নতুন জাতের ধান চাষে ঝুঁকছে চলনবিলের কৃষক

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ
শষ্য ভান্ডার বলে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী চলনবিলের কৃষক অধিক ফলনের আশায় ইরি- বোরো ধানের প্রচলিত জাত ছেড়ে উন্নত নতুন জাতের ধান চাষে ঝুঁকছে। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনষ্টিটিউটের উদ্ভাবিত নতুন জাতের ধান ব্রি-৬৩,৮১,৮৯ ও ৭৪ গত বছর স্বল্প পরিসরে চাষ শুরু হয় । গত বছরে আশানুরুপ বেশূী ফলন পাওয়ায় উৎসাহিত হয়ে এ বছরে ব্যাপক ভিত্তিক চাষ শুরু করেছে ।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ রফিকুল ইসলাম আরো জানান,বর্তমানে প্রচলিত ইরি-বোরো জাতের ধানের চেয়ে বিঘা প্রতি ২/৩ মন বেশী উৎপাদন হয় এবং একসপ্তাহ আগেই কাটা যায় । তুলনামূলক চাউল চিকন হওয়ায় বাজারে চাহিদাও বেশী । তাই দামও বেশী পাওয়া যায় । তাছাড়া নতুন জাতের ধানে পোকা মাকড়ের আক্রমন কম থাকায় বালাই নাশক অপেক্ষাকৃত কম ব্যবহার করতে হয় । প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহনশীল । এ কারণে নাটোর জেলা সহ চলনবিলের কৃষকদের মাঝে আশা জাগিয়েছে নতুন জাতের ধান ।
বৃহত্তর চলনবিলের চাষীরা দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ইরি-বোরো ধানের আবাদ করে আসছেন । এছাড়া বিলের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতেও ধান চাষ হয়ে থাকে । এ বছরের মওসুমের শুরু থেকেই বেশীলভাগ কৃষক নতুন জাতের উদ্ভাবিত ধানের বীজ সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে জিরা শাইলের বিপরিতে ব্রি ধান- ৮১ জাত। ব্রি- ২৮ ও ২৯ এর বিপরিতে ৫৮,৮১ ও৮৪ জাত এবং স্বর্নার বিপরিতে ব্রি ধান -৮২ জাতের চাষ করছেন ।
নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর সূত্রে জান যায়, জেলায় চলতি ২০১৮ -১৯ বোরো মওসুমে ২লাখ ১৮ হাজার ৫৭০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করেছে কৃষি বিভাগ । ইতিমধ্যেই বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চলনবিলের কৃষকরা ।নতুন জাতের ধান চাষে কৃষকরা আগ্রহী হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬২ হাজার হেক্টও জমিতে বোরোর আবাদ হওয়ার আশা করছেন জেলার কৃষি দপ্তর । গত বছর ৬১ হাজার ২০০ হেক্টর বোরো ধানের চাষ হয়েছিল । তাতে ধান উৎপাদন হয়েছিল ২লাখ ৮৮ হাজার ৮২৩ মেট্রিক টন । নাটোর জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে আরো জানা যায়, এ বছর ইরি-বোরো মওসুমে উপজেলা ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে নাটোর সদর উপজেলায় ২হাজার ৭০৮ হেক্টর, নলডাঙ্গা উপজেলায় ৭ হাজার ৮৬০ হেক্টর, সিংড়া উপজেলায় ৩৪ হাজার ৫৬৩ হেক্টর, গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪হাজার ৮২ হেক্টর, বড়াইগ্রাম উপজেলায় ৪ হাজার ৯৯৫ হেক্টর, লালপুর উপজেলায় ১ হাজার ১০১ হেক্টর, এবং বাগাতি পাড়া উপজেলায় ৬৮৪ হেক্টর ।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন উপজেলায় গত বছর ৩০ জন কৃষকনতুন জাতের ধান চাষ করেছিলেন ্ । এতে তাঁরা বেশ লাভবান হয়েছিলেন । নতুন জাতের ধান চাষীদের মধ্যে খাঁকড়াদহ গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন,আনন্দ নগর গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে তারা প্রচলিত ইরি-বোরো ধানের আবাদ করে অভ্যস্ত। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শে পরীক্ষামূলক ২ বিঘা করে নতুন জাতের ধানের ্আবাদ করে লাভবান হয়েছিলেন । এবছর বেশী জমিতে নতুন জাতের ধানের চারা রোপন করেছেন ।একই রকম তথ্য জানান চলনবিলের কৃষক আব্দুল বারি, সোলেমান ও ইদ্রিস আলী সহ কয়েকজন । কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার এবার নতুন জাতের বীজ সংগ্রহ করে বীজতলা তৈরী ও রোপণ করেছেন ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জানান, ইতিমধ্যেই নতুন জাতের অধিক ফলনশীল ও রোগ বালাই সহনশীল ধানের চাষ জেলা তথা চলনবিল জুড়ে আলোড়ন ফেলেছে । এবছর বেশী আবাদ হলে এই জাতের বীজ উৎপাদনও বাড়বে । এতে কৃষক ভালো এবং গুণগত মানের বীজ সহায়তা পাবে । আগামীতে বীজের জন্য অপেক্ষা বা ধর্না দিতে হবে না । ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত রোপনের কার্যক্রম চলবে । আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এবারে বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হবে বলে কৃষি দপ্তর আশা করছেন। সেই লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD