আবুল কালাম আজাদ: নাটোর সদর উপজেলার হয়বতপুর এলাকার অর্জুনপুর গ্রামের মুনছুর মোড় নামক স্থানে বছরের পর বছর ধরে নিয়মিত পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে সেখানে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাত ৯টার দিকে নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার এর ঘণ্টা ওই রেস্তোরাঁয় অভিযান চালান
এ সময় রেস্তোরাঁ (দোকান) মালিক হাফিজুল ইসলাম এগুলোকে হাঁসের ও কবুতরের মাংস বলে দাবি করেন। পাখির মাংস চেনার জন্য সময় নিতে হয়। পরে বিভিন্ন প্রকারের মাংসের মূল্য জেনে এবং উপস্থিত ক্রেতাদের সাক্ষ্য – প্রমাণের ভিত্তিতে মালিককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি।
শামুকভাঙা, ডাহুক, বক, ঘুঘু, কুড়া, বালিহাঁস, রাঁতচোড়াস এমন নানা প্রজাতির পাখি জবাই করে প্রতিদিন মাংসের চপ করা হচ্ছে নিভৃত পল্লীতে। পথচলতি মানুষ থেকে শুরু করে দূরদূরান্ত থেকে আসা পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয় স্বজন খেতে আসছেন এসব পাখির মাংস। অথচ বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী পাখির মাংস বেচাকেনা দণ্ডনীয় অপরাধ।
শুক্রবার রাতে সরেজমিন দেখা যায়, নিভৃত পল্লীতে প্রায় ১৫ বছর ধরে নিজ বাড়িতেই দোকান করে বসেছেন, সদর উপজেলার অর্জপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম। এক সময় সৈনিকে চাকরি করতেন। কয়েক বছর পর চাকরিচ্যুত হন তিনি। প্রথমে ছোট পরিসরে ব্যবসা শুরু করলেও বর্তমানে তিনি বড় আকারেই এ ব্যবসাটি পরিচালনা করছেন ।
রেস্তোরাঁর ভেতরে সারি সারি গামলা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা। সেসব গামলায় নানা প্রজাতির পাখির মাংস রান্না করে রাখা হয়েছে। কোন মাংসের চপ খাবেন, মানুষজন ঢাকনা উল্টে দরদাম করছেন। এরপর পছন্দসই মাংস নিয়ে রেস্তোরাঁয় বসে খাচ্ছেন। যেকোনো প্রজাতির পাখির এক টুকরা মাংসের দাম রাখা হয় ১২৫ থেকে ১৫০ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, হাঁস, মোরগ, কোয়েল ও কবুতরের মাংসের বাইরে প্রতিদিন দুই থেকে সর্বোচ্চ ছয় প্রজাতির পাখির মাংস পাওয়া যায়। এসব পাখির মাংস তাঁদের সরবরাহ করেন স্থানীয় পাখিশিকারিরা। ফাঁদ পেতে অথবা বিষটোপ দিয়ে শিকারিরা জেলার লালপুর, সিংড়ার চলনবিল এবং হালতিবিল জলাভূমি থেকে পাখি ধরে বাড়িতে নিয়ে যান।
পরে জবাই করে পালক ছাড়িয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে মাংস এই দোকান মালিকদের কাছে সরবরাহ করেন।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার জানান, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী, কোনো পাখি বা পরিযায়ী পাখির মাংস কেনাবেচা অপরাধ।
আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড অথবা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের পাশাপাশি উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে ২০হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর পরে যদি তিনি এবস কাজ বিরত না থাকেন, তা বড় ধরনের শাস্তির আওতায় আনা হবে।