-একজন মানুষ বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়লে যতেœ রাখার কথা যাদের, হয়ত তারাই রাতের আঁধারে রাস্তায় ফেলে গেছেন বৃদ্ধাকে
-কিছু জানতে চাইলে হু হু করে কেঁদে ওঠেন। আর ক্ষুধার জ্বালায় হাত পেতে খাবার চান
– রাস্তার পাশে আম গাছের নিচে চটের বস্তার ওপর বসিয়ে রেখে যায় বৃদ্ধাকে। ধারনা করা হয়, তার নিজ সন্তান অথবা নিকট আত্মীয়েরাই তাকে অসুস্থ অবস্থায় মাজারে ফেলে গেছেন
– ছুফিয়া খাতুন নামে এক নারী বেশী দেখভাল করেন। মাঝে মধ্যে গোসলও করিয়ে দেন
-কেউ নিজের মা-বাবাকে বাড়তি মনে করে রাস্তায় ফেলে যায়। আবার কেউ না পেয়ে আপসোস করে
– বছর চলে যায়, সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগও ফেলে যাওয়া বৃদ্ধার শরীরের ওপর দিয়েই বয়ে যায়
-বৃদ্ধার পেট একদম পিঠের সাথে লেগে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন পেট ভরে খেতে পায়নি।
-কঙ্কালসার দেহ নিয়ে মানুষটি শুয়ে আছেন। প্রখর রোদে তার শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে।
-সাধারণত যাদের পূনর্বাসন করে থাকেন, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। যা এই বৃদ্ধার নেই
-বৃদ্ধার জন্য আরও কী করা যায় ভেবে দেখবেন
গোলাম মোস্তফা, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ):
হাড়কাঁপানো শীতের কষ্ট, প্রখর রোদের তাপ কিংবা ঝড়-বৃষ্টি যাই হোক সয়ে যেতে হয় নিরবে। কারণ একজন মানুষ বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়লে যতেœ রাখার কথা যাদের, হয়ত স্বজনরাই রাতের আঁধারে রাস্তায় ফেলে গেছেন বৃদ্ধাকে। তারপর থেকে একটি খোলা জায়গাতে পড়ে রয়েছেন তিনি।
তার পরিচয় কেউ জানেনা। কারণ সে কথা বলতে পারেন না। তিনি মুসলীম না হিন্দু, নাকি অন্য কোনো ধর্মের অনুসারী তাও কেউ বলতে পারেনা। কিছু জানতে চাইলে হু হু করে কেঁদে ওঠেন। আর ক্ষুধার জ্বালায় হাত পেতে খাবার চান।
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের নওগাঁ শাহ শরীফ জিন্দানী (রহঃ) এর মাজার শরীফ এলাকাতে দীর্ঘ প্রায় তিন বছর ধরে রয়েছেন নাম পরিচয়হীন এই বৃদ্ধা। স্থানীয়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বৃদ্ধার আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এতদিনেও স্বজনদের দেখা মেলেনি।
নওগাঁ মাজার এলাকার বাসিন্দা শহীদুল ইসলাম নামের একজন মুদি দোকানী বলেন, প্রায় তিন বছর আগের কোনো এক রাতে নওগাঁ মাজারের গেটের সামনের রাস্তার পাশে আম গাছের নিচে চটের বস্তার ওপর বসিয়ে রেখে যায় বৃদ্ধাকে। ধারনা করা হয়, তার নিজ সন্তান অথবা নিকট আত্মীয়েরাই তাকে অসুস্থ অবস্থায় মাজারে ফেলে গেছেন। তিনি নিজেও বৃদ্ধার ছবি ও ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে দিয়ে বৃদ্ধার আত্মীয়দের খোঁজাখুঁজি করেছেন।
নওগাঁ মাজারের মুহতামিম (পরিচালক) আব্দুল হাই সরকার বলেন, রাস্তা থেকে উঠে এসে বেশ কিছুদিন মাজার চত্বরের গাছ তলায় ও মাদ্রাসার বারান্দায় থেকেছেন বৃদ্ধা। পরে মাজারের ভেতরের রাস্তার পাশে কয়েকটি পুরানো টিন দিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গা করে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অসহায় বৃদ্ধাকে বেশী দেখভাল করেন নওগাঁ গ্রামের হামিদের স্ত্রী ছুফিয়া খাতুন। তাদের ভাতের হোটেল রয়েছে। হোটেল থেকে ভাত এনে খাওয়ায়। মাঝে মধ্যে গোসলও করিয়ে দেন।
ছুফিয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলে মেয়ে নেই। আত্মীয় স্বজনও নেই বললেই চলে। কেউ নিজের মা-বাবাকে বাড়তি মনে করে রাস্তায় ফেলে যায়। আবার কেউ না পেয়ে আপসোস করে। বছর চলে যায়, সব রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগও ফেলে যাওয়া বৃদ্ধার শরীরের ওপর দিয়েই বয়ে যায়।
গতকাল শনিবার দুপুরে দেখা যায়, মাজার এলাকার যে জায়গাতে বৃদ্ধাকে রাখা হয়েছে, কোনো বেড়া নাই। লোকজন কাপড় টাঙিয়ে দিয়ে একটু আড়াল করে রাখার চেষ্টা করেছেন মাত্র। বৃদ্ধার পেট একদম পিঠের সাথে লেগে গেছে। মনে হচ্ছে অনেক দিন পেট ভরে খেতে পায়নি। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে মানুষটি শুয়ে আছেন। প্রখর রোদে তার শরীর যেন পুড়ে যাচ্ছে।
এদিকে ঢাকা গাজিপুরের বয়স্ক পূনর্বাসন কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হলে ঐ প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কারী রবিউল ইসলাম বলেন, তারা সাধারণত যাদের পূনর্বাসন করে থাকেন, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হয়। যা এই বৃদ্ধার নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, মাজারের মুহতামিমের সঙ্গে কথা বলে আপাতত বৃদ্ধার থাকার জায়গাটা নিরাপদ করা হবে। বৃদ্ধার জন্য আরও কী করা যায় ভেবে দেখবেন। #