সিরাজগঞ্জ–বগুড়া মহাসড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী-সৃষ্টি হচ্ছে যানজট

Spread the love

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সড়কের ওপর ফেলা রাখা হয়েছে রড। সরু সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। গত রোববার সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় সরজমিনে গিয়ে দেখা প্রতিবেদন। সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কে চলছে চার লেনে উন্নীত করার কাজ। এই কাজের জন্য মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সড়ক সরু গেছে। ওই স্থানে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন, বাড়ছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।

সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক প্রকল্প-২) মাধ্যমে এই কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সাসেক প্রকল্প-২ সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পে আওতায় সিরাজগঞ্জের ৩৬ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। চার লেনের পাশাপাশি মহাসড়কের দুই পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য মূল সড়ক থেকে সামান্য নিচুতে ০৩ দশমিক ৭ মিটার সংরক্ষিত লেনও থাকছে। এ প্রকল্পে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম প্রান্ত থেকে হাটিকুমরুল মোড় পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার চার লেন হচ্ছে। মহাসড়কের এ অংশে থাকছে ২৪টি সেতু ও কালভার্ট, কড্ডা এলাকায় একটি ফ্লাইওভার, ১২টি বাস-বেসহ পাঁচটি আন্ডারপাস। বাস্তবায়নের কাজ পেয়েছে যৌথ নির্মাণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনের হিগো ও বাংলাদেশের মীর আকতার হোসেন লিমিটেড।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় থেকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার চার লেন প্রকল্পের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেড। এর আওতায় ১টি পদচারী সেতু (ফুটঅভার ব্রিজ), ৩৭টি সেতু ও কালভার্ট, ৪টি বাস-বে এবং ৬টি আন্ডারপাস নির্মাণ হচ্ছে । এছাড়া সি আর বিজি নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান হাটিকুমরুল এলাকায় এই প্রকল্পে ইন্টার এক্সচেঞ্জ নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

শুরুতে এই প্রকল্পের বিভিন্ন অংশবিশেষ গত বছর ২ মার্চের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। চলতি বছরের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। ওই সময়েও কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না বলে সময় চেয়ে আবার আবেদন জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা যায়, নির্মাণকাজ চলমান থাকায় বর্তমানে সিরাজগঞ্জের এই মহাসড়কে উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচলিয়া বাজার হতে রায়গঞ্জ উপজেলার চান্দাইকোনা বাজার পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে ১৯-২২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। মহাসড়কটিতে গত ঈদুল ফিতরের সময় এক দিনে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ও ঈদুল আজহার সময় ৬২ হাজার যানবাহন চলাচল করেছে। গত আগস্টে এই মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে। চলতি সেপ্টেম্বরে এ পর্যন্ত (গত সোমবার) চারটি দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত মহাসড়কের পাঁচলিয়া থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, অপরিকল্পিত, অসাবধানতায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এই মহাসড়কের নির্মাণকাজ। চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় মহাসড়ককে সংকুচিত করে সড়কের ওপরেই ফেলে রাখা হয়েছে লোহার রড, মাটির স্তূপ, ইট ও পাথর। এর অদূরেই ষোলমাইল এলাকায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে ইট, পাথর, মাটি ও ইটের খোয়া। নিরাপত্তাপ্রাচীর ছাড়াই এলোমেলো পড়ে রয়েছে নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি।

চান্দাইকোনা বাজার এলাকায় পত্রিকা বিক্রেতা বিজয় চক্রবর্তী চলনবিল বার্তা কে বলেন, কোথাও নেই কোনো নিরাপত্তাপ্রাচীর। যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে এসব নির্মাণসামগ্রী। ষোলমাইল এলাকায় কথা হয় চান্দাইকোনা ইউপি সদস্য হায়দার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই মহাসড়ক আমাদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা। আমি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিত্সাধীন রয়েছি।’

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবির চলনবিল বার্তা কে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার নির্মাণকাজ বাস্তবায়নকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কিছু ছোট ঠিকাদারকে এই কাজ দিয়েছে। সাব ঠিকাদার স্থানীয় প্রভাব দেখিয়ে এমনটি করে যাচ্ছেন। অচিরেই এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল মোনেম লিমিটেডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আবদুল্লা আল ফারুক চলনবিল বার্তা কে বলেন, ‘নির্মাণসামগ্রী একটু অগোছালো আছে। কর্ম এলাকায় নিরাপত্তার জন্য একটি ব্যারিকেড থাকা প্রয়োজন ছিল। এখন থেকে বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখব।’ সাসেক প্রকল্প-২–এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাহবুবুল আলম বলেন, মহাসড়কের ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার বিষয়টি তাঁদের নজরে আসেনি। সরেজমিনে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD