উপজেলা চেয়ারম্যানের হলফনামায় তথ্য গরমিল, কমিশনে অভিযোগ

Spread the love

সিংড়া  প্রতিনিধি
৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ (১ম ধাপে), নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় বিজয়ী দেলোয়ার হোসেনের হলফনামায় তথ্য গরমিলের অভিযোগ পাওয়া গেছে।হলফনামায় তিনি তার পৈত্রিক জমি ১০ একর দেখালেও ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের রেকর্ডে পাওয়া গেছে মাত্র ১.৩১৫ একর। ফলে হলফ নামায় তিনি প্রকৃত জমির চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি দেখিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে নানা প্রশ্ন আর সমালোচনা।

অনেকের ধারণা, দেলোয়ার হোসেন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর হয়তো দুর্নীতি করে অঢেল স¤পদের মালিক হবেন এমন চিন্তা থেকেই হলফনামায় বেশি জমি দেখিয়েছেন। যাতে মেয়াদ শেষে তিনি হলফনামা স‚ত্রে বলতে পারেন, নির্বাচন করার সময়ই তার ১০ একর জমি ছিল।জানা যায়, হলফনামায় ওই প্রার্থী তাদের কৃষি জমি ১০ একরে নিজের অংশ ১৩ ভাগ দেখিয়েছেন। এছাড়া একটি আধাপাকা বাড়ি ও পুকুরে তার ৬ ভাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।এদিকে হলফনামায় তথ্য গোপন ও দাখিলকৃত মনোনয়ন পত্রে অসঙ্গতি এবং ত্রæটিপ‚র্ণ থাকার পরেও বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত ঘোষণা করায় প্রকাশিত গেজেট ও শপথ বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন এলাকার তিন ব্যক্তি। সিংড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ওই উপজেলার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল এলাকার শের আলীর ছেলে।

প্রকাশিত গেজেট ও শপথ বাতিলের আবেদনকারীরা হলেন ওই উপজেলার ছাতারবাড়িয়া এলাকার বাবুল হোসেন, চক দ‚র্গাপুর এলাকার রাজু আহম্মেদ এবং সিংড়া বাজার এলাকার আক্তার হোসেন।প্রকাশিত গেজেট ও শপথ বাতিলের আবেদনকারী তিন জনের দাবী, দেলোয়ার হোসেন তার হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন।এছাড়া মনোনয়নপত্রে অসঙ্গতি ও ত্রæটিপ‚র্ণ থাকার পরেও গত ২৩ এপ্রিল তাকে বিনা প্রতিদ¦›িদ্বতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং অফিসার। গত ৮ মে ওই ভোট গ্রহণের দিন ধার্য ছিল।তারা দাবী করেন, ওই ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে (১ম ধাপে) ২ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে গত ১৭ এপ্রিল দেলোয়ার হোসেন ও লুৎফুল হাবিবের মনোনয়নপত্র বৈধ মনোনীত করে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রির্টানিং অফিসার।

ওই বৈধ তালিকায় দেলোয়ার হোসেনের মাতার নাম লায়লা জেসমিন এবং মোঃ লুৎফুল হাবিবের মাতার নাম মোছাঃ আংগুর বালা কিন্তু দুইজন প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে জমাকৃত হলফনামা ও মনোনয়ন পত্রের সাথে বৈধ প্রার্থীর তালিকায় মায়ের নাম কোন মিল নেই।
এছাড়া দেলোয়ার হোসেনের দাখিলকৃত হলফনামায় ‘শিক্ষাগত যোগ্যত’ কলামে স্বশিক্ষিত লিখেন অপরদিকে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে তার ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ কলামে “মাধ্যমিক” উল্লেখ রয়েছে। দেলোয়ার হোসেন হলফনামায় স্বাক্ষর করেন ১৩ এপ্রিল। হলফনামা ও মনোনয়নপত্র জমা দেন ১৫ এপ্রিল। অথচ তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ইস্যু তারিখ ১৬ এপ্রিল।তাদের দাবী,দেলোয়ার হোসেন হলফনামায় যে স্বাক্ষর করেছেন ওই স্বাক্ষরের সাথে ভোটার আইডি কার্ডের স্বাক্ষরের কোন মিল নাই।জেলা নির্বাচন ও রিটার্নিং অফিসার বরাবর গত ৫ মে জমা দেয়া ওই আবেদনে তারা দেলোয়ার হোসেন এর মনোনয়ন পত্র অবৈধ ঘোষণা করে পুনঃতফসিলের দাবী করেছেন।এর আগে গত ২২ এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবরও আবেদন করেছেন ওই তিনজন।আবেদনকারীদের দাবী, ওই আবেদন বিষয়ে গত ১২ মে জেলা রিটানিং কর্মকর্তার সাথে কথা বললেও তিনি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর দেলোয়ারকে সিংড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি শপথ গ্রহণ করে বর্তমানে দায়িত্বও পালন করছেন।

অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধানে কলম ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসে গেলে জানা যায়, দেলোয়ারের পিতার নামে ২৪৭, ২৫১, ২৫২, ২৫৩ মৌজায় ৫ দাগে মোট জমির পরিমাণ ১.৩১৫ একর। এর মধ্যে পুকুর ৪০ শতক, বাড়ী ২৭ শতক, ভিটা ৩০ শতক ও দুই দাগে ধানী জমি রয়েছে ৯৫ ও ২৫ শতক। ওই জমির বাংলা ১৪২৮ সাল পর্যন্ত খাজনাদী পরিশোধ রয়েছে যার হোল্ডিং নম্বর ৫৯১৮৩৭। সর্বশেষ খাজনাদী পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৬ শত ২০ টাকা।ওই জমির বর্তমান মালিকরা হলেন দেলোয়ারের মা আংগুর বালা, ভাই এমদাদুল হক, মজিবর রহমান, দেলোয়ার নিজে ও অপর ভাই জুয়েল হোসেন।এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন তার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করলেও জমির বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি।বিশিষ্ট আইনজীবী মো: হাসান উজ জামান বাপ্পি জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী হলফনামায় ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রমাণিত হলে প্রার্থিতা বাতিল হতে পারে। এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও প্রার্থী সদস্যপদ হারাবেন।নির্বাচন অফিস স‚ত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনের এত জনবল নেই যে, সব প্রার্থীর হলফনামা যাচাই করবে বা খতিয়ে দেখবে।এবিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখকে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।জানতে চাইলে নাটোর কোর্টের সরকারী কৌশুলী (জিপি) এডভোকেট মালেক শেখ জানান, কোন প্রার্থী যদি হলফনামায় প্রকৃত স¤পদের চেয়ে বেশি স¤পদ দেখায় তবে তা প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেননা, সাধারণ মানুষের মাঝে এমন মনে হয় যে, নির্বাচিত হলে ওই অতিরিক্ত জমি জমা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করবে এমন ইনটেনশন থেকেই ওই বেশি স¤পদ দেখানো হয়েছে কি-না? এটি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) অনুযায়ী শুধু অপরাধই নয় বরং তা তদন্তের দাবী রাখে। তদন্তে অভিযোগ সত্য প্রমানীত হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির পদও বাতিল হবে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD