১৫ই আগস্ট বাংলার ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়

Spread the love

গাজী সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

পৃথিবীর ইতিহাস মানুষের কাছে একটি পবিত্র আমানত। ইতিহাস থেকে অতিতকে জানতে পারে মানুষ। ইতিহাস মানুষকে জানিয়ে দেয় ফেলে আসা দিনগুলোর কথা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত আমাদের বাংলাদেশেও অতিতের সকল স্মৃতি জড়ানো ইতিহাস আছে। অথচ বাংলাদেশের সেই পবিত্র ইতিহাসের পাতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কলঙ্কের দাগ লেপন করে আরেকটি অধ্যয় রচনা করলো কিছু বিশ্বাসঘাতক বে-ঈমান বাঙ্গালী। বাংলার এ ইতিহাসে শুধু তাই নয় পূর্বেও ১৭৫৭খ্রি: ওরাই আরেকটি কালো অধ্যয় রচনা করেছে। জাতীয় বে-ঈমান বিশ্বাস ঘাতকেরা ১৭৫৭ খ্রি: ২৩ শে জুন নাটকীয়ভাবে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করিয়ে দিয়ে হত্যা করলো বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে। পূর্বের সেই কালো অধ্যয় আরও অন্ধকার করে দিলো ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট। স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা স্বাধীনতার অগ্রণী সেনা ও স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’কে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত একটি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে ভৌগোলিক আর একটি মাত্রা যোগ হওয়া বাংলাদেশ। আমাদের এ ভু-খন্ডে পূর্ব হতেই বিদেশী শাসকদের নির্যাতন, লুন্ঠন আর শাসনের নামে চলছিলো শোষণ। এ ভু-খন্ডের অধিকারবঞ্চিত মানুষেরা বহুবার আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধ করে ব্যর্থ হয়েছে। বহু রক্ত, অনেক জীবন দিয়েছে কিন্তু সফল হতে পারেনি। পরিশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত আমাদের মাতৃভুমির মুক্তি ও জাতির স্বাধীনতা। পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠী লুন্ঠন করেছে এ দেশের অর্থ সম্পদ, যুদ্ধের সময় ব্যাপকহারে লুট করে নিয়েছে। এছাড়াও যুদ্ধে সহযোগিতা করতে এসেও বন্ধুরা লুটে নিয়েছে বহু অস্ত্র, অনেক সম্পদ। মুক্তি যুদ্ধ সমাপ্তির অগণিত অস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ও আমজনতার হাতে। নবগঠিত সরকারের নিদের্শে মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি ভান্ডারে অস্ত্র জমা দিলেও কিছু দুশ্চরিত্র ও নামধারী কিছু মুক্তিযোদ্ধার হাতে অবৈধ অস্ত্র থেকেই যায়। পরবর্তীকালে অবৈধ সে সকল অস্ত্র দিয়ে কিছু অসৎ মানুষ লুটত্বরাজ, ছিনতাই, রাহাজানী, ডাকাতি, খুন করে দেশের মধ্যে অশান্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে লাগলো। তাদের পাশাপাশি স্বাধীনতা বিরোধি অর্থলোভী, চরিত্রহীন মানুষেরা প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারি অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অসমবন্টনে উঠে পরে লেগেছিল। ফলে দেশে খাদ্য- বস্ত্রের অভাব, বাসস্থানের অভাব পুরো দেশ অশান্ত হয়ে পড়ে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ও জাতিকে পুণর্গঠন করতে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার বিদেশ থেকে ত্রাণ সাহায্য করে যা কিছু সংগ্রহ করলেন তার বেশির ভাগ’ই হয়েছে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও চুরি। যার ফলে একদিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেনÑ দেশ স্বাধীন করে মানুষ পায় তেলের খনি, স্বর্ণের খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। তিনি বলেছিলেন, দেশের সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আট কোটি কম্বল, আমার কম্বলটি কোথায়? এ কথাটাই তার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়ালো। ১৫ই আগস্ট এর আগের দিন ছিল পাকিস্তানের আজাদী দিবস। ১৫ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এরই মাঝে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সহযোগিতায় বিদেশী কোন শক্তির উস্কানিতে বিপথগামী সেনা সদস্যরা বঙ্গবন্ধু সহ পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট আর একটি কলঙ্কজনক অধ্যয় রচিত হলো।

বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে গৌড়বময় ও প্রসংশিত বাঙালি জাতি। যে জাতি মায়ের ভাষা রক্ষার্থে যুদ্ধ করে জীবন দিতে পারে, তারা কত মহৎ জাতি। যার স্বীকৃতি স্বরূপ সারা বিশ্বে ২১শে ফেব্রুয়ারিতে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়। এই আনন্দের পাশাপাশি যখন প্রশ্ন উঠে স্বাধীনতা পেয়ে যে জাতি স্বাধীনতার অগ্রণী সেনা ও স্বাধীনতার স্থপতিকে স্বপরিবারে হত্যা করে তারা কত অকৃতজ্ঞ। তখনই উচু মাথা নিচু হয়ে আসে। বাংলার ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যয় রচনা করলো যারা তাদের’কে ধিক্ শত ধিক্।

লেখক : বিশিষ্ট কলামিষ্ট, কবি ও কথাসাহিত্যিক, শাহজাদপুর,সিরাজগঞ্জ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD