মো. আবুল কালাম আজাদ
নদীর কথা লিখতে গেলে আগে লিখতে হয় , এই নদীকে নিয়ে কবি-সাহিত্যিকরা তাঁদের ভাষায় কত গান ,কবিতা, গল্প, সাহিত্য , কিচ্ছা-কাহিনি, কৌতুক , গীত অনেক কিছু লিখেছেন। তার মধ্যে নদীর বিশালত্বের বর্ননা দিয়েছেন‘ নদীর কুল নাই, কিনার নাই..’। চৈত্র মাসে যখন নদীর পানি কমে যায় তখন কবি লিখেছেন-‘আমাদের ছোট নদী, চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’। আবার যখন সেই নদীই দখল-দূষণে , পলি জমে ,মাটি ফেলে ভরাট করে, অট্রালিকা তৈরী করে, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে , নদী-বিলের বুক চিরে ব্রীজ-কালভার্ট ও পাকা রাস্তা তৈরী এবং কল-কারখানা স্থাপনসহ নানা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসবে নাব্যতা হারিয়ে প্রমত্তা নদীর চিহ্নটুকুও হারিয়ে শুধু ধারাবাহিকতা রয়েছে। তাইতো কবি আক্ষেপ করে লিখেছেন-‘এইখানে এক নদী ছিল, জানলোনাতো কেউ , নদীর কুল ছিলনা ,ছিল শুধু ঢেউ…’।নদী নিয়ে বহুজন বহু উপাধিতে বহু ভাষায় মনের মাধুরি মিশিয়ে কত কিছুই না লিখেছেন। কেউ নদীকে নারীর সাথে তুলনা করেছেন । কেউ আবার নদীকে জীবনের সাথে একাকার করে লিখেছেন। এমনকি সাম্প্রতিককালে বিশে^র বিভিন্ন দেশে এবং আমাদের দেশেও উচ্চ বিচারালয় নদনদীর জীবনী সত্বার স্বীকৃতি দিয়ে এর যথার্থ সুরক্ষায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছে।আসলে নদী না বাঁচলে মানুষ বাঁচবেনা। তাই মানুষের জীবন রক্ষার্থেই নদীর জীবন বাঁচাতে কতইনা চেষ্টা চলছে। বলা হয় নদীর সাথে জীবনের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। পরিবেশবাদীরা বলছেন, নদী না বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবেনা আবার পরিবেশ না বাঁচলে মানুষ, প্রাণি , জীববৈচিত্র বাঁচবেনা।
মানব সভ্যতা , জলবায়ু , জীববৈচিত্র এবং পরিবেশই গড়ে উঠেছে নদীকে ঘিরে। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় , পৃথিবীতে যত সভ্যতা গড়ে উঠেছে প্রায় তার সবই নদীর তীরে।ব্যবসা-বাণিজ্য, শহর, নগর সবই নদীর অবদান। মানুষের আর্থ-সামাজিক, জীববৈচিত্র, পরিবেশ, জলবায়ূ , কৃষি-শিক্ষা সবকিছুর মুলে নদী। নদী আর মানব প্রজাতি এক অভিন্ন প্রাকৃতিক জীবন চক্রে আবর্তিত। দিনে দিনে মানুষ নিজের স্বার্থে নদীর দুই কুলের জেগে ওঠা জমি বিভিন্ন সময়ের সরকার ,ভুমি খেকো প্রভাবশালী, রাজনৈতিক নেতারা বেপরোয়াভাবে দখল-দূষণ আর নির্যাতন করে নদীর টুটি টিপে মেরে ফেলছে । কোন বাধাই মানছে না। আর এর সহযোগিতা করছে অসাধু ভুমি অফিসের কর্মকর্তারা। তাই বলা হচ্ছে নদী ও নারী নির্যাতন সমানভাবে চলছে। এই নির্যাতন থেকে নদীর জীবনী সত্বাকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বেলা, নদীরক্ষা আন্দোলন, চলনবিল রক্ষা আন্দোলন, বড়াল রক্ষা আন্দোলন ,নারোদ নদ রক্ষা আন্দোলন কমিটি জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি সংস্থা নানাভাবে আন্দোলন করে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার বিভিন্ন সময়ে আদালতের নির্দেশে কিছু কার্যকরি পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু প্রভাবশালীদের কাছে নদী দখল উচ্ছেদ আর দূষণ রোধে সরকারের কর্মকর্তারা অসহায় হয়ে পড়েন।নদীর সঠিক মালিকানা নিয়েও চলছিল টানাহ্যাঁচড়া।নদীর মালিকানা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) হয়ে উঠেছিল দুর্নীতির রাঘব বোয়াল। কথিত আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত প্রকল্পের কারণেই নদ-নদীর অপমৃত্যু হচ্ছে। আমাদের নাটোর(গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) ৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী চলনবিলের কৃতিসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বড়াল রক্ষা আন্দোলন কমিটি এবং বিভাগীয় সরকারী কর্মকর্তাদের সভায় অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বলেছিলেন “ আমি যদি এক ঘন্টার জন্যেও প্রধানমন্ত্রী হতাম তাহলে সর্বপ্রথম পানি উন্নয়ন বোর্ড বিলুপ্তির ঘোষণা দিতাম।” উক্তিটি যথার্থই ছিল বলে নদী বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
এমতাবস্থায় মহমান্য হাইকোর্ট গত ৩১ জানুয়ারী ও ৩ ফেব্রুয়ারী নদ-নদীর দখল, দূষণ,ভরাট,সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন। একই সাথে মহামান্য আদালত নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয়- জলাধারের অবৈধ দখল ও দূষণকে অপরাধ হিসেবে গন্য করার আদেশ জারী করেছেন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৫০ এর ৮৬ ও ৮৭ ধারা এবং ১৪৯ (৪) ধারা অনুসারে জাতীয় নদী কমিশনকে নদীর জীবন স্বত্ব রক্ষার মালিকানা প্রদান করে ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেন। বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও নদী খেকোদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন।
চলনবিল পরিচিতি ঃ
চলনবিল বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ চলমান বিল হিসেবে পরিচিত। নাটোর , সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৮ টি উপজেলার ভৌগলিক সীমানা নিয়ে বৃহত্তর চলনবিল গঠিত। চীন দেশীয় পরিব্রাজক হিউয়েন সাং ভারতে অবস্থানকালে তাঁর লিখিত বিবরণ থেকে জানা যায়,সপ্তম শতাব্দীতে চলনবিল পদ্মা ও যমুনার সঙ্গমস্থলে অবস্থান করতো। বিরাট নদী চলনবিলের উপর দিয়ে প্রবাহমান পদ্মা,যমুনা ও ব্রম্মপুত্র নদী যুগে যুগে পলি পরার ফলে পদ্মা, ব্রম্মপুত্র ও যমুনা পৃথক হয়ে পড়েছে।
চলনবিল অঞ্চলের খ্যাতনামা সাহিত্যিক প্রমথনাথ বিশি লিখেছেন. চারশত বছর পুর্বে এই বিলটি রাজশাহী,পাবনা, বগুড়ার অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিরাজ করতো। ব্রম্মপুত্র ও পদ্মার সঙ্গমস্থলের পশ্চিম উত্তরাংশে চলনবিল বিরাজিত ।অবস্থান, আকৃতি ও প্রকৃতিতে দেখা যায়,চলনবিলকে উত্তর বাংলার নদ-নদী স্নায়ুজলের নাভি কেন্দ্র। কিন্তু বিলের দক্ষিনাংশের মাঝ দিয়ে ১৯১৬ সালে পাকশি- সিরাজগঞ্জ এবং পাকশি-শান্তাহার রেল লাইন করায় বড়াল , আত্রাই সহ সংশ্লিষ্ট আরো নদ- নদীর প্রস্থ সংকুচিত হয়ে পড়ে পড়ে। এখান থেকেই শুরু হয় চলনবিলের নদ- নদী অপমৃত্যুর, বিলকে বহুধা খন্ডিত করে উদ্বোধন হতে থাকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের।
চলনবিলের নদ-নদ-নদী, খাল ও নাালাসমুহ ঃ
বৃহত্তর চলনবিলের বুক চিরে বহু নদ- নদী, খাল, নালা প্রবাহিত হয়ে পদ্মা, তিস্তা, ব্রম্মপুত্র , করতোয়া , আত্রাই নদী থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে চলনবিলের প্রাণ সঞ্চার করে চলমান রাখতো। চলনবিলের প্রধান প্রধান নদ-নদী খাল,নালাগুলি হচ্ছে- আত্রাই,বড়াল, নন্দকুঁজা, গুমানি, করতোয়া,ফুলজোড়, বেশানি,তুলসি, মির্জামামুদ, নারোদ, বারনই, চিকনাই , খলিসডাঙ্গা,ভদ্রাবতী, ছোট আত্রাই, গুড়নই নদী,বোয়ালিয়া নদী , মুসাখাঁ নদী, সাত্তার সাহেবের খাল,বেহুলার খাড়ি, হরদমা জোলা, মহিষ হালট জোলা,বাইড়ার বিলের জোলা, বৈদ্যমরিচের জোলা , জানিগাছার জোলা,নবীর হাজীর খাল,কাটাগাঙ, কুন্দইল খাল, উলিপুরের খাল ইত্যাদি। ঐতিহাসিক চলনবিলের প্রাণ সঞ্চালনকারী( জীবনদায়িনী) অন্যতম প্রধান কিছু নদ-নদীর জীবন ইতিহাস অতীত ও বর্তমান অবস্থার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি।
আত্রাই নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন জোলায় পরিণত ঃ
আত্রাই তিস্তার শাখা নদী। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার উত্তরে এ নদী করোতোয়া নদী নামে প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদী ছোট যমুনায় মিশে দক্ষিন-পুর্বে প্রবাহিত হয়ে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় ত্রি মোহনায় নন্দকুঁজার সাথে মিলিত হয়ে গুমানি নাম ধারন করে পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নুননগর এসে বড়ালের সাথে মিশে বড়াল নামে ভাঙ্গুড়া ও বনওয়ারিনগর ফরিদপুর উপজেলা হয়ে বেড়া উপজেলার কাছে মুল যমুনায় মিশেছে। এইজন্য আত্রাই নদীকে বলা হয় যমুনার উপনদী।আত্রাই নদী ছোট যমুনা থেকে প্রবাহিত হয়ে নওগাঁ হয়ে বৃহত্তর চলনবিলের বুকচিরে নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা হয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার পৌরসভার ত্রি মোহনায় নন্দকুঁজা এবং গুমানি নদীর সাথে মিশেছে। আত্রাই নদীর নামকরণে নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলা নামে একটি উপজেলা এবং রেল ষ্টেশন স্থাপিত হয়েছে। আত্রাই নদীর পাড়ে ভাটরা পতিসরে বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদার বাড়ি অবস্থিত। আত্রাই নদীকে এক কথায় বলা হয় চলনবিলের মূল শিরা । কারণ, আত্রাই নদীর দীর্ঘ প্রবাহের মাধ্যমেই চলনবিলের উৎপত্তি হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তর বিল বলে ইতিহাস খ্যাত।আত্রাই নদীর মুল প্রবাহেই চলনবিলের স্রোত চলমান আছে আজো। সেই আত্রাই নদীর দুই পাড়ে পলি জমে নাব্যতা হারিয়ে এখন জোলায় পরিনত হয়েছে।
আত্রাই নদীর বহু উপনদী বা শাখা নদী রয়েছে। নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার ডান তীরে ফকিরনি নদী, নাটোরের সিংড়া উপজেলার বামতীরে গুড়নই নদী এবং গুরদাপসপুর উপজেলার বামতীরে হরদমা গ্রামে বেশানী নদী বর্তমানে ভাসানী নদী এবং যোগেন্দ্র নগর বামতীরে মরা আত্রাই নামে শাখা প্রবাহিত। আত্রাই নদীর প্রত্যেক শাখা- উপশাখা দিয়ে পানির স্রোত গিয়ে পড়ছে চলনবিলের মধ্যে। এই শাখ-উপশাখার স্রোতধারার কারণেই চলনবিল চলমান রয়েছে। তাই নাম হয়েছে চলনবিল। আত্রাই নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ কিলোমিটার।
আত্রাই নদীর নাব্যতা উদ্ধারে ড্রেজিং কাজে দুনীর্তি ও অনিয়মের অভিযোগ ঃ
পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার যমুনা থেকে বড়াল,গুমানী এবং আত্রাই নদীর নাব্যতা উদ্ধারের জন্য অভ্যন্তরিন নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের (বিআইডব্লিউটিএ) উদ্যোগে ২০১৭ সালে ড্রেজিং এর কাজ চলছে। নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের তথ্যমতে বেড়া থেকে শুটকি গাছা রাবারড্যাম পর্যন্ত ১৩৫ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। ড্রেজিং এর কাজে গুরুদাসপুরের নদীরক্ষা আন্দোলন কমিটি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সাংবাদিক এবং সচেতন নাগরিক সমাজ ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়মের অভিযোগে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিষয়টি দুদক,জাতীয় নদীরক্ষা কমিশন এবং বিআইডব্লিউটিএ’র কর্তৃপক্ষ অভিযোগ আমলে নিয়ে গত ১১-৪-২০১৯ তারিখে গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে তাঁদের ম্যাপিং জরিপের ভুল স্বীকার করেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ^াস দেন।,জানা গেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিল অদ্যাবধি বন্ধ আছে।
বড়াল নদী ভুমি খেকোদের দখলে ঃ
চলনবিলের জীবন সঞ্চালনের অন্যতম প্রধান শিরা নদী হচ্ছে বড়াল নদী। রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলার চারঘাট পদ্মা(গঙ্গা) থেকে বড়াল নদীর উৎপত্তি। চারঘাট পদ্মা থেকে বড়াল নদী প্রবাহিত হয়ে পুর্ব দিকে রাজশাহী জেলার বাঘা থানা এবং নাটোর জেলার লালপুর, বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর সেনানীবাসের গা ঘেষে উত্তর-পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার আটঘরিয়া এসে পুর্বদিকে বনপাড়া, জোয়ারী, মৌখাড়া, বড়াইগ্রাম, লক্ষ্মিকোল, জোনাইল, চাটমোহর উপজেলার ওপর দিয়ে ধানকুনা,নুননগর-বিন্যাবাড়ি গিয়ে গুমানী নদীর সাথে মিশে বড়াল নামেই ভাঙ্গুড়া উপজেলা, ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারিনগর এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বেড়া উপজেলায় যমুনার সাথে মিশেছে।
আশির দশক পর্যন্ত পদ্মার উর্বরা পলিযুক্ত পানির স্রোতের তীব্রতায় বড়াল ছিল প্রমত্ত।সেসময় এই স্রোতস্বীনি নদী দিয়ে চলতো বাণিজ্যিক বড় বড় নৌকা, বজরা, লঞ্চ, স্টীমারসহ নানা কাঠামোর জলযান। পাওয়া যেত সুস্বাদু নানা প্রজাতির মাছ। এই নদীর তীরে গড়ে উঠেছে বনপাড়া, জোয়ারী, মেীখাড়া, লক্ষীকোল , জোনাইল, হরিপুর এবং চাটমোহর এর হাটবাজার এবং বাণিজ্যিক কেন্দসমূহ্র।
সেই প্রমত্তা বড়াল নদী আজ মৃত ঃ
পদ্মার শাখা নদী রাজশাহী জেলার চারঘাট উপজেলা থেকে শুরু হয়ে পাবনার বেড়া পর্যন্ত চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যমুনার সাথে সংযোগকারী বড়াল নদী। বড়াল নদীর দৈর্ঘ্য ২২০ কিলোমিটার। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ ৪ টি জেলার চারঘাট, বাগাতিপাড়া, লালপুর,বড়াইগ্রাম, চাটমোহর,ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর,শাহজাদপুর ও বেড়া উপজেলাসহ ৯ টি উপজেলার মধ্যে দিয়ে বড়াল প্রবাহিত।
আশির দশকের পর সেই স্রোতস্বীনি বড়াল নদী পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমাহীন দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ সম্পুর্ন মৃত।পদ্মা থেকে বড়ালের উৎসমুখ রাজশাহী জেলার চারঘাটে ১৯৮২ সালে মুল বড়ালের প্রশস্ততা সংকুচিত করে ৩০০ফুট থেকে হ্রাস করে ৩৫ ফুটপ্রস্থ স্লুইস গেট নির্মাণ করে এবং স্লুইসগেট থেকে উজানে পদ্মা পর্যন্ত সংকুচিত করে পানি প্রবাহের গতি কমানো হয়। ১৯৮৯ সালে চারঘাট থেকে ৪৬ কিলোমিটার ভাটিতে বাগাতিপাড়া উপজেলার দয়ারামপুরের আটঘরিয়া এসে পুর্বদিকে প্রবাহিত বড়ালের মুখে দুইপাড় আরো সংকুচিত করে এবং শাখা নদী নন্দকুজা নদীর মুখে আরো দুইটি স্লুইসগেট এবং ৩টি ক্রসবাঁধ নির্মাণ করা হয়।
এদিকে শাখানদী নন্দকুজা নদীর স্রোত ধারা অব্যাহত রেখে আটঘড়িয়া থেকে পুর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া, জোয়াড়ি, তিড়াইল ,মৌখাড়া হাট, বড়াইগ্রাম,লক্ষ্মিকোল , জোনাইল, চাটমোহর,নুননগর গুমানি নদীতে মিশেছে। আটঘড়িয়ায় অপ্রশস্ত স্লুইসগেট স্থাপন করায় মুল বড়ালের প্রবাহ সম্পুর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়।ফলে আটঘড়িযা থেকে নুন নগর পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার বড়ালের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে দখলদারদের দৌড়াত্ম্যে। একসময়ের এই প্রমত্তা স্রোতস্বিনী বড়াল এখন মৃতপ্রায়।
পদ্মা থেকে প্রবাহিত বড়ালের পানির প্রবাহ উত্তর-দক্ষিণ উভয় চলনবিলের প্রাণের সঞ্চালন করতো। পদ্মা বিধৌত উর্বরা পলিতে চলনবিলের মাটিতে প্রচুর ফসল ফলতো।সেই সাথে পদ্মা থেকে বড়াল নদীতে প্রচুর সু স্বাদু ইলিশ, বাচা, ফাঁসা,পাঙ্গাস ইত্যাদি মাছ আসতো। বড়াল নদীর দুই পাশে গড়ে উঠেছে চারঘাট, আড়ানি, দয়ারামপুর,বনপাড়া, জোয়ারি, মৌখাড়া ,লক্ষিকোল, জোনাইল, হরিপুর, চাটমোহর সহ ব্যবসাবন্দর ও হাটবাজার। চারঘাট থেকে প্রবাহিত বড়ালের শাখা নদীগুলি হচ্ছে নারোদ,নন্দকুঁজা, মির্জামামুদ ,মুসা খাঁ এবং তুলসিগঙ্গা নদী। (শেষ পর্ব আগামী সংখ্যায় দেখুন।)
লেখক : বিশিষ্ট কলামিষ্ট। সভাপতি, চলনবিল প্রেস ক্লাব, গুরুদাসপুর , নাটোর।