চলনবিলের লেখক,কবি ও সাংবাদিকতার ইতিহাস

Spread the love

মুহাঃ জাকির আকন
দেশের পশ্চাদপদ ও অবহেলিত এক জনপদ চলনবিল । অতীতের পশ্চাদপদ, অবহেলিত, অনুন্নত জনপদ চলনবিলের বুকে যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন হওয়ায় চলনবিল এখন কৃষি ও মৎসের অপার সম্ভাবনার উন্নত একটি জনপদে পরিণত হয়েছে। চলনবিলের কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকতার ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী । এই চলনবিল জনপদের চাটমোহরে জন্ম হয়েছে বাংলা সাহিত্যিক প্রথম উপন্যাসিক প্রমথ চৌধুরি। সলঙ্গার হাটিকুমরুলে আনোয়ারা উপন্যাস খ্যাত সাহিত্যিক নজিবর রহমান । পাকিস্থানের রাষ্টীয় সর্বোচ্চ পদক টি,কে উপাধি পাওয়ার পর যিনি বাঙ্গালীর স্বাধিকার আন্দোলন ইস্যুতে প্রত্যাখান করেছিলেন, অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ স্যার গুরুদাসপুরের খুবজিপুরে জন্ম গ্রহণ করেন । চলনবিলের ইতিকথা ও কর্মবীর সেরাজুল হক গ্রন্থ তার অনন্য অমর সৃষ্টিগ্রন্থ । অবিভক্ত ভারতের আজাদী সংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জল নক্ষত্রের নাম মওলানা এম. সেরাজুল হক যিনি তাড়াশের সেরাজপুর গ্রামে জন্মলাভ করেন। চলনবিলের লেখক কর্মবীর এম সেরাজুল হক, অধ্যক্ষ স্যার আব্দুল হামিদ, তোফায়েল আহেেম্মদ সিদ্দিকি, ফজলুর রহমান খান, কবি আব্দুর রহমান বিনোদী,কবি জয়নুল আবেদীনরা একেকজন একটি নক্ষত্র ও একেকটি ইতিহাস । চলনবিল প্রকৃতই কবি ও সাহিত্যিকদের লালনভূমি ও চারণভুমি। তাড়াশ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল ভাইয়ের উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থ পাঠ করে মনে হতো চলনবিলের দৃশ্যপট চোখের সামনে। চলনবিলের কবি ও কবিতা গ্রন্থের (২য় খন্ডের) মোড়ক উন্মোচনে অনুষ্ঠানে বিনায়েকপুরের কবি এ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেনের ছোট মেয়ে শিশু কবি আবিদা সুলতানা আভার টাকা কবিতার আবৃত্তির দৃশ্য স্মৃতি রোমন্থন হয়। কবি আলহাজ্ব এম. রহমতুল্লাহ যিনি বাংলা একাডেমির সদস্যপদ লাভ করেছেন এবং তাড়াশের একমাত্র কবি যার সবচেয়ে বেশি (১৮টি) বই একুশে বই মেলায় প্রকাশিত হয়েছে। নানা গুণে গুণান্বিত কবি-লেখক-সাংবাদিক আবদুর রাজ্জাক রাজুর তিনটি বই এযাবৎ প্রকাশিত হয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক এম.এ হামিদ স্মারক গ্রন্থ। ২০১৯ সালের বই মেলায় তাড়াশের তরুণ কবি জর্জিয়াস মিলন রুবেলের তাড়াশের ইতিহাস নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে । বিনায়েকপুরের তরুণ কবি ছন্দা ও তাড়াশের তরণ লেখক ও কবি এস,এম সনজু কাদেরের উপন্যাস ও কবিতা উচ্চ মানের পরিচয় পেলেও তিনি বেশী বই ছাপাতে পারেন নি ।
এরপর তাড়াশ সদরের নাজিব হাসান নজরুলের এর সোনালী এখনও অনুভবে ও দূঃখী কবিতার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে একজন অসম্ভব প্রতিভার । প্রথমেই স্মরণ করছি তাড়াশের আমবাড়িয়ার শহীদ সাংবাদিক ইয়ার মাহমুদ । আল্লাহ যেন তার মাগফিরাত করে দেন । আশির দশকে যারা সাংবাদিকতায় এই অবহেলিত জনপদে পদচারনায় মুখরিত থাকতো , যারা আমাদের বস্তনিষ্ঠ ও সাংবাদিকতার পথিকৃত সাংবাদিক রুহুল আমিন (মরহুম), অধ্যাপক আতাহার হোসেন, সাংবাদিক অধ্যাপক শামসুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক রাজু, সাইদুর রহমান সাজু, শাহ আব্দুল কুদ্দুস রহমত, আব্দুল লতিফ ,আজিজুল হক কিরণ,জাকির হোসেন, শহীদুল ইসলাম ও শাহাজাহান আলী সহ অনেকে । চলনবিলের এই দূর্গম এলাকায় থেকে তারা দৈনিক বাংলা, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক দেশ, দৈনিক গণকন্ঠসহ দেশের র্শীষ পত্রিকায় সাংবাদিকতায় তারা স্বস্ব প্রতিভা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন । তাদের মতো আদর্শ সাংবাদিক আর এদিগন্তে আসবে কিনা জানি না । আব্দুর রাজ্জাক রাজু ( সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার সম্পাদক) তিনি তো এই পেশার নেশায় পড়ে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সরকারী চাকুরীটি ছেড়ে দেন । তাদের লেখার বন্তুনিষ্ঠতা , মননশীল চিন্তাশীলতা ছিল অগাধ । তারা কখন ও সততা কিংবা অন্যায়ের কাছে আপোষ করেননি । সাজু চাচার কাছে শুনেছি, তাড়াশ বিনসারা রাস্তার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিউজ লেখার কারণে তাড়াশ থানার ওসির তলবের ঘটনা । দুই হাজার দশকে আমরা তাড়াশ প্রেসক্লাবে যারা এই পেশায় ছিলাম সনাতন দাশ, মেহেরুল ইসলাম বাদল,আতিকুল ইসলাম বুলবুল,রফিকুল ইসলাম রনি,মোতালেব হুসাইন মামুন,আমজাদুল হক মুন্নু,সিংড়া প্রেসক্লাবের রাজু আহমেদ, রানা ভাই, শরিফুল ইসলাম, গুরুদাসপুরের কিরণ ভাই, শাহজাহান ভাই,আবুল কালাম আজাদ ভাই, আলী আক্কাছ ও চাটমোহরের আব্দুল মান্নান পলাশ, হেলালুর রহমান জুয়েল, টুকুন ভাই, ভাংগুড়ার বদিউল আলম , বিকাশ চন্দ, আকসেদ আলীসহ অনেকেই । সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকতার পেশায় একদিকে রয়েছে ঝুঁকি অপরদিকে রয়েছে সন্মান ও রোমাঞ্চ । আজকে আমাদের সাংবাদিকতার পেশায় অপসাংবাদিকতার ছড়াছড়ি হওয়ায় এই পেশার মর্যাদা ও শ্রদ্ধাবোধ হারালেও সেই সময়ে এই অঞ্চলের সাংবাদিকরা ছিলেন মোনাজাত উদ্দির ও শামসুর রহমানের মতো দায়িত্ব নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত । লেখার মধ্যে চলনবিলের অনেক লেখক সাহিত্যিক ও সাংবাদিক গুনীজনদের নাম আসেনি যারাও সমাদৃত । শুভাকাঙ্খী ভাইবোনদের তাদের তথ্য দেওয়ার অনুরোধ রোলো যাতে পরবর্তী লেখার মধ্যে তাদের তুলে আনা সম্ভব হয় । পরিশেষে এই লেখার ভুলক্রুটির ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে মার্জনীয় । মহান আল্লাহর তা আলার কাছেও ক্ষমা চাই । আমরা যেন সদা ন্যায় ও সত্যের পথে থাকতে পারি তার তৌফিক চাই । (চলবে)
লেখক: কবি ,সাংবাদিক ও প্রভাষক তাড়াশ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD