মধ্যযুগীয় কায়দায় গৃহবধূ নির্যাতন

Spread the love

চলনবিল প্রতিনিধি:
যৌতুকের টাকা না পেয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলায় খাস সাত বাড়িয়া গ্রামে গুলনাহার পারভীন মিনু (৩০) নামে এক গৃহবধুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেটে দেয়া হয়েছে তার মাথার চুল, ব্লেড দিয়ে চেছে ফেলা হয়েছে দু’চোখের ভ্রু । নির্যাতনের সময় হাত পা ধরে অনুনয়-বিনয় ও কান্নাকাটি করার পরও অমানুষিক নির্যাতন থেকে রক্ষা পাননি ওই গৃহবধূ। নির্যাতিত ওই গৃহবধূ হাসপাতালের ভর্তি অবস্থায় সাংবাদিক বলেন, রাতভর গবাদিপশুর মতো হাত-পা বেঁধে তার সারা শরীরে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে। একপর তাকে আটকে রেখে হাতুরে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসার করানো হয়।পরে খবর পেয়ে মিনুর পরিবার মুমুর্ষূ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে আজ(রবিবার) সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৩ বছর আগে শাহজাদপুর উপজেলার খাস সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত: আব্দুর রশিদের ছেলে মেহেদি হাসান সুজনের (৪৩) সঙ্গে পার্শবর্তী তাড়াশ উপজেলা সদরের মৃত: গোলাম মোস্তফার মেয়ে গুলনাহার পারভীন মিনুর (৩০) পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। তাদে দুটি মেয়ে সন্তানও রয়েছে। বিয়ের পর থেকে স্বামী যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছে। এ ছাড়া স্ত্রী সুন্দরী হওয়ায় তাকে বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ করতো সুজন।
দরিদ্র পরিবারের পক্ষে যৌতুকের টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার গ্রাম্য সালিস হয়েছে। তবুও থামেনি নির্যাতন। পরে নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১৮ সালে বাবার বাড়ি ফিরে যান মিনু।নির্যাতিত গৃহবধূর মা আনোয়ারা খাতুন জানান, বিয়ের সময় জামাতাকে যৌতুক হিসেবে নগদ এক লাখ টাকা, স্বর্ণালংকার, খাট, আলমিরাসহ প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকার মালামাল দেওয়া হয়। ছোট ছোট বাচ্চাদের কথা বিবেচনা আবার তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।সিরাজগঞ্জ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ গুলনাহার পারভীন মিনু জানান, বিয়ের পর থেকেই কখনো নগদ টাকা, কখনো মোটরসাইকেল, কখনো মোবাইল ফোন বাবার বাড়ি থেকে এনে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিল। এ ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বললেই সন্দেহের চোখে দেখে বিভিন্ন সময় তার উপর শারিরীক নির্যাতন চালাতো স্বামী সহ শশুর বাড়িরর লোকেরা।
অভিযুক্তমেহেদি হাসান সুজনের বলেন, আমার স্ত্রী এক প্রবাসীর সাথে পরকীয়ায় আসক্ত। প্রায় ভিডিও কলে কথা বলে। তাই আমি রাগ চেক দিতে না পেরে ঘটনা ঘটিয়েছি।শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা: রোকন উদ্দিন বলেন, মেয়েটির সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত চিহ্ণ রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। তবে নির্যাতনের ফলে মেয়েটি মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত রয়েছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD