বাংলাদেশে নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন : অসম্পূর্ণ এজেন্ডা

Spread the love

বাংলা অনুবাদ : আবুল হাসেম খান  

 

বাংলাদেশ ১০৫ বছরের পুরানো লুনাসি এ্যাকট্ (১৯১২)(২) পরিবর্তন করে ২০১৮ সালে একটি নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইন প্রণয়ন করেছে।

(১) মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে দেশজুড়ে পরিচালিত সমীক্ষায় (৩) দেখা গেছে যে, দেশে জনসাধারনের উপর মানসিক ব্যাধিগুলির একটি উচ্চ বোঝা রয়েছে।  প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শিশুদের মধ্যে ৩.৪% থেকে ২২.৯% এবং প্রাপ্ত বয়ষ্কদের মধ্যে ৬.৫% থেকে ৩১.০% মানসিক ব্যাধিগুলোর প্রাদুর্ভাব রয়েছে। মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্তদের তাদের সম্পত্তির অধিকার রক্ষায় এবং স্বাস্থ্য ও পরিসেবাগুলোর ব্যবস্থা রাখার মাধ্যমে এই প্রসঙ্গে নতুন আইনটি তাদের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে।

(২) যাহাই হোক না কেন, এই আইনের কিছু অংশ জনসাধারণের তদন্তের অধীনে রহিয়াছে এবং আমরা আশংকা করছি যে, আইনটি বেশ কয়েকটি কারণে পযাপ্ত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারে না।  প্রথমত: কোন চিকিৎসক মানসিক অসুস্থতার জন্য ভ্রান্ত প্রসংশাপত্র সরবরাহ করার কারণে দোষী সাব্যস্ত হলে বর্তমান আইনে দায়ী চিকিৎসকের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

(৩) আমাদের দেশে ১ লক্ষ মানুষের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসকের সংখ্যা মাত্র ০.০৭৩%।

(৪) অস্পষ্ট ক্ষেত্রে শাস্তির বিধানটি  আনুষ্ঠানিক রোগ নির্ণয় ও পরবর্তী সেবা প্রদানের জন্য দেশের বিদ্যমান এই স্বল্প সংখ্যক মানসিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারীর মাঝে ভীতি সৃষ্টি করতে পারে। ফলশ্রুতিতে নতুন আইনটি পরিসেবাগুলোতে আন্তরিক সেবা প্রদান ও গতিশীল মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে একটা বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে।

দ্বিতীয়ত: বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতের মোট বাজেটের মাত্র ০.৪৪% মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ব্যয় করে এবং কোন সামাজিক বীমা কর্মসূচী মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় অন্তর্ভুক্ত নাই।

(৫) এই আইনের একটা বড় দূর্বলতা হচ্ছে-মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য এই বিশাল অর্থনৈতিক বোঝাটির কোন সমাধান করে না।

(৬)তৃতীয়ত: আইনটি গোপনীয়তা, জবাবদিহিতা,মানবাধিকারের অবস্থান থেকে মানসিক অসুস্থতাকে দেখতে অসমর্থ হয়েছে।

(৭)  বাংলাদেশের নিজস্ব একটি নির্দিষ্ট ও শক্তিশালী মানসিক স্বাস্থ্যনীতি নেই। বাংলাদেশের মত একটা ঘনবসতিপূর্ণ দেশে অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর জন্য পূর্বের  প্রণীত নীতি ও কর্মপরিকল্পনা রয়েছে মাত্র।

(৮) মানসিক ব্যাধিগুলো রোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের জন্য সর্বোত্তম যত্ন নিশ্চিত করার পক্ষে অপর্যাপ্ত। একটি শক্তিশালী এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক মানসিক স্বাস্থ্যনীতির অনুপস্থিতি নতুন আইনের শক্তির পরিপূরক এবং দূর্বলতাগুলি হ্রাস করতে জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।

 

আইনটি যতই নিকটবর্তী হচ্ছে, বাংলাদেশে একটি উন্নত মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য গবেষক, চিকিৎসক ও নীতি নির্ধারকদের পুরনো এবং নিত্যনতুন সমস্যাগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনা করতে হবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD