এম এ মাজিদ : শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের আইন অমান্য করে যত্রতত্র ফসলী জমিতে বেপরোয়াভাবে গড়ে উঠেছে ইটভাটা । এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলী জমির উপরি অংশের উর্বর মাটি। বিল এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রভাবশালী মহল ফসলী জমি নষ্ট করে গড়ে তুলেছে অসংখ্য ইটভাটা। এরমধ্যে শুধু তাড়াশ উপজেলাতেই বেপোরোয়াভাবে গড়ে উঠেছে ৮টি ইট ভাটা। ভাটা গুলোহলো উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নে নাবিলা সুপার ব্রিকস, বন্যা ব্রিকস,সাদিয়া ব্রিকস,আখী ব্রিকস, মেঘনা ব্রিকস,এম আরএইচ ব্রিকস ও নওগাঁ ইউনিয়নে এমএমবি ব্রিকস ও এইচ এন্ড কে ব্রিকস অবস্থিত।
পরিবেশ্ ও বন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে হাইব্রিড হফম্যান জিগ-জ্যাগ,ভার্টিক্যাল শ্যাফট ক্লিন অথবা পরীক্ষিত নতুন প্রযুক্তির পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা করার কথা থাকল্ওে চলনবিল এলাকার ইটভাটাতে পোড়ানো হচ্ছে বাংলা ও ড্রাম চিমনি এবং কাঠ। তবে ভুক্ত ভোগীদের অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে এসব ইটভাটা। আর ভাটায় কাঠ পোড়ানোর দরুন ভাটা এলাকায় পরিবেশ হচ্ছে দুষিত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফসলী জমি মালিকদের ভুল ভাল বুঝিয়ে সামান্য মূল্য দিয়ে ১০ থেকে ১৫ একর ফসলী জমির জায়গা দখলে রেখে চলছে ইট ভাটার কার্যক্রম। ভাটার প্রভাবে পার্শ্ববর্তী ফসলী জমির মালিকগনের জমিতে হচ্ছে ফলন বির্পযয়। তাছাড়া ভাটা মালিকরা অসহায় গরীবদের অভাবের সুযোগ নিয়ে অর্ধেক মূল্যে অগ্রীম শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য করে। ফলে ভাটা এলাকার বাসিন্দারা বাধ্য হয়েই শিশু শ্রম বিক্রি করে থাকে। যার ফলশ্রতিতে শিশুরা স্কুল বিমুখ হয়ে শ্রম বিক্রি করছে এসব ইটভাটায়। একারণেই এলাকা গুলোতে দিন দিন শিশু শ্রম বেড়েই চলছে। এ ছাড়াও অনায়াসে ইট ভাটায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করছে বনের কাঠ। এমকি ইট তৈরিতে ছয় থেকে সাত ধরনের ডাইস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং ইটের আকার ছোট করে প্রতিনিয়ত ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করছে ভাটা মালিকরা।
এলাকার একাধিক কৃষক দুঃখ করে বলেন, ইট ভাটাগুলো চালূু করার ফলে ইট পোড়ানো ধূয়ায় এলাকার ৩ ফসলী জমির উর্বর মাটি পুড়ে যাচ্ছে যার প্রভাব পরছে ফসলের উপর। মৌসুমি বিভিন্ন ফলের মুকুল ঝরে যাচ্ছে ভাটার দূষিত ধূয়ায়। সাথে সাথে পরিবেশ দূষণসহ শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০১৩ এর ৪/১৪ ধারায় পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির জিগজ্যাগ ক্লিন হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন ্্্অনুরুপ উন্নতর কোনে প্রযুক্তির ইট ভাটা স্থাপন করার বিধান থাকলেও তার কোনটাই না মেনে ইট ভাটার মালিকগন অবৈধভাবেকোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছেন। এছাড়া ইট তৈরিতে জমির উপরি ভাগের উর্বর ১ থেকে ৩ ফুট মাটি ব্যবহার করায় জমি উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। পাশাপাশি ওই জমিগুলো নিচু হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টির ফলে চাষের অনুপযোগী হয়ে পরছে। এর প্রভাব পরছে পার্শ্ববর্তি আবাদি জমিতেও। যে কারণে শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল এলাকা শস্য শুন্য হওয়ার উপক্রম। আর এই উর্বর মাটির জন্য ভাটা মালিকগন ট্রাক ডাইভারদের ব্যবহার করে থাকেন। ট্রাক ডাইভার অভাবের তাড়নায় ভাটা মালিকদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নেওয়ার ফলে বাধ্য হয়েই যেকোন মূল্যে জমি মালিকদের সাথে প্রতারণার করে জমির উপরি ভাগের উর্বর মাটি সংগ্রহ করে।এদিকে ভাটাগুলোতে অবাধে কয়লার পরির্বতে কাঠ পোড়ানোর ফলে পরিবেশ দূষনের পাশাপাশি চলনবিল এলাকা হচ্ছে উজার। আর এর বিরুপ প্রভাব পরছে পরিবেশের উপর।এবিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য ভাটা মালিদের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী নির্বাহী অফিসার চলনবিল বার্তাকে এ সম্পর্কে বলেন, সরকারী আইন অনুযায়ী ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেওয়া হবে। চলনবিলের মধ্যেস্থলে অবস্থিত কৃষি নির্ভর তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, ভাটার মালিকগন ৩ ফসলী জমি নষ্ট করে যে ইট ভাটা স্থাপন করেছেন তা সম্পূর্ণ অবৈধ। উপজেলা কৃষি দপ্তর থেকে দু-একটি ছাড়া কোন ভাটার মালিকগন ছাড়পত্র নেয় নি। যত্রতত্রভাবে ইট ভাটা স্থাপন করায় এলাকার পরিবেশ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ইট তৈরীতে ফসলি জমির উপরি অংশের উর্বর মাটিকে টপ সয়েল বলা হয়। একবার টপসয়েল নষ্ট হলে ২০ বছরেও তা পুরণ সম্ভব হয় না। ফলে জমি হারাচ্ছে উৎপাদন ক্ষমতা।