খবরে প্রকাশ সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়েতে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে যাদের চাকুরী হয়েছে তাদের সবাই স্নাতক পাশ। আর এটা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা সমালোচনা। যারা এদেশে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বসে আছেন তাদের মধ্যে শুধু হয়েছে আতংক।
কিছু ব্যতিক্রম বাদে, বাংলাদেশে যে-মানের স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়া হয়, তাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর চাকরি পাওয়া মোটেও দৃষ্টিকটু নয়। মার্ক্সিস্ট দৃষ্টিকোণ থেকে তো বটেই, পুঁজিবাদের মূল সূত্র অনুসারেও এ চাকরি স্নাতকদের জন্য সম্মানজনক।
এই স্নাতকোত্তরদের দক্ষতাটা কী? এমন কোনো কাজ কী তারা জানে, যা দ্বারা বাগানো যেতে পারে জটিল কোনো চাকরি? এদের এক ব্যাগ সার্টিফিকেট আছে, যা মূলত কাগজের দলা, আর আছে এয়ার কন্ডিশন্ড কক্ষে অফিসারগিরির স্বপ্ন, এ ছাড়া আর কিছু আছে? নেই। এ অবস্থায় রেলওয়ে যে এদেরকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছে, সেটিই বরং তাদের জন্যে সৌভাগ্যের এবং রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের মহানুভবতা।
এদেরকে যদি বলা হয়, তিন হাজার শব্দের একটি ফান্ডিং প্রপোজাল প্রস্তুত করো, পারবে? পারবে না। ইংরেজি ও বাংলা, কোনো ভাষায়ই একটি সৃষ্টিশীল গরুর রচনা লেখা এদের পক্ষে সম্ভব নয়। এরা ফেসবুকে যে-জ্ঞান গরিমা দেখায়, মানুষের কমেন্ট বক্সে বা বাজারের চায়ের দোকানে যে পারঙ্গমতা দেখায় তাতে চাকরির বাজারের দক্ষতাগুলো নেই।
এরা একটি ভালো সিভি তৈরি করতে পারে না। নিজ হাতে চাকুরির দরখাস্ত লিখতে পারে না। চাকুরিটা এদের দেবে কে? যারা বুক চাপড়ান তারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক বা কর্মকর্তা হলে এদের চাকুরী দেবেন?
বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে বহু ভারতীয়, শ্রীলঙ্কান, ও পাকিস্তানী কাজ করে। কেন করে? কারণ তারা কাজ জানে। তাদের উপযুক্ত রিপ্লেসমেন্ট বাংলাদেশের বাজারে নেই। তারা নিজেকে উপস্থাপন করতে জানে। নিজের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ কি হবে, সেটা জানে। রাস্তায় কিভাবে হাটতে হয়, সেটা জানে। পক্ষান্তরপ এদেশের অধিকাংশের প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষা ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে পারদর্শিতা নেই। ঠিক মত রাস্তায় হাটতেও জানে না এমন কি বাংলাদেশী স্নাতকদের মধ্যে এসব নিয়ে কোনো উদ্বেগও নেই।
সবাইকে স্নাতকোত্তর হতে হবে কেন? কি প্রয়োজন একটি সময়নাশী মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জনের, যদি এতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো জ্ঞান বা দক্ষতা দখলে না আসে? কী দরকার এতো বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের, যদি একটি ছাত্রকে তার জীবিকার বুনিয়াদটুকুও না দিতে পারা যায়?
মাস্টার্স পাশ বল্টু না হয়ে মেট্রিক ফেল দক্ষ শ্রমিক হতে শিখুন। যারা পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের অভিনন্দন। আশা করি, অফিসারগিরির স্বপ্ন না দেখে নিজের হাতকে কোন একটি বিষয়ে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন।
অনেক কষ্ট করে আপনাকে বাবা মা পড়ালেখা শেখায় টাকা দিয়ে চাকুরী নিয়ে দিতে নয়। বাবা মায়ের আত্মসম্মান রক্ষা করুন। নিজেদের চিন্তা এবং মননে পরিবর্তন আনুন এবং স্বাধীন ও সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়তে সচেষ্ট থাকুন।
——- সাইফুল ইসলাম