Spread the love

আমরা এক সময় চাঁদেও যাব: প্রধানমন্ত্রী 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। শিশুরাই হবে আসল স্মার্ট, তারাই দেশ চালাবে। আমরা একসময় চাঁদেও যাব, সবাইকে এখন থেকে সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে।
গত শনিবার (৬ জুলাই) গোপালগঞ্জের গিমডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ উদ্বোধন ও ‘এসো বঙ্গবন্ধুকে জানি’ অ্যালবামের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় চমৎকার এ উদ্যোগের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগের ফলে ছোট শিশুরা স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের অর্জন সম্পর্কে জানতে পারবে। সূত্রঃ যুগান্তর।

কোটাবিরোধী ও শিক্ষকদের আন্দোলনে বিএনপি’র সমর্থন 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত শনিবার (৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে প্রযুক্তি ও জ্ঞানভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবস্থায় টিকে থাকতে হলে মেধাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। তাই সাধারণ ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবিসমূহের সঙ্গে আমরা একমত।২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি কোটার মাঝে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্ধু ভারত
উন্নয়নের বন্ধু চীন : কাদের 

ডেস্ক রিপোর্ট ঃ ভারত রাজনৈতিক আর চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের বন্ধু। উন্নয়নের জন্য যেখানে সুযোগ-সুবিধা পাবো, তা কেন নেব না? বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত শনিবার দুপুরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালযয়র উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী পাহাড়ি ফলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। কাদের বলেন, উন্নয়নের জন্য যেখানে সুযোগ সুবিধা পাব তা কেন নেব না? এতে কারও কারও অন্তর্জ্বালা হতে পারে। সূত্রঃ কালের কণ্ঠ।

তাড়াশে এতিমদের মাঝে এমপি আজিজ 
আরিফুল ইসলাম, তাড়াশ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ তাড়াশের মাটিয়া মালিপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার হাফেজ ছাত্র ও এতিমদের সাথে মতবিনিময় করেছেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল আজিজ। গত শনিবার দুপুরে মাটিয়া মালিপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা চত্বরে নওগাঁ ইউনিয়ন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শবনম খন্দকার বাবুর আয়োজনে মাদ্রাসার সভাপতি আলহাজ্ব রোকনুজ্জামান সরকার’র সভাপতিত্বে হাফেজ ও এতিমদের সাথে মতবিনিময় ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি, ভাইস চেয়ারম্যান ম ম জর্জিয়াস মিলন রুবেল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আলী বিদ্যুৎ, নওগাঁ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রভাষক মোজাফফর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাই, উপজেলা সেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক লুৎফর কবির লিমন, ছাত্রলীগের সভাপতি ইকবাল হাসান রুবেল, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) সুলতান মাহমুদ মাহমুদ।

তাড়াশে আজ চলনবিল বার্তার গোল বক্স করে
৭ম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান

স্টাফ রিপোর্টার ঃআজ ৯ জুলাই ২০২৪ মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশের একমাত্র পত্রিকা সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার ৭ম বর্ষপূর্তি ও ৮ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে তাড়াশ সদরে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

কর্মসূচির মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সকাল ১০টায় র‌্যালী। এরপর তাড়াশ উপজেলা পাবলিক লাইব্রেরী হলরুমে পর্যায়ক্রমে আলোচনা সভা, কেক কাটা, ক্রেস্ট, সনদপত্র, প্রেস কার্ড ও পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বিতরণ করা হবে। এছাড়া পত্রিকা সম্পাদকেরএকটি কাব্য গ্রন্থেরও মোড়ক উন্মোচন করা হবেএ অনুষ্ঠানে । উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ৯ জুলাই সরকারী অনুমতি নিয়ে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার প্রথম যাত্রা শুরু হয়। সেই হিসাবে আজ পত্রিকাটি ৭ম বর্ষপূর্তি শেষে ৮ম বছরে পদার্পণ করছে।

তাড়াশে ৩০ বছরেও পাকা হয়নি যে রাস্তা 
সাব্বির আহম্মেদ,তাড়াশ ঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ হাট থেকে হামকুড়িয়া ওয়াবদা বাধ পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ৩০ বছরেও পাকাকরন না হওয়ায় ৪টি গ্রামের ১৮ হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
মহেশ রৌহালী গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি মকবুল হোসেন জানান, নওগা ইউনিয়নের নওগা হাট থেকে হামকুড়িয়া ওয়াবদাবাধ পর্যন্ত মাটির রাস্তাটি আজ থেকে ৩০বছর আগে ওয়াজেদ আলী চেয়ারম্যান নির্মান করেন। এর পর বিভিন্ন সময় মাটি ফেলে সংস্কার করা হলেও আজও পাকা করন হয়নি।ওই কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে বি-রৌহালী,মহেশ-রৌহালী,হামকুড়িয়া ও পং-রৌহালী গ্রামের প্রায় ১৮ হাজার মানুষ যাতায়াতের জন্য চরম বিপাকে পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে কাদায় মাখামাখি রাস্তাটি দিয়ে গ্রামবাসীকে পায়ে হেটে চলাচল করতে হয়। ৪টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাদের একমাত্র রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য নওগাঁসহ অন্যান্য হাটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। এ দিকে বি-রৌহালী গ্রামে ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পং-রৌহালী গ্রামে ১টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে ছাত্র-ছাত্রীদের আশা যাওয়ায় কষ্টের শেষ থাকেনা। তাড়াশ উপজেলা শহরেও সরাসরি যাতায়াত করা যায় না।
বি-রৌহালী গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, মাত্র আড়াই কিলোমিটার রাস্তা ৩০ বছরেও পাকাকরন না হওয়ায় ওই ৪ গ্রামের কৃষক ও ছাত্র-ছাত্রী বর্ষা মৌসুমে চরম অসুবিধার সম্মুখিন হন। তিনি আর ও জানান, ভোট এলে সবাই রাস্তাটি পাকা করনের ওয়াদা করেন কিন্ত নির্বাচনের পর কেউ মনে রাখেন না। পং-রৌহালী গ্রামের মোক্তার হোসেন জানান, আমাদের আয়ের একমাত্র উৎস কৃষি কিন্তু সেই উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গেলে আমরা বাজার মুল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। মাত্র আড়াই কিলোমিটার রাস্তা পাকা হলেই ওই ৪ গ্রামের প্রায় ১৮ হাজার লোক সরাসরি উপজেলার যে কোন হাট- বাজারে যাতায়াত করতে পারবেন।তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ফজলুর রহমান জানান, হামকুড়িয়া থেকে নওগা পর্যন্ত রাস্তার প্রকল্প জমা দেয়া হয়েছে, আশা করি দ্রæতই পাস হয়ে আসবে। এলে রাস্তাটি পাকা করনের কাজ শুরু হবে।

তাড়াশে ইউপি মেম্বরের এ কি ব্যবহার ?
তাড়াশ প্রতিনিধি ঃ সিরাজগঞ্জ তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে এক গৃহবধূকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে গত রবিবার (৩০ জুন) সকালে তাড়াশ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার মালিশন গ্রামে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন উপজেলার মালশিন গ্রামের মেয়েদের বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত ও খারাপ প্রস্তাব দেন। বিষয়টি নিয়ে গ্রামের স্থানীয় লোকজন অনেক বার শালিশী বৈঠক হয়েছে। তারপরও একই গ্রামের এক গৃহবধূকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় দেখেই কু-প্রস্তাব দেন।কিন্তু এই কু-প্রস্তাব মেনে না নিলে বলে যেখানে সেখানে খারাপ আচরণ করবে বলে হুমকি দেয় ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন। এমতাবস্থায় গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই ওই ঘরের পূর্ব পার্শ্বের জানালা দিয়ে উকি-ঝুঁকি মারতে থাকে। তখন গৃহবধূর স্বামী বুঝতে পেরে ঘর থেকে বের হয়ে স্থানীয় লোকজনকে ডেকে নিয়ে হাতে-নাতে মেম্বারকে ধরে রাখে এবং ঘটনাটির সত্যতা যাচাই করে।তবে এবিষয়ে ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেনের কাছ থেকে জানতে চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এব্যাপারে তাড়াশ থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তাড়াশ ফাজিল মাদ্রাসায় নি¤œমানের কাজের অভিযোগ 

লুৎফর রহমান ঃসিরাজগঞ্জের তাড়াশে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি (এডিপি)’র আওতায় তাড়াশ ফাজিল মাদ্রাসার গেটের পাশে ওয়াল নির্মান প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী(ইট) ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া উঠেছে। এতে কাজটি পায় মের্সাস হাসানা কন্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটির তদারকি কর্মকর্তা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো: বাবুল আক্তারকে না জানিয়ে নিম্মমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করতে থাকেন। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকালে তাড়াশ ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা কাজটি বন্ধ করে দেয়। উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসুচি (এডিপি)’র আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বরাদ্দের তাড়াশ ফাজিল মদ্রাসার ওয়াল নির্মাণ প্রাক্কলিত ব্যয় প্যাকেজে ধরা হয়েছে ১৫ লক্ষ ৪৮হাজার ৪শত টাকা।
বৃহস্পতিবার সকালে মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যে প্রাচীরের কাজ চলমান রয়েছে তাতে এত নিম্নমানের ইট (৩নং) ও খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে তা কল্পনাধীন। মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয়রা নিম্নমানের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করে কাজটি বন্ধ করে দেন।এ বিষয়ে মেসার্স হাসানা কন্সট্রাকশন ঠিকাদারি ট্রতিষ্ঠানের মালিককে অনিয়মের কারণ জানতে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
তাড়াশ ফাজিল মাদ্রসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান মনি বলেন, কাজ ভালোভাবে করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অফিসকে বলা হয়েছে। কিন্তু খারাপ ও নিম্মমানের কাজ হওয়ায় শিক্ষকরা কাজটি বন্ধ করে দিয়েছেন।কাজের তদারকি দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার জানান, আমাকে না জানিয়ে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৗশলী ফজলুল হক জানান, বিষয়টি সম্পর্কে শুনেছি। যদি অনিয়ম হয়, তাহলে নিম্মমানের সামগ্রী ফেরত পাঠানো হবে ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শত প্রতিকূলতা সত্বেও
চলনবিল বার্তার স্বপ্ন-সাধনা
আব্দুর রাজ্জাক রাজু

সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা একটি নাম, একটি অন্তহীন লড়াই ও স্বপ্ন-সাধনা। বহুমুখি চ্যালেঞ্জের এক সংগ্রামী অভিযাত্রা। এটা বাইরে থেকে ¯্রফে একটি নির্জীব কাগুজে নির্মাণ মনে হতে পারে। কিন্তু এর সত্ত¡া ও পদচারণা জীবনের মতোই ঘাত-প্রতিঘাত ও সমস্যা-সংকটে পরিপূর্ণ। প্রতিটি আবির্ভাব লগ্নেই এর প্রসব বেদনা খুব সুখকর নয় বরং যন্ত্রণাময়। প্রতিটি নতুন সংখ্যায় কিছু না কিছু আগাম ঝড়-ঝন্ঝার আভাষ-আতংক থাকে। থাকে বিচিত্র প্রতিকূলতার আলামত।নানা আইনকানুনের অনভিপ্রেত ঝক্কি-ঝামেলাও। ঝুঁকির দিক থেকে অর্থের যোগান প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলেও অন্যান্য বিভিন্ন কার্যকারণ ও পরিবেশ পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া নিত্যদিনের অভিজ্ঞতা। এসব অনুকূলের চেয়ে প্রতিকূলতা বেশী, সহায়ক অপেক্ষা বিরুপ এর ব্যপ্তি অধিক।
বিশেষ করে নিরেট পল্লীর প্রান্তরে থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশের প্রয়োজনীয় উপাদান,উপকরণ, সরঞ্জাম ও দক্ষ জনবলের ঘাটতি থাকে। ক্ষুদে একটি নিয়মিত প্রকাশনার ক্ষেত্রে একজন উপযুক্ত গ্রাফিক্স ডিজাইনার এর নিশ্চয়তা থাকার কোন বিকল্প নেই। অথচ তাড়াশে এমন দক্ষ হাতের প্রচন্ড অভাব। স্থানীয়ভাবে যারা কিছু অফিসিয়াল গ্রাফিক্সের কাজ জানেন, তারা শৈল্পিক ও সৃজনশীল দৃষ্টিতে গ্রাফিক্সের কাজে একদিকে অপারগ অন্যদিকে উৎসাহী নন। কেননা পত্রিকার পাতাগুলো একটু উদ্ভাবনী, দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় করে পরিবেশনে যে শ্রম, মেধা, দক্ষতা ও সময় দরকার তা গ্রামীণ গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের তেমন থাকে না। তারা এটাকে কম লাভজনক মনে করে ব্যবসিকভাবে এড়িয়ে চলে। ফলে পত্রিকার বাহ্যিক মূল কারিগর গ্রাফিক্স কাজের পারদর্শী লোক পাওয়া কঠিন। কখনো পেলেও তার পারিতোষিক চাহিদা থাকে অনেক বেশি যা অলাভজনক ছোট কাগজের পক্ষে মেটানো দু:সাধ্যজনক। এমতাবস্থায় এটা একটা মূখ্য পেশাগত চ্যালেঞ্জ। এরপর বা আগেই আসে পত্রিকার সংবাদসহ সব রকম লেখা সম্পাদনা ও কম্পোজের জন্য চৌকষ সহযোগী জনবল। যা গ্রামাঞ্চলে পাওয়া দুষ্কর। বিশেষ করে সে ধরনের সম্পাদনা সহযোগী মেলা প্রায় সর্বদাই সহজ নয়, গ্রামীন অঞ্চলে তা কখনো বা বিরল। যদিও কম্পিউটার কম্পোজের জন্য স্টাফ পাওয়া এখন অসম্ভব নয়। তাছাড়া এ কাজের জন্য মান সম্পন্ন ল্যাপটপ, ডেক্সটপ, প্রিন্টার, ইন্টারনেট, অনলাইন,ওয়েবসাইট বা সোস্যাল মিডিয়া পেজ সংযোগ ইত্যাকার সুবিধাদি সহজলভ্য করা বেশটা কষ্টকর এবং ব্যয় সাপেক্ষ। এছাড়া গ্রামে যেখানে অফসেট মুদ্রণ ব্যবস্থাতো দূরের কথা, সাধারণ মানের মুদ্রণ সুবিধাই বেমালুম অনুপস্থিত সেখানে বাইরের দূরবর্তী শহর থেকে পত্রিকা ছেপে আনা যে কতটা সাগর পাড়ি দেয়ার সমান ক্লান্তিকর ভুক্তভোগী মাত্র তা জানে।যেমন ইদানিং তাড়াশ থেকে বগুড়া কোন বাস-কোচ যাতায়াত করে না। যে কারণে বগুড়া থেকে ঢাকার কোচে পত্রিকা পাঠিয়ে ভূইয়াগাঁতী চেন মাস্টারকে ড্রপ দিয়ে সিএনজিতে তাড়াশ পাঠানো যে কতখানি বিরম্বনাপূর্ণ তা অন্য কারো পক্ষে আঁচ করা খুব সহজ হবে না। শুধু যদি মোবাইলে খবর রাখতে যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাজ করে তা সত্যি বড্ড ভোগান্তির শামিল; কখনো বা তা স্ট্রোক-হার্ট ফেল করার মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এমনও হয় কাগজের প্যাকেট কোচে ঢাকা চলে গেছে, পরদিন ফিরে এসেছে।সে কারণে পত্রিকার ডেটলাইন অনুসারে পাঠকের হাতে যায় নি তা নিয়ে জিজ্ঞাসার সম্মুখিন হতে হয়েছে পাঠকের কাছে। তারপর পত্রিকা প্রসেস করে স্থানীয় হকারকে দিয়ে বিতরণ, প্রতি সংখ্যা বা মাস শেষে বিল-মূল্য সংগ্রহ সেও এক বিব্রতকর কর্মযজ্ঞ। সর্বোপরি একটি পত্রিকার প্রাণ শক্তি বা মূল ইন্ধন যে বিজ্ঞাপন তাড়াশের ন্যায় গ্রামীণ এ জনপদে সে এক দুঃসহ যন্ত্রনার কাহিনী। প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের চেয়ে ব্যক্তির বিজ্ঞাপন অপেক্ষাকৃত বেশি পাওয়া গেলেও নানা কারণে তাপীড়াদায়ক বা বেদনাদায়ক। ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে অনেক সময় সম্মান-সমীহ তথা মানবিক মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়। বিচিত্র মানুষের অদ্ভুত বিচিত্র মন মানসিকতা। তাছাড়া বিজ্ঞাপনের সাথে আর্থিক লেনদেনের অনুসঙ্গ থাকায় প্রায়শ: সেটা স্পর্শকাতর বিষয়ে রুপ নেয়।সেজন্য ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন মোটামুটি বেশি পাওয়া গেলেও সেক্ষেত্রে অস্বস্থি ও এক ধরনের আত্ম দহন জালার ক্লেদাক্ত অনুভূতি নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর বাইরে সরকারি বিজ্ঞাপন সংগ্রহ নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের সিন্ডিকেট তৎপর থাকায় সুস্থ ধারায় নীতির ভিত্তিতে সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়া প্রত্যাশা করা যায় না। এ ক্ষেত্রে অন্য সতীর্থরা তকমা ঝুলিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করে। কিন্তু পত্রিকার বেলায় সরকারী ডিএফপি মিডিয়া তালিকাভূক্ত না হলে সমস্যা আছে। এর আরো একটা হেতু হল আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ ও জাতিগতভাবে বর্তমানে আমরা আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ হেন পরিস্থিতিতে স্বচ্ছতা ও সততার সাথে বিজ্ঞাপন পাওয়া মুশকিল। এমনকি রাজনীতি ও দলবাজি না করলে সৌজন্যমূলক কিছুও পাওয়া যায় না। একই প্রেক্ষাপটে একজন সৎ ও আদর্শবান সাংবাদিকের ক্লাব থাকে না, সাংবাদিক জুটি ও সঙ্গী থাকে না। সে তোষামোদী, তাবেদারী কিংবা চামচাগীরিও করতে পারে না।ফলে একজন প্রকৃত লেখক-সাংবাদিকের দারুন নিসঙ্গতা ও অসহায়ত্ব কাজ করে।
পক্ষান্তরে ২০১৭ সালে যখন আমরা চলনবিল বার্তা প্রথম প্রকাশ করি তখন প্রতি সংখ্যা পত্রিকার যে খরচ পড়ত এতদিনে তা প্রায় দ্বিগুণের কাছে পৌঁছে গেছে। বর্তমান মূল্য স্ফীতির প্রভাব মূদ্রণ বাজারেও পড়েছে সমানভাবেই তাতো বলাই বাহুল্য। সবাই জানে, সংবাদধর্মী পত্রিকা প্রকাশনা ব্যবসা-বাণিজ্যের অংশ। সংবাদমাধ্যমের দুটো শীর্ষ বৈশিষ্ট্য হলো এটা একই সাথে ব্যবসা করে এবং যুগপৎ আদর্শিক শিক্ষা ও বিনোদন দেয় এবং রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের অধিকারের পক্ষে উচ্চকিত থাকে। গণমাধ্যম প্রায় সব ক্ষেত্রেই গণতন্ত্রের বিকল্প ভূমিকা পর্যন্ত নিতে পারে। এমনকি সংবাদপত্রহীন অনুদার গণতন্ত্র একনায়কতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্রেরই নামান্তর।
যাহোক, যা বলছিলাম প্রকাশনাকে ব্যবসা হিসেবে সফল করতে না পারলে এর দীর্ঘ স্থায়ীত্ব তথা টেকসই ব্যাপারে অনিবার্যভাবে অনিশ্চয়তা থেকে যায়। পূর্বে উল্লেখিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাড়াশে যেখানে বিজ্ঞাপন এর যোগান নাই বললেই চলে; সেখানে এটাকে বাণিজ্যিক কৌশলে সফল করার সম্ভাবনা কল্পনা করাই যায় না। কিন্তু অতীত ও বর্তমান ইতিহাস ঘাটলেও দেখা যায়, যারা পত্রপত্রিকা বা লিটল ম্যাগ এর সম্পাদক ও প্রকাশক তারা নিজেদের সহায়-সম্পদ বিক্রয়-বিসর্জন দিয়েও নেশাগ্রস্থের মতো পত্রিকা ছাপিয়ে থাকেন বাতিকের কারণে। এমনও জেনেছি স্ত্রীর গহনা অথবা নিজের হাতের সোনার আংটি বেচে প্রেসে পত্রিকার বিল পরিশোধ করেছেন। চলনবিল বার্তার ক্ষেত্রও খুব একটা ব্যত্যয় হয় নি। নিজের গাঁটের টাকায় অধিকাংশ সময় ভর্তুকি দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করতে হয় বলে সম্পাদকের সাথে তার পরিবারের সবার দ্বিমত পোষন বেড়েই চলেছে। এর পেছনে থাকে সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতার প্রতি মোহাচ্ছন্নতা বা মগ্নতা। অবশ্য এখনকার দিনে এরকম দেউলিয়াপনার সংখ্যা কম। আজকাল শহরে পত্রিকা ছাপিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের দৃষ্টান্তই বেশি। গ্রামের প্রকাশনার কথা আলাদা যেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এখনো অপতুল।
সবশেষে বলবো, চলনবিল বার্তা প্রথমত: তাড়াশের আলো, অতঃপর চলনবিলের জ্যোতিস্ক-নক্ষত্র। সংবাদ সাহিত্য সংস্কৃতি ত্রিদিগন্তেই কম বেশি এর সক্রিয় বিচরণ। একটি সংবাদপত্র একটি জনপদের অগ্রগতির পদচিহ্ন, উন্নয়নের চিহ্নরেখা, আলোকবর্তিকা তথা বাতিঘর। সংবাদপত্র সমাজেরও দর্পণ। একটি এলাকা বা জনপদের অনেক সুনাম, সুখ্যাতি ও সুপরিচিতি বহন করে একটি নিয়মিত পত্রিকা। কোন এলাকার মানুষ কত শিক্ষিত, সচেতন, সংস্কৃতবান ও আধুনিকতার অনুসারী তারএকটা সাধারণ নমুনা বা প্রতীক হল পত্রপত্রিকা। এটা আলোর দিশারী, গণতন্ত্রের সহায়ক পূজারী। বিশেষত: ইদানিংকাল অনলাইন ও অফলাইন নেশার জগত থেকে তরুণ ও যুব সমাজকে ফেরাতে সংবাদপত্র হতে পারে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। সংবাদপত্র তাই প্রদীপের মতো। কোনো বিনিময় না পেয়েও আলো ছড়িয়ে যায়।সমাজে ও জনপদে এর কল্যাণকর প্রভাব অপরিসীম যদি তা আমরা কাজে লাগাতে পারি। তাই চলনবিল বার্তা তাড়াশের গর্ব, চলনবিলের অহংকার এবং অন্য অর্থে এলাকার জ্ঞান-গুরুগৃহ।
বিধায় বিশেষভাবেই তাড়াশবাসীর আবশ্যিক কর্তব্য হচ্ছে- এই পত্রিকাটির অস্তিত্ব চলমান রাখতে সহযোগিতার হাত বাড়ানো। কেননা এটা তাড়াশের সম্পদ। কখনো যেন এটা না হারিয়ে যায় সেদিকে তাড়াশের মানুষের সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সেজন্য ছোটখাটো বিজ্ঞাপনই অবলম্বন হতে পাওে পত্রিকার জন্য। সুশীল ও নাগরিক সমাজ এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। এটা আপামর জনতা ও সরকারি-বেসরকারি সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমরা তাড়াশের প্রগতি, সমৃদ্ধি চাইলে এই ক্ষুদ্র সংবাদপত্রকে সহায়তা দিতে হবে। সেটা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হিতকর ও কল্যাণকর যদি তা আমরা অনুধাবন করতে পারি। আবারো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই ,জ্ঞানভিত্তিক ও স্মার্ট সমাজ গড়ার জন্য এটাই সর্বোত্তম পন্থা তা ভুললে চলবে না। এর মধ্য দিয়েই এলাকার সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশ ও প্রসার সম্ভব। একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাংবাদিকতার আদর্শের লড়াকু সৈনিক এই কাগজটিকে বাঁচিয়ে রাখা তাড়াশের জনগণের একান্ত দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে। এই চিন্তা, দর্শন ও বিশ্বাসকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না বরং লালন ও ধারণ করা বাঞ্ছনীয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা বহু দূর এগিয়ে যাক, সুদীর্ঘকাল সজীব ও প্রাণবন্ত সেবা দানে নিজেকে উৎসর্গ করুক এই কামনা। আর একান্ত প্রার্থনা হলো- মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৎ ও পবিত্র লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, নেক নিয়ত ও আমল সমর্থন, সজীব ও সফল করে দেন। এর মাধ্যমে আমরা যেন মানুষের অধিকার ও মানবতার পক্ষে নিষ্ঠার সাথে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে পারি। মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভিত্তি করে রাষ্ট্র ও সমাজের গঠনমূলক সমালোচনা ও মানুষকে ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ ও মন্দ কাজে নিরুৎসাহিত করার নীতিতে অটল থাকি।

রবীন্দ্র সাহিত্যে চলনবিল
ড. মোঃ খায়রুজ্জামান মুননু 

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯০ খ্রিষ্ঠাব্দের ২০ জানুয়ারী সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে আসেন বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ক্রয়কৃত জমিদারী তদারকি কাজে। তিনি পুর্ববঙ্গে অবস্থান করেন ১২ বৎসর কাল। তার জমিদারী তিনটি পরগনায় বিস্তৃত ছিল। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁ জেলার পতিসর এবং কুষ্টিয়ার শিলাইদহ। তখন শাহজাদপুর ছিল পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহুকমার একেবারে নির্ভৃত পল্লী। চারদিকে করতোয়া, বড়াল, গোহালা, হুড়াসাগর ও বিশাল চলনবিল। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিশীল প্রতিভা যেন পেয়ে গেল নুতন রসদ। ১৮৯০ খ্রীঃ হতে ১৯০২ খ্রীঃ পর্যন্ত কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ শাহজাদপুর থেকে বেশ কয়েকবার চলনবিল হয়ে পতিসর ও দিঘাপাতিয়ায় গমন করেছেন। উল্লেখ্য, শাহজাদপুর থেকে পতিসর যাবার একমাত্র ঝুঁকিমুক্ত নৌ পথ ছিল বড়াল,করতোয়া নদী হয়ে চলনবিলের পুর্বাংশ ধরে আত্রাই নদ। ১৮৯৪ খ্রীঃ এর সেপ্টেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথ প্রাদেশিক সাহিত্য সম্বেলনে যোগ দিতে শাহজাদপুর থেকে বজড়া নৌকা যোগে করতোয়া নদী পথে দহকুলা, নওগাঁ বাজার হয়ে চলনবিলের তাড়াশ অংশ পাড় হন। ধারণা করা হয়, নওগাঁয়ের (নবগ্রাম) জলাকীর্ণ প্রকৃতি, মাঠ ঘাট কবিকে দারুনভাবে আলোড়িত করে। এই ভ্রমন বিষয়ে কবি ভ্রাতুস্পুত্রী ইন্দিরা দেবিকে লেখা চিঠিতে বর্ণনা করেন,
”এক একটি কুড়েঘড় ¯্রােতের মধ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার চার পাশের প্রাঙ্গন জলমগ্ন ধানের ক্ষেতের ভিতর দিয়ে বোট সর সর শব্দে যেতে যেতে হঠাৎ কোন জলাশয়ের মধ্যে গিয়ে পরে”।
নাটোরের মহারাজা জগনিন্দ্রনাথ এর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রাজা জগনিন্দ্রনাথ প্রায়শঃ তার রাজবাটিতে সাহিত্য ও সংগীত আসরের আয়োজন করতেন। সে আসরে কবি কখনও পতিসর থেকে কখনও শাহজাদপুর থেকে যোগ দিতেন। চলনবিল ঘেরা শাহজাদপুরের আবাস ভূমি কবিকে ভীষনভাবে অনুপ্রাণিত করে। তিনি উদাত্ত চিত্তে লিখেছেন,
”পৃথিবীর অনেক জায়গায় বসে লিখেছি কিন্তু শাহজাদপুরের মত লেখার প্রেরণা আমি আর কোথাও পাইনি”।
একইভাবে চলনবিলের প্রকৃতি ও রুপ সৌন্দর্য বর্ণনা করতে ”পুরস্কার” কবিতায় কবি উচ্চারণ করলেন,
“বহু মানবের প্রেম দিয়ে ঢাকা
বহু দিবসের সুখে দুখে আঁকা
লক্ষ যুগের সংগীতে মাখা
সুন্দর ধরাতল——–”।
কবি প্রমথ চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুস্পুত্রী ইন্দিরা দেবিকে বিবাহ করেন। ইন্দিরা দেবির পিতার নাম শ্রী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি প্রমথ চৌধুরীর আদি নিবাস ছিল চলনবিলাঞ্চল। বর্তমান পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলাধীন হরিপুর গ্রামে তিনি জন্ম গ্রহন করেন।
তাড়াশের জমিদার বনওয়ারী লাল রায় বাহাদুর এর সাথে প্রমথ চৌধুরীর আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। একবার তাঁদের উভয়ের আমন্ত্রণে নাটোরের ”রানী ভবানী” মহল প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত সাহিত্য আসরে যোগ দিতে কবি গুরু চলনবিল পথে পরিভ্রমণ করেন। এই ভ্রমণ পথে জমিদার বনওয়ারী লাল সাহেবের অনুরোধে করতোয়া নদী তীরের রানীগঞ্জ হাট খোলায় (বর্তমান নওগাঁ হাট) কবি গুরুর যাত্রা বিরতির আদি তথ্য পাওয়া যায়।ভ্রাতুস্পুত্রী ইন্দিরা দেবিকে কবি মোট ১৪৫ খানা চিটি লিখেছেন। যা পরবর্তী সময়ে ”ছিন্ন পত্রাবলী” তে স্থান পায়। এই পত্রাবলীতে কবির নদী পথে ভ্রমন বিষয়ক অনেক কিছু স্থান পেয়েছে। ২০ জুন ১৮৯১ সালে কবির চলনবিল ভ্রমন নিখুতভাবে বর্ণিত হয়েছে ইন্দিরা দেবিকে লেখা একটি চিঠিতে। শাহজাদপুর থেকে রওয়ানা হয়ে বিলের ভেতর দিয়ে বোটে চলেছেন কবি। মাঘ মাসের নদী বর্ণনায় তিনি লিখেছেন,
”ভোর থেকে আরম্ভ করে সন্ধ্যা সাতটা আটটা পর্যন্ত ক্রমাগত ভেসেই চলেছি। সেই নদী থেকে ক্রমেই একটা স্রোতম্বিনী নদীতে এসে পড়া গেল। সেটা বেয়ে ক্রমে এমন এক যায়গায় এসে পড়লুম যেখানে ডাঙ্গায় জলে একাকার হয়ে গেছে। নদী এবং তীর উভয়ের আকার প্রকারের ভেদ ক্রমশই ঘুরে গেছে দুটি অল্প বয়সের ভাই বোনের মত। তীর এবং জল মাথায় মাথায় সমান। ক্রমে নদীর সেই ছিপছিপে আকারটুকু আর থাকেনা। নানা দিকে নানা রকমে ভাগ হয়ে ক্রমে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো। চতুর্দিকে যতদুর চেয়ে দেখি খানিকটা জল খানিকটা ডাঙ্গা। ভোরের বেলা বোট ছেড়ে দিয়ে কাচিকাটায় গিয়ে পড়া গেল। কাচিকাটা হলো বারো তেরো হাত সংকীর্ন খালের মত ক্রমাগত একে বেঁকে চলা জলরাশি। সমস্ত বিলের জল তারই ভিতর দিয়ে প্রবল বেগে নিস্ক্রান্ত হচেছ। এরই মধ্যে আমাদের বোটটা নিয়ে মর মর শব্দ করতে করতে খোলা নদীতে এসে পড়লাম”।
চলনবিল পরিভ্রমণ ও বিলাঞ্চলের খাল নদী কবির মনে যে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল তার আরেকটি লেখা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়। পতিসর থেকে ১৮৯৩ সালের ১১ আগষ্ট তারিখে লিখেছেন,
”অনেকগুলো বড় বড় বিলের মধ্য দিয়ে আসতে হয়েছে। এই বিলগুলো ভারী অদ্ভুত-কোন আকার আয়তন নেই,জলে স্থলে একাকার-প্রৃথিবী সমুদ্র গর্ভ থেকে নুতন জেগে উঠবার সময় যেমন ছিল। কোথাও কোন কিনারা নেই-খানিকটা জল-খানিকটা মগ্নপ্রায় ধান ক্ষেতের মাথা, খানিকটা শেওলা এবং জলজ উদ্ভিদ ভাসছে। পানকৌড়ি সাঁতার দিচেছ, জাল ফেলবার জন্য বড় বড় বাঁশ পোতা, তারই উপর কটা রঙ্গের বড়ো বড়ো চিল বসে আছে”।এমন এক বিলের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ পেলেন এমন এক সংবাদ যাতে তিনি অবাক না হয়ে পারলেন না।
”ঠিক সুর্যাস্তের কাছাকাছি সময় যখন অরণ্য ঘেড়া একটি গ্রাম পেরিয়ে আসছিলুম, একটা লম্বা নৈাকায় অনেকগুলো ছোকরা ঝপ ঝপ করে দাঁড় ফেলছিল এবং সেই তালে তালে গান গাচ্ছিল,
যোবতী ক্যান বা করো মন ভাড়ী
পাবনা থ্যাইকা আন্যা দেব
ট্যাকা দামের মোটরি।
গানটা শুনে বেশ মজা লাগলো। যুবতীর মন ভারী হলে জগতে যে আন্দোলন উপস্থিত হয়, এই বিলের প্রান্তেও তার একটা সংবাদ পাওয়া গেল”।
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ চলনবিল অভ্যন্তরে তিনটি গান রচনা করেন। ১৮৯৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা আটদিন কবিকে নৌপথে ভ্রমণরতঃ অবস্থায় দেখা যায়।
২১ সেপ্টেম্বর বোটে রওয়ানা হয়ে ইছামতি, যমুনা, বড়াল ধলেশ^রী নদী দিয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুর পৌঁছান।পরদিন ২৪ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুর থেকে রওয়ানা হযে সারাদিন কবি চলনবিলে কাটান এবং ২৫ সেপ্টেম্বর পতিসর পৌছান। দুদিন সেখানে কাটিয়ে ২৮ সেপ্টেম্বর রেলপথে কলকাতা রওয়ানা হন। এই আট দিনে কবি রচনা করেছিলেন ১৪টি বিখ্যাত গান। কবি ব্যক্তিগত ডায়েরি লিখতেন না। তবে ঐ সময়ে রচিত কবিতা ও গানের নীচে রচনার তারিখ ও স্থান লিখে রাখতেন। সে হিসেবে জানা যায়, ২৩ সেপ্টেম্বর শাহজাদপুরের পোতাজিয়া বিলে লেখেন “ ভালবেসে সখি নির্ভৃত যতনে” ২৪ সেপ্টেম্বর তাড়াশের হামকুড়িয়া গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে কবি রচনা করেন “যদি বারণ করো তবে গাহিব না” এবং গুরুদাসপুরের কাছিকাটা সংলগ্ন এলাকায় রচনা করেন “তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা” শিরোনামের বিখ্যাত তিনটি গান ।
জমিদারি তদারকী উপলক্ষে কবিকে কাটাতে হয়েছে পল্লী প্রকৃতির অন্তরঙ্গ সান্নিধ্যে। নৌপথে বোটে করে দিন কাটিয়েছেন আর প্রত্যক্ষ করেছেন অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। নদী তটের জন জীবন, নদ নদীর জল স্রোতের বিচিত্রতা, শরৎ মধ্যাহ্নের শান্ত ¯িœগ্ধতা, বিস্ফারিত জলের ঢেউ, চলনবিলাঞ্চলের জীববৈচিত্র,খাল-হাওরের জলজ লতাগুল্ম কবি কল্পনাকে যে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

লেখক ঃ গবেষক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়, গাজীপুর।পিজিডিআরডি, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, বগুড়া। ঠিকানা ঃ নওগাঁ হাট, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ। মোবাইলঃ ০১৭৫৭-৬৪৯৬১৯

আসুন ‘চলনবিল বার্তা’ পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রাখি
সনজু কাদের 

তাড়াশের গণমানুষের একটি পরিচিত পত্রিকার নাম সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা। স্থানীয় পর্যায়ে পত্রিকাটি পড়ে নাই বা এর নাম শোনে নাই সচেতন মহলে এমন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই কম। সপ্তাহ পেরোলেই পত্রিকাটি পৌঁছে যায় তাড়াশ সহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলায়। পৌঁছে দেয় চলনবিলের বিভিন্ন সমস্যা সহ সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার নানা খবরাখবর। চলনবিলে সপ্তাহ জুড়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো এক ঝাঁক নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকরা অতি নিখুতভাবে পত্রিকাটিতে তুলে ধরেন। এলাকার কবি, লেখকরাও তাদের লেখা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পত্রিকাটিতে প্রকাশ করে চলনবিলের সাহিত্যের আলো ছড়াচ্ছেন। আর এই আলোয় আলোকিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন কবি লেখক ও সংস্কৃতিমনা মানুষ। যাদের দ্বারা সমাজের কোন উপকার না হলেও থাকে না ক্ষতির কোন সম্ভাবনা, থাকে না দুর্নীতি ও অবক্ষয়ের ভয়। অন্যদিকে ধীরে ধীরে চলনবিলে বাড়ছে পত্রিকাটির পাঠকের সংখ্যা। ক্রমশ: হয়ে উঠছে পাঠক নন্দিত। চলনবিলের অনেক কৃতি সন্তান দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তাদের অনেকের হাতেও ডাকযোগে পৌঁছে যাচ্ছে এই সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা। এটা দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও তাদের চলনবিলের কথা মনে পড়ে যায়। স্বপ্ন দেখেন চলনবিলের মানুষের জন্য কিছু করতে। সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা চলনবিল বিশেষ করে তাড়াশের আজ একটি সুপরিচিত নাম। দু-এক সপ্তাহ প্রকাশে একটু এলোমেলো হলে অনেকে হকারকে জিজ্ঞেস করেন, পত্রিকাটি প্রকাশ না হবার কারণ। কিন্তু অনেকেই জানেন না পত্রিকাটি কিভাবে প্রকাশ পায়, প্রকাশে অর্থই বা কিভাবে আসে। আমরা সবাই অবগত আছি যে. তাড়াশে তেমন কোন বড় কলকারখানা নাই, নাই কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যেও প্রসার। অথচ দেশের প্রায় সব পত্রিকারই প্রকাশের অর্থের যোগান দেয় ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন অথবা বাণিজ্যিক আয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা এসব বিজ্ঞাপন হতে বঞ্চিত। উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ সহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতেও আমরা পাই না তেমন কোনো বিজ্ঞাপন বা সহযোগিতা। ১৬ ডিসেম্বর, একুশে ফেব্রæয়ারি, ২৬ শে মার্চ, নববর্ষ ও দুই ঈদ সংখ্যা ছাড়া প্রায় সব সংখ্যা প্রকাশে অর্থনৈতিক যোগান দিতে হয় প্রকাশকের নিজস্ব তহবিল হতে। সম্পাদক-প্রকাশকের পরিবারের সদস্যরা নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা রেখে পত্রিকা প্রকাশের অর্থ ব্যয় করাটাকে অনেক দিন হতে প্রতিবাদ করে আসছেন। তবুও প্রকাশক পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে পত্রিকাটি প্রকাশ করে আসছেন। তাড়াশেরএকটিমাত্র পত্রিকা যদি অর্থের অভাবে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে এ লজ্জা আমার, আপনার, সচেতন মহলের সবার। তাই আসুন বিজ্ঞাপন সহ বিভিন্নভাবে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে আমরা সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা’কে বাঁচিয়ে রাখি। একটা বিষয় বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে তাহল, পত্রিকাটির সম্পাদক-প্রকাশকসহ এর ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কারোই দলীয় দৃষ্টিকোন ও দলীয় আনুগত্য নেই। সম্পূর্ণ দল মতের উর্দ্ধে থেকে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে এর অবস্থান ধরে রেখেছে। সব মহল যদি সহমর্মীতার হাত বাড়ায়, নীতি-আদর্শ অটুট রেখেও এটাকে চালিয়ে নেয়া কোনো ব্যাপার নয়। আমরা বিশেষভাবেই তাড়াশবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা ও সহায়তা প্রত্যাশা করতে পারি তাতে মনে হয় দোষের কিছু নেই।
লেখকঃ বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার ব্যস্থাপনা সম্পাদক।

মাদকের চেয়েও ভয়ংকর মোবাইলের নেশা

মোঃ মুন্না হুসাইন 
মাদকের চেয়েও ভয়ংকর মোবাইলের নেশা। বর্তমান সময়ে মাদকের চেয়ে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে যুবক-যুবতী এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলায়। এই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে অহরহ। বর্তমান সময়ে যুবক-যুবতীরা প্রেমের সম্পর্কে সারারাত ফোনে কথা বলছে মেসেজ করছে। কখন যে রাত পার হয়ে যাচ্ছে তারা সেটা বলতে পারছে না। তাছাড়া বড় সমস্যা ফোনে সারাক্ষণ ফ্রি ফায়ার, পাবজি, টিকটক সহ বিভিন্ন গেমে ছোট্ট বাচ্চারাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন না দিলে তারা কান্নাকাটি, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিচ্ছে। এমনকি মোবাইল ফোন নিতে না দিলে বা কেড়ে নিলে বা মোবাইল চালাতে মানা করতে বললে বকা দিলে অভিমান করে আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে। আর বর্তমানে যেসব ছেলে-মেয়েরা মোবাইলের নেশায় আসক্ত হচ্ছে, তারা জগতের সমস্ত কিছু ভুলে যাচ্ছে। বর্তমানে ছেলে-মেয়েরা কোনো খেলাধুলা করতে চাই না। সারাদিন মোবাইল ফোন নিয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে তাদের নিজের ক্ষতি করছে, তা তারা বুঝতে পরেছে না। কিন্তু অভিভাবকরা কোনো মতেই মোবাইলের আসক্ত থেকে সরাতে পারছে না।
নওগাঁ ইউনিয়নের মহেশরৌহালী গ্রামে সরজমিনে গিয়ে জানতে পারলাম ও দেখতে পেরেছি মোবাইলে প্রেমে আসক্ত হয়ে দুই নবম শ্রেণির শিক্ষর্থী এক হেরোইনছি মার্কা এক বকেটে ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিবাহ করেছে। সেই মেয়েকে জিঙ্গাসা করলে এক মুহূর্তে সে নিজেই শিকার করে বলেন, আমি সত্যিই মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ে বিবাহ করেছি। তিনি আরও বলেন, কোনো ভাবেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। সারাক্ষণ টিকটক, ইউটিউব ও ফ্রি ফায়ার এ পড়ে থাকি। টিকটকের ভিতর ডুকলে বের হতে ইচ্ছে করে না। মোবাইলে চার্জ শেষ না হওয়া পযর্ন্ত টিকটক ভিডিও দেখতে থাকি। আমার মাসে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মোবাইলে খরচ হয়। রাত দুই টা থেকে তিন টা পর্যন্ত মোবাইল দেখে ঘুমায়। যার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। সব কিছু বুঝতে পারছি কিন্তু এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। বিরল গ্রামের শহিদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, সন্তানদের মোবাইল নেশা থেকে সরানো দরকার। এরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, এখন থেকে সারাক্ষণ মোবাইল টিপলে তাদের চোখের সমস্যা হবে তাতে এদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে। যে ভাবে হোক এদের কাছ থেকে মোবাইল নিতে হবে। কারন মোবাইল ফোনের নেশা, মাদকের চাইতে ভয়ংকর। নাম গোপন রাখা এক শিক্ষক বলেন, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া ঠিকমতো করছে না। বই-খাতা ফেলে অধিকাংশ ছেলে-মেয়েরা মোবাইলে সময় দিয়ে থাকে। অভিভাবকরা মোবাইল ধরতে নিষেধ করলেই আত্মহত্যার হুমকি দেয় ছেলে-মেয়েরা। এমনকি শিক্ষকও তার বাচ্চা নিয়ে মহা বিপদে আছে। তিনিও এর প্রতিকার খুজে পাচ্ছে না।
চক্ষু ডাক্তার রবিউল আউয়াল বলেন, চোখের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসা বেশিরভাগ রোগীর মধ্যে অধিকাংশ ছোট বাচ্চা ও যুবক যুবতীরা। এরা সবাই মোবাইলের পর্দায় চোখ রাখতে রাখতে চোখ নষ্ট করে ফেলছে। বর্তমান প্রজন্ম এইভাবে মোবাইলে আসক্ত হলে কি যে হবে তা বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে তিনি এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে বলছেন।

রোগ চিকিৎসার অতীত ও বর্তমান
মুহাম্মদ জাকির হোসেন

রোগ চিকিৎসায় অতীতে কিভাবে মানুষ চলত এবং বর্তমানে কিভাবে চলছে সেই বিষয়ে সুধী পাঠক সমাজকে কিছু ধারণা দেওয়াই আজকের নিবন্ধের উপস্থাপনা। গত ৭০ দশকে এলাকার বয়স্ক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গের নিকট গল্প শুনেছি। তৎকালীন সময়ে চিকিৎসার এত রমরমা অবস্থা ছিল না। তখন প্রত্যেক বাড়িতেই গাভী পালন করা হতো। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ দুধ হতো প্রতি বাড়িতেই। দুধতো পান করত এছাড়া দুধের ঘি, ঘোল, দই ইত্যাকার খাদ্য প্রস্তুত করে খেত। চলনবিলের উৎপাদিত মাছ প্রচুর পরিমাণ খেত। তখনকার দিনে চলনবিলের নালা, নর্দমা এবং বিলের কাটা খাল নদী তথা নিম্ন এলাকায় দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ প্রচুর পরিমাণ পাওয়া যেত। মাগুর, শোল, বোয়াল, টেংরা, পুঁটি, শিং মাছ সহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ-মাছের ডিম। এছাড়া মাছের তেলের সাহায্যে কুপি বাতি জালানো হতো। তখনকার দিনে বিদ্যুতের প্রচলন হয়নি। এছাড়া আশেপাশের নদীতে ভরা বর্ষা মৌসুমে ইলিশ, বাচা,গলসা, টেংরা,বাইস,ইটা,গুচি পাওয়া যেত। ইলিশ বাচা এত পরিমাণে পাওয়া যেত তা খেয়ে শেষ করা যেত না।
দেশি মোরগ-মুরগি,হাঁস,গরু-ছাগল প্রতি বাড়িতে পালন করা হতো মাংসের ও ডিমের জন্য। শাকসবজি বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো। এছাড়া দেশি আউস-আমন,ঢেঁকি ছাটা চাউলের ভাত সহ নানা রকম খাদ্য প্রতিদিনই মানুষ খেত। অতীতে সার কীটনাশক ঔষধের প্রচলন ছিল না। সবকিছুই প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো। মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা কিছু প্রয়োজন হতো, সেগুলো ছিল অকৃত্রিম নির্ভেজাল প্রাকৃতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত। এগুলো সবই প্রোটিন সমৃদ্ধ। একজন মানুষের দেহে যতরকম প্রোটিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, লবণ প্রয়োজন হতো তা সবই পাওয়া যেত। এর কোন রকম ঘাটতি ছিল না। এছাড়া খরা মৌসুমে চলনবিলের সর্বত্র নানা প্রজাতির পাখি মিলতো যা মাংসের চাহিদা মিটাত।আমন ধানের ঢেঁকি ছাটা চাউলের ভাত, প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ মাংস, শাকসবজি, দুধ, ঘি,দই,ঘোল যা মানুষের শরীরের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা প্রচুর পরিমাণ নিজের হাতের কাছেই মিলত।
তখন চলনবিলে শিক্ষার এতটা প্রসার ঘটেনি। অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর, তাদের মধ্যে বেশ কিছু কুসংস্কার প্রচলিত ছিল। শিশু জন্মের পরে দেখা যেত প্রসূতির ঘরের দরজা বেতের কাঁটা, লোহার টুকরো ঝোলানো, এমনকি প্রসূতি উঠতে বসতে চলতে ফিরতে তাদের হাতে লোহার টুকরা। এ প্রসঙ্গে তৎকালীন বয়স্ক লোকের ধারণা, বেতের কাঁটা, লোহার টুকরায় ভুতের আছর ঠেকাতো। শিশুর কোন সমস্যা দেখা দিলেই স্থানীয় কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েলাল নীল সুতায় ঝাড়ফুঁক, ঝাঁটা দিয়ে ঝাড়া, পীরের পানি পড়া, দোয়া লেখা কাগজ গলায় ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রচলন ছিল। সমাজের এক শ্রেণীর প্রতারক কবিরাজ ধাপ্পাবাজের দেয়া তাবিজ মাদুলি লাল নীল সবুজ সুতা গলায় ঝুলানো হতো। অনেক সময় দেখা যেত, এসবগুলো এত পরিমান শিশুর গলায় দেওয়া হতো তা শিশুর জন্য বাড়তি কষ্ট তেরী করত। শিশুদের একটা কিছু হলে মায়েরা ছুটতো স্থানীয় কবিরাজ, পীর সাহেবের নিকট। চলতো ঝাড়ফুঁক, তাবিজ মাদুলি, পানি পড়া, পীরের মাজারে মানত, শিন্নি বিতরণের প্রচলন ছিল ব্যাপক।
সুধী পাঠক , এ প্রসঙ্গে আমার জীবনের একটা মজার ঘটনার কথা বলার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছে। রাতে গভীরভাবে নিদ্রায় আচ্ছন্ন। রাত তখন দু’টা। হঠাৎ ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। ভাবলাম এত রাতে ফোন! আমার কৌতুহল বেড়ে গেল। চোখ মুছে ওঠে বসলাম, মেয়েটি এমনভাবে কথাগুলো বলছিল। মনে হচ্ছিল যেন পরী। ভাব গম্ভীরভাবে আমার মানসিক অবস্থা যাচাই করার উদ্দেশ্যে আমাকে কল ব্যাক করতে বললেন। আমি কল ব্যাক করতেই শুরু হল, আমি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট থেকে বলছি। আপনার অসুখের ঔষধের জন্য আমার দেওয়া অংক পরিমাণ টাকা পাঠালে ওষুধ পেয়ে যাবেন। তৎক্ষণাৎ আমার স্বপ্নের ঘোর কেটে গেল। অনেক আগে লোক মুখে শুনেছি, ঘোড়াঘাটে এর ব্যাপক প্রচলন আছে। সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। আমি প্রস্তাব দিলাম ওটা নিয়ে এসে টাকাটা নিয়ে যান। সাথে সাথে ফোন কেটে দিলেন।ভাবুন দেখি, রোগ চিকিৎসার নামে কত বড় প্রতারণা।

আশির দশকে দেখা গেছে- রেলওয়ে স্টেশনে, হাট-বাজার যেখানে জনসাধারণ জমায়েত হন। সেখানে হকাররা ওষুধ বিক্রি করেন। কেউ সাপ খেলা, বানরের খেলা, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কেউবা নাচ গানের মাধ্যমে জনগণের মাঝে ঔষধ বিক্রির ব্যবস্থা করতেন। কেউবা মজমা দিয়ে অর্থাৎ গল্প ছড়িয়ে দিয়ে মানুষকে এমনভাবে আকৃষ্ট করেন। মানুষ ঐ স্থান ত্যাগ করতে পারেন না। গল্প বলতে বলতে এমনভাবে গল্প বলা বন্ধ করতেন যে মানুষের কৌতুহল হত-তারপর কি হলো জেনে যাব। কিন্তু হকারের গল্প বলা শেষ, শুরু হয় হালুয়া বিক্রি।
তখনকার দিনে বেদে-বেদেনী পাড়া বা মহল্লায় ঘুরে ঘুরে সাপের খেলা দেখাতেন। এছাড়া শরীর থেকে বদ রক্ত বের করে দিয়ে অথবা পায়ে বা হাঁটুতে ছিদ্র করে কাঠের টুকরা ঢুকিয়ে দিত। সেখানে ক্ষত হয়ে রক্ত ঝরতো দীর্ঘদিন যাবত। এভাবেই বাত রোগের চিকিৎসা চলত। এক শ্রেণীর গণক গ্রাম মহল্লায় ঘুরে ঘুরে নারী পুরুষের রাশি বা হস্ত গণনা করে অষ্টধাতুর তাবিজ, মাদুলি, বিভিন্ন রঙের পাথর সংযুক্ত আংটি ধুয়ে পানি পান করলে সব রোগ বালাই দূর হবে। এও ছিল এক ধরনের চিকিৎসা।অতীতে নির্ভেজাল খাদ্য খেয়ে, জীবন ধারণ করত মানুষ। ফলে তাদের তেমন কোন জটিল অসুখ দেখা যেত না। টুকটাক কিছু হলেই দুর্বা ঘাস, নিমপাতা, বেলপাতা,তেলাকুচা রস , বিভিন্ন গাছের ছাল খেয়েই আরোগ্য হত। বর্তমান বৈজ্ঞানিক উৎকর্ষতার যুগে বিশ্বের পদচারণা শুরু হল। সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। চিকিৎসায় পিছিয়ে নেই। এ্যালোপ্যাথি, আয়ুর্বেদিক, কবিরাজি, ঝাড়ফুঁক, হোমিওপ্যাথি নানা চিকিৎসার নামে চলছে রম রমরমা ব্যবসা।এমনকি মেডিটেশনে রোগের নিরাময় চলছে। এখন পৃথক পৃথকভাবে কিছু আলোচনা করব।
প্রথমেই দেখি এলোপ্যাথিক চিকিৎসা। এ চিকিৎসা সারা বিশ্বজুড়েই তাদের দখলে একচ্ছত্রভাবে। এ চিকিৎসার সুবাদে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কোম্পানি। মানসম্পন্ন ঔষধের বদলে পাল্লা দিয়ে যত্রতত্র শুরু হয়েছে ওষুধের কোম্পানিগুলোর কর্ম তৎপরতা। বর্তমানে রাজধানী সহ শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জে মানসম্পন্ন ওষুধের চেয়ে নিম্নমানের ঔষধের সরবরাহ বেশী। সারা দেশেই এদের ব্যবসা বেশ জোরেশোরে চলছে। যুগের পর যুগ এই কোম্পানিগুলো ড্রাগ বিষয়ক কর্মকর্তাকে টু পাইস ধরিয়ে দিয়ে লাইসেন্স পেয়ে যায়। নিম্নমানের ঔষধের কোন নাম গন্ধও থাকে না। সব জায়েজ হয়ে যায়। চোখ ঝলসানো লেভেল সাজিয়ে নিয়ে যুগ উপযোগী প্যাকেট বা মোড়কে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর শুরু হয় তাদের তৎপরতা। নিয়োগ দেন কিছু স্বল্পশিক্ষিত বেকারদের যাদের মাসিক বেতনও কম। এসব কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভগণ শুরু করেন তাদেও কাজ। স্থানীয় বেসরকারি ক্লিনিকে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থাকেন নানা ধরনের উপঢৌকন সহ। নগদ টাকা, চেক, মিষ্টি অথবা ফলমূল সহ অন্যান্য ব্যবহার্য সামগ্রির প্যাকেট সহ। তাদের টার্গেট স্যারকে খুশি করতে পারলেই বাজিমাত। রোগের ব্যবস্থাপত্রে আমার কোম্পানির ঔষধ লিখলে এখানে কোম্পানিও লাভবান, আমারও চাকরি বহাল। শুধু তাই নয় উপঢৌকন প্রদান শেষে দরজায় অপেক্ষা করতে থাকেন। তার কোম্পানির ঔষধ লেখা হয়েছে কিনা। পরের অপেক্ষা রোগীর নিকট থেকে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে তার একটা ফটোকপি সংগ্রহ করা।
এ কাজ শুধু নিম্নমানের কোম্পানিগুলোও নয় সব ঔষধ কোম্পানির একই কাজ। তবে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিগুলোর উপঢৌকনের খরচ তুলনামূলকভাবে কম। হায়রে জীবন বাঁচানোর কারিগর! ডাক্তার নামের সাথে জুড়ে আছে দেশি বিদেশি অসংখ্য ডিগ্রী। যাদের কলমের খোঁচায় একজন মানুষের জীবন-মরণ নির্ভর করে। অর্থের লোভে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিজের বিবেক বিক্রি করে দিচ্ছেন কোম্পানির তথা ক্লিনিক মালিকের কাছে। একবার ভেবে দেখলেন না, কি কাজটি করলাম!! হাসপাতালের অবস্থাও তথৈবচ। হত দরিদ্ররা পয়সার অভাবে আউট ডোরে টিকিট কেটে ডাক্তার সাহেবের শরণাপন্ন হলে উনি বলেন, আমার ক্লিনিকে আসুন। নয়তো প্রেসক্রিপশন দেখার কেউ নেই। হায়রে সংশ্লিষ্ট দাযয়িত্বশীলগণ। তাদের ধর্ম কোথায়!
চিকিৎসার জগতে হোমিওপ্যাথির স্থান দ্বিতীয় নম্বওে । আসুন এর চিকিৎসার হ-য-ব-র-ল অবস্থার কিছু চিত্র তুলে ধরি। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেখা যায় একই রোগের একই বর্ণনায় এক ডাক্তারের ওষুধের অন্য ডাক্তারের সাথে কোন মিল থাকে না। অভিজ্ঞ ডাক্তারের ফি আকাশচুম্বী। ফলে সাধারণ রোগীরা স্থানীয় ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। এক্ষেত্রে দেখা যায় স্বল্প শিক্ষিত অনভিজ্ঞ এরাই সেবা দান করে থাকেন। অর্থলোভী মিলে যৌথভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করে হোমিও কলেজ চালু করেন। যে সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হন। তারা ক্লাসে উপস্থিত হোক বা না হোক প্রতিষ্ঠানের পাওনা পরিশোধ করলেই তাদের পাস এবং সনদপত্র দিয়ে দেওয়া হয়। এ সকল ডাক্তারদের কোন প্রকার জ্ঞান থাকে না, তারা বিশাল একটা সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়ে সেবা দান করতে থাকেন। ৭-৮ রকমের ঔষধ দিয়ে মোটা বিল হাকেন। দেশে প্রকৃত হোমিও চিকিৎসকের সংখ্যাও কম। নির্ভেজাল চিকিৎসা ও ওষুধ পাওয়া দুষ্কর। এখানেও ভেজাল ঔষধের ছড়াছড়ি।
সদ্য পাশ করে ডাক্তারগণ চিকিৎসার লেখাপড়ার শেষ বর্ষে ওষুধের নাম রপ্ত করেন। পাস করার সাথে চাকরিতে যোগ, ফলে তারাও একের পর এক ঔষধের উচ্চশক্তি প্রয়োগ করে। ফলে রোগীগণ আরোগ্য হওয়ার বদলে ওষুধ জনিত দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্থ হয়ে জীবন কাটান। দেশে অভিজ্ঞ সুযোগ্য চিকিৎসক যে নেই আমি সে কথা বলছি না। অভিজ্ঞ মানসম্পন্ন চিকিৎসকও আছেন। তাদের সেবা মানেই জটিল ব্যাধি নিরাময় হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সুধী মহলের মতামত নির্ভেজাল খাদ্য গ্রহণ, সদ্য পাশ করা চিকিৎসক গণকে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে কিছু দিন বাস্তব প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। নির্ভেজাল ওষুধের বাধ্যবাধকতা থাকা। পাশ না করেই টাকা দিয়ে সনদপত্র কিনে চিকিৎসা কার্যক্রম চালানো। এ সমস্ত অনিয়ম কঠোরভাবে বন্ধ করুন। সুষ্ঠু ওষুধ নীতি বাস্তবায়ন, হাটে বাজারে কৃত্রিম মুখরোচক খাবারের ছড়াছড়ি বন্ধ করুন। বিশেষ করে বর্তমানে প্রতিটি দোকানেই স্বাস্থ্য সম্মত খাবার না থাকা তথা কৃত্রিম ও স্বাস্থ্য হানিকর খাবার নিয়ন্ত্রণ করা। সর্বোপরি বলা যায়, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সঠিক ঔষধ নীতি, খাদ্যনীতি বাস্তবায়ন করা জরুরী। বর্তমানে যে সকল রোগ দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশই ভুল ওষুধের প্রতিক্রিয়ার সৃষ্ট। এটা ভুক্তভোগী ও অভিজ্ঞ মহলের মতামত। অভিজ্ঞ মহল আরো মনে করেন, ঔষধ প্রয়োগ ছেলে খেলা নয়, যেখানে একজন রোগীর জীবন মরণ নির্ভর করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ের প্রতি নেক নজর দান করা বাঞ্ছনীয়।

লেখক ঃ প্রখ্যাত প্রবীণ সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কবি ও লেখক। পুরুলিয়া, নাজিরপুর, গুরুদাসপুর।

৭ম বর্ষ পেরিয়ে ৮ম বর্ষে পদার্পণ করল চলনবিল বার্তা

ডাঃ আমজাদ হোসেন, উল্লাপাড়া প্রতিনিধি 

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেলো ৭টি বছর তা টের-ই করতে পারলাম না, আজ সেই দিন জুলাই মাসের ৯ তারিখ। ২০১৭ সালের যে দিনটিতে তাড়াশ তথা চলনবিলের প্রতিটি পাঠকের ভালবাসার কাগজ সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা পত্রিকার জন্ম। আমাদের প্রাণের প্রিয় একান্ত আকাংখিত দৃষ্টি রঞ্জন সিরাজগঞ্জের তাড়াশবাসীর হৃদয় দর্পন একমাত্র পত্রিকা সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা। সিরাজগঞ্জের এতিহ্যবাহী তাড়াশ থানার হৃদয়ের কাগজ সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা একটি দিক নির্দেশনামূলক পত্রিকা বা গাইড লাইন। যা তাড়াশের গন্ডি পেরিয়ে আজ এর প্রভাব বিস্তার করছে সিরাজগঞ্জের সকল থানার প্রতিটা গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাদামাটা মানুষ গুলোর হৃদয়ে। যাতে অত্যন্ত সহজ সরল মধুমাখা প্রাঞ্জল ভাষায় সাজিয়ে গুছিয়ে রূপায়িত করা হয় প্রতিটি লাইন বা চরন, যা দর্ষকের দৃষ্টিতে পড়া ও বুঝার জন্য অনেক সহজ ও বোধগম্য। বাংলাদেশের শীর্ষ পত্রিকা গুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলনবিল বার্তা পত্রিকারও সুনাম রয়েছে যথেষ্ট অক্ষুন্ন। ইতিপূর্বে সাহিত্য সংস্কৃতির ও প্রাণবন্ত অবদান যাদের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি তা ছড়িয়ে রয়েছে পাঠক সূধীবৃন্দের হৃদয় পাতায়, যা সেরা গুচ্ছের ফুলবাগানে ঝলমলে রোদ্দুর ঝিলিক আর হিমেল হাওয়ায় চিরন্তন বাস্তব ও সত্য। যে পত্রিকাগুলো আজ জাতীয় পর্যায়ে সেরা তালিকায় পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চলেছে ঠিক সেভাবেই সম্পাদক রাজু সাহেবের সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা পত্রিকারও দৃষ্টিকারা আকর্ষণ রয়েছে। চলনবিলের খেটে খাওয়া অবহেলিত ধিকৃত পদদলিত নিরহ মানুষদের জীবন চরিত্র তুলে ধরে কল্পনার জগত পেরিয়ে বাস্তব জীবনে ফিরে আনতে চলনবিল বার্তা পত্রিকার যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। সেই শুরু থেকেই আমরা সিরাজগঞ্জের সেরা কাগজগুলোর সঙ্গে চলনবিল বার্তা পত্রিকাকেও দেখে আসছি। বলা যায় বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় চলনবিল নামে একটি বিল রয়েছে যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে একমাত্র এই ক্ষুদ্রকাগজ তথা চলনবিল বার্তা পত্রিকার প্রতিটি চরন বা পঙতির মধ্যে। বিরহ বিধুর অশ্রæঝরা মায়া কান্না নববধূর আচলে সিক্ত হয়ে আমি এক পাঠকের সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় লক্ষ্য করলাম, পাঠক তার হৃদয় থেকে চুয়ে আসাা কথাগুলো বলতেই বারবার চলনবিল বার্তা পত্রিকার প্রশংসা ও গুনগান গেয়ে যাচ্ছে। বলছিলেন, আজ আমরা তাড়াশবাসী ধন্য যে সহজেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাড়াশ,উল্লাপাড়া,নাটোর,শাহাজাদপুর ও পার্শ্ববর্তী উপজেলার ঘটে যাওয়া লুকিয়ে থাকা দিনগুলোর বাস্তব চিত্র এখন আমরা সম্পাদক রাজু সাহেবের স্মৃতি ঘামানো প্রচেষ্টায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি, যা আগে কখনও সম্ভব হত না ।এত সুনাম এত প্রশংসা এত যশ এত খ্যাতি যাদের দিয়ে তাদের আর আমরা মনে রাখি না, ধীরে ধীরে আজ আমরা তাদের ভুলে যাচ্ছি হারিয়ে ফেলছি এ জীবন থেকে। কিন্তু চলনবিল বার্তা পত্রিকার পাতা উল্টালেই ঝলমলে মুখ গুলো উন্মক্ত হয়ে ওঠে হৃদয় পাতায়। মনে পড়ে যায় চলনবিল বার্তা কাগজের নৌকার মাঝি যারা আমার প্রিয় ভাই প্রকাশক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু, সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি মরহুম রহমতুল্লাহ স্যার, নির্বাহী সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এসএম সনজু কাদের সহ অন্যান্য পরিচালনা সদস্যদের। আমি উক্ত কাগজের সামান্যতম লেখক উল্লাপাড়া প্রতিনিধি ডাঃ আমজাদ হোসেন, আমার লেখা যদিও গঠনমূলক নয় তবুও সারা পায় প্রতিটি পাঠক হৃদয়ে। এজন্যই আমি উল্লাপাড়া প্রতিনিধি হিসাবে আমার চোখের সামনে ঘটা কিছু সত্য ঘটনা ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের সার সংক্ষেপ তুলে ধরার চেষ্টা তথা ক্ষুদ্র প্রয়াস করে থাকি।

তাড়াশ যে অনুন্নত জনপদ
তার কিছু বাস্তব দৃশ্যপট
আবদুর রাজ্জাক রাজু

শুধু সিরাজগঞ্জ জেলায় নয় সমগ্র চলনবিলের মধ্যেও তাড়াশ যে সর্বাধিক পশ্চাৎপদ এবং অনগ্রসর উপজেলা, অপ্রিয়-তিক্ত সত্য হলেও তার কতিপয় নজির বা দৃষ্টান্ত একটু পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করার মতো- তাড়াশ সদরে কোন স্টেডিয়াম বা খেলার মাঠ নেই। নেই প্রকৃত হেলিপ্যাড। এমনকি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠও। বর্তমানে তাড়াশ ঈদগাহ মাঠকে হেলিপ্যাড বলে চালিয়ে দেওয়া হলেও এটা প্রকৃত অর্থে খেলার মাঠ, হেলিপ্যাড ও ঈদগাহ মাঠ কোনটিই ধরা বা বলা চলে না। এর অধিকাংশটুকু দখল করে সরকারী উপজেলা ভূমি অফিস ভবন নির্মিত হয়েছে কয়েক বছর পূর্বে। সম্প্রতি এখানে ধুলাবালির মধ্যে মাঠের দক্ষিণ ধারে শাকসবজি বাজার বসানো হয়েছে যা অত্যন্ত অযৌক্তিক,অসুন্দর ও পরিবেশ রুচি বিরুদ্ধ কাজ। অপরদিকে পৌর সদর প্রধান বাজারের অবস্থাও করুণ ও মান্ধাতা আমলের। বিশেষত: কাঁচা বাজার দখল করে রয়েছে বাজারের প্রধান সড়কের সিংহভাগ। তাছাড়া অস্থায়ী তাবু ও দড়ি টানিয়ে গোটা বাজার একটা নোংরা ও সেকেলে গ্রাম্য হাটে পরিণত করা হয়েছে। পথচারী,যানবাহন আরোহী এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের জনভোগান্তি ও গণ হয়রানী এ কারণে চরমে। কিন্তু বহু লেখালেখি ও বলাবলি হলেও সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে এই অব্যবস্থাপনার ও দুর্ভোগের কোন অবসান করা সম্ভব হলো না আজো। বর্তমানে দুধ বাজার, মাছ বাজার, মুরগি বাজার, মুদিখানা পট্টি সবই অপরিণত ও আনাড়ি বাজার নেতৃত্বের পরিচালনার পরিচায়ক, অথবা নেতৃত্বহীন। তাড়াশের একমাত্র পৌর বাজারে এখনো পানি ও টয়লেট ব্যবস্থাপনা অস্বাস্থ্যকর, দুর্বল বা নেই বলা চলে। এ বাজারে কোন সুষ্ঠু পরিবেশের ছোঁয়া নেই।বাজারের শেডগুলো দীর্ঘদিন বেদখলের কবলে পড়ে আছে, উদ্ধারের পদক্ষেপ নেয়া হয় না। মহিলাদের জন্য নির্ধারিত মার্কেটশুরু থেকেই দখল করে আছে বীর পুরুষেরা।বড় বেশী বিব্রতকর ব্যাপার হল, তাড়াশ সদরে কোনো ড্রেনেজ বা নর্দমার ব্যবস্থা নেই। একারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি-কাদা-ময়লা-আবর্জনা রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।তাড়াশ পৌর শহরে একটিও নির্ধারিত তথা স্থায়ীকসাইখানা বা মাংসের দোকান নেই। বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে পশু জবাই করে গোশত বিক্রয় করা হয়। যে যেমনি পারে এটাকে লুটেপুটে খায়। অথচ এর উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধির দিকে কারো দৃষ্টি নেই। অপরদিকে তাড়াশের বিখ্যাত বড় দুটি হাট নওগাঁ ও গুল্টা। এগুলোতে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া নেই, নেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ভাল পরিবেশ। তাড়াশ সদরে বা পৌরসভায় কোণ হাট না থাকাও ব্যবসার ক্ষেত্রে সহায়ক নয়।
এবার চলি পৌর সদরের রাস্তাঘাটের চিত্র অবলোকন করতে। তাড়াশ বাজারের দক্ষিণে চৌরাস্তা মোড় যেটা অধুনা “বীর মুক্তিযোদ্ধা মোড়” নামে পরিচিত। এটা অনেক দিন যাবত “জ্যাম” এর নিয়মিত স্পটে পরিণত হয়েছে। দিনের অধিকাংশ সময় এখানে ট্রাফিক জ্যাম লেগেই আছে। আগের ইউএনও এবং সওজ-সিরাজগঞ্জ বলেছিল – তারা এই সংকটের সুরাহা করবে। কোন খবর নেই অতঃপর অদ্যাবধি।
চলে যাই পৌর সদরের রাস্তা-পথের দুর্দশার চালচিত্র দেখতে। সদর বাজার থেকে উপজেলা পরিষদমুখি সংকীর্ণ সড়ক-রাস্তার অধিকাংশ জুড়ে কতিপয় ব্যবসায়ী বিত্তবানদের বাড়ীর সামনে পূর্ব-পশ্চিমে, জনৈক হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ীর ঘরের সাথে বা পাশে ও সকালী রেস্তোরাঁর নিকটে অতি চাপা চিকন সরু সড়ক-গলি পথ দিয়ে নিত্যদিন নানা বিড়ম্বনাসহ যানবাহন চলে। অর্থাৎ বারোয়ারি বটতলা পূজা মন্ডপ থেকে তাড়াশ বাজার পর্যন্ত পৌর সদরের রাস্তাটির সিংহভাগ প্রভাবশালীদের দখলে-বেদখলে এটা অপ্রশস্ত গলিতে পরিণত হয়ে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে চলেছে দীর্ঘদিন যাবত। এখানে যানবাহন হয় থেমে থেমে নয়তো অতি ধীর গতিতে চলে। কিন্তু কেউকেটাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। তাড়াশ সদরের অন্যান্য কিছু মহল্লায়ও অনুরূপ দুরাবস্থা বিদ্যমান। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন বা পৌর কর্তৃপক্ষ কারোই গরজ নেই এসব সমস্যা সনাক্ত করার ও তা সমাধানের। এটা দুঃখজনক। সদরের সোনালী ব্যাংক হতে টিএন্ডটি মোড় পর্যন্ত রাস্তাটি অবহেলিত, বাজারের পশ্চিমে দত্তবাড়ী মোড় থেকে ঘোষপাড়া অব্দি সড়কটি উপেক্ষিত, প্রাচীণ পায়ে হাঁটার কাঁচা রাস্তা।অনুরুপ পৌর সদরের অনেক মহল্লারই রাস্তা-পথের দুর্দশা অবর্ণনীয় দুর্ভোগের। তাড়াশ গ্রামের প্রায় সব খালনালা-ব্রীজ-কালভার্ট ভরাটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে সার্বিক পরিবেশ ব্যাহত বা বিঘিœত হয়েছে।
এবার চলুন নিয়ে যাই সদরের একমাত্র তাড়াশ পৌর শিশু পার্কে। তো গেলেও সাবধান, কেননা সামনে বাঁশ আছে। অর্থাৎ পৌর শিশু পার্কের প্রবেশ পথে বাঁশের বাজার। অথচ একটি শিশু পার্ক আর বাঁশ বাজার একই সাথে পাশাপাশি কিভাবে হতে পারে তা কর্মকর্তারাই ভালো জানেন। তবে বাঁশের দালালদের খুঁটির জোড় যে কম নয় তা বোঝা যায়- শিশুদের সমাগম স্থলে বাঁশেরও ক্রয়-বিক্রয় দেখে। বাঁশ মনে হয় শিশু বান্ধব কোনো বস্তু। তাছাড়া অল্প কিছুদিন পূর্বে গত রমজানের ঈদে এই পার্কের তাৎক্ষণিক ভাড়া প্রচলন করে পৌরসভার নামে ভালোই কামাই করেছে সংশ্লিষ্টরা যা ছিল নিয়ম-নীতি বহির্ভূত ও লজ্জাকর। পরে স্বার্থের দ্ব›েদ্ব মারামারির কথাও শোনা গিয়েছিল। ওই পার্কের উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন বা পৌর কর্তৃপক্ষ কারোই সত্যকার সুনজর এবং দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই। তবে মাঝে-মধ্যে সামান্য করে বরাদ্দ দিয়ে তা চেটেপুটে খাবার ব্যবস্থা হয়েছে – মানহীন কাজকর্ম দেখে সেটা বুঝতে কষ্ট হয় না।
তারপর আসি তাড়াশ উপজেলা পরিষদ চত্বরে। এখানে পরিষদ প্রাঙ্গনে প্রবেশদ্বারের দুটি তোরণ বা গেটে পরিষদের কোন নাম লিখন বা সাইনবোর্ড বা সাইনপ্লেট কিছুই নাই এ নিবন্ধ লেখার মুহুর্ত পর্যন্ত। গেট দু’টির পূর্বের লেখা মুছে অস্পষ্ট হয়েছে অনেক আগেই, এখন তা সম্পূর্ণ মুছে গেছে। মানে এটা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সরকারি স্থাপনা তা প্রবেশ পথে বোঝা যাবে না। দেশে অন্যরা যখন “উপজেলা প্রবেশ গেট” অভিজাত ও প্রতিযোগিতামূলক মনোরম, আকর্ষণীয় চমকপ্রদ করতে ব্যস্ত; তখন তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ও নেতাদের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। মনে হয় অন্দর মহলের কোন বিশেষ কাজে ব্যস্ত থাকায় বাইরের প্রবেশ পথের সাইন বোর্ডের কথা স্মরণে আসছে না। আর ওটা না থাকলেও তো অসুবিধা নেই। দিন চলে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি কারো আপত্তি বা অনুযোগ অভিযোগ নেই। এছাড়া ওই পরিষদ চত্বরে বাইরের গাড়ি, কোচ,বাস ইত্যাদি প্রায়শ: দিনরাত পার্কিং করে রাখলেও নিষেধ করার কে আছে। কেননা, এটাতো সবার জন্যই উন্মুক্ত। এটা সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত কোন অঞ্চল নয় মনে হয়।
অপরদিকে তাড়াশ সদরে অবস্থিত ঐতিহাসিক তাড়াশ ডিগ্রী কলেজ, ইসলামিয়া হাইস্কুল, কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়, গার্লস হাইস্কুল ও প্রাথমিক স্কুল ক্যাম্পাসগুলো ঘুরে দেখুন। কী অবস্থা ! কত ঘিঞ্জী, চাপাচাপি ও সংকীর্ণ গন্ডিতে সব গাদাগাদি অবস্থিত। এদের শিশুদের তথা শিক্ষার্থীগণের কোন মাঠ বা সভা বৈঠক করার খোলা-মুক্ত জায়গা নেই। এসব প্রতিষ্ঠান ক্রমেই একটা গন্ডিতে কেন্দ্রভূত হলেও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির ও বিস্তৃতির আলোকে এগুলো বিকেন্দ্রীভূত বা সুপরিসর স্থানে সরাবার সুপারিশ করার কোন চিন্তা কেউ করে না। এসব বিদ্যালয়ে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তাড়াশে অবৈধ পুকুর ভরাট ও আবাদি জমি দখল করে অবৈধ পুকুর খনন দুটোই পাশাপাশি চলছে। পরিবেশ বা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব বিষয়ে কেউ ভাবছে না।
বিশেষ করে সদরের উপজেলা পরিষদ পার্শ্ববর্তী পশ্চিমের দীঘি ভরাট করে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন নির্মাণ করা হল। বিশাল কুঞ্জবন দিঘির উত্তরাংশে অনুরূপ ভরাট করে নির্মিত হল তাড়াশ উপজেলা মডেল মসজিদ। অন্যদিকে তাড়াশ থানা প্রাঙ্গন সংলগ্ন পূর্বদিকে পুকুরের আংশিক ভরাট করে থানা মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মিত হচ্ছে। এসবই পরিবেশ বিরুদ্ধ কাজ হিসেবে বিবেচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে যারা আইনের রক্ষক তারাই আবার ভক্ষক। এরা অন্যদের আবাদি তথা ফসলী জমিতে পুকুর খননে নিষেধাজ্ঞা দেয়। আর নিজেরা দীঘি ভরাট করে সরকারি স্থাপনা নির্মাণ করে। এটা স্ববিরোধী ও দ্বিচারিতার শামিল। আগে নিজে আইন মেনে পরে অপরকে তা মান্য করার কথা বলতে হবে। এমনি করে বেআইনীভাবে তাড়াশ গ্রামের অসংখ্য পুকুর জলাশয় ভরাট করে লোকেরা বসতবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। বাধা দেবার কে আছে। স্বাধীনতার পর থেকে তাড়াশে যোগ্য, সৎ,ত্যাগী ও আদর্শবান নেতৃত্বের অভাবে উপজেলায় এই দৈনদশা, অরাজকতা ও নৈরাজ্য চলছে বাধাহীনভাবে। তাই পার্শ্ববর্তী যে কোনো উপজেলার তুলনায় এটা যে বহু পেছনে পড়ে আছে সেটা তাড়াশের নেতাদের বিবেকে বোধ করি নাড়া দেয় না ।
এখানে একটি পাবলিক লাইব্রেরী দীর্ঘদিন হল অকেজো ও মৃত প্রায় পড়ে আছে। কত আবেদন-নিবেদন ও আলোচনা-সমালোচনা হল।স্থানীয় সাংসদ পর্যন্ত বিষয়টি অবগত। অবশ্য তাতে কোন ফল হয় না। এটাকে মোটেই জীবিত করা যাচ্ছে না। অথচ গ্রন্থাগারের চর্চা না থাকায় স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা এমনকি তরুণেরাও মোবাইলের নেশায় অধপতনের তলানীতে চলে যাচ্ছে। উপজেলা শিল্পকলা কমিটি নামে মাত্র কিছু একটা আছে বলে শোনা যায়।তা কারা কুক্ষিগত রেখেছে সে হদিস নেই। অবশেষে আশা করা হচ্ছিল, নব গঠিত ও নির্বাচিত তাড়াশ পৌরসভা পৌরবাসীর দীর্ঘ প্রত্যাশিত ও প্রতীক্ষিত উন্নয়ন সারথী হবে, পৌর এলাকার কাংখিত উন্নয়ন ঘটাবে। তবে পৌর নির্বাচনের প্রায় বছর পূর্তি হতে চললেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান উল্লেখযোগ্য কোন প্রকল্প গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত পেীরসভার সাম্প্রতিকের হতাশাব্যঞ্জক চালচিত্র দেখে মনে হচ্ছে ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভাটি ঘিরে পৌরবাসীর যে স্বপ্ন জেগে উঠেছিল বা আশার আলোর সঞ্চার হয়েছিল- তা পূরণ হওয়া এখন “দিল্লী দূর অস্ত” এর মতো। এটা বরং ক কিংবা খ শ্রেণিতে উত্তরণের দিকে না গিয়ে নিজেই না ডুবে যায় অনুয়ন্নের অথৈ জলে।
এরপর মুন্সিয়ানা না করে এক দমে তাড়াশের আরো কতিপয় সমস্যা তুলে আনা যেতে পারে যা দেখে যে কেউ বুঝবে,এই উপজেলাটা উন্নয়নের কোন্ স্তরে অবস্থান করছে। এখানে বাস-কোচ টার্মিনাল, সিএনজি স্ট্যান্ড এবং ভ্যান-রিকশার কোনো গ্যারেজ নেই।ফলে বিশৃংখল পরিবহন ব্যবস্থার কারণে যা হবার তাই হচ্ছে। উপজেলার একমাত্র সরকারী টেলিফোন অফিস বছরের পর বছর অচল। কোটি টাকা ব্যয়ে পূণ:নির্মিত একমাত্র সরকারী ডাকবাংলো অপরিচ্ছন্ন ,মানসম্পন্ন বসবাসের অনুপযোগী। একটা উপজেলা সদরের সুপ্রশস্ত জায়গার উপর নব নির্মিত ডাকঘরটি যেন “মুরগীর খোপ” বানিয়ে রেখেছে। সদরের সবগুলো সব রকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান এত খারাপ-নি¤œ পর্যায়ের যে, এসব এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-অধ্যাপকদের প্রায় সবারই নিজ নিজ ছেলেমেয়েদের তাড়াশের বাইরে অন্যত্র পড়ায়। এখানে ভর্তি করায় না , কেননা তারা জানে তারা তাড়াশে কোন ধরনের শিক্ষার পরিবেশ বানিয়ে রেখেছে। উল্লেখ্য,তাড়াশের শিক্ষা হার জেলার মধ্যে র্সবনি¤œ।এছাড়া তাড়াশে এখনও ভাল মার্কেট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাকার সেভাবে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল রেখে গড়ে ওঠে নি। সরকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে বিশেষত: তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠান দু’টি নিজেরাই রুগ্ন, অসুস্থ এবং ভগ্নদশাগ্রস্থ যা নিয়ে প্রায়ই পত্র-পত্রিকায় খবর ওঠে। এ সংকটেরও কোন সমাধান দেখা যায় না। তাড়াশ সাহিত্য-সংস্কৃতি ক্ষেত্রে কিছুটা সমৃদ্ধ। তথাপি এখানকার লেখক-সাহিত্যিকদের অবদানের কেউ কদর দেয় না। তাদের প্রতি সবাই উদাসীন। এটাও অনুন্নত এলাকার চিহ্ন বা নমূনা। আলোকিত মানুষেরা অসমাদৃত হলে সমাজ পিছিয়ে পড়ে তা বলাই বাহুল্য। আরেকটা প্রসংগ উল্লেখ করা যায়। তাহল, তাড়াশের কিছু মানুষ দেশে-বিদেশে অনেক উঁচু স্তরে অবস্থান করলেও তারা তাড়াশের উন্নয়নে-অগ্রগতিতে কোনো প্রকার সুনজর দেয় না, অবদান রাখে না। এরা আত্মস্বার্থপর, আত্মকেন্দ্রীক তথা নিজেদের নিয়ে শুধু ব্যস্ত।
এখানে জেলার সর্বাধিক সংখ্যক সাংবাদিকের বসবাস। তাদের ক্লাবও প্রায় অর্ধ ডজন। এটাকে তারা অধিকাংশই বাণিজ্য বা রোজগারের উপায় অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ পেশায় জ্ঞান-গরিমা ও নীতি আদর্শের কথা তারা ভাবেন না। এখানে জনগণ তাদের ‘সাংবাদিকের’ পরিবর্তে ‘সাংঘাতিক’ বলে অভিহিত করে।এমনকি এসব ক্লাবের ভীড়ে ও চাপাচাপিতে-ঠেলাঠেলিতে স্থানীয় একমাত্র পত্রিকা “চলনবিল বার্তা” বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ও বিজ্ঞাপন বঞ্চিত হয়ে থাকে। সদরের একমাত্র সুপ্রতিষ্ঠিত ডিগ্রি কলেজটিকে সরকারীকরণ না করে হীন উদ্দেশ্যে গ্রামের মধ্যে নিয়ম-নীতি বহির্ভূত কলেজ বানিয়ে যার ছাত্র নেই, ‘এমপিও’ নেই সেটাকে সরকারী কলেজ বানাবার অন্যায্য ও অযৌক্তিক কর্মকান্ডের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রেখেছে। এটাই এখন তাড়াশের কালচার। এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থেও নিরপেক্ষ মতৈক্যের ও প্রচেষ্টার প্রচন্ড অভাব। পরিশেষে বলতে হয়, এটা সেই তাড়াশ যেখানে যত্রতত্র নোংরা আবর্জনা তথা ময়লার ‘লিটার’ এর ভাগাড় দিয়ে মাছ চাষ করা হয়, স্থানীয় মানুষ দেখে-শুনেও তা খায়, কেউ প্রতিবাদ করে না এত বড় ভয়ংকর অপরাধ এবং অমানবিকতা সত্বেও, জনস্বাস্থ্যের জন্য যা মারাত্মক হুমকি।এই অনন্য নিন্দনীয় নজির তাড়াশের পার্শ্ববর্তী অন্য কোথাও বিরল। এসব দেখার চোখ তাড়াশে কারো নেই; অথচ নেই তথাকথিত নেতা-নেত্রীর অভাবও। এই হল অখ্যাত পশ্চাৎপদ অপ্রসিদ্ধ একটি জনপদের আলামত,লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য, আর তাড়াশ তা-ই বহন করে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে। যেখানে এখনও গর্ব-কৃতিত্ব দাবি করার তেমন কিছু পাওয়া যাবে না। এসব জড়াজীর্ণতার অবসান বা অবমুক্তি কবে হবে তা কেউ বলতে পারবে না।

লেখক ঃ সম্পাদক, সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ। মোবাইলঃ ০১৭১৬-১৮৭৩৯২

চেতনানিথর
(রম্য রচনা)
জয়নাল আবেদীন জয় 

একছিলো রাজা, রাজার ছিলো বিরাবন অরণ্যধারে এক রাজকাচারী। একদিন রাজা সভাসদ নিয়ে বসেছে রাজদরবারে। এমন সময় ঐ অরণ্য হতে হঠাৎ বানর এসে কাচারীর সামনে বসে লেজ গুটাচ্ছে, আর কুর্নিশ জানাচ্ছে রাজাকে। রাজা দেখে চাবুক হাতে সিংহাসন থেকে নেমে এসে মারলো চাবুক বানরের পিঠে। চাবুক খেয়ে বানর ধেয়ে পালায় তার বনের ভেতর। পরেরদিন বানর একইস্থানে বসে ফের রাজাকে কুর্নিশ জানাচ্ছে। রাজা তখন গত বারের মতোন ছাড়িয়া আসন বানরেরে মারিল পেটন। খেয়ে পেটন বানর তখন গুল্লে দৌড় ফের বনের ভেতর।
বানরের বেদন সভাসদ সকল করিছে নিরীক্ষা নিরুপণ; আর দেখিছে বানরের কীর্তিকলাপন। নিরব দৃষ্টি ছাড়াতো আর প্রতিবাদ করার মতো সাহসতো পাবেনা কেউ। প্রতিবাদ করিবে যে, সাত গোষ্ঠির গর্দান দেবে সে। এইতো রাজার হুঁশিয়ারী। রাজার ফরমান না যায় খন্ডান। দরবার শেষে ঘরমনা বেশে, রাজা যখন করিলো গমন, যখন ঢুকিলো রাজা অন্দরমহল।
পরে সভাসদগণ হয়ে একমন, বুদ্ধি করিলো স্মরণ। যদি কাল করে রাজা পশুর আচরণ বানরের সাথে, বিদ্রোহ করিবো মোরা রাজনের সাথে। এই প্রতিপাদ্য মন্ত্রীবরের মুখে। মানিবোনা রাজদর্প, এই মাহিন্দ্রক্ষণে। কী হে সভাসদগণ, রাজী কী আছেন সকলে সকল? জানাইবো প্রজা সকলেরে ঢেরা পিটিয়ে ঘটনা সকল। একবাক্যে স্বীকার সকলে, আনন্দ চরণে চলিলো বাড়ি সহাস্য বদনে।
পরের দিন রাজা শুভ্রসকালক্ষণে নিয়ে সভাসদগণে শ্যামল সুন্দর অভয়ারণ্যধারে যখন বসিয়াছে রাজদরবারে ঐ কাচারী ঘরে। তখন বানর আসিয়া কুর্নিশ করিয়া জানায়, রাজাকে আগের সম্মানুসারে। তখন পেটুয়া রাজা বেত্রাহাতে পূর্বমতে উঠিয়া দাড়ায়ে যাবে পেটাতে বানরে। এমন সময় কুর্নিশ জানায়ে কহিছে উজির রাজনের ত্বরে।
উজির ঃ যথা আজ্ঞে মহারাজ।
রাজা ঃ তাহলে কী কহিবার আছে হে সভাসদ?
উজির ঃ আছে, আছে শাহানসাহ কহিবার আপনার….
রাজা ঃ হায় ঈশ^র! শক্তি দাও প্রভু এই জ¦ালা সহিবারে। নাহ, নাহ না- না- না- মানিবো
না তব বাক্য, শুনিবোনা কিছু। কর্তন করিবো গর্দান। হটিবোনা পিছু। তবে রে….
উজির ঃ কোনো তবে নয়, মহারাজ। কোনো তবে নয়। ক্ষান্ত হোন বানরেরে চাপকাতে।
রাজা ঃ বুঝিয়া প্রজ্ঞা, মানিলাম আজ্ঞা। দেখুন বানর করে কীযে। (ইল্লৎ যায়না ধুলে,
খাসলৎ যায়না মলে)। বানরের স্বভাব লাফে আর ঝুলনে। নিরব দৃষ্টি বানরে দিকে সকলে সবার।
যথাস্থান থেকে বানর লেফে বারান্দায় উঠে ভিটকি দাঁতে হাসিতেছে সকলের দিকে। ২য় লাফে রাজদরবার মাঝে গিয়া বানর বসে। বুঝিতে কী বাকি রহিলো সবাই ভয়ে থরথর। দেখি বানরই করে কীযে? উঠি তিন লাফে রাজার ঘাড়ে গিয়া বসে বানর বিচ্ছিন্ন মেঘের ফাঁকের রৌদ্রের ঝিলিকমতো খুশিতে হাসে আর নাচে, নাচে আর হাসে। ঘুরিয়া ফিরিয়া নাচে রাজারও ঘাড়ে।
মন্ত্রী ঃ স্তম্ভিত নিথর বদনে কেনো হে উজির ভয়ে থরথর? রাজ্য শাসনে একাই যোগ্য
নহে জানিবে নিশ্চয়। গর্দান গেলে যাবে সকলার, একার নহে আপনার।
রাজা ঃ বিষন্ন বদনে দাড়িয়ে কেনো হে সভাসদ?
সকলে ঃ মাপ চাহিবার ত্বরে করুণার সুরে সকল সভাসদ।
রাজা ঃ বানর তুলিলে ঘাড়ে, নামানতো দেখি কে নামাতে পারে?
উজির ঃ (করজোরে) হুজুর, গোস্তাকি মাফ হয় জাহাপনা? পদচুম্বে কহিছি আপনায়,
মার্জনা করিতে সকলায়।
রাজা ঃ তবে হে মন্ত্রীবর, রাজ্যের ভেতরে করে দাও প্রচার। আসুক সকলে দেখুক নয়নে
তৃপ্তি মিটিয়ে।বানর উঠিলে আপনার ঘাড়ে, তাহা কী পারিবে সহিতে,
চেতনানিথর?

(মন্তব্যঃ চলনবিল বার্তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী-২০২৪ এর ভিন্ন একটা সংলাপ।
লেখক মোবাইলঃ ০১৭৪৫৮৫৫৯২০)

সিগারেট কোম্পানির হস্তক্ষেপ ছবি
তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রধান অন্তরায়
সৈয়দা অনন্যা রহমান
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জো

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দুর্বলতায় সিগারেট কোম্পানিগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধিবিধান বাস্তবায়নে সচেতনভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তারা। কোম্পানিগুলোর মূল উদ্দেশ্য তরুণদেরকে ধূমপানে আকৃষ্ট করে দীর্ঘমেয়াদী ভোক্তা তৈরী করা। ৪ জন বিশিষ্ট গণমাধ্যমকর্মীর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সিগারেট কোম্পানিগুলোর বেপোরোয়া আইন লংঘন এবং নীতিতে হস্তক্ষেপের ফলে তরুণদের তামাক পণ্যে আসক্ত হয়ে পড়ার তথ্য উঠে এসেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে তরুণদের রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে দ্রæত সংশোধন করে শক্তিশালী করা জরুরী। পাশাপাশি এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিসমূহ সুরক্ষায় “কোড অব কন্ডাক্ট” বা তামাক কোম্পানির সাথে অসহযোগিতার নীতি গ্রহণের দাবী জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে প্রলুব্ধকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে অবাধে সিগারেট বিক্রয়, গণমাধ্যম এবং ওটিটি প্লাটফর্মে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের চিত্র প্রসঙ্গে প্রণয়নকৃত অনুসন্ধানী প্রতিবেদসমুহ ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। গত ২ জুলাই ২০২৪ (মঙ্গলবার) সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, নাটাব, ডাবিøউবিবি ট্রাস্ট এর সম্মিলিত উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সহায়তায় “তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ ” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের প্রতিবেদনগুলো উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দা অনন্যা রহমানের সঞ্চালনায় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। সম্মানিত আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক শাগুফতা সুলতানা, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ নাসির উদ্দীন শেখ এবং ডাবিøউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব।
দৈনিক ভোরের কাগজ এর সিনিয়র রিপোর্টার সেবিকা দেবনাথ তার উপস্থাপনায় বলেন, নিজেদের ব্যবসার প্রসারে তামাক কোম্পানিগুলো সু-কৌশলে গণমাধ্যমকেও ব্যবহার করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমকে অন্তর্ভূক্ত করে ক্যাম্পেইন, গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন, গবেষণা ও রিপোর্ট প্রচারে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি তামাক বিরোধী প্রতিবেদন-সংবাদ প্রচারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তিনি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে গণমাধ্যমকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি বলে সুপারিশ জানান।
ঢাকা পোস্ট এর গবেষণা এবং সম্পাদনা বিভাগের প্রধান বিনয় দত্ত তার উপস্থাপনায় বলেন, স্থানীয় সরকার গাইড লাইন অনুসারে নিষিদ্ধ সত্তেও বিদ্যালয়ের ১০০ মিটারের মধ্যে অবাধে বিক্রি হচ্ছে সিগারেট এবং সেখানে মূল ভোক্তা শিক্ষার্থীরা। তামাক নিয়ন্ত্রণে সহায়ক বিধিবিধান থাকলেও কার্যকর করার জন্য যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় বিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে তামাক কোম্পানীর সহজ বিচরণ ১৮ বছরের নিচে শিক্ষার্থীদের মনস্তত্তে জায়গা করে নিচ্ছে। তিনি সকল ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের আশেপাশে ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত বিক্রি নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়টি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অন্তর্ভূক্ত করার আহ্বান জানান।
দৈনিক সমকাল এর সাব এডিটর মেহেদী হাসান উপস্থাপনায় ওটিটি মাধ্যমে প্রচারিত ওয়েবসিরিজগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ধূমপান দৃশ্য দেখানোর পাশাপাশি তরুণদেরকে ধূমপানে উৎসাহিত করার মতো ডায়ালগ থাকার বিষয়টি উঠে আসে। তিনি ওটিটি’কে সেন্সরিংয়ের আওতায় আনাসহ ধূমপান দৃশ্যের ক্ষেত্রে মনিটরিং এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতের পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে ওটিটি প্লাটফর্মকেও সংযুক্ত করার আহবান জানান।
দৈনিক কালবেলার স্টাফ রিপোর্টার দেলাওয়ার হোসাইন দোলন তার উপস্থাপনায় বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মোটা বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থীদেরকে টার্গেট করছে। মূলত এসব প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য থাকে তরুণদের মাঝে তামাক পণ্যের প্রচার। সেখানে সহযোগী হয়ে কোম্পানির স্বার্থে কাজ করছে নামিদামি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ বা অনুষদ। এছাড়া তরুণদেরকে আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো বিখ্যাত শিল্পীদেরকে এনে কনসার্ট আয়োজন করছে। অনুষ্ঠানস্থল তামাক পন্যের ব্রান্ড কালার এবং লগোসমৃদ্ধ বিজ্ঞাপন দিয়ে সাজানো হচ্ছে। তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন শক্তিশালী করা এবং নিয়মিত তামাক কোম্পানির কার্যক্রম মনিটরিং করা জরুরি বলে দাবী জানান।

আমার সাংবাদিকতা জগতে আগমনের দুরন্ত অভিযাত্রা!

আবুল কালাম আজাদ 

১৯৮০ সালের মার্চ মাস।গুরুদাসপুর বিলচলন শহীদ ডঃ শামসুজ্জোহা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আমি। আমার বাড়ি শিকারপুর থেকে প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার পশ্চিমে থানা সদরে কলেজ। বয়ে যাওয়া গুমানী নদীর দক্ষিন পাড় জঙ্গলের মধ্যে পায়ে হাটা ভাঙ্গা রাস্তা দিয়ে পায়ে হাটা মেঠো পথে প্রতিদিন পায়ে হেটে অথবা সাইকেলে কলেজে যাতায়াত করতাম। সে সময় এখনকার মত পাকা বা প্রশস্ত কোন রাস্তা ছিলনা। একমাত্র পা অথবা সাইকেলই ছিলভরসা।
সকাল ৮ টার দিকে খেয়ে সাইকেল নিয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছি । এই সময় চাঁচকৈড় থেকে তরুণ সাংবাদিক কিরন আর আবুল (দুইজনই আমার জুনিয়র, বয়সেও ছোট, তারা চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন হাইস্কুলের ছাত্র) আমার বাড়িতে দুইজন সাইকেল নিয়ে এসে হাজির। আমি জানতে চাইলাম , তোমরা কোথায় যাচ্ছো? কিরন জানালো ,তাড়াশ থানার সিও (রাজস্ব) অফিসে জমি বিষয়ে কাজ আছে তাই আমরা তাড়াশ যাচ্ছি।আমাকেও যাওয়ার জন্য প্রস্তাবদিল। আমি কলেজে যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতই ছিলাম । প্রস্তাব পাওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই সাইকেল নিয়ে তিনজন রওনা দিলাম। শিকারপুর বাড়ি থেকে বাহাদুরপাড়া গুমানি নদির ভাঙ্গা পাড়ের পা হাঁটা রাস্তা দিয়ে সাইকেল চালিয়ে ধামাইচ বাজার ত্রি মোহনা ঘাটে খেয়া পাড় হয়ে কুশাবাড়ি- চরকুশাবাড়ি গ্রামের মধ্যে দিয়ে চলনবিলে বিশাল খোলা মাঠে ঢুকি। চলনবিলের রাস্তা এত খারাপ যে , সাইকেল চালিয়ে যাওয়ার কোন উপায়ই ছিলনা। কিরন সাইকেল চালানোতে দুর্বল। গরু-মহিষের কাদার পাওটা এবং গাড়ি নিড়িকের মধ্যে দিয়ে যাওয়ায় (পাওটা গাড়ির চাকায় কাদা উঠে চিকন চিকন লাইন) শুকায়ে ধারালো হয়ে শক্ত হওয়ায় হেঁটে যাওয়া খুবই কষ্টদায়ক। এদিকে চৈত্রের কাঠফাটা রোদে আমরা ঘেমে অস্থির। এভাবেই কখনো সাইকেল ঠেলে হেঁটে , কখনও সাইকেলে চড়ে দীর্ঘ ২০-২১ কিলো দুর্গম মেঠো পথ গনগনে আগুনে রোদ মাথায় নিয়ে বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তাড়াশ গিয়ে পৌছাই।
তাড়াশ পৌছে প্রথমে সিও অর্থাৎ সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) অফিসে কিরনের জমির কাজ সেরে চলনবিল প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক (রাজু চাচা )[বর্তমানে তাড়াশ থেকে প্রকাশিত ‘সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার সম্পাদক’] ,সাইদুর রহমান সাজু এবং রুহুল আমিন মাষ্টারকে খোঁজ করি। ১৯৮০ সালে তাড়াশ বাজারে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছিল। খোঁজ করে যে ষ্টলে সাংবাদিকরা বসেন সেই ষ্টলে গিয়ে তিনজনকেই এক সাথে পেলাম। কিরন, আবুল বয়সে ছোট হলেও তারা আগে থেকেই সাংবাদিকতা এবং চলনবিল প্রেসক্লাবের সাথে সম্পৃক্ত। আমি ১৯৭৮ সালে এস এস সি পাশ করে গুরুদাসপুর বিলচলন ডঃ শহীদ শামসুজ্জোহা ডিগ্রী কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার পর কলেজ ছুটি হলে বাড়ি যাওয়ার পথে সুযোগ পেলেই চাঁচকৈড় শিক্ষা সংঘে গিয়ে প্রেসক্লাবে বসে পেপার পড়তাম। সেই সুবাদে কিরন , আবুলসহ সাংবাদিকদের সাথেআমার পরিচয় হয়।আমার মেঝ চাচা সাংবাদিক অধ্যাপক শামসুর রহমানও ছিলেন চলনবিল প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এই সুত্রে রাজু চাচা ,সাজু চাচা, রুহুল আমিন মাষ্টার তাড়াশ থেকে চাঁচকৈড় প্রেসক্লাবে আসার পথে এবং যাওয়ার পথে আমাদের বাড়িতে উঠতেন। বসতেন আমার পড়ার ঘরে। পড়ার ফাঁকে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা শুনতাম। শামসু চাচা ইংরেজি পত্রিকায় লিখতেন। সংবাদ ছাপা হলে আমার আব্বাকে দেখাতেন। আমাদের তিনজনকেই হোটেলে উপস্থিত আরো কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে পরিচয় করে দিলেন রাজু এবং সাজু চাচা। আমাদের তিন জনকে নাস্তা করালেন।
নাস্তা শেষে দেড়টার দিকে আমরা বাড়িতে আসার জন্যে হোটেল থেকে বেড় হয়ে বাজারে ঢোকার পথে আবুল প্রস্তাব দিল আমরা সাইকেল চালিয়ে বগুড়া যাব।প্রস্তাবে আমি কিরন দুইজনই রাজি হয়ে গেলাম কোন পথে যাব ? আমরাতো কেউই পথ চিনিনা। আমি শুনেছি তাড়াশ হয়ে বগুড়া যাওয়া যায়। কিন্তু কোন পথে জানিনা। আবার আমরা হোটেলে আসি রাজু ও সাজু চাচার কাছে বগুড়া যাওয়ার পথের সন্ধান নিতে। তারা জানালেন, তাড়াশ বাজারের পশ্চিমে বিনসাড়ার পথ ধরে সোজা উত্তরে যেতে হবে। মির্জাপুর হাটে নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়কে উঠতে হবে।সে অনেক পথ। চৈত্রের দুপুরের রোদের মধ্যে সাইকেল চালিয়ে বগুড়া যাত্রার কথা শুনে উপস্থিত সবাই আশ্চর্য হলেন। কেউ আবার যাত্রায় নিষেধও করলেন। আমরা সিদ্ধান্তে অটল। আমরা যাবই। রাজু চাচা দুপুরে হোটেলে খাওয়ার জন্য বললেন। আমরা না খেয়েই রওনা হলাম।
হঠাত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ি থেকে তাড়াশ-, তাড়াশ থেকে বগুড়া সাইকেল চালিয়ে যাওয়া ছিল সত্যি আমাদের তিনজনের জীবনের প্রথম এবং অন্যরকম এ্যাডভেন্সার। এদিকে বাড়িতেও না জনিয়ে হঠাত করে ভাবাবেগে বেড় হয়ে এসেছি। তবুও তারুণ্যের আবেগে বাপ-মায়ের পিটুনি-বকুনি ভাগ্যে বরণ করেই বগুড়া যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থেকে রওয়ানা হলাম।
তিনজন বুকে সাহস নিয়ে বিলের কাঁচা রাস্তায় সাইকেলে চড়ে প্যাডেল মারা শুরু করলাম। আমার সাইকেল ছিল নতুন। কিরনের সাইকেল আধা পুরাতন আর আবুলের সাইকেল ছিল পুরাতন। তবে আবুলের সাহস ও শক্তি ছিল অস্বাভাবিক। দুপুরের কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে কখনও পাশাপাশি, কখনও আগপিছ হয়ে সাইকেল চালাচ্ছি। আবুল খুব আমুদে ছিল। সে মাঝে মাঝ গান গেয়ে আনন্দ দিচ্ছিল। ৫-৬ কিলো যাওয়ার পর ক্ষূধা আর পানির পিপাসায় প্যাডেলে আর পা চলছিল না। তাড়াশ থেকে সম্পুর্ণ রাস্তা কাঁচা। ধু ধু ধুলা মাড়িয়ে চলছি। কোথাও খবার পানিও পাচ্ছি না। রাস্তার আশেপাশে বাড়িঘরও নাই। এর মধ্যে একটা ছোট বটগাছের ছায়ায় নেমে জিড়িয়ে নিলাম। পাশের বাড়ি থেকে পানি চেয়ে পান করলাম। অধিক পিপাসায় পানির স্বাদ উপভোগ করলাম কিন্তু ক্ষুধা মিটল না। আবার পথচলা শুরু করলাম। ২-৩ কিলো পথ যেতেই দেখা পেলাম জঙ্গল ভিটায় বড় বটগাছের মোড়ে একজন ক্ষিরা আর পানি নিয়ে বসে আছে। সময় প্রায় বিকাল ৫ টা । কিরণ বললো, ক্ষিরা খাব। ক্ষুধায় আর চলতে পারছিনা। পথও শেষ হচ্ছে না। নেমে ক্ষিরা খাওয়া শুরু করলাম। তিনজনে প্রায় ৪ সের ক্ষিরা খেয়ে বটগাছের ছায়ায় বসে, শুয়ে গা এলিয়ে একটু ক্লান্তি দূর করে নিলাম। বটগাছের মোড় থেকে উত্তর দিকে তাকিয়ে দেখি বাস চলাচল করছে। তাই দেখে স্বস্তি ফিরে এলো। ক্ষিরা বিক্রেতার কাছে বগুড়া যাওয়ার রাস্তা কোন দিকে জানতে চাইলাম। ক্ষিরা বিক্রেতা সোজা পথ দেখিয়ে জানালো তিন কিলো উত্তর-পশ্চিমে গেলে নগরবাড়ি-বগুড়া মহাসড়কে মির্জাপুর হাট পাওয়া যাবে। তারপর শেরপুর হয়ে মাঝিরা ক্যন্টনমেন্ট তারপর বগুড়া ,তা অনেকদুর যেতে হবে । বগুড়া যেতে অনেক রাত হবে।আমাদের উদ্দেশ্য ছিল বগুড়া গিয়ে অধ্যাপক আব্দুল হামিদ টি কে এর বাসায় গিয়ে থাকবো। এদিকে বেলা প্রায় পশ্চিমে লাল ধরতে শুরু করেছে। দুঃশ্চিন্তা ধরে গেল। বগুড়া যেতে যদি অনেক রাত হয়, তাহলে আমরা কোথায় থাকবো ! এ সময় আমার মনে হলো , আমার নিকট আত্মীয় জ্যাঠাতো বড় ভাই এবং সহপাঠী খলিলুর রহমান মাঝিরা ক্যান্টনমেন্টে সিএমএইচ -এ আছে। সেখানে থাকা যেতে পারে। আবুল-কিরণও রাজি হলো।
আল্লাহর নাম নিয়ে আবারও সাইকেল চালানো শুরু করলাম। ২-৩ কিলো যেতেই মির্জাপুর মহাসড়কে উঠলাম। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। মির্জাপুর বাজারে নেমে সড়কের ধারে একটি ষ্টলে নেমে পাউরুটি আর চা খেয়ে কোনমতে ক্ষুধার জ্বালা নিবারণ করে আবার যাত্রা শুরু করলাম। তিনজনের পায়েই আর শক্তি পাচ্ছে না সাইকেলে প্যাডেল মারার। পাকা সড়কে আবার একভাবে প্যাডেল মারলে পা ধরে যায়। তবুও বিরতিহীন সাইকেল চালিয়া শেরপুর পার হয়ে রাত ৮ টার দিকে মাঝিরা সেনানিবাস পেলাম। সেনানিবাসের বাজারে নেমে একজন মিলিটারিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলাম সিএমএইচ এর লোকেশন। এদিকে হঠাত করে এত রাতে এসে ক্যান্টনমেন্টে ঢুকা এবং কাংখিত খলিল আছে কি না তা ভেবে ভয়ে দুরু দুরু আতংক নিয়ে সিএমএইচ এর অভ্যার্থনা কক্ষে গিয়ে আমাদের পরিচয় দিয়ে খলিল আছে কিনা জানতে চাইলাম। রিসিপসনিষ্ট জানালেন , নাটোরের গুরুদাসপুরের খলিল সাহেব আছেন।তিনি খলিলকে খবর দিলেন। খলিল এসে আমাদের দেখে চমকে উঠলো। এত রাতে কোথা থেকে কিভাবে এখানে ।নানা প্রশ্ন। আমরা সংক্ষেপে জানালাম। তারপর আমাদের সাইকেল রাখার ব্যবস্থা করে নিজ ব্যারাকে নিয়ে গেল। ব্যারাকের অন্যান্যদের সাথ আমাদের পরিচয় করে দিল।সবাই আমাদেরকে ভাই হিসেবে সম্মানের সাথে অভ্যার্থনা জানালেন। আমাদের বগুড়া আসার কাহিনি শুনে সবাই হতবাক হলেন। প্রথমেই ব্যারাকেই আমাদের চা-নাস্তার ব্যবস্থা করলেন। আমরা ফ্রেস হলাম।আর্মিদের খাবার আগেই দেয় তাই, রাতের খাবার বাইরে হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়ালো খলিল। খেয়ে ব্যারাকে আসলাম। খলিল জানালো , রাতে ব্যারাকে বিনোদন হবে, আমরা যাব কিনা? আবুলতো যাওয়ার জন্য অতি উতসাহী। আমি,কিরণও বাদ যাই কেন? খলিলের সাথে বিনোদন রুমে গেলাম। খলিল আমাদের উপস্থিত সবার সাথে পরিচয় করে দিল ভাই এবং সাংবাদিক হিসেবে। সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে সবাই আমাদের সমিহ করতে লাগলেন। আমরাও বিনোদনে অংশ নিতে চাই নাকি জানতে চাইলে আবুল দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল। আবুলকে বাদ্যযন্ত্র এগিয়ে দিল । আবুল যা পাড়লো তাই গাইলো। বাদ্যযন্ত্রও বাজালো। এমন ভাব যেন আমি সব পাড়ি।আমি ,কিরণ ভাঙ্গ ভাঙ্গা কন্ঠে অংশ নিলাম। এরপর ফ্লোরে বিছানায় গিয়ে গনবিছানায় ক্লান্তির শরীর ছেড়ে দিলাম। একটু ঘুম ঘুম এসেছে এমন সময় চাঁচকৈড়ের মক্কেল মিলিটারি (আমিন ও মাসুদের আব্বা) খলিলের কাছে খবর পেয়ে ছুটে এসে আবুল আর কিরণকে ডাকছেন।মক্কেল মিলিটারি আবুল- কিরণকে চিনেন আমাকে সেভাবে চিনেননা। আমার পরিচয় দিতেই চিনলেন। বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক বললেন । দীর্ঘ পথ সাইকেল চালিয়ে আসায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে যেতে চাইলামনা, খলিলও যেতে দিতে চাইলোনা। তবে পরদিন সকালে তাঁর বাসায় যাওয়ার প্রতিশ্রæতি নিয়ে চলে গেলেন।
পরদিন সকালে ঘুমথেকে উঠে খলিল তার ডিউটিতে গেল। মক্কেল মিলিটারি সকালে এসে আমাদেরকে বাসায় নিয়ে গেলেন। ক্যান্টনমেন্টে সংলগ্ন মহাসড়কের উত্তর পাশেই বাসা। বাসায় যেয়ে মক্কেল মিলিটারির ছেলে মাসুদ, আমিনদের সাথে পরিচয় হলাম। তখন আমিনরা ছোট ছিল। ভাবি গরুর মাংশ, মুরগির মাংশ, খাসির মাংশ, রুইমাছ, ছোট মাছসহ নানা পদের তরকারি রান্না করে আমাদের অত্যন্ত যতœসহকারে খাওয়ালেন। আমাদেরকে থাকার জন্য পিড়াপিড়ি করলেন।কিন্তু আমরা বগুড়া যাব ।কখন ফিরবো ঠিকনাই। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাস ষ্ট্যান্ডে এসে বাসে চড়ে বগুড়ার সাতমাথায় নামলাম।সাতমাথা থেকে রিক্সায় আজিজুল হক কলেজে গেলাম। গেটে গিয়ে নেমে গেট সংলগ্ন পোষ্ট অফিসে ঢুকলাম । পোষ্টমাষ্টারের কাছে জানতে চাইলাম অধ্যাপক আব্দুল হামিদ টি কে আছেন কিনা।কারণ আমাদের ধারণা যে, অধ্যাপক আব্দুল হামিদের সাথে পোষ্ট অফিসের যোগাযোগ ছিল অস্বাভাবিক। প্রতিদিনই পোষ্ট অফিসে তিনি চিঠি পাঠাতেন এবং তাঁর নামে বহু চিঠি আসতো। আব্দুল হামিদের কথা শুনেই পোষ্টমাষ্টার শ্রদ্ধাভরে হা্মদি স্যারের অনেক প্রশংসা করলেন। ফোনে পোষ্টমাষ্টার আমাদের আগমনের কথা জানালেন। আমাদের নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি একজন পিয়ন পাঠালেন। পিয়ন এসে আমাদের সাথে করে নিয়ে ওয়েটিং রুমে বসতে দিয়ে খবর দিলেন। ইতিমধ্যে চা-বিস্কুট দিয়ে গেছে পিয়ন। আমরা চা খাচ্ছি এর মধ্যে শ্রদ্ধাভাজন হামিদ স্যার ধবধবে সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবি পড়ে আমাদের কাছে হাস্যজ্জল মুখে এসে আমাদের জড়িয়ে ধরে স্নেহের পরশে সিক্ত করলেন। আমরা আপ্লুত হয়ে পড়লাম। চেম্বারে নিয়ে বসে আমাদের বগুড়ায় আগমনের তিনজনের এডভেন্সারের কথা শুনে বিস্মিত হলেন। ইতিমধ্যেই বগুড়ার নামকরা সিঙ্গারা, কেক, চা চলে এলো। আমি এখনো সাংবাদিকতা শুরুই করিনাই। কেবল এইচএস সি পরিক্ষা দিয়েছি। কিরন-আবুল আগে থকেই সাংবাদিকতা করে। তাই আবুল আর কিরণকে হামিদ স্যার আগে থেকেই চিনেন। হামিদ স্যারের হাত ধরেই কিরণ আবুলের সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি। আমি আব্দুল জাব্বার মাষ্টারের ছেলে পরিচয় পেয়ে খুব খুশি হলেন। তিনি আমাকেও সাংবাদিকতা করার উতসাহ দেন। আমি আগ্রহ জানালে তিনি আরও খুশি হয়ে বললেন, ‘সাতমাথায় দৈনিক উত্তরবার্তা পত্রিকা বের হয়। প্রকাশক ও সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান টোকন আমার ছাত্র। আমি ফোন করে বলে দিচ্ছি। আমার কথা বলো।‘ বলেই উত্তরবার্তা পত্রিকার সম্পাদক মাহাবুব ভাইকে ফোন করে আমাদের কথা বললেন। এছাড়া দৈনিক করতোয়া এবং দৈনিক উত্তরাঞ্চল পত্রিকা অফিসেও যেতে বললেন। পত্রিকা অফিস থেকে কাজ সেরে কলেজে আসতে বললেন ,বাসায় দুপুরে খাওয়ার জন্য।
আমরা প্রথমে বগুড়ার ঐতিহাসিক সাতমাথায় গিয়ে উত্তরবার্তা পত্রিকা অফিস খুঁজে ঢুকলাম জীর্ন এক পুড়ানা বিল্ডিংয়ের গেট দিয়ে। বিল্ডিংয়ের দোতলায় বগুড়া প্রেসক্লাব। পত্রিকা অফিস পরিত্যক্ত টিনসেড ঘরের টিনের বারান্দায় বেড়া দিয়ে ঘেরা। দেখি ২-৩ জন বসে আছেন। একজন ছিলেন বয়স্ক ভাবগম্ভির মোটাসোটা ব্যক্তি। আমাদের পরিচয় দিলাম । সম্পাদকের সাথে দেখা করতে চাইলে আমাদেরকে সম্পাদক মাহাবুব ভাইয়ের কাছে নিয়ে গেলেন। আমরা নিজ নিজ পরিচয় দিলাম।সম্পাদক নিজের নাম ও পরিচয় দিয়ে জানালেন,স্যার আপনাদের কথা ফোনে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে আমাদের জন্য চা-সিংগারা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। এসময়ে আমাদেরকে কলামিষ্ট বুদ্ধিজীবি সেই ভাবগম্ভির মানুষ মতিন খালু ( সম্পাদকের খালু), বার্তা সম্পাদক প্রদীপ ভট্রাচার্য শংকর দা, সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার আশিষ উর রহমান শুভ , বিজ্ঞাপন ম্যানেজার হামিদ ভাই এবং সার্কুলেশন ম্যানেজা আবু বক্কার সিদ্দিক ও অন্যান্যদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমরা চলনবিলের কৃতিসন্তান প্রফেসর আব্দুল হামিদ স্যারের এলাকার হওয়ায় খুব সম্মান করলেন সবাই। বগুড়ার মানুষ অধ্যাপক আব্দু হামিদ স্যারকে শুধু চলনবিলের প্রখ্যাত মানুষ বা শিক্ষাবিদ নয় প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক বলে পরম শ্রদ্ধার সাথে সম্মান করে।সম্পাদক, শংকর দা এবং শুভ হামিদ স্যারের ডাইরেক্ট ছাত্রƒ । প্রত্যেকেই হামিদ স্যারকে শ্রদ্ধা করেন দেখে আমরা গর্বিত হলাম। আমাদের মধ্য থেকে কিরন এবং আবুল আমাকে এই পত্রিকায় লাখার জন্য বলে। আমিও রাজি হয়ে যাই। সম্পাদক মাহবুব ভাই আমাকে সংবাদ লেখার কিছু দিক নির্দেশনা দিলেন। আমিতো সংবাদ লেখার কিছুই বুঝি না, তবুও সম্পাদকের কথাগুলি মনযোগ সহকারে শুনলাম। আমার নাম, ঠিকানা বার্তা সম্পাদক শংকর দা লিখে রাখলেন। এদিকে অত্যন্ত রাসভারি গুরুগম্ভির বুদ্ধিদিপ্ত কলামিষ্ট আব্দুল মতিন খালু (আশিষ উর রহমান শুভর বাবা এবং সম্পাদক মাহবুব ভাইয়ের খালু) আমাকে সংবাদ এবং ফিচার লেখার কিছু টপিকস দিলেন। চলনবিলের ইতিহাস,- ঐতিহ্য,সমস্যা- সম্ভাবনা, প্রয়োজনীয় সুপারিশ,সাক্ষাতকার চলনবিলের গুণীজনদের জীবন ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যসংগ্রহ করে লেখার গাইডলাইন দিলেন। আমরা উত্তর বার্তা পত্রিকার কয়েক কপি নিয়ে দৈনিক উত্তরাঞ্চল পত্রিকা অফিসে গেলাম। উত্তরাঞ্চল পত্রিকার সম্পাদক প্রবিন সাংবাদিক দূর্গাদাস মুখার্জীর সাথে সাক্ষাত করলাম। আমাদের পরিচয় দিতেই তিনি জানালেন, হামিদ সাহেব আমাদের কথা জানিয়েছেন। আমাদের সিংগারা-চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন। কিরন এই পত্রিকায় চলনবিলের সংবাদদাতা হিসেবে লিখতে আগ্রহ জানালে সম্পাদক অত্যন্ত খুশি হলেন। চলনবিলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে লেখার জন্য পরামর্শ দেন। তিনি কিছু পত্রিকাও দিলেন। এরপর আমরা গেলাম করতোয়া পত্রিকা অফিসে গিয়ে সম্পাদকের সাথে দেখা করলাম। এখানেও চলনবিলের হামিদ স্যর পাঠিয়েছেন শুনে অত্যন্ত সম্মানের সাথে কথাবার্তা বললেন। তখন করতোয়া পত্রিকায় আতহার লিখতেন (আতহার তখন প্রেসক্লাব থেকে বহিস্কার ছিলেন)। সম্পাদক হেলালুজ্জামান তালুকদার আতহারের খোঁজ খবর নিলেন। কিরণ আর আবুল আতহারের বহিস্কারের ঘটনা চেপে যায়। আমি আতহারের বিষয়ে কিছুই জানিনা। করতোয়া পত্রিকা থেকে বের হয়ে সোজা আজিজুল হক কলেজে চলে এলাম। বেলা তখন প্রায় ৩ টা। হামিদ স্যার আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাদের নিয়ে বসায় গেলেন। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে অনেক কথা হলো হামিদ স্যারের সাথে। বাসা থেকে বের হলাম ৫টার দিকে। বগুড়া থেকে বাসে মাঝিরা ক্যন্টনমেন্টে ফিরে আসি। খলিল আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। রাত ৯ টার দিকে মক্কেল মিলিটারি এসেছেন রাতের খাবারের জন্য আমাদেরকে নিতে। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে আবার ক্যান্টনমেন্টে এসে আড্ডা মেরে রাত ১২ টার সময় বিছানায় ঘুমিয়ে গেলাম।
ভোরে উঠে নাস্তা সেরে সাইকেল নিয়ে সকাল ৮ টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। মাঝিরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রওয়ানা হয়ে মহাসড়ক হয়ে বগুড়া জাহাঙ্গিরাবাদ এসে নাটোর মহাসড়কে উঠে নাটোরের দিকে সাইকেল চালানো শুরু করলামা। পথে মাঝে মাঝে বাজার বা চা ষ্টল দেখে থেমে চা-বিস্কুট খেয়ে জিরিয়ে নিয়ে আবার সাইকেল চালানো শুরু করতাম। এইভাবে চলতে চলতে নন্দিগ্রাম, ওমরপুর , রনবাঘা , জামতলি , চৌগ্রাম পার হয়ে সিংড়ার কাছাকাছি আসতেই আবুলের সাইকেলের ডান প্যাডেলের পা দানি গেল ভেঙ্গে।এদিকে সড়কের ধারে কোন সাইকেল মেকারও নাই। আবুল ছিল সাহসি এবং গোঁয়ার এক রোখা প্রকৃতির। প্যাডেল ছাড়াই চালাতে শুরু করলো। ওর জেদ প্যাডেল ছাড়াই চালিয়ে যাবে। এভাবেই সিংড়া এসে নদিতে ফেরি পাড় হয়ে কাঁচা রাস্তা দিয়ে কলম, শাঁঐল, সোনাপুর দিয়ে কুমারখালি খেয়াঘাটে খেয়া নৌকায় পাড় হয়ে নাজিরপুর হাটে নামলাম । তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টা হবে। দীর্ঘ পথ একটানা সাইকেল চালিয়ে তিনজনেরই অবস্থা কাহিল। প্যাডেল ছাড়া সাইকেল চালায়েও আবুল যেন ক্লান্তই হয়নাই এমন ভাব করছে। নাজিরপুর বাজারে হোটেলে কিছু খেয়ে ক্লান্তি দূর করে আবারও সাইকেলে উঠে প্রায় ১২ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার ধুলা ঠেলে রাত ৯ টায় চাঁচকৈড় পৌঁছালাম। চাঁচকৈড় এসে তিনজন কার্তিকের হোটেলে সিঙ্গাড়া ,চা খেলাম। আবুল ,কিরণ থেকে গেল । আমি রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে গাড়িষাপাড়া হয়ে কালিনগর-সাহাপুর নদির ধার দিয়ে সাইকেল চালিয়ে শিকারপুর বাড়িতে পৌঁছালাম ।তখন রাত প্রায় ১১ টা। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার যাওয়ার শব্দ পেয়ে মা চুপ করে বাইরে এসে আমার ঘরে খাবার দিয়ে চলে যায়।আর সাবধান কওে দেয়,চুপ করে খেয়ে ঘুমিয়ে যেতে। আর বলে ,’ তুই না কয়ে এ কয়দিন কোথায় গেছিলি? সব জায়গায় খোঁজ করে কোথাও না পেয়ে কান্নাকাটি করছে সবাই। তোর বাপ খুব রেগে আছে।তোর জন্যে খাওয়ার দিতে মানা করেছে। এখন জানতে পারলে তোকে আর আসত রাখবেনা। আল্লাহ জানে সকালে কী হবে! আমি চুপ করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভাগ্য ভালো , সকালে আমার ছোট দাদা নওশের ডাক্তার মশিন্দা থেকে আমাদের বাড়িতে আসায় আব্বার শাস্তি থেকে রেহাই পেলাম।

#মোঃ আবুল কালাম আজাদ, প্রবিণ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট, চলনবিল প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক সভাপতি,গুরুদাসপুর, নাটোর, ০১৭২৪০৮৪৯৭৩ # ১/১/২০২৪

বিদায়ী ৭ম বর্ষে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তায়
প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংবাদের শিরোনাম 

১. শান্তিপূর্ণভাবে তাড়াশ পৌরসভার প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত, সংখ্যা-০২
২. তাড়াশের রোখসানা ঃ সমাজকর্মী থেকে জনপ্রতিনিধি, সংখ্যা-০২
৩. তাড়াশের শহীদ সাংবাদিককে সম্মাননা প্রদান, সংখ্যা-০৩
৪. আমেরিকায় মদ্য পানে নারীর মৃত্যু বেশী, সংখ্যা-০৩
৫. তাড়াশ উপজেলা ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা, সংখ্যা-০৪
৬. তাড়াশের ৬০ হাজার মানুষ ব্যাংকিং সেবা বঞ্চিত, সংখ্যা-০৪
৭. চৌহালীতে কবরস্থানে ঠাঁই হল বৃদ্ধা পিতা-মাতার, সংখ্যা-০৫
৮. তাড়াশে পানির ব্যবসাঃ রাস্তা বন্ধ-সড়ক ধ্বংস, সংখ্যা-০৫
৯. সিংড়ায় চলনবিল বার্তা সম্পাদককে সম্মাননা প্রদান, সংখ্যা-০৬
১০. গুরুদাসপুরে চতুর্থ শ্রেণির শিশু জন্ম দিল এক নব জাতক, সংখ্যা-০৬
১১. দীর্ঘদিনেও দখলমুক্ত হয় নি তাড়াশ বাজারের ৫টি শেড, সংখ্যা-০৬
১২. চলনবিলে শামুক নিধন ঃ জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে, সংখ্যা-০৭
১৩. সিংড়ায় মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে পিতা গ্রেফতার, সংখ্যা-০৭
১৪. ফরহাদ হোসেন তাড়াশ উপজেলার শ্রেষ্ঠ গ্রাম পুলিশ, সংখ্যা-০৮
১৫. বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের পাশে থাকবে-প্রধানমন্ত্রী, সংখ্যা-০৯
১৬. চলনবিলে পাখী নিধন থেমে নেই, সংখ্যা-১০
১৭. গায়ের রং কালো বলে গৃহবধুকে হত্যা, সংখ্যা-১০
১৮. ঐতিহাসিক নওগাঁ দিবসঃ মুক্তিযোদ্ধাদের মিলন মেলা, সংখ্যা- ১১
১৯. তাড়াশ-গুরুদাসপুর মৈত্রী সড়ক বেহালঃ জনদুর্ভোগ চরমে,সংখ্যা- ১১
২০. মাছের অভাবে চলনবিলে শুটকি উৎপাদন ব্যাহত, সংখ্যা- ১১
২১. তাড়াশ পৌর বাজারে ভোগান্তি, সংখ্যা- ১২
২২. তাড়াশে বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড নির্মিত হবে কবে ?, সংখ্যা- ১৩
২৩. শহীদের সন্তান ভিক্ষা করে খায়, সংখ্যা- ১৪
২৪. তাড়াশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাইন বোর্ড নাই, সংখ্যা- ১৫
২৫. তাড়াশে নারী থেকে পুরুষে রূপান্তর, সংখ্যা- ১৭
২৬. তাড়াশে ট্রিপল মার্ডার ঃ ঘাতক ভাগ্নে আটক, সংখ্যা- ১৮
২৭. তাড়াশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুর্দশা ঃ বসতিরা চলে যাচ্ছে অন্যত্র, সংখ্যা- ১৯
২৮. তাড়াশের আদিবাসী শ্রমিকরা বৈষম্যেও শিকার, সংখ্যা- ২০
২৯. পাঁচ বছর পর তাড়াশে বই মেলা ঃ উদ্বোধন করলেন মাননীয় সাংসদ, সংখ্যা- ২১
৩০. নন্দীগ্রামেও চলনবিল বার্তা, সংখ্যা- ২১
৩১. তাড়াশ উপজেলা পরিষদের প্রবেশ গেটে সাইনবোর্ড নেই, সংখ্যা- ২১
৩২. গাজায় এক হাজারের বেশী মসজিদ ধ্বংস করেছে ইসরাইল, সংখ্যা- ২২
৩৩. তাড়াশে খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ, সংখ্যা- ২২
৩৪. তাড়াশের বিশিষ্ট বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সোবহান আর নেই, সংখ্যা- ২৩
৩৫. তাড়াশ প্রাণী সম্পদ দপ্তরে চিকিৎসক নেই দীর্ঘদিন, সংখ্যা- ২৩
৩৬. শুন্য থেকে কোটিপতি কথিত দলিল লেখক বাচ্চুঃ দুদকের হস্তক্ষেপ চান এলাকাবাসী, সংখ্যা- ২৪
৩৭. তাড়াশে অনেক মামলা, প্রচুর আসামী তবু পুকুর খনন হচ্ছে কীভাবে, সংখ্যা- ২৪
৩৮. তাড়াশে পুকুর খনন এখন ওপেন সিক্রেট, সংখ্যা- ২৫
৩৯. তাড়াশ পল্লী বিদ্যুৎ ও বিএডিসি অফিসে দালাল ছাড়া কাজ হয় না, সংখ্যা- ২৫
৪০. তাড়াশে বিভিন্ন সরকারী দপ্তর চলে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে, সংখ্যা- ২৬
৪১. তাড়াশে তাল গাছে মড়কঃ মারা যাচ্ছে শত শত তাল গাছ, সংখ্যা- ২৯

কবিতা
চলনবিলের মাঝি
মনিরুন নাহার

কোন গাঁয়েতে থাকোরে মাঝি কোন গাঁয়েতে বাস
সেই কথাটা জানতে আমার মনে বড় আশ।
জল নিতে আসি যখন কলসি কাঁখে লয়ে
আমার পানে আড় চোখেতে থাকো তুমি চেয়ে।
ধীরে ধীরে বৈঠা বাও আর ধীরে কথা কও
অচিন মাঝি ভাবছি! তুমি এ গাঁয়ের কেউ নও।
কী কারণে দুপুর বেলায় একলা ঘাটে বইয়া?
রোদে পুড়ো, মেঘে ভেজো আমায় যাওগো কইয়া।
তোমার মনে কীসের দুঃখ কীসের এতো ব্যথা?
আপন ভেবে বলতে পারো তোমার মনের কথা।
তোমায় আপন ভাবতে মাঝি মনে বড় ভয়
পাড়া-পড়শি শুনলে যদি আমায় মন্দ কয়।
কোন সুদুরে যাওরে মাঝি আসবে নাকি ফিরা?
আমার কথা ভুলে যেও দিলাম মাথার কিরা।
চলনবিলের মাঝি আমি হেথায় আমার ঘর
জীবন থাকতে কইন্যা তোমায় না করিবো পর।
মন সঁপিলাম কইন্যা তোমার রাঙা দু’টি পায়
তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধিবো মল্লিকপাড়া গাঁয়।
কওনা কথা কইন্যা তুমি চিরল দাঁতে হেসে
মরতেও আমি রাজি কইন্যা তোমায় ভালোবেসে।
চলনবিলের পাড়ে মোরা বাঁধবো সুখের ঘর
সুখে-দুখে থাকবো পাশে জনম জনম ভর।
হিজলা ফুলের মালা গেঁথে বাসর সাজাবো
জোনাক পোকার ঝাড়বাতির আলো জ¦ালাবো।
চাঁদনী রাতে নাও বাসরে মোদের ফুলশয্যা!
তোমার রূপের রোশনি দেখে চাঁদও পায় লজ্জা।
বিলের জলে কইন্যা তোমার রূপের ছায়া ভাসে
সেই খুশিতে বিলের জলে পদ্ম-শাপলা হাসে।
কথা দিলাম কইন্যা আমি তোমার বাহুডোরে
বাঁধা রবো জনম অবধি নাহি যাবো ছেড়ে।

‘‘চলনবলি স্মরণ’ে
সাইুফুল সাইফ

চলনবলি
এখনোকি ঠকি তুই তমেনি আছসি আগরে মতন
ছায়া ডাকা, পাখি ডাকা সবুজ গাছটি যমেন।
এখনোকি তোর বুকে নৌকা চলে পাল তুলে
মাঝি মাল্লায় গান গায় ভাটয়িালরি সুর তুল।ে
এখনোকি শাপলা শালকি কলমি লতায়
ঝাঁকে ঝাঁকবেসে পাখি ঝাঁকে উড়ে যায়।
এখনোকি তোর বুকে দলে দলে
সারসিারি নৌকার পাল্লা চল।ে
এখনোকি বধুয়া লাল শাড়ি পড়ে
নবান্নরে উৎসব লাগায় কৃষাণের ঘর।ে
এখনোকি বয়িে বাড়ি নৃত্যরে তালে তালে
ধুম লগেে যায় ময়েলেি গানরে সুর তুল।ে
এখনোকি জোসনা ঝরা রাতরে বলোয়
যাত্রা গানরে সইে সুর শোনা যায়।
এখনোকি হয় লাঠবিাড়ি খলো- বহেুলার লাচারি
বাড়ি বাড়ি মহেমানে ভরে যায় কাচারী।
এখনোকি মাঠে ঘাটে বাতাসরে বায়
সুর তুলে পুথপিাঠ ধুয়া গান হয়।
এখনোকি সাঝেঁর রাতে দনিরে বলোয়
শশিুরা ঘুমায় দাদী-মার ভুতরে কচ্ছিায়।
এখনোকি গ্রীষ্মরে খড়পড়া রোদে
খালে বলিে দলে দলে মাছ ধরে ঝাঁক বঁেধ।ে
এখনোকি দগিন্ত ঘরো মাঠ জুরে
আঁকা-বাঁকা পথে গধুলরি ধুলো উর।ে
চলনবলি
এখনোকি ঠকি তুই তমেনি আছসি আগরে মতন
ছায়া ঢাকা-পাখি ডাকা সবুজ গাছটি যমেন।

ভেজাল সার ও কীটনাশক কারখানা
খুলে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ছবি

শাহ আলম, তাড়াশ :ভেজাল সার ও কীটনাশক কারখানা খুলে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ঢাকার কথিত এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।মামলার নথি সূত্রে প্রকাশ, প্রতারক আলমগীর হোসেন, এ এস এম, (এরিয়া সেলস ম্যানেজার) আর ডি এল এগ্রো কেমিক্যাল প্রধান কার্যালয় ট্রপিকনা ৫ম তলা , পুরান পল্টন ঢাকা ১০০০।
এই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে জাল কাগজ,ভেজাল সার ও কীটনাশক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খুলে চোখ ধাঁধানো সাইনবোর্ড ও কাগজপত্র দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজনকে আকর্ষনীয় বেতনের লোভ দেখিয়ে ও ডিলারশিপ এজেন্ট নিয়োাগ দিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল । যার ভুক্তভোগী সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার মোঃ মামুনুর রশিদ , পিতা আব্দুর রাজ্জাক ,মহল্লা: রায়পুর ,সিরাজগঞ্জ সদর । এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতারক আলমগীর হোসেন পিতা আব্দুল মোমিন ,মাতা সুফিয়া খাতুন , গ্রাম কাশিপুর ,পোস্ট ,কাশীপুর – ৭৪৪০ ,উপজেলা মনিরামপুর , জেলা যশোর । তিনি ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় সিরাজগঞ্জের মামুনুর রশিদকে লোভনীয় ফাঁদে ফেলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি মামুনকে সিরাজগঞ্জের মূল এজেন্ট হিসেবে নিয়োাগ দেন এবং ডকুমেন্ট হিসেবে তার কাছ থেকে তার নামীয় স্বাক্ষরকৃত বøাঙ্ক চেক , সিকিউরিটি হিসেবে সুকৌশলে জমা রাখেন । যমুনা ব্যাংক লিমিটেড বগুড়া শাখা যাহার চলতি হিসাব নং ০২১০৩১০০১৬৩৩১চেক নং ঔঝই ঘঙ ৫৬৪১২২২. উক্ত চেক জমা রেখে নগদ ১৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টাকা প্রদান করে মালামাল ক্রয় করে আনেন এবং ওই মালামাল পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন কর্ম এলাকার পয়েন্টে-পয়েন্টে, দোকানে-দোকানে সরবরাহ হলে উক্ত মালামাল স্থানীয় ব্যবহারকারী ক্রেতা সাধারণের কাছে ভেজাল পরিলক্ষিত হলে বিষয়টি স্থানীয় সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা জানতে পারেন এবং মালামাল পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল রাজশাহী বিভাগীয় কর্মকর্তার অফিসে পাঠান এবং তা ভেজাল প্রমাণিত হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ ওই মালামাল বাজেয়াাপ্ত করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে ভ্রাম্যমান আদালত দোকানে-দোকানে অভিযান চালালে ঐ নকল মালামালের সন্ধান পান এবং ৩ হাজার টাকা জরিমানা করেন। ফলে ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদ ওই মালামাল ফেরত নিয়ে তার টাকা ও চেক ফেরত চাইলে তারা তা দিতে অস্বীকার জানায় এবং ঐ চেকে ইচ্ছামত টাকার পরিমাণ বসিয়ে ভুক্তভোগী মামুনের উপর মামলা করেছে বলে শোনা যাচ্ছে । এমন জালিয়াতি হতে রক্ষা চান ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদ এবং প্রতারক আলমগীর হোসেনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন । সূত্র বলছে, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদ সিরাজগঞ্জ জেলা জজ কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন যশোরের আলমগীর হোসেনের নামে ।

গুরুদাসপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ
আইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ 

গুরুদাসপুর প্রতিনিধিঃ নাটোরের গুরুদাসপুরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক একদিনের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে গত সোমবার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তামাক প্রতিরোধে আলোচনা সভা হয়।
উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা চেয়ারম্যান আহম্মদ আলী মোল্লা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দুই ভাইস চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ও সাহিদা আক্তার। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুুল বারী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশীদ, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আকতার, শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জোনাব আলী, সাংবাদিক আলী আক্কাছ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সিংড়া মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ
সভাপতি রানা, সম্পাদক বাশার 

সিংড়া প্রতিনিধি ঃ মো. এমরান আলী রানাকে সভাপতি, মো. আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক ও আব্দুর রশিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ নাটোরের সিংড়া উপজেলা শাখার ২৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
গত ২৬ জুন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানসংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ সোলায়মান মিয়া ও মহাসচিব মোঃ শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানমো. এমরান আলী রানাকে সভাপতি, মো. আবুল বাশারকে সাধারণ সম্পাদক ও আব্দুর রশিদকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ২৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেওয়া হলো।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই পত্র জারির ৩ মাসের মধ্যে গেজেট ও ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তনদের নিয়ে সকল ইউনিয়ন কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির সাথে সমন্বয় করে পরিচালনা করতে হবে। গঠনতন্ত্রের আইন-কানুন মেনে সংগঠন পরিচালনা করতে হবে। গঠনতন্ত্র ও রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজে জড়িত থাকলে কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে।

রায়গঞ্জে একই রাতে দু’টি বাড়িতে দুঃসাহসিক চুরি
স.ম আব্দুস সাত্তার ঃ সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে একইরাতে দু’টি বাড়িতে দুঃসাহসীক চুরির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দিবাগত রাতে, উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের শামিম হোসেন সরকারের গোয়াল ঘড়ে থাকা তিনটি গরু ও একই ইউপির নদা শালুয়া গ্রামের সুমন সরকারের বাড়িতে জানালার গ্রিল কেটে বিতরে প্রবেশ করে বাড়ি ওয়ালাকে জিম্মি করে । নগদ টাকা, স্বর্ণ অলংকার ও মোবাইল ফোন নিয়ে চলে যায় সংঙ্গবদ্ধ চোরের দল । এ বিষয়ে, রায়গঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের মুঠোফেনে বলেন, পৃথক দু’টি ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লাপাড়ায় বর্ষায়ও পাথারে পানি নেই! 

ডা: আমজাদ হোসেন ঃসিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় পাথার প্রান্তরের মাঠগুলোয় ভরা বর্ষাকালেও নেই পানির দেখা। চলছে না নৌকা। নেই মাছ। উল্লাপাড়া উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ‘পাথার প্রান্তর’ বলে পরিচিত আবাদি মাঠগুলো স্বাভাবিক বন্যাতেই তলিয়ে যায়। এই ইউনিয়ন তিনটি হলো – মোহনপুর, বড়পাঙ্গাসী ও উধুনিয়া। বৃষ্টির মৌসুমে মাঠগুলোতে প্রায় চার মাস পানি থাকে। সে সময় এলাকার যাত্রী ও মালামালবাহী নৌযান চলাচল করে এই পথে। এছাড়া মাছ ধরার ডিঙ্গি ও বড় নৌকাও দেখা যায়।সরেজমিন গতকাল ইউনিয়ন তিনটি ঘুরে দেখা যায়, পানি রয়েছে শুধু এলাকার নদী ও খালগুলোয়। কিন্তু পাথারের প্রান্তর শুকনো। অনেক কৃষক মাঠে গরু চড়াচ্ছেন। নৌকা মেরামত করে আলকাতরা দিয়ে মাঠে, খাল পাড়ে শুকনো জায়গায় রাখা আছে।
উধুনিয়া গ্রামের নুরুন্নবী, জাহিদ হোসেন ও রেজাউল করিম বলেন, বিগত বেশ কয়েক বছরে দেখা গেছে বর্ষাকাল শুরু হতে না হতেই বানের পানিতে তিনটি ইউনিয়নের পাথার প্রান্তরের মাঠগুলো তলিয়ে যেত। কিন্তু এবার তেমনটা দেখা যাচ্ছে না।তাদের কথানুসারে, এবার বাঘাবাড়ী এলাকা হয়ে পাথার প্রান্তরের মাঠগুলোয় বানের পানি ঢুকতে পারেনি। এদিকে পূর্ব এলাকা থেকে বানের পানির তেমন চাপ নেই। তাই এমন অবস্থা হয়েছে। তবে কম সময়ের মধ্যে পাথার প্রান্তরের মাঠগুলোয় বানের পানি উঠবে বলে আশা করছেন তারা। এদিকে এবার বর্ষাকালে পাথার প্রান্তরের মাঠগুলোয় পানি না থাকায় অন্য রূপ দেখা গেছে। পতিত মাঠগুলো সবুজ ঘাস ও আগাছায় ভরে আছে। বর্ষাকালে ভাড়ায় নিজ নৌকা খাটানো নুরুল বলেন, নৌকা খাটিয়ে দিনে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়ে হয় এই মৌসুমে। নৌকা নিয়ে বানের পানি আসার অপেক্ষায় দিন পার করছেন। তিনি বলেন, বানের পানি মাঠে উঠলে নৌকাগুলো ভাসানো হবে। এমন অবস্থা এই এলাকার আরো অনেকেরই। সবাই অপেক্ষায় আছেন বর্ষা মৌসুমের বানের পানি আসার।

গুরুদাসপুরে মিটার চোরেরা বিকাশে টাকা নেয় 

গুরুদাসপুর প্রতিনিধিঃ নাটোরের গুরুদাসপুরে থামানো যাচ্ছেনা বৈদ্যুতিক মিটার চুরি। একের পর এক বিভিন্ন এলাকায় মিটার চুরি হলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ধরা ছোয়ার বাইরে চোর চক্রের সদস্যরা। উপজেলার চাপিলা, নাজিরপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য মিটার চুরির ঘটনা স্বীকার করলেও সঠিক তথ্য দিতে পারেনি বিদ্যুৎ অফিস। তবে শনিবার (৬ জুলাই) চোরকে বিকাশে টাকা দিয়ে ১৩টি মিটার উদ্ধার করেছেন গ্রাহকরা।
জানা যায়, শুক্রবার গভীর রাতে পৌর সদরের চাঁচকৈড় গাড়িষাপাড়া, বামনকোলা, গোপালের মোড় সহ বিভিন্ন এলাকায় ৩৬টি মিটার চুরি হয়। চুরি যাওয়া মিটারের পাশে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখা হয় চিরকুট। সেখানে লেখা থাকে ‘চুরি যাওয়া মিটার ফেরৎ পেতে ফোন করুন’। চিরকুটে থাকা নম্বরে কল করলে বিকাশে টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিলে কোথায় মিটার পাওয়া যাবে তার স্থান বলে দেয় চোরেরা। চোর চক্রের সদস্যরা প্রকাশ্যে মোবাইল নম্বর দিয়ে গেলেও পুলিশ এবং বিদ্যুৎ অফিস তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না- এ অভিযোগ গ্রাহকদের। গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) উজ্জল হোসেন বলেন, মিটার চুরির ঘটনায় থানায় কেউ অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দ্রæত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

রায়গঞ্জে মাদক ব্যবসায়ী আটক 
মোঃ মনিরুল ইসলাম ঃ সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জে ১৬০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র‌্যাব-১২ এর সদস্যরা৷৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ভোর ৩ টায় র‌্যাব-১২’র সদর কোম্পানির একটি চৌকষ আভিযানিক দল “সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানার জোরপুল চান্দাইকোনা জমজম হোটেলের সামনে রংপুর টু ঢাকাগামী মহাসড়কের উপর” একটি মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৬০ বোতল ফেন্সিডিলসহ ২ জন মাদক কারবারীকে আটক করেন৷আটকৃত আসামীরা নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর থানার চিরইপাড়া গ্রামের মৃত আশিকুর আলীর ছেলে আসাদ আলী (৫৫) ও বগুড়া জেলার আদমদীঘি থানার কুন্ডকগ্রামের মৃত ডিজেন্দ্রনাথ তলা পাত্রের ছেলে চয়ন তলা পাত্র (৪০)৷এসময় তাদের সাথে থাকা মাদকদ্রব্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৭ হাজার ৯৪৫ টাকা জব্দ করা হয়। পরে আটকৃত আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে
তাড়াশ প্রাণীসম্পদ হাসপাতাল 

সাব্বির আহম্মেদ, তাড়াশ ঃ সিরাজগঞ্জের তাড়াশে চার দশকের পুরানো ভবনে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, সরকারি এ হাসপাতালের দুইতলা বিশিষ্ট ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৮৪ সালে। আর গত চার দশকে ভবনটির তেমন কোন সংস্কার কাজও করা হয়নি। যে কারনে ভবনটিতে ফাটল ধরেছে এবং দেয়ালে বট- পাকুর বাসা বেঁধেছে। ফলে জড়াজীর্ণ এ ভবনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসের কাজ এবং সেবা নিতে আসা এলাকাবাসীর সেবা কার্য়ক্রম গ্রহন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের অফিস সহকারি ফিরোজ হোসেন জানান,প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সরকারি দুই তলা ভবনটির নিচ তলায় রয়েছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, ভ্যাটেনারী কর্মকর্তা, প্রসাশনিক কর্মকর্তার অফিস কক্ষ। আরো আছে মূল্যবান ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার ষ্টোর, কম্পাউডারের কক্ষ, সভা কক্ষসহ দাপ্তরিক নানা কাজে ব্যহৃত আরো বেশ কয়েকটি কক্ষ। যার সবই এখন আংশিক অচল বা বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ভবনের প্রায় সব কক্ষে ভয়াবহ ফাটল, পলেস্তরা খুলে অফিসের কর্মরত ও সেবা নিতে আসা লোকজনের মাথায় পড়ছে। আবার মূল্যবান ঔষধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখার ষ্টোর কক্ষে শ্যাওলা পড়ে এবং বৃষ্টির পানি চুইয়ে একেবারের কক্ষটি ব্যবহারের অনপযোগি হয়ে পড়েছে। এতে করে এখানে রাখা ঔষধের মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে সেবা নিতে আসা উপজেলার আরংগাইল গ্রামের মোরশেদ আলী জানান, গরু- ছাগলের চিকিৎসা করাতে প্রাণী সম্পদ দপ্তরের এসে কক্ষ গুলোতে ঢুকলে ভয় রাগে। ভবনটির এমন অবস্থা যে, যে কোন সময় মাথার উপর পলেস্তরা খুলে পড়বে।
আবার ভবনটির দ্বিতীয় তলায় দুটি ইউনিটে আছে ভি এস কোয়ার্টার। এখানে আছে ভ্যাটেনারী কর্মকর্তার, অফিস কম্পপাউন্ডারের পরিবারসহ বসবাসের পুনাঙ্গ আবাসিক ববস্থা। আর দুটো ইউনিটের পুরো বাসাটার অবস্থা আরো শোচনীয়। উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভ্যাাটেনারী সার্জন ডা. মো. বাদল মিয়া জানান, এ ধরনের ভবনে বসবাস করলে যে কোন সময় র্দূঘটনায় জীবনের উপর ঝঁকি আসতে পারে।
এ দিকে উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালের এ ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনার জন্য গত ১২ জুন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ডা. অলিউর ইসলাম তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি পত্র পাঠিয়েছেন বলে জানান।তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা পত্র প্রাপ্তীর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনার জন্য উপজেলায় একটি কমিটি আছে। কমিটির সদ্যস্যদের নিয়ে এ ব্যাপারে দ্রæতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

তাড়াশের জাম্বুর ভুয়া সনদে চাকরী 
– অভিযোগ সহধর ভাইয়ের
– আব্দুল বারিক জাম্বু ও মো. রুহুল আমীন একই বাবার সন্তান হওয়ার কারণে সনদে আব্দুল বারিক জাম্বুর নামের স্থলে সহজেই মো. রুহুল আমিন লিখে নেন। অনরুপভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সেরে নেন
– ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তো বড় অন্যায়। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি- ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম

গোলাম মোস্তফা, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশের আব্দুল বারিক জাম্বু নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এসএসসি পাশের ভুয়া সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র পরিবর্তন করে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সহদর ভাই মো. রুহুল আমীন। এদের বাড়ি উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কাজিপুর গ্রামে। এদের বাবার নাম মৃত আজিজুল হক। মায়ের নাম মোছা. সুফিয়া খাতুন। বিশেষ করে আব্দুল বারিক জাম্বু ও মো. রুহুল আমীন একই বাবার সন্তান হওয়ার কারণে সনদে আব্দুল বারিক জাম্বুর নামের স্থলে সহজেই মো. রুহুল আমিন লিখে নেন। অনরুপভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সেরে নেন। সেই এসএসসি পাশের ভুয়া সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে বহাল তবিয়তে দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে নিজের পরিচয় গোপন করে চাকরি করে আসছেন আব্দুল বারিক জাম্বু মো. রুহুল আমীন নামে।
এদিকে আব্দুল বারিক জাম্বুর বড় ভাই মো. রুহুল আমীন বলেন, আমারও ঢাকাতে একটি চাকরির সুযোগ হয়। পরে বিনসাড়া হাইস্কুলে আমার এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট নিতে গেলে সেখানকার সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াজেদ জানান, ২০২৪ সালে তার বাবা আজিজুল হক মো. রুহুল আমীনের সার্টিফিকেট হাইস্কুল থেকে তুলে নিয়ে গেছেন। তিনি নিশ্চিত হন তার এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সেরে নিয়ে ঢাকায় শিশু হাসপাতালে আব্দুল বারিক জাম্বু মো. রুহুল আমিন নামে প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন।
অপরদিকে নিজের এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট না পেয়ে ঢাকার পোশাক শ্রমিক কারখানায় কাজ করে খুব কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী মো. রুহুল আমীন। তার সার্টিফিকেট ফিরে পেতে তিনি ২০০১ সালের জুলাই মাসের ৩১ তারিখে তাড়াশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছেন। জিডি নং ১০২২।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিনসাড়া হাইস্কুলে গেলে প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, মো. রুহুল আমীনের এসএসি পাশের সার্টিফিকেট তার বাবা আজিজুল হক তার ছেলের চাকরির কথা বলে ২০০৯ সালের মার্চ মাসের ৩০ তারিখে বিধি মোতাবেক স্বাক্ষর দিয়ে তুলে নিয়েছেন। বিনসাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, মো. রুহুল আমীন হাইস্কুলে এসেছিলেন তার এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়েছি নিয়মানুযায়ী বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট তুলে নেওয়ার জন্য।
মো. রুহুল আমিন আক্ষেপ করেন, ভুয়া সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে চাকরি করছেন তারই সহধর ছোট ভাই আব্দুল বারিক জাম্বু। অসদ উপায় অবলম্বন করে সরকারি চাকরি সে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছেন। অথচ নিজের এসএসসি পাশের সার্টিফিকেট না থাকায় ২০০২ সাল থেকে আমার পোশাক শ্রমিক কারখানায় কাজ করে পরিবার নিয়ে খুব অভাব অনটনে দিন কাটে। বারংবার নিজ পরিবারের কাছে প্রতিকার চেয়ে সমাধান মেলেনি এখনো। পরে রাজশাহী বোর্ড থেকে আমার এসএসসি পাশের সার্টিফিকেটের ডুপ্লিকেট কপি ২০২০ সালের আগষ্ট মাসের ২৪ তারিখে তুলে এনে রেখে দিয়েছি।
আব্দুল বারিক জাম্বু ও মো. রুহুল আমীনের বড় ভাই প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুস সবুর মিন্টু প্রথমে অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারপর বলেন, ঘটনার সত্যতা থাকলে সংবাদ করেন।
আব্দুল বারিক জাম্বু, মো. রুহুল আমীন ও আব্দুস সবুর মিন্টুর মামা জিল্লুর রহমান তোতা বলেন, আমি ভাগ্নেদের কোলে পিঠে বড় করেছি। মো. রুহুল আমীনের অভিযোগ সত্য। সহদর ভাইকে এরকমভাবে ঠকানো আব্দুল বারিক জাম্বুর উচিত হয়নি। অভিযুক্ত আব্দুল বারিক জাম্বু বলেন, “ ভাইয়া আমি আপনার সাথে সাক্ষাত করে কথা বলবো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আমি আপনার সাথে দেখা করবো ভাই।”এ প্রসঙ্গে ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনা যদি সত্যি হয় তাহলে তো বড় অন্যায়। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

শিক্ষকতা না করেও বেতন তুলে
নিচ্ছেন দেশীগ্রামের চেয়ারম্যান 

– তিনি কোনদিন ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে অংশ নেয়নি
– প্রতিমাসে একবার এসে হাজিরা খাতায় পুরো এক মাসের সাক্ষর করেন
– অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে দীর্ঘ কয়েক বছরে কোন সমাধান মেলেনি
– শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক একদিন পাঠদান করায়নি
– সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পরিক্ষায় আমাদের অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি
– চলতি মাসের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নাই
– নতুন কারিকুলামে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করাতে হয়। এক শিক্ষকের পাঠদান অন্য শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়
– বিশেষ করে তাকে শিক্ষক হিসেবে চেনেন না এমনটি জানিয়েছেন ঐ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির সকল ছাত্রছাত্রী
গোলাম মোস্তফা, তাড়াশ ঃ
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক ২০০৪ সাল থেকে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিক্ষক হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে তিনি কোনদিন ছাত্রছাত্রীদের পাঠদানে অংশ নেয়নি। এমনকি বিদ্যালয়ের কোনো ছাত্রছাত্রী তাকে শিক্ষক হিসেবে একদিনও শ্রেণিকক্ষে পায়নি। বিশেষ করে তাকে শিক্ষক হিসেবে চেনেন না এমনটি জানিয়েছেন ঐ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণির সকল ছাত্রছাত্রী।
তাদের অভিযোগ নিয়মানুযায়ি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাকের প্রতি দিন ৬টি করে পাঠদান দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি পুরোদমে ফাঁকি দিয়ে যাচ্ছেন। এতে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা পড়ালেখায় শতভাগ পিছিয়ে পড়ছে।
এদিকে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাককে আমি বারংবার মৌখিকভাবে শর্তক করেছি নিয়মিত বিদ্যালয়ে এসে পাঠদান করার জন্য। কিন্তু তিন দীর্ঘ সময়ে তা আমলে নেয়নি। বরং প্রতিমাসে একদিন কিছু সময়ের জন্য বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় পুরো এক মাসের সাক্ষর করে চলে যান। এটা মহা দুর্নীতির সামিল। ক্লাস না করেও প্রতিমাসে বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। তার মামা ধিরেন্দ্র নাথ বসাক বিদ্যালয়ের সভাপতি। আমি তার কাছে এ অনিয়মের প্রতিকার চেয়েছি। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে কোন সমাধান মেলেনি।
অপরদিকে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্রী জান্নাতারা লাবনী, রোখসানা খাতুন, সুসমিতা বালা বলেন, আমরা ৬ষ্ট শ্রেণি থেকে শুরু করে এখন ৯ম শ্রেণিতে পড়ছি। এই কয়েক বছরে আমাদের সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক একদিন পাঠদান করায়নি। মূলত শিক্ষক হিসেবে আমরা তাকে চিনিওনা। সর্বপরি ঐ বিদ্যালয়ের সকল ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পাঠদান বন্ধ থাকায় আমাদের পড়ালেখায় সীমাহীন ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের পরিক্ষায় আমাদের অকৃতকার্য হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
সরেজমিনে গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ে দেখা যায়, সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক বিদ্যালয়ে উপস্থিত নাই। চলতি মাসের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নাই।
দেশিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী শিকক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক বলেন, আমি ২০০৪ সাল থেকে শিক্ষগতা পেশায় যোগদান করেছি। ১০ থেকে ১২ বছর আগে কিছু পাঠদান করেছি। আমার বেতন হয়েছে ২০২৯ সালে। ইতোমধ্যে আমার মামাত বোন গিতা রানীকে বিকল্প শিক্ষক হিসেবে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি খুব বেশিদিন দায়িত্ব পালন করেননি। তবে আমি চেষ্টা করছি অন্য আরেকজনকে বিকল্প শিক্ষক হিসেবে দেওয়ার। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিকল্প শিক্ষকের বেতনের টাকা শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক নিজেই পকেটে ভরেন। এ কারণে আগের বিকল্প শিক্ষক কিছুদিন পাঠদান করে চলে গেছেন।
গুড়পিপুল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, এখন নতুন কারিকুলামে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করে ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করাতে হয়। এক শিক্ষকের পাঠদান অন্য শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। তাড়াশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, দেশীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্র নাথ বসাক আদৌ শিক্ষগতা পেশায় আছেন কী না তা জেনে বলতে হবে।এ প্রসঙ্গে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আফছার আলী বলেন, আপনি আমার জেলা অফিসে আসেন । এ নিয়ে সাক্ষাতে কথা বলব।

 

 

 

 

 

 

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD