রোখসানা খাতুনঃ সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁয় অবস্থিত জিন্দানী ডিগ্রী কলেজের হলরুমে গত ৯ মে ২০২৪ তারিখে“জনসাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক নীতি সুরক্ষায় গাইডলাইন গ্রহণ”বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন অত্র কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুর রহিম। পরিবর্তন, ডাবিøউবিবি ট্রাস্ট, বাটা ও জিন্দানী ডিগ্রী কলেজ যৌথ আয়োজিত এ সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিবর্তন এর পরিচালক আবদুর রাজ্জাক রাজু ,উপ-পরিচালক রোকসানা খাতুন রুপা,অধ্যাপক আব্দুল আলিম,অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী, অধ্যাপক আলী রেজা খন্দকার সহ আরো অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্টাফবৃন্দ। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিল জিন্দানী ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থীগণ।
এ সভায় স্বাগতিক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিবর্তন পরিচালক আবদুর রাজ্জাক রাজু। তিনি বলেন, তামাক হল মাদকের জননী। মূলত তামাক থেকেই সকল মাদকের উৎপত্তি হয়। এ সময় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি সুরক্ষায় এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর জরুরী বাস্তবায়ন প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহের ওপর ডাবিøউবিবি ট্রাস্ট প্রদত্ত লিফলেট থেকে তিনি কিছু হাইলাইটস প্রদান করেন। এগুলো হচ্ছে ঃ আর্টিকেল ৫.৩, নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব, তামাক কোম্পানির সজ্ঞা, আর্টিকেল ৫.৩ এর নীতি-নির্দেশনাসমূহ, আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন সুবিধা, আর্টিকেল ৫.৩ এর সুপারিশমালা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবায়নে করণীয় দিকসমূহ ইত্যাদি। রাজু বলেন, আজ থেকে জিন্দানী ডিগ্রী কলেজ কর্তৃক এফসিটিসি এর অনুচ্ছেদ আর্টিকেল ৫.৩ এর আলোকে কোড অব কনডাক্ট বাস্তবায়নে প্রদত্ত সমর্থন পত্র কার্যকরী হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এই কলেজের সকল কর্মকান্ডে গৃহীত কোড অব কনডাক্ট অনুসরণ করে চলবে।
এরপর মুক্ত আলোচনা পর্বে প্রথমেই দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, আমি নিজেও তামাক সেবন করি না। এছাড়া আমরা মোট পাঁচজন বন্ধু আছি সবাই তামাক থেকে মুক্ত রয়েছি।এর পাশাপাশি আমরা কলেজের সকল ছাত্রকে তামাক ছাড়ার বিষয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকি। ফারুক তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে কতিপয় তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, এ কলেজের অধিকাংশ ছাত্ররাই কোন ধুম পান বা তামাক সেবন কওে না।
শিক্ষকদের মধ্য থেকে সমাজকল্যাণ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আলীম বলেন, তামাকের ক্ষতিকর দিক বলে শেষ করা যাবে না। এজন্য আমাদের সবাইকে তামাকমুক্ত থাকতে হবে। তবে সবার আগে নিজেকে তামাকমুক্ত রাখতে হবে। তারপর অন্যকে তামাক ছাড়তে উৎসাহিত করতে হবে। আমরা জনসচেতনতা সৃষ্টির কথা বলি বটে । তবে তা শুরু করতে হবে নিজ পরিবার থেকে। বিশেষ করে ছোট ছেলে-মেয়েরা যেন এই নেশার কবলে না পড়ে। পরিশেষে তিনি অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তামাক বা ধুমপান হতে দূরে থাকার জন্য আহ্বান জানান।
জীব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ ইয়াসিন আলী বক্তব্যের শুরুতেই তামাকের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে কথা বলেন। তামাক গ্রহণের ফলে একজন ব্যক্তির ক্যান্সার,যক্ষা,শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ সমস্যা হয়ে থাকে। সমাজকে তামাকমুক্ত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ কন। এছাড়া তিনি ছাত্রদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃকি চর্চা করতে বলেন। কারণ “খেলাধুলা করলে বাড়ে বল, তামাক ছেড়ে খেলায় চল”। তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি, “ধুমপান মানেই বিষ পান”। সুতরাং এটা অবশ্যই বর্জনীয়।বাংলার সহকারী অধ্যাপক আলী রেজা খন্দকার বলেন, নেশা খুবই খারাপ জিনিস। কোন ব্যক্তি যদি একবার নেশা করা শুরু করে, তাহলে সে নেশার জগত থেকে বেড় হতে পারে না বরং ধ্বংস হয়ে যায়। এজন্য ছাত্রদের তিনি তামাকমুক্ত থাকার আহ্বান জানান ও সমাজে যে সকল ব্যক্তিরা তামাক সেবন করে তাদের তামাকমুক্ত করতে সহযোগিতা করার পরামর্শ দেন। বিশেষত তামাক ও ধুমপান যে বেআইনী এবং জরিমানা দন্ডযোগ্য অপরাধ তা জনগণকে অবহিত করতে পারে ছাত্রসমাজ। এমনকি ধুমপায়ী নেতাকে ভোট না দিতে এবং তামাকসেবী ছেলেকে বিয়ে না করতে সমাজসচেতনা সৃষ্টির ক্ষেত্রে তারা ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবর্তনের উপপরিচালক তাড়াশ পৌরসভার কাউন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা বলেন, বর্তমানে কিশোর-তরুণদের মাঝে তামাক সেবনের হার অনেক বেশি। রাস্তাঘাটে প্রায় সব জায়গায় কিশোরদের তামাক সেবন করতে দেখা যায়। তবে তারা তো জানে না তামাক শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। এজন্য আমাদের সবাইকে খুব বেশি সচেতন থাকতে হবে। তিনি আসন্ন জাতীয় বাজেটে তামাকের উপর আরো কর বৃদ্ধির আবেদন জানান। রুপা উল্লেখ করেন,আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, আমাদের সকলের কর্তব্য হবে নেত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তার এই উচ্চাভিলাষী স্বপ্নকে সার্থক ও সফল করতে অবদান রাখা। কেননা দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূলে রয়েছে জনস্বাস্থ্য। একটি সুস্বাস্থ্যবান জাতিই কেবল উন্নত-সমৃদ্ধ জাতিতে উপনীত হতে পারে।
সভাপতির ভাষনে জিন্দানী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, এ রকম একটি মহতী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। বর্তমানে সব জায়গায় তামাকের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। আমি নিজেও এক সময় তামাক সেবন করতাম।এই তামাকের মধ্যে ক্ষতি ছাড়া কোন লাভ নেই। তামাক সেবনের ফলে একজন মানুষের যে পরিমাণ ক্ষতি হয় তা সে নিজেও জানে না বা ভাবতেও পারে না। তাই তোমরা কখনই তামাক সেবন করবে না। তিনি বলেন, অত্র জিন্দানী ডিগ্রি কলেজ এমনিতেই ধুমপান মুক্ত এলাকা ছিল। তবে এখন থেকে আমরা এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ মোতাবেক কোড অব কনডাক্ট সমর্থন করায় এই কলেজ কখনই এই নীতি-কানুনের বাইরে যাবে না। তিনি এব্যাপারে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে ছাত্র-ছাত্রীদের সহায়ক ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহবান জানান। ডাবিøউবিবি ট্রাস্ট, বাটা ও পরিবর্তনকে অত্র কলেজে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ধন্যবাদ জ্ঞাপনসূচক বক্তব্যে পরিবর্তন পরিচালক বলেন, দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কার্যকর আইন রয়েছে। সে আইন আমাদের জানতে হবে আর মানতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংক্ষিপ্ত ধারাসমূহের ৪, ৫,৬,৬ক,৮ ও ১০ বই থেকে তিনি উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে পড়ে শোনান। এ সময় তিনি জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সাস্থ্য সেবা বিভাগ সাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত “বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধি-বিধান” বইখানি আনুষ্ঠানিকভাবে কলেজ অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন। শেষে রাজু বলেন, আমরা মানুষ। সৃষ্টির সেরা জীব।আমরা কেন নেশা খেয়ে ইহকাল ও পরকাল নষ্ট করব। তার চেয়ে আমাদের প্রাত্যাহিক টেবিল থেকে ছাইদানী ফেলে দিয়ে ফুলদানী ও তামাক পরিহার করে মধু পানের অভ্যাস তৈরী করি।এটাই হোক আমাদের সবার প্রত্যয়। সবশেষে এত সুন্দর একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য তিনি জিন্দানী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের অংশগ্রহীতাদের মাঝে ডাবিøউবিবি ট্রাস্ট প্রকাশিত লিফলেট,সমস্বর পত্রিকা ও বিধি-বিধান সম্পর্কিত বই ইত্যাকার উপকরণাদি বিতরণ করা হয়।