যাকাত ও স্বনির্ভর জাতি গঠনে ইমাম সমাজের ভূমিকা

Spread the love

অধ্যাপক আঃ হাকিম আকন্দ :

 

যাকাত ইসলামী অর্থ ব্যবস্থার মেরুদন্ড। ইসলামী ৫টি স্তম্ভের ঈমান ও নামাজের পরই যাকাতের স্থান। “মহানবী (সঃ) যাকাতকে’’ ইসলামের সেতু বলেছেন। আমরা প্রায় সবাই জানি, যেখানেই নামাজের কথা আছে, সেখানেই যাকাতের কথা আছে। যেমনঃ ‘নামাজ কায়েম কর যাকাত আদায় কর’।সুরা তওবা-৫। এভাবে কুরআনের অসংখ্য জায়গায় যাকাতের কথা লেখা আছে।আমাদেরুপ্রকাশিত যাকাত কি এবং কেন’’? বইখানা পড়লে বিস্তারিত জানা যাবে। যাকাত দিতে যারা অস্বীকার করলেন তাদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রাঃ) যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। এ কথা গুলো আমরা অনেকই জানি এবং বলে থাকি। কিন্তু যাকাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে এর বাস্তব প্রয়োগের সুফল আমরা এখনও ভোগ করতে পারিনি। আমাদের দেশে প্রায় ৩৪% মানুষ বেকার। অসংখ্য  মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। অনেক লোক গৃহহীন। বিভিন্ন রাস্তার পাশে,গাছতলায়,স্কুল কলেজের বারান্দায় কনকনে শীত ও ঝর বৃষ্টিতে রাত কাটায়। অসংখ্য গরীব,দুঃস্থ,অন্ধ রাস্তায় ভিক্ষা করে। প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সুদের ঋণের সাথে জড়িত। আমাদের অনেক বিত্তশালী  বন্ধরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করে নিজেকে সমাজ সেবক মনে করে। এ শাড়ী লুঙ্গি বিতরণকালে অনেক অসহায় মানুষ পদ- দলিত হয়ে মারা যেতেও মাঝে মাঝে দেখা যায়। এ অসহায় মানুষ এদেশেরই একজন মানুষ, কোন না কোন সমাজে বাস করে। কারো না কারো আত্নীয় স্বজন। একজন অসহায় মানুষ অন্য আর একজন মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়ার মত লজ্জাজনক কাজ আর কি হতে পারে? একজন মুসলিম ভাই অন্য একজন মুসলিম ভাইয়ের নিকট কখনও ভিক্ষা চেতে পারে না।

বাংলাদেশে প্রায় ৪ লক্ষ মসজিদ আছে। প্রতিটি মসজিদে একজন ইমাম একজন মোয়াজ্জিম ধরলে হয় ৮ লক্ষ। সমাজের প্রতিটি বিত্তশালী মানুষই এদের পিছনে সালাত আদায় করে। আজও সমাজের সকল স্তরের মানুষ ইমামদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন। তারা যে কথাগুলো বলেন, তা মানুষ মেনে চলার চেষ্টা করে। ইমামেরাই সমাজের নেতা। ইমামের বেতন কম হলেও সম্মানের দিক দিয়ে তারা সর্বশীর্ষে। এ সম্মানিত ইমাম মহোদয় যদি সুরা তওবার ৬০ নং আয়াতের বিধান বলে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করেন তাহলে জাতি ধন্য হবে। অনাবিল সুখ ও শান্তি বিরাজ করবে। দূর হবে সমাজ হতে যত অন্যায় অবিচার, সুদ, ঘুষ জবর-দখল, রাহাজানি, জেনা-বেবিচার, সুদৃঢ় হবে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। আল্ল¬াহর নিকট জবাবদিহিতা হতে বেঁচে যাবে। সম্মান আরও বেড়ে যাবে মানুষের নিকট। ধনী-গরীবদের মধ্যে বৈষম্য হ্রাস পাবে, ভারসাম্য রক্ষা হবে, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যহীনতা ও বেকারত্ব দুর হবে। মানুষ ফিরে পাবে স্বস্তি। আমাদের সমাজে বহু সম্পাদশালী মানুষ আছে তারা অর্থ দিতেও চায়। কিন্তু শুধু উদ্যোগী ও সৎ লোকের অভাব। জাতির কর্ণধার ইমামেরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন। একজন ইমাম মসজিদভিত্তিক তার সততা ও যোগ্যতা বলে সুরা তওবার ৬০নং আয়াত মুলে ৮টি খাতের সঠিক নির্বাচন করে বাস্তমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। যেমন- ১টি ছোট মসজিদ। ঐ মসজিদের আওতায় ১০০ ঘর মানুষ নামাজ পড়ে। এ ১০০ জনের মধ্যে ২০ জন যাকাতের উপযুক্ত। ধরি বছরের ২০০০ টাকা যাকাত হয়, তাহলে ২০ জনে হয় ৪০০০০টাকা।যদি ওশর হয় ৫০জন লোকের। প্রতিজনের ওশর গড়ে ৩মন হলে, প্রতিমনের দাম ৬০০টাকা হলে হয় ৯০,০০০টাকা। যাদের যাকাত ও ওশর হয় তারা আবার কুরবানী দিবে। ধরি এখাতে আসবে ৭০,০০০টাকা।

এছাড়া, কুলখানি, খাৎনা, স্বেচ্ছায় দান এগুলো হতে আসে ২০,০০০ টাকা। তাহলে ১টি ছোট মসজিদে বছরে মোট আয় হবে ২,২০,০০০টাকা। এরা সবাই আল্ল¬াহর হুকুম পালনে ছওয়াব পাবে।বাকী যারাও থাকলেন তাদেরও ছাওবের প্রয়োজন আছে। তারা যাকাত কর্মী, যাকাত বিতরণ ও উৎসাহদাতা হিসেবে কাজ করবে। তাহলে কেউ যাকাতের ছওয়াব হতে বঞ্চিত হলো না।২৩নং সুরা ৪নং আয়াতে ফা-ইলুন বলতে যাকাত কর্মীগণকে বুঝানো হয়েছে। উক্ত ২,২০,০০০টাকা দিয়ে তওবার ৬০নং আয়াতের বিধান বলে যদি ফকির, মিসকিন,ঋণী ব্যক্তি নির্বাচন করে- প্রতি বছর ২জন করে মানুষকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়, যাতে পরর্বতী বছরে তারাই আবার যাকাত দিতে পারে। এ চক্রাকারে যদি যাকাত আদায় ও বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। তবে দেখা যাবে ৫ বছর ঐ সমাজে আর যাকাত গ্রহণের লোক খুজে পাওয়া যাবে না।

 

লেখকঃ  ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষক, ০১৭১০-৬১১২৮৩।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD