এম. রহমত উল্লাহ
জাতির পিতা বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি দেশ একটি জাতি একটি স্বাধীনতার নাম। চির স্মরণীয় চির বরণীয় এমন মহৎ প্রাণ মানুষের জন্ম শত বর্ষে বাঙ্গালী জাতি গৌরবের সঙ্গে পালন করছে “মুজিব বর্ষ-২০২০”। যে মানুষটির জন্ম না হলে বাঙ্গালীর অধিনতা কোন দিন কাটতো কিনা তা গভীরভাবে ভাববার বিষয়। বিশ্বের অনেক দেশই অধিনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ ছিল। তারা কেউ সংগ্রাম করে, কেউ আইনের মারপ্যাঁচে দেশের স্বাধীনতা লাভ করে থাকবে। কিন্তু বাঙ্গালীর স্বাধীনতা অত সহজে অর্জিত হয় নাই। এর জন্যে যুগ যুগ ধরে সংগ্রাম করতে হয়েছে। কত রক্ত কত জীবন যে বিলিন করতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নাই। অত:পর ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ বাংলার এক সূর্য সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গি পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। যার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ,মাতা সায়রা খাতুন। অজ পল্লী গাঁয়ে যার জন্ম; কিন্তু তেজো দীপ্ত প্রতিভার আলোকে তিনি হয়ে আছেন চির ভাস্মর। মানুষ আসে মানুষ চলে যায়। রেখে যায় তাঁর কীর্তি যা মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যাণে, বিশ্বের কল্যাণে চিরদিন অমর হয়ে থাকে। এমনই এক ক্ষণজন্মা মহা মনিষি বাঙ্গালীর জাতির পিতাশেখ মুজিবুর রহমান । হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বিশ্বের সেরা রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। নির্যাতিত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের কর্ণধার, মুক্তির প্রতীক। যাঁর জীবন ছিল চির সংগ্রাম মুখর। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি ছিলেন বঞ্চিতের প্রতিবাদের এক উজ্জ্বল কন্ঠস্বর। জেল জুলুম অত্যাচার যাঁকে কোনদিন দমাতে পারে নাই। থামাতে পারে নাই তাঁর উজান চলার তরী। এক দক্ষ মাঝি হিসেবে তরী চালিয়ে জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন নির্দিষ্ট বন্দরে। এমন কান্ডারী বিশ্বে বিরল। তাঁর তেজো দীপ্ত বাগ্মীতা, সুশীল বাচন ভঙ্গি ,যাদুকরী পথ নির্দেশনা এক কান্ডারী বিহিন জাতির ত্রাণকর্তা। কী আশ্চার্য, তাঁর আহবানের জ্যোতি যা জাতিকে উদ্বেলিত করেছিল, অগ্নিতে ঝাঁপিয়ে পড়া পতঙ্গের মত। জয় বাংলা ধ্বনী বাঙ্গালীর অন্তরে গেঁথে দিয়েছিল তার আহ্বান। কাব্যিক ছন্দে ঘোষিত ১৯ মিনিটের বক্তব্যে তিনি জাতিকে মরণক্ষয়ী যুদ্ধে নামাতে সমর্থ হয়েছিলেন। যুবক যুবতি আবাল বৃদ্ধ বনিতা মা-বোন ভাই-পিতা ছাত্র জনতা সেনা সৈনিক কৃষক শিক্ষক আপামর জন সমাজ যার যা আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তি যুদ্ধে। তিরিশ লক্ষ বীরের রক্ত, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম তুচ্ছ করে যুদ্ধে নেমেছে এমন বিশাল মনের মানুষ সে কেবল বাঙ্গালীর জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বলেছিলেন, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল বাঙ্গালী জাতি। যার জন্যে আমাদের স্বাধীনতা , যার জন্যে আমাদের জীবন মরণ সংগ্রাম, তাঁরই জন্ম শত বর্ষ পূর্ণ হলো ২০২০ সনে। তাই জাতি শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে জাতীর জীবনের মাইল ফলক করে রাখতেই এই সুন্দর ব্যবস্থা। আমরা গর্বিত জাতি, তাই আমাদের গর্বের জাতির পিতার জন্ম শত বর্ষ অব্যয় হোক, অক্ষয় হোক, অমর হোক, চিরদিন জাতির জীবনে স্বর্ণাক্ষরে লেখা তথা অম্লান হয়ে থাকুক- এই শুভ কামনা।
লেখক : বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক।