লুৎফর রহমান: সিরাজগঞ্জের তাড়াশের মেধাবী আইন বিভাগের শিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা রূপা হত্যার ৩ বছরেরও মামলার রায় কার্যকারী না হওয়ায় রূপার পরিবারসহ তাড়াশবাসী চরম হতাশ। নিহত রুপার মা হাসনা হেনা বেগম (৫৮) বলেন, রুপা স্বপ্ন দেখতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একদিন বড় কর্মকর্তা হবে। এখন একটাই দাবি দ্রুত আসামিদের রায় কার্যকর করা হোক।
রুপা হত্যা মামলার বাদী রূপার বড় ভাই হাফিজুর রহমান বলেন, দ-প্রাপ্ত আসামিরা ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়াারি খালাস চেয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এরপর গত ১৯ মাসেও চাঞ্চল্যকর এ মামলায় শুনানি শুরু হয়নি। নিম্ন আদালতে দ্রুততম সময়ে মামলার রায় ঘোষণায় আমরা সন্তুষ্ট হয়ে ছিলাম। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামিদের আপিলের পর মামলাটি গত ৩ বছর ঝুলে থাকায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।তিনি আরও বলেন, ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছোঁয়া পরিবহনের বাসটি পরিবারকে দেওয়ার যে আদেশ আদালত দিয়েছেন, তাও কার্যকর করা হয়নি। বিচারের সর্বশেষ পর্যায়ে যেতে কতদিন সময় লাগবে তা আমাদের জানা নেই। ততদিনে হয়তো বাসটি ভাঙাড়ি হিসেবে বিক্রি করতে হবে। এতে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশাও ক্ষীণ। ৩ বছর হলো অপেক্ষায় আছি, কবে দেখবো আমার বোনের হত্যা কারীদের ফাঁসি হয়েছে।
উল্লেখ, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টে টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে রাত্রিকালে রূপাকে ধর্ষণের পর নৃশংসভাবে হত্যা করে রাস্তায় ফেলে দেয়। পরে মধুপুর থানা পুলিশ রুপার লাশ উদ্ধার করে। এনিয়ে তখন সারাদেশে চাঞ্চল্যকর ঘটনা হিসেবে আলোড়ন জাগে। পরিচয় না পেয়ে ২৬ আগস্ট ময়নাতদন্ত শেষে বেওয়ারিশ হয়েছে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট নিহতের বড়ভাই হাফিজুর রহমান মধুপুর থানায় রক্তাক্ত লাশের ছবি শনাক্ত করেন যে অজ্ঞাত লাশটি তার ছোট বোন ও ঢাকা আইডিয়াল ল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্রী জাকিয়া সুলতানা রুপার। ৩১ আগস্ট রুপার মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ঐদিন রাতেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আসানবাড়ি গ্রামের কবরস্থানে রুপার লাশ দাফন করা হয়। নিহত রুপা ওই গ্রামের মৃত জেলহাজ প্রামাণিকের মেয়ে।
ঘটনার জন্য টাঈাইল জেলা আদালত রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় অভিযোগে ছোঁয়া পরিবহণের ৪ শ্রমিকে দোষী সাব্যস্থ করে। আদালত তাদের ফাঁসি ও রূপার পরিবারকে ক্ষতিপুরন হিসেবে বাসটি দিয়ে দেবার রায় প্রদান করেন। অপর দিকে মামলার আসামীগণ এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে সেই থেকে এই মামলার পরবর্তী শুনানীর দিন তারিখ ধার্য না হওয়ায় মামলাটি হাইকোর্টে ঝুলে আছে। রুপা হত্যার পর ২০১৭ সালে ১লা সেপ্টেম্বর আসানবাড়ী গ্রামে রুপার শোকসভায় ১৪ দলের মুখপাত্র আওয়ামী লীগ নেতা তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দ্রততম সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে রুপা হত্যার বিচারের প্রতিশুতি দিয়েছিলেন। এবং সরকারের পক্ষ থেকে রুপার বোন পপি খাতুনকে সরকারি চাকরির দেয়ার যে প্রতিশুতি দিয়েছিলেন সে মোতাবেক রুপার ছোট বোন পপিকে ২০১৭ সালে ১৫ই নভেম্বর অফিস সহকারী হিসেবে রাষ্ট্রাত্ত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বগুড়ায় এসেনসিয়াল চাকুরী দেন। পপি চাকরি করে দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার চেষ্টা করছেন।
এদিকে রুপা হত্যার রায় দ্রুত কার্যকর না করায় বারবার ঘটছে গণধর্ষণের ঘটনা। বিলম্বিত বিচারের কারণে ধর্ষিতার পরিবারগুলো একদিকে যেমন আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ধর্ষকরা উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে মা-বোনেরা আজ নিরাপত্তাহীনতায়। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে, এমনকি চলন্ত যানবাহনেও রেহাই পাচ্ছে না তারা।