গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি. অসুস্থতার কারণে বছরখানেক আগেই সংসার ভেঙেছে কিশোরী সুমাইয়ার (১৭)। দুই পায়ের ‘হিট জয়েন্টে’র যে সমস্যায় সংসার ছিন্ন হয়েছিল, সেই সমস্যা এখন আরও গুরুতর। হাটতে হয় অন্যের সাহায্য নিয়ে। রুগ্ন শরীর নিয়ে এখন ভ্যানচালক বাবার দরিদ্র সংসারে তার ঠাঁই। সহায় সম্বল সব বিক্রি করে বাবা চিকিৎসা করিয়েছেন। সুস্থ হতে আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। ভ্যানচালক বাবার পক্ষে সেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকলেও অন্যের সাহায্য ছাড়া চলতে পারেন না বলে নিজেকে বোঝা মনে হচ্ছে সুমাইয়ার। কথাগুলো বলতে বলতে সুমাইয়ার চোখের জল গড়িয়ে বুক ভিজেছে।
সুমাইয়া খাতুন গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কান্দিপাড়া গ্রামের জাহিদুল-সাহেদা দম্পতির কন্যা। ওই গ্রামেই ২ শতাংশ জমির ওপর দুইকক্ষের টিনের ঘরের এককক্ষে থাকেন সুমাইয়া। অন্যটিতে তার পিতামাতা। সুমাইয়া স্বামীর সংসার থেকে ফিরে আসার পর তার ভাই সুজন আলীও শ্বশুর বাড়িতে পাড়ি জমিয়েছেন।
সুমাইয়া বলেন, দুই বছর আগে যখন তার বিয়ে হয়, তখনও তিনি সুস্থই ছিলেন। শ্বশুর বাড়িতেই প্রথম সমস্যাটি দেখা দেয়। কোমরের ডান পাশের ‘হিট জয়েন্টে’ যন্ত্রণা শুরু হয়। ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে পুরো ডান পায়ে। একপর্যায়ে হাঁটাচলা বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে উন্নতি না হওয়ায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে বাপের বাড়িতে ফেরত পাঠান। সেই থেকে এখনো বাপের কাছেই আছেন তিনি।
সুমাইয়ার পিতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে সুমাইয়াই বড়। কপাল খারাপ হওয়ায় মেয়েটির স্বামীর সংসার ভেঙেছে। ভ্যান চালিয়ে ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সাধ্যমতো চিকিৎসা করিয়েছি। তাতে লাভ হয়নি। এখনো ব্যথায় কাতরায় মেয়েটি। এখন নিজে নিজে হাটতেও পারেন না। মেয়েকে সুস্থ করতে তিনি সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
সুমাইয়ার মা সাহেদা বেগম জানান, অসুস্থ হলেও নিজের মেয়েকে ফেলতে পারেননি তিনি। এ কারণে ছেলে সংসার ছেড়েছেন। হাটা, গোসলসহ প্রয়োজনীয় সব কাজে সুমাইয়াকে সাহায্য করতে হয় তাকে। মেয়েটি অসুস্থ হওয়ায় তিনিও রোগ-শোকে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন।
সুমাইয়ার চিকিৎসক হাড়-জোড়া রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন (অর্থপেটিক) চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র বলেন, কোমরের সঙ্গে দুই পায়ের সংযোগ ঘটানোর কাজটি করে ‘হিট জয়েন্ট’। কিশোরী সুমাইয়ার শরীরে গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটিতে গুরুত্বর সমস্যা দেখা দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধান করা যেতে পারে।
মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, অনেকদিন ধরেই সুমাইয়া অসুস্থতায় ভুগছেন। পরিবারের পক্ষ থেকে তার কাছে আবেদন দিলে চিকিৎসার জন্য সাধ্যমতো আর্থিক সহায়তা দেবেন তিনি।
গুরুদাসপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, অসুস্থতার কারণে সুমাইয়ার সংসার ভাঙার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। অসুস্থ এই কিশোরীর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।