একুশ আমাদের গর্ব তবুও আঁতুর ঘরেই অবহেলিত বাংলা ভাষা

Spread the love

সাব্বির আহম্মেদ
একুশ আমাদের গর্ব।একুশ আমাদের অহংকার। একুশ বাঙ্গালীর জাতীয়তাবাদ উন্মেষের মূল হাতিয়ার। বাংলা মায়ের মধুর কন্ঠ। বাঙ্গালী জাতির অকৃতিম ভালবাসা। কিন্তু বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের বাংলা ভাষা ব্যবহারে অনিহা, ইংরেজী ভাষার উপর গুরুত্ত্বের আধিক্য, অফিস আদালতে ও উচ্চ বিশেষায়িত শিক্ষায় ভাষা হিসেবে বাংলা ব্যবহারে কার্পন্য, সাইনবোর্ড, ব্যানার, ফেসটুনে বাংলার চেয়ে ইংরেজীর অধিক গুরত্ব মুলত বাংলা ভাষার প্রতি বাঙ্গালীদের আঁতুর ঘরেই অবহেলার প্রমাণ করে। যা বাংলার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা পূর্ণ বাঙ্গালী হৃদয়ে রক্ত ঝড়ায়। ডুকরে কেঁদে ওঠে ওই বাঙ্গালী হৃদয়।
একুশ একটি রক্তমাখা দিন। আজ থেকে ৭০ বছর আগে ফেব্রুয়ারী মাসের এই দিনটিই আজ গর্বের। ভাষা,নৃতত্ত্ব, ইতিহাস ভৌগলিক অবস্থান খাদ্যা অভ্যাস সব ছিল পৃথক। শুধু ধর্মের মিলের ভিত্তিতে এক হয় দুই পাকিস্থান। পাকিস্থানী শাসন মানেই নির্যাতন,শোষন,বৈষম্যের ইতিহাস। ওরা তা শুরু করে আমাদের ভাষা তথা সংস্কৃতির উপর আক্রমনের মধ্য দিয়ে। ৫৬.৪০ শতাংশ মানুষের ভাষা বাংলার পরিবর্তে ৩.২৭ শতাংশ মানুষের ভাষা উর্দুকে বাঙ্গালীর উপর চাপিয়ে দিতে বদ্ধ পরিকর ছিল তারা।
১৯৪৮ সালে পাকিস্থান গণ পরিষদের প্রথম অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রস্তাব করেন যে, উর্দুর পাশপাশি বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করা হোক। পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের বিরোধিতায় সে প্রস্তাব বাতিল হয। ফলে ২ মার্চ ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।
১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকা রেসক্রস ময়দানে এক জনসভায় পাকিস্তানের গভর্ণর মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ ঘোষনা করেন যে উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। ছাত্ররা তার সামনেই না’ না বলে প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জিন্নাহ একই কথার পুনরাবৃত্তি করলে ছাত্রদের না-না ধ্বনিতে গোটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রকম্পিত হয়।
আন্দোলনের মুখে মূখ্যমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন বাংলাকে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্র ভাষা করা হবে এবং তিনি কেন্দ্রের কাছে সুপারিশ করবেন বলে আশস্ত করেন। কিন্তু ১৯৫২ সালে সেই খাজা নাজিম উদ্দিন পাকিস্তনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় এসে জিন্নাহর মতই ঘোষনা দেন ।
১৯৫২ সালের ৩০ ও ৩১ জানুয়ারী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রাস্তায় নেমে পরেন এবং রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই ধ্বনীতে সারা দেশ মুখরিত করে তোলেন । ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রয়ারী পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন ১৪৪ ধারা জারি করেন ।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল নিয়ে বের হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সামনে পৌঁছিলে শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায় । পুলিশের গুলিতে নিহত হন বরকত . সালাম, রফিক সহ নাম না জানা অনেকে । ১৯৫২সালের ২৩ ফেব্রুয়ারীতে প্রথম শহীদ মিনার নির্মান করা হয়। চলে আন্দোলন।
১৯৫৪ সালের ৭মে উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবী মেনে নেয়া হয়। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সংবিধানে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর এক সাধারণ অধিবেশনে ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
একুশ আমাদের গর্ব এটির আরও পূর্ণতা মেলে। তবে ৭০ বছর পরেও আঁতুর ঘরে কেন এই অবহেলা। কেননা এখনও শিক্ষা ও সমাজের সর্বস্তরে নিরংকুশভাবে বাংলা ভাষার প্রচলন ঘটেনি যা ব্যথিত করে বাঙ্গালী হৃদয়কে। আজ একুশের এই দিন থেকে মায়ের ভাষার মমত্ব জাগ্রত হোক প্রতিটি বাঙ্গালী হৃদয়ে। আঁতুর ঘরে পূর্ণতা পাক আজকের এই দিনটি।

লেখক ঃ প্রভাষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট। মোবাইল ঃ ০১৭১৭০১৬৫৯২

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD