছে, উপজেলার মান্নাননগর এলাকার ৯নং ব্রিজ থেকে প্রতিদিন এসব নারীরা নৌকায় নাচের জন্য যায়। তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, চলনবিলে নাচের নারী ভাড়া করে এনে নৌকায় ঘুড়াঘুড়ি করে। বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। তবে আবারও অভিযান চালানো হবে। প্রসঙ্গ, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে চলনবিল অঞ্চলে নৌকা ভ্রমণের নামে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নারী এনে নৌকায় আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠে উঠতি যুবকরা। চলে মাদক সেবন ও দেহ ব্যবসা।

গুরুদাসপুরে ফাঁকা গুলি বর্ষণ
ভাংচুর-লুটপাট, আহত ৩০ 

গুরুদাসপুর প্রতিনিধি ঃনাটোরের গুরুদাসপুরে ফাঁকা গুলি বর্ষণসহ বিভিন্ন স্থানে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত তিনদিনের হামলায় আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মিদের আওয়ামী বিরোধী মহুর্মুহু মিছিল ও মোটরসাইকেল শোডাউন অব্যাহত রয়েছে। কমেনি উত্তেজনা।সরেজমিনে দেখা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই সরকারি অফিসগুলো খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সময়মত অফিসে আসেননি। কেউ কেউ অফিস করলেও বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগিদের ভিড় ছিল লক্ষনীয়। ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা পেয়েখুশি তারা।
এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মিরা আত্মগোপনে আছেন। অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় গারিষাপাড়া মহল্লার আওয়ামী লীগ নেতা সাবলু মোল্লার বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার শব্দ শোনা যায়। সাবলু মোল্লার স্ত্রী শাপলা বেগম গুলি বর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দুর্বৃত্তরাই বরং হামলা চালিয়ে তার স্বামী ও ভাসুর বাবলু মোল্লাকে বেধরক পিটিয়েছে এবং প্রাইভেট কারসহ বাড়ি ভাঙচুর করেছে।

চাটমোহরে সুতি জাল স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আবেদন

চাটমোহর প্রতিনিধি ঃপাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের কোলা মৌজার অন্তর্গত করতোয়া নদীর পারের বসবাসকারী জনগণ গত ৬ আগষ্ট তারিখে জেলা প্রশাসক বরারব উপজেলার করতোয়া নদীর ভিতর ছাওয়ালদহ কালীবাড়ী চালী হতে বগালালী পর্যন্ত জেলেদের সুতি জাল স্থাপন এবং বাঁশের বেড়া দেওয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে গ্রামবাসীরা বলে, আমাদের কোলা গ্রামের পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে করতোয়া নদী প্রবাহিত হয়েছে। উক্ত নদী দিয়ে সমগ্র চলনবিলের পানি নিস্কাশিত হয়। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ সুফল ভোগী ১ এবং ২ মৎস সমবায় সমিতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন শ্রী ফনি হলদার ও শ্রী গোপাল চন্দ্র হলদার, উভয়ের গ্রাম- চিনাভাতকুর, সুতিজাল, নেটজাল ব্যবহার করে এবং বাঁশের বেড়া তৈরী করে মাছ ধরে আসছে। উক্ত বাশের বেড়া ব্যবহারের ফলে প্রবল ¯্রােতের সৃষ্টি হয় যার কারণে উক্ত নদীর পূর্ব পাড়ের বাড়ীঘর, জমাজমি, বাঁশ ঝাড়সহ সবকিছু ভেঙ্গে ধ্বংস হয়ে যায়। এতে করে এসব গ্রামের অধিবাসীগণ প্রতিবছর বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তাই আমাদের কোলা বিশ্বনাথপুর সহ আশপাশের গ্রামগুলো যাতে রক্ষা পায় সে কারণে উল্লেখিত সূতি জাল, নেটজাল ব্যবহার এবং বাঁশের বেড়া তৈরী বন্ধের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য আবেদন করেছি। এছাড়া উক্ত ছাওয়ালদহ জলাশয়ে ধর্মগাছা ব্রিজের নিকট পুনরায় বাঁশের বেড়া না দেওয়ার জন্যও পাবনা জেলাপ্রশাসনের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।এই বিষয়ে পাবনা জেলা প্রশাসক মু: আসাদুজ্জামান বলেন, আবেদনপত্র পেয়েছি অতি শীঘ্রই তদন্ত করে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

তাড়াশে পল্লী কর্মসংস্থান কর্মসূচির চেক বিতরণ 

তাড়াশ প্রতিনিধি ঃস্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলা জেলাধীন পল্লী কর্মসংস্থান ও সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ (আরইআরএমপি-৩) প্রকল্পের আওতায় সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত ৮ টি ইউনিয়নের ৮০ জন নারী কর্মীদের মাঝে তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থের চেক ও সনদ বিতরণ করা হয়। গত ১ লা আগষ্ট গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) আয়োজনে উপজেলা পরিষদ হলরুমে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সুইচিং মং মারমা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে নারী কর্মীদের মাঝে তাদের সঞ্চয়কৃত অর্থের চেক ও সনদ বিতরণ করেন সিরাজগঞ্জ ৩ (তাড়াশ- রায়গঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি, মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার, উপ সহকারী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার, তারিকুল ইসলাম,তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীউল হক শামীম, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল হাসান রুবেল, সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমপি আজিজ বলেন তিল-তিল করে জমানো এই সঞ্চয় অপচয় করবেন না, এই সঞ্চয় আপনাদের ভবিষ্যৎ। হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগল পালনের পাশপাশি ব্যাংকে জমা রেখে প্রয়োজনের সময় উত্তোলন করে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি। পরে তাদের সঞ্চয় করা টাকার জনপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার ৪ শত ২২ টাকা করে মোট ৮০ জন নারীকে চেক ও সনদপত্র বিতরণ করেন।

তাড়াশ ও উল্লাপাড়ায় অবাধে পোনা মাছ বিক্রি 

ডাঃ আমজাদ হোসেন ঃ সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিভিন্ন গ্রামীণ হাট বাজারে বন্যার পানির পোনা মাছ কেনাবেচা হচ্ছে। সকালের বাজারগুলোয় বেশী পরিমাণ পোনা মাছ কেনাবেঁচা হয় বলে জানা গেছে। সরকারি নিষেধ না মেনে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া উন্মুক্ত মাঠ ঘাট থেকে বাদাই জালে পোনাসহ সব ধরণের মাছ ধরা হচ্ছে। এসব পোনা মাছ এখন ধরা ও বেচা বাদ থাকলে ক’মাসেই নদী খালবিল মাছে ভরপুর হয়ে যাবে। এবারের বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানি কিছুটা দেরীতে এসেছে। উপজেলার পাথার প্রান্তরের মোহনপুর, উধুনিয়া ও বড় পাঙ্গাসীসহ ইউনিয়নের মাঠ ঘাটগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সরকারীভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া মাঠ ঘাট জলাশয় থেকে বাদাই জাল কিংবা কোনো জালে সব ধরণের পোনামাছসহ ছোটো কোনো মাছ ধরা ও বেঁচা যাবে না।
গত সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে নাগরৌহা গ্রামীণ বাজারে তিনজনকে বন্যার পানির পোনা মাছ এনে বেঁচতে দেখা গেছে। উধুনিয়ার সৈয়দ আলী ও পলাশ জানান, তারা রাতের বেলায় এলাকার মাঠে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া মাঠ থেকে বাদাই জালে এ মাছ ধরে বেঁচতে এনেছেন। অপরদিকে তাড়াশ পৌর বাজারসহ তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেদারছে পোনা মাছ বিক্রয় হলেও দেখার কেউ নেই।

রায়গঞ্জে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন ছবি

স.ম আব্দুস সাত্তার: ‘ভরবো মাছে মোদের দেশ,গড়ব স্মার্ট বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সপ্তাহ ব্যাপী জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের উদ্বোধন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে র‌্যালী, আলোচনাসভা ও উপজেলা পরিষদের পুকুরে মাছের পোণা অবমুক্ত করেন অতিথিরা। বুধবার দুপুর সারে ১২টায় উপজেলা পরিষদ চত্তর থেকে এক বর্নাঢ্য র‌্যালি প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদের হল রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা: আব্দুল আজিজ। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন রায়গঞ্জ সিনিয়র উপজেলা মৎস অফিসার মো. হাফিজুর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন শুভন সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল হান্নান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাদী আল মাজি জিন্নাহ, ভাইস চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মাইকেল, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পাপিয়া পারভীন পরি প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে উপজেলার শ্রেষ্ঠ তিন মৎসজীবীদের মাঝে সম্মাননা দেওয়া হয়।

সলঙ্গায় সাংবাদিকের পিতার ইন্তেকাল

সলঙ্গা প্রতিনিধি : জাতীয় “দৈনিক ভোরের দর্পণ” ও “দৈনিক কলম সৈনিক” পত্রিকার সলঙ্গা প্রতিনিধি এবং সলঙ্গা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেন আলীর পিতা ইসহাক হোসেন (৬৫) হার্ট এ্যাটাকে ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি….রাজিউন)।
গত সোমবার হার্ট এ্যাটাকে অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ১২ টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডা: তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যু কালে ২ স্ত্রী, ১ ছেলে, মেয়ে ও নাতী-নাতনী, আত্মীয় স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে মারা যান। তিনি সলঙ্গা থানার বওলাতলা গ্রামের মৃত পরান প্রামানিকের বড় ছেলে এবং এলাকার একজন বিশিষ্ট মুরুব্বী ছিলেন।তার এ মৃত্যুতে এলাকার বিশিষ্টজনেরা শোক প্রকাশ ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।

রায়গঞ্জ নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
নেই কোন আইনগত অভিযান 

রায়গঞ্জ প্রতিনিধি ঃ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে বাজার কিংবা দোকান, সব জায়গায় হরহামেশাই চলছে পলিথিনের ব্যবহার। অধিকাংশ ক্রেতার হাতেই দেখা যাচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এটা বন্ধে প্রশাসনের জোরালো উদ্যোগ গ্রহনের দাবি জানান সচেতন মহল। তারা বলছেন সাধারণ মানুষ পলিথিনের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তেমন অবগত না থাকায় দিন দিন বেড়েই চলছে এর ব্যবহার। এতে করে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমি।
সরেজমিনে গত রবিবার উপজেলার দোকানপাট ও বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সবজি, মাছ, মাংস, ডাল যা-ই কিনছেন, তার জন্য নিতে হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। যে কোনো পণ্য কিনলেই তা বহনের জন্য পলিথিন ব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতারা।উপজেলার চান্দাইকোনা, ধানগড়া, সোনাখাড়া, ধামাইনগর, ঘুড়কা,নলকা, ধুবিল ইউনিয়নের কয়েকটি বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয় খোদ রাজধানীতে। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় ডিলারদের কাছে চলে আসে। সেখান থেকে সপ্তাহের যে কোনো একদিন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা এসে পলিথিন ব্যাগ দিয়ে যান। দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করেন এসব ব্যাগ।

 

সমাজে দুর্নীতি বেড়ে গেলে ধর্ম চর্চাও বেড়ে যায়।
– হুমায়ুন আহম্মদ, প্রথাবিরোধী লেখক

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD