উল্লাপাড়ায় ছেলে হিজড়া হওয়ায় পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে রায় দিলেন মাতব্বররা

Spread the love

ডাঃ আমজাদ হোসেন উল্লাপাড়া  প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ছেলে তৃতীয় লিঙ্গ( হিজড়া)হওয়ায় ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে অবৈধ সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে রায় দিলেন সমাজের সুদ ব্যবসায়ি কতিপয় গ্রাম্য মাতব্বর।ঘটনাটি ঘটেছে পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের চরঘাটিনা গ্রামে।চরঘাটিনা গ্রামের মোঃ হাফেজ মিস্ত্রীরির ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম (২৭) প্রথমে পুরুষ হিসাবে জন্ম গ্রহন করলেও ১৫ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে তার শারিরীক অবস্থার  পরিবর্তন হলে সে তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়ায়) রুপান্তরিত  হয়।সে দির্ঘ ১২ বছর ধরে তৃতীয় লিঙ্গ( হিজড়া) হওয়ায় সমাজের মাতব্বরা সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে ভুক্তভোগী পরিবারকে ১ মাসের মধ্যে বসতভিটা বিক্রি করে গ্রাম থেকে চলে যাওয়ার রায় দিয়েছেন।বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়,গত (১৩ এপ্রিল) মঙ্গলবার রাত ৯ টার সময় চরঘাটিনা হাফিজিয়া মাদ্রাসায় একটি সালিসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।সেখানে ভুক্তভোগী হাফেজ মিস্ত্রীর বিরুদ্ধে কবরস্থানের ১০০ টাকা চাঁদা সঠিক সময়ে না দেওয়ায় ও তার ছেলে মোঃ মনিরুল ইসলাম  হিজড়া গোষ্ঠীতে যোগ দিয়ে হিজড়া হওয়ার অপরাধে দিনমজুর অসহায় এই ভুক্তভোগী পরিবারকে সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে গ্রামের মাতব্বরা ১ মাসের মধ্যে সমাজ থেকে বসতভিটা বিক্রি করে সমাজ থেকে চলে যাওয়ার রায় দিয়েছেন।সালিসি বৈঠকে মাতব্বর সুদেরু রানা সরকার,সুদেরু কবির সরকার,সুদেরু প্রিন্সিপাল আতিক সরকার,মোহন সরকার, সুদেরু দুলাল,শাহেদ হাজী,মোহাম্মাদ হাজী,আমজাদ,মেসের সরকার,সুদেরু মুঞ্জু সরকার, শাহজাহান প্রামানিক,আকমল মিস্তিরি ও আশরাফুলসহ এই সকল গ্রামের মাতব্বররা মিলে ওই ভুক্তভোগী পরিবারকে এমন জগন্য রায় প্রদান করেন।অনুসন্ধানে জানা যায়,সেদিনের সালিশি বৈঠকে যারা রায় প্রদান করেছেন তাদের অধিকাংশ মাতব্বররা ছিলেন সুদে ব্যবসার সাথে জড়িত।সুদ ইসলামের সবচেয়ে জগন্য অপরাধ।সুদ খাওয়াকে ইসলাম নিজের মায়ের সাথে জেনার সমতুল্য অপরাধ বলে গন্য করেছেন।অথচ তারাই এই অসহায় পরিবারকে এমন রায় দেন কিভাবে। এই সকল সুদেরু মাতব্বররা দরবার সালিশে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে পক্ষে রায় দেন।ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা সমাজের এমন সুদের সাথে জড়িত মাতব্বরদের ভয়ে আতংকে রয়েছে।ঠিকমত বসতভিটায় থাকতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তার রয়েছে অসহায় এই পরিবারটি।এবিষয়ে,ভুক্তভোগী হাফেজ মিস্ত্রী বলেন,আমার ছেলে হিজড়া হওয়ায় আমি সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বসে আমার ছেলে মনিরুলকে বার বার শাসন করেছি কিন্তু ছেলে সেই হিজড়া পথ থেকে কোনোভাবেই সরে আসেনি।আর করোনার কারণে কাজ না থাকায় সমাজের কবরস্থান বাবদ ১০০ টাকা চাঁদা সঠিক সময়ে না দেওয়ায় এলাকারপ্রধানরা আমাকে ১ মাসের জন্য ঘর-বাড়ি বিক্রি করে চলে যেতে বলেছেন।তিনি আরো বলেন,এই গ্রাম আমার বাব-দাদার আমি এই গ্রামে জন্মেছি। সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে প্রধানরা যে রায় দিয়েছেন আমি সরকারের কাছে তার সুষ্ঠু বিচার চাই!

ভুক্তভোগী হাফেজ মিস্তিরির বড় ছেলে মজনু বলেন,সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের পরিবারকে অপরাধ সাভ্যস্থ করে ১ মাসের মধ্যে জায়গা জমি বিক্রি করে চলে যেতে বলে।এমন বিষয়টি সাংবাদিককে জানালে সুদেরু রানা সরকার তার এলাকার প্রভাব খাটিয়ে গতরাত(২৬ এপ্রিল) সোমবার রাতে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও কানে সজোরে থাপ্পড় মারে।আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।ভুক্তভোগী হাফেজ মিস্তিরির আরেক ছেলে মনিরুল ইসলাম(হিজড়া)  বলেন,আমার শরিরের পরিবর্তন দেখা দিলে আমি তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়ায়) রুপান্তরিত হই দির্ঘ ১২ বছর ধরে ।সরকার আমাদের ঘর-বাড়ি করে দিয়েছে।হিজড়াদের জন্য খামার করে দিয়েছে।সরকার আমাদের বৈধ হিসাবে গন্য করেছে।এতো দিন কিছু হলো না এখন কেনো তারা এমন করছে। আমি হিজড়া হওয়ায় আমার মা-বাবা,ভাইদের নিকট ও বাড়িতে গেলে নানা ধরনের কথা শুনতে হয় আমাকে।আমাকে গ্রামে যেতে দিবে না এলাকার মাতব্বররা।বাবা-মার প্রতি দরদ লাগে বলে মাঝে মধ্যে বাড়িতে গিয়ে তাদের দেখে আসি ও কিছু খরচ দেই।এর কারনে সমাজ থেকে উচ্ছেদ করে দিবে আমাদের ।আমি এর বিচার চাই।এবিষয়ে গ্রাম্য মাতব্বর শাহেদ হাজী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,হাফেজ মিস্ত্রীরির পরিবারকে আমরা চাপে রাখার জন্য সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে ১ মাসের মধ্যে বসতভিটা বিক্রি করে গ্রাম ছাড়তে বলা হয়েছিলো।যাতে তার ছেলে হিজড়া পেশা থেকে সরে আসে।এবিষয়ে সুদেরু  মাতব্বর  রানা সরকারের সাথে কথা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে যান।এবিষয়ে উল্লাপাড়া মডেল থানার এস আই জাহাঙ্গীর আলম বলেন,এই বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছে।বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD