মুজিব বর্ষে তাড়াশ বিআরডিবি এর অভূতপূর্ব সাফল্য

Spread the love

 

মনিরুল ইসলাম

বিআরডিবি-র তৎপরতা ঃ

পল্লী উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে দেশের বৃহত্তম সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)-র যাত্রা শুরু হয় ষাটের দশকে। ড. আকতার হামিদ খান উদ্ভাবিত দ্বি-স্তর সমবায় পদ্ধতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর প্রত্যক্ষ দিক নির্দেশনায় সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী (ওজউই) দেশব্যাপি বিস্তার লাভ করে। এই সাফল্যকে প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইজউই। দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পল্লী অঞ্চলে বহুমুখী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক, বিত্তহীন জনগোষ্ঠি এবং মহিলাদের সংগঠিত করে কৃষি ও অকৃষি কর্মকান্ডে নিবীর প্রশিক্ষণ প্রদান, পুঁজিগঠন, ঋন সহায়তা দান, উৎপাদনের উপকরণ সরবরাহ ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, আত্ন-কর্মসংস্থান সৃষ্টি, নেতৃত্বের বিকাশ সাধন, নারীর ক্ষমতায়ন উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে আসছে। তাছাড়া সারা দেশ ব্যাপী দ্বি-স্তর সমবায় পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে দারিদ্রমুক্ত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীসহ গ্রামীন মহিলা জনগোষ্ঠিকে সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে গরীব সুবিধাভোগী পুরুষ ও মহিলা সদস্যদেরকে সমিতিতে অর্ন্তভূক্ত করে তাদের মধ্যে ঋন প্রদান করে আসছে। এছাড়া নানাবিধ কার্যক্রমের আওতায় সুফলভোগী জনগোষ্ঠির আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে গবাদী পশু ও হাঁস-মুরগী পালন, মৎস্য চাষ, বৃক্ষ রোপন ও নার্সারী, বিউটি পালার্র এবং উন্নত জীবন-যাপনের জন্য স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা স্থাপন প্রাথমিক ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। দারিদ্র পীড়িত জনগোষ্ঠি, দরিদ্র মহিলা ও বেকার যুবকদের সমন্বিত উন্নয়নে বিশেষায়িত কার্যক্রমের আওতায় ট্রেডভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদী কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান (যেমন: সেলাই প্রশিক্ষণ, ব্লক বাটিক, হাতের কাজ, পার্লার ও ইলেক্ট্রিক) প্রশিক্ষণ সহায়তা দিয়ে থাকে। বিআরডিবি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋন প্রদান করে আত্ন-কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে স্বাবলম্বী করছে। বর্তমানে অংশীদারিত্ব পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩ (পিআরডিপি-৩)-এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে চাহিদা ভিত্তিক প্রশিক্ষণসহ ইউনিয়ন পরিষদ ও সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীদের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রকল্প (যেমন: লিংকেজ রাস্তা, ইউড্রেন, সাবমার্সেবল পাম্প, কালভার্ট, স্কুল কলেজে স্বাস্থ্যসম্মত লেট্রিন স্থাপন) ইত্যাদি বাস্তবায়ন করে আসছে। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের পুষ্টিমান বজায় রাখার লক্ষ্যে বিআরডিবি কৃষকদের মাধ্যমে মসলা এবং ডালজাতীয় শস্য (যেমন: আদা, রসুন, পিয়াজ, ডাল জাতীয় শস্য, ভূট্টা) ইত্যাদি চাষে উদ্বুদ্ধকণ সহ তাদের মাঝে মাত্র ৪% সুদে ঋন কার্যক্রম করে আসছে।

তাড়াশ ইউসিসিএ লি. এর অতীত প্রেক্ষাপট ঃ

স্বাধীনতার পর সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লি: (টিসিসিএ)  ও তদানীন্তন আইআরডিপি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালে । এরপর তাড়াশের স্বনামধন্য সমাজকর্মী আশানবাড়ী গ্রামের মো. সোহরাব হোসেন ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম এই সমিতির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে হাল ধরেন। তার কর্মকান্ডের সুনামের কারণে পর পর  তিন বার তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮২ সালে এটা বিআরডিবি ও ১৯৮৩ সালে তাড়াশ উপজেলায় উন্নীত হলে উক্ত সমিতি ইউসিসিএ লি. নামে রুপান্তরিত হয় । সেময়  তাড়াশে বিভিন্ন সরকারী অধিদপ্তর চালু থাকলেও তাড়াশ ইউসিসিএ’র মত উন্নয়ন কর্মকান্ড ছিল না। আজকের তুলনায় তৎকালে তাড়াশ ছিল অনেকটাই অনুন্নত তথা পশ্চাৎপদ। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ তথা গরীব কৃষক সমাজের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক। সরকারি-বেসরকারী কোন সহায়তাই তাদের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না। মান্ধাতা আমলের কৃষি ব্যবস্থা ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির অভাবে উৎপাদন ও আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কৃষক মহল দুঃখজনকভাবে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু আশির দশকে বিআরডিবি’র মাধ্যমে সহজ কিস্তিতে জাপানী  শ্যালো মেশিন ব্যাপকভাবে সমবায়ীদের মধ্যে বিতরণ করা হলে তাড়াশের কৃষকের ভাগ্য খুলে যায়। সেসময় এই সমিতির কর্মকান্ডই ছিল উপজেলায় উন্নয়নের মূল ধারা। এভাবেই ক্রমান্বয়ে তাড়াশ ইউসিসিএ লি. এর কর্ম বিস্তার ঘটে আজকের সাফল্য ও অগ্রগতির পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।

বর্তমান চাল চিত্র ঃ

তাড়াশ ইউসিসিএ লি. এর নেতৃত্বে নতুন প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটায় বর্তমানে একটা আশার সঞ্চার হয়েছে। তিনি হলেন পূর্বতন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত সোহরাব হোসেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি উপজেলা মৎস্যজীবিলীগেরও সভাপতি।  চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি এই সমিতির দায়িত্ব গ্রহণের পর তার ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে অনেক দূর এগিয়ে যেতে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটি সমবায় বান্ধব স্বাবলম্বী সমাজ গঠন তার স্বপ্ন। তার আগামী চিন্তার মধ্যে রয়েছে: আধুনিক উন্নত পদ্ধতিতে ইরিচাষ, স্বল্প খরচে উৎপাদন বৃদ্ধি,  প্রতিটি ইউনিয়নে সমবায়ীদের নিজস্ব ডিলারশিপ চালু করা , আধুনিক কৃষি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং সমবায় ব্যবস্থাকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা ইত্যাদি। গত ১৯ জুন ২০১৯ তিন বছরের জন্য তিনি তাড়াশ ইউসিসিএ লি. এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে  সমিতির বার্ষিক সভার অয়োজন করেন। সে মোতাবেক  সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উক্ত বার্ষিক সাধারণ সভায়  বাজেট ও কার্যক্রম উপস্থাপন করা হয়। তাড়াশ ইউসিসিএ লি. এর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত খসড়া  রাজস্ব বাজেট আয় মোট ৪৮ লক্ষ ২১ হাজার ৫ শত টাকা। এছাড়া একই মেয়াদকালের  প্রস্তাবিত খসড়া মূলধন আয় বাজেট ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮৬ হাজার ১ শত টাকা মাত্র। আর ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত খসড়া মূলধণ ব্যয় বাজেট ১ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা।

অপরদিকে  উপজেলা বিআরডিবি এর অগ্রগতির প্রতিবেদনে উল্লেখিত এক নজরে তথ্যসমূহে বর্ণিত ৭টি চলমান প্রকল্পগুলো যথাক্রমে: মূল কর্মসূচি, আবর্তক ঋন কর্মসূচি, পল্লী প্রগতি প্রকল্প, সদাবিক, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, আদর্শ গ্রাম-২ ও গুচ্ছগ্রাম। এর মধ্যে আবর্তক ঋন কর্মসূচি সরাসরি  ইউসিসিএ লি. কর্তৃক পরিচালিত। প্রতিষ্ঠানের মোট সমিতি ২৬০, সদস্য ৯১৯৬, মোট সঞ্চয় জমা ৫৫.২৮ এবং মোট শেয়ার জমা ১৩.৫। এছাড়া চলতি অর্থ বছরে মোট ঋন বিতরণ ৯১.৮৭ ও ঋন আদায় ৭৯.৮৯ এবং ঋন আদায়ের হার শতভাগ। মুজিব জন্মশতবর্ষে এই সাফল্য এ প্রতিষ্ঠানের সবাইকে অনুপ্রাণিত করে।

আরো সরকারি সুদৃষ্টি দরকার ঃ 

তাড়াশ উপজেলা  বিআরডিবি অফিসের বর্তমান মোট জনবল ১২ জন। এর মধ্যে পল্লী উন্নয়ন অফিসার, সহকারি আরডিও এবং হিসাবরক্ষক রাজস্ব খাতের স্টাফ। অন্য ৯জন প্রকল্পের। তার মধ্যে ১ জন মাঠ সংগঠকের ও ১ জন পিওনের পদ শূণ্য রয়েছে। প্রকল্পের ঋন তহবিল কম। ফলে ঋন আদায় শতভাগ হলেও মাঠ থেকে ঋন আদায় সাপেক্ষে বেতন ভাতার বিধান থাকায় এবং ঋন তহবিল পর্যাপ্ত না হওয়ার কারণে কর্মচারীদের সারা বছরের বেতন ভাতা দেওয়া সম্ভব হয় না। অপরদিকে ইউসিসিএ স্টাফ মোট ৬ জন। একই কারণে তাদেরও বেতন ভাতা পর্যাপ্ত নয় । তাই উভয় ক্ষেত্রে তহবিল মূলধন বাড়ানোর এবং স্টাফ ঘাটতি সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD