বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ -একটি ঐতিহাসিক অভিযাত্রা

Spread the love

মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ

বিশ্বের ইতিহাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি আদর্শ, একটি দলিল ও অদ্বিতীয় নাম। তিনি আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদাতা ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। যার জন্ম না হলে আজীবন আমরা পরাধীন থাকতাম, বঞ্চিত হতাম ন্যায্য অধিকার থেকে ও কোনদিন বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম না। যাঁর অবদানে বিশ্বের দরবারে আজকের এ সু-পরিচিত লাল সবুজের বাংলাদেশ। তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, কয়েক যুগের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর এই মহান নেতার নেপথ্যের যিনি শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস, জীবন ও মরণের সাথী, সঙ্গি ও সহধর্মীনি তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা। এই মহিয়সী নারী ও মমতাময়ী মায়ের আদর্শকে সামনে রেখে তার স্মৃতি অম্লান করে ধরে রাখার প্রয়াসে কয়েকটি জেলার অংশ বিশেষ, চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র অত্যন্ত দূর্গম ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর স্বপ্ন দেখতে থাকেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য ও সাহসী কন্যা, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার, বার বার গণ মানুষের ভোটে নির্বাচিত মাদার অব হিউম্যানিটি সফল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বাসী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের অনুসারী, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতি বুকে ধারণকারী, বার বার মনোনীত পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সম্মানিত সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর। সেই স্বপ্নের পথ ধরে অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর চলনবিলের সকল শ্রেণির মানুষের সার্বিক সহযোগিতায় খাল, বিল ও নদীর বুকচিরে গড়ে ওঠা ও নানা ঐতিহ্যে পরিপুর্ণ চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার চক-মির্জাপুর বিনোদপুরে মনোমুগ্ধকর ও সু-শোভিত প্রাকৃতিক পরিবেশে ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গমাতার স্মৃতিবহনকারী এই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ। শুরু হয় চলবিলের অবহেলিত, দরিদ্র ছেলেমেয়েদের মাঝে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর কাজ। মজার ব্যাপার হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বহনকারী বঙ্গবন্ধু দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয় এ বিদ্যা পিঠের নিকটেই কুন্দইল গ্রামে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধারণকারী এ বিদ্যালয় সহ আশে-পশের সকল বিদ্যালয়ের প্রায় ছাত্র-ছাত্রীরাই শিক্ষার সুযোগ পায় বঙ্গমাতার স্মৃতিবহনকারী এই বিদ্যাপিঠে। অবহেলিত, অনগ্রসর জনপদের দরিদ্র ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে এ শিক্ষাঙ্গন। অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর মনে মনে ভাবতে থাকেন – শ্রমিক যেমন মজুরী পায়, চাকুরীজীবি যেমন বেতন পায়, ঠিক তেমনি বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার, জাতীয় চার নেতা ও শহীদদের ন্বিঃস্বার্থ ত্যাগের মূল্য কিছুটা হলেও পরিশোধের জন্য ও তাঁদের স্মৃতি অম্লান করে ধরে রাখার জন্য চলনবিলের মানুষের পক্ষ হতে কোন একটা কিছু করা দরকার। তখন থেকেই অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর স্বপ্ন দেখেন বঙ্গমাতার স্মৃতি বহনকারী এই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ জাতীয়করণ করে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজের গভর্ণিংবোডির সভায় অধ্যাপক ড. মো. হোসেন মনসুর সভাপতি হিসেবে এই বিদ্যাপিঠ জাতিয়করণের প্রস্তাব পেশ করেন।
এই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে বঙ্গমাতার স্মৃতি বহনকারী এই বিদ্যাপিঠ জাতীয়করণের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করা হয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সানুগ্রহে সম্মতি প্রদান করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, কয়েক যুগের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ¯েœহধন্য ও সুযোগ্য কন্যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরু হয় বঙ্গমাতার স্মৃতি বহনকারী এই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ জাতীয়করণের কার্যক্রম। অবশেষে যাবতীয় কার্যক্রম শেষে গত ১২/০৯/২০১৮ তারিখে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপরে মাধ্যমে বঙ্গমাতার স্মৃতি বহনকারী এই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ সরকারিকরণ করা হয়। শুরু হল তাড়াশের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঐতিহাসিক অভিযাত্রা। এই সর্বপ্রথম তাড়াশের কোন শিক্ষালয় সরকারীকরণ হল যার অসামান্য অবদানের মূল কর্ণধার চলনবিলের উজ্জল নক্ষত্র তাড়াশের কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. হোসেন মনসুর।

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ সরকারী করণ করায় চলনবিলের সকল শ্রেণির মানুষের মাঝে আনন্দের ঢেউ বইছে। চলবিলের মানুষ মনে করে, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আইডিয়াল কলেজ জাতীয়করণ করায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্তরলোকের যিনি শক্তি, সাহস ও প্রেরণার উৎস, জীবন ও মরণের সাথী, সঙ্গি ও সহধর্মীনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ন্বিঃস্বার্থ ত্যাগের মূল্য কিছুটা হলেও স্বীকৃত হল, শোধ হল। সরকার কর্তৃক জাতীয়করণ হওয়ায় এই কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা ড. হোসেন মনসুর তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, আমি অতীব আনন্দিত, আপ্লুত এবং অভিভূত বটে। কেননা, চলনবিলের নিভৃত পল্লী তথা গ্রামীণ এলাকায় স্থানীয় প্রধান যোগাযোগ রাস্তার ধারে সুন্দর মনোরম পরিবেশে এ কলেজটির অবস্থান। এই প্রত্যন্ত পশ্চাৎপদ এলাকার বিশেষ করে দুঃস্থ, গরীব ও দলিত জনগোষ্ঠির সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েরা এখানে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। তিনি এই কলেজ সরকারীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। কারণ, প্রধানমন্ত্রী চান, আধুনিক শিক্ষার আলো যেন শুধু শহর-নগরকেন্দ্রিক না হয়ে গ্রামের প্রত্যন্ত নিভৃত কোনে পৌছে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়- এই কলেজটিকে ঘিরে ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন কী ? জবাবে তিনি বলেন, কলেজটি হবে অত্যন্ত যুগোপযোগী, উন্নত ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ। এখানে প্রচলিত শিক্ষার মান ও পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হবে। থাকবে বিশ্বমানের শিক্ষার ছোঁয়া। তাছাড়া মেধাবী ও দক্ষ শিক্ষকের দ্বারা কলেজটি পরিচালিত হবে। আর আমি আমার অবসর জীবনের বাকি সময়টুকু এই কলেজে নিয়োজিত করতে চাই। যাতে এটা তাড়াশ তথা সমগ্র চলনবিল এলাকায় একটি ব্যতিক্রমী আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে ব্যবস্থা আমি করব আশা করি।

লেখক ঃ প্রভাষক ও সদস্য, তাড়াশ প্রেস ক্লাব।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD