ভেজাল সমাজ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি

Spread the love

হাদিউল হৃদয়

ভেজাল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভেজাল বিষয়টি অত্যন্ত ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থেই বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

সারাদেশে প্রায় সবগুলো বাজারে বিভিন্ন সেবা ও পণ্য ভেজালের হিড়িক পরে গেছে। বিশেষত: খাদ্য দ্রব্যে ভেজালের কারণে ভোক্তা জনসাধারণের অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে। যদিও খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার প্রবণতা নতুন না হলেও ইদানীং এ অপরাধ অত্যন্ত ভয়ংকর ও বহুমাত্রিক রুপ লাভ করেছে। মানুষের বেঁচে থাকার প্রাথমিক মৌলিক শর্ত তার মধ্যে অন্যতম খাদ্য। এ খাদ্যে এত বহুমুখী ও বিপজ্জনক ভেজাল মেশানো হয় যে, আমাদের কারোর পক্ষেই এর ভয়াবহ কবল থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

ডাল-চাল ইত্যাদি শস্য জাতীয় খাদ্যে নি¤œমানের শস্য মিশ্রিত করা অনেক পুরোনো একটি সমস্যা। শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি কোনো কিছুই আজ বিপজ্জনক ভেজাল দ্রব্যের আওতামুক্ত নয়। আলু-পটলসহ অনেক ধরনের সবজি সংক্ষরণের জন্য ব্যবহৃত হয় ক্ষতিকর কীটনাশক। বিশেষ করে শাক-সবজি সবুজ দেখানোর জন্য রাসায়নিক রং স্প্রে করার বিষয়টি সবার জানা আছে। অপরিপক্ব ফল যেমন- আম, জাম, পেপে, কলা ইত্যাদি নিমিষেই পাকিয়ে ফেলার জন্য কৃত্রিম হরমোন স্প্রে করা হয়ে থাকে। সুতরাং বাজারে গেলে আমরা যে বাহারী ফলমূল দেখি তার অনেকগুলো আমাদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।

সম্প্রতি আমিষ জাতীয় খাদ্য মাছ-মাংস নিয়েও বিপজ্জনক খেলা শুরু হয়েছে। প্রথমে মাংস নিয়ে- গরুর মাংসের সঙ্গে মহিষের মাংস মিশিয়ে বিক্রি করা নতুন কিছু না, পুরনো একটি বিষয়। কিন্তু ইদানিং খাসির মাংসের সাথে কুকুরের মাংস মিশ্রিত করার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে মাংস টাটকা দেখানোর জন্য মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত রাসায়নিক রং। ফলে সাধারণ ক্রেতাকে ভেজালমক্ত খাবার কেনা নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়।

আবার মাছের বাজার। এখানে গ্যাস ট্যাবলেট ও ইন্ডিয়ান কেরোসিন দেওয়া মাছের আমদানী প্রায়শই দেখা যায়। সাধারণ ক্রেতাগণ বুঝতে নানা পেরে বিষ দেওয়া মাছ কিনে রান্না করে খাবার সময় বুঝতে পারেন এটা গ্যাস বা বিষ দিয়ে মারা মাছ। ততক্ষণে আর উপায় থাকে না কিছু করার। এছাড়া পুকুরে খালে দূষিত দ্রব্য দিয়ে চাষ করা মাছ দেদারছে বিক্রি চলছে খোলা পানির মাছ বলে। মাছের বাজারে সবচেয়ে মাপে-ওজনে কারচুপি করার প্রতণতা বেশি চোখে পরে।

বিভিন্ন বাজারগুলোতে দুধের দাম উদ্ধমুখী থাকলেও তাতে ভেজালের মিশ্রণ সিংহ ভাগ। বাজারে আসা দুধের মধ্যে বেশিরভাগ দুধই পানি মেশানো। সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষ কালে কস্মিনে এটা পরীক্ষা করে থাকেন। ফলে বাজারে খাঁটি ও নির্ভেজাল দুধ দুস্কর তো বটে।

হোটেল-রেস্টুরেন্টে ভেজাল খাদ্য নিয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য আরেক মারাত্মক হুমকি। এগুলোতে কতরকম ভেজাল যে চলছে তা বলার উপায় নেই। তাদের থালা-বাটি, গ্লাস-গামলা সবকিছুতেই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্নতা। বিশেষ করে হোটেলগুলোর রান্না ঘরের দিকে চাওয়া যায় না-এত নোংরা ও খারাপ গন্ধ। এসব হোটেলে ভাত মিষ্টিসহ নানা প্রকার খাবার দ্রব্য প্রায়ই খোলা বা উন্মুক্ত করে রাখা হয়- উদ্দেশ্য ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা। মরা মুরগির মাংস, বাটি-পচা খাবার নি¤œমানের তেল-মশলা প্রভৃতি রেস্টুরেন্টের ভোক্তাদের মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুকির সস্মুখীন।

ওদিকে ওষুধের দোকানগুলোতে ভেজাল যুক্ত ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে হরহামেসা। তাদের ওষুধের প্রকৃত মূল্য রেট অনুসরণ না করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রাহক ঠকিয়ে বেশি মূল্য নেয়া হয়। সবশেষে বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল ও খচরা যন্ত্রপাতির দোকানে বিভিন্ন প্রকার নকল ব্রান্ডের জিনিস আসল বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

মানুষের প্রাথমিক মৌলিক খাদ্য নিয়ে এ সকল বিপজ্জনক ভেজাল প্রবণতা সমাজ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভয়ানক হুমকি। দ্রত মুনাফা লাভের সহজ কৌশল অবলম্বনের জন্য এক শ্রেণির মানুষ নির্বিবাদে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মাধ্যমে সারাদেশ জনস্বাস্থ্যকেই ঝুকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। মূলত: সামাজিক ও নৈতিক বিপর্যয়ই এর প্রধান কারণ।

যদিও ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ সালে পাস হয়েছে কিন্তু এটির কোন কার্যকারিতা নাই বললেই চলে। কালে ভদ্রে বাজারগুলোতে প্রশাসনিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হলেও ভেজাল ও নকলের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। খাদ্যে ভেজাল যেহেতু একটি সর্বাত্মক সামাজিক ব্যাধি, ফলে সরকার বা কোনো বাহিনীর পক্ষে এককভাবে এর সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য অবশ্যই সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে ভেজালমুক্ত খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অব্যাহত সামাজিক আন্দোলনই কেবল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

 

 

 

হাদিউল হৃদয় :  কবি-সম্পাদক

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD