সিংড়ায় দর্জির কাজে স্বাবলম্বী হেনা সুলতানা

Spread the love

রাজু আহমেদ : আজ থেকে প্রায় ৮ বছর আগের কথা। তখন অভাব-অনটনের সংসার ছিল হেনা সুলতানার। স্বামী বিভিন্ন ব্যবসা করে লোকসান হতে হতে এক সময় বেকার হয়ে পড়েন। হেনার সংসারের অভাব আরও বাড়তে থাকে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়াও এক রকম বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে ধার দেনা ও ঋণ করে সংসার চালাতে গিয়ে বেড়ে যায় ঋণের বোঝাও। সেই সাথে দিন দিন বাড়তে থাকে সংসারে কলহ আর অশান্তি। সংসারের এমন দূর্দশার সময়ে হেনা সুলতানা ভেঙ্গে না পড়ে মনোবল শক্ত করেন। নিজের ইচ্ছা শক্তি বাড়িয়ে বাড়িতে থাকা পুরনো মেশিন দিয়ে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। সে বছর ঈদকে সামনে রেখে কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। পাড়ার মেয়েরা ব্লাউজ ফ্রক তৈরী সহ নানা রকম সেলাই করার কাজ নিয়ে বাড়িতে ভীড় জমান। ভালো কাজ পেয়ে খুশি হন ক্রেতারা। দর্জির আয়ে সংসার চালান হেনা সুলতানা। ধীরে ধীরে মুক্ত হতে থাকে আগের ধার দেনা। এবার নড়ে চড়ে উঠেন স্বামী আব্দুল মান্নান। দর্জির ব্যবসায় আয়ের উৎস ভালো দেখে স্ত্রী হেনা সুলতানার কাজে বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। এভাবেই গ্রামের বাড়িতে কেটে যায় ১ বছর।
পরের বছর স্বামীর সহযোগিতায় বগুড়ায় দর্জির ট্রেনিং নেন হেনা সুলতানা। এবার স্বাবলম্বী হওয়ার পালা। সিংড়া বাজারে তখন মেয়েদের একক কোন দর্জির দোকান ছিলনা। হেনা সুলতানাই একমাত্র সাহসী নারী যিনি কোন সংকোচ বোধ না করে সিংড়া বাজারে প্রথম দর্জির দোকান শুরু করে সিংড়া উপজেলা নারী উদ্যোক্তা হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মাত্র ৮ বছরেই ঘুরে যায় ভাগ্যের চাকা। এই পথ ধরে অনেক নারীই এখন দেখছেন আগামীর দিনে হেনা সুলতানার মত স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন।
সিংড়া বাজারের পানপট্টি সংলগ্ন হেনা সুলতানার সেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা রাজধানী লেডিস টেইলার্সে গিয়ে দেখা যায় ৭ থেকে ৮ জন মেয়ে দর্জির কাজ করছেন। কেউ কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউবা আবার তৈরী পোশাক ইস্ত্রির কাজে ব্যস্ত। হেনা সুলতানা বলেন, আমার এই দর্জির দোকানে মোট ৯ জন মেয়ে কাজ করেন। এর মধ্যে ৫-৬ বছর ধরে আমার দোকানে কাজ করা অনেক মেয়ে তাঁদের বাড়িতে আমার মত দোকান দিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
হেনা আরও বলেন, এক সময় দারিদ্রতার সাথে লড়াই করেছি। এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। নিজের চেষ্টায় একটা কিছু করতে পেরেছি এটাই অনেক ভালো। এ পর্যন্ত সরকারী কোন সহযোগিতা পাইনি। সহযোগিতা পেলে দোকানের পরিধি আরও বাড়াবো। এতে আরও অনেক মেয়ে হাতে কলমে কাজ শিখে তারাও এক সময় স্বাবলম্বী হতে পারবে। হেনা সুলতানার স্বামী আব্দুল মান্নান বলেন, স্ত্রীর দোকানের কাজে আমি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছি। এখান থেকে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় হয়। এক মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। ছেলে পড়ছে ৫ম শ্রেণীতে। দোকানের আয়ে জমি কিনেছি, জায়গা কিনে বাড়ি করেছি। আল্লাহর রহমতে আমরা অনেক সুখে আছি।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ আফছার আলী মন্ডল বলেন, রাজধানী লেডিস টেইলার্সের স্বত্ত্বাধিকারী হেনা সুলতানা যে ভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে বাজারে দোকান দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাতে বাড়িতে কাজ না করে মেয়েরা যদি এভাবে বাজারমুখি হয় তাহলে তারাও হেনা সুলতানার মত স্বাবলম্বী হতে পারবে বলে আমি মনে করি।তিনি আরও বলেন, সিংড়া উপজেলা সদরে রাজধানী টেইলার্স ছাড়াও সম্প্রতি অনেক বিউটি পার্লার গড়ে উঠেছে যেখানে অনেক মেয়েরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। মেয়েদের এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে একটি আলাদা মার্কেট করার পরিকল্পনা আছে। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই থাকবেন নারী। সরকারী সহযোগিতা পেলে অচিরেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD