আজ তাড়াশ হানাদার মুক্ত দিবস

Spread the love

চলনবিল প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ হানাদার মুক্ত দিবস আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে তাড়াশ থানা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়েছিল। দিবসটি উপলক্ষে তাড়াশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জাতীয় ও সংগ্ঠনের পতাকা উত্তোলন ও বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ।
বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে তৎকালীন ছাত্রনেতা (পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ সদস্য) ম.ম.আমজাদ হোসেন মিলনের নেতৃত্বে মো: হোসেন মনসুর , মো:আতাউর রহমান, ব্যাটেলিয়ান কমান্ডার মো: আব্দুর রহমান, এম, মোবারক হোসেন মিয়া, আরশেদ আলী, সাইদুর রহমান সাজু এলাকার মুক্তিকামী ছাত্র সমাজ ও তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে আংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে থাকেন।
২৭ এপ্রিল তাড়াশ থানা দখল করে নেয় পাক হানাদার বাহিনী। তারা নির্বিচারে গণ হত্যা ও লুট করতে থকেন। এ দিন শহীদ প্রতুল গোস্বামী ওরফে হীরালাল গোস্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তিন পাক সেনা কে হত্যা করেন। এ ঘটনায় তাড়াশ থানার অসংখ্য ঘরবাড়ি আগুণ দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাস্তচ্যূত হয়ে অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে তাড়াশের মুক্তিযোদ্ধারা আব্দুল লতিফ মির্জা পরিচালিত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম গেরিলা বাহিনী পলাশডাঙা যুবশিবিরে যোগদেন।
১৯৭১ সালের ৬ই জুন সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ উপজেলার মধ্যভদ্রঘাট গ্রামে বিশিষ্ট সমাজসেবক ও শিক্ষাবিদ হারান মাষ্টারের বাড়িতে গড়ে ওঠে “পলাশডাঙ্গা যুব শিবির”। স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ, বিদ্রোহী সেনা, ইপিআর, আনসার, ছাত্র, সাধারণ জনতা এই শিবিরের সদস্য। পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের অপারেশন এলাকা ছিল সিরাজগঞ্জ জেলার দক্ষিণাংশ, পাবনার ফরিদপুর, সাঁথিয়া, চাটমোহর, বগুড়ার শেরপুরসহ নাটোরের গুরুদাসপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। এ গেরিলা বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সাফল্য হল নওগাঁ যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর তাড়াশ থানার নওগাঁ হাটে সংঘটিত হয় এ যুদ্ধ। এটি উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় গেরিলা যুদ্ধ এবং পলাশডাঙ্গা যুবশিবিরের সবচেয়ে বড় সাফল্য। এই যুদ্ধ হয়রত শাহ শরীফ জিন্দানী( রহ:) এর মাজার নওগাঁ এলাকায় সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর হাতে ১৩০ জন পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয় এবং ১জন পাক বাহিনীর ক্যাপ্টেন সেলিম সহ ৯ পাকসেনা জীবিত ধৃত হয়। এ যুদ্ধে কোন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়নি।
এ যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে ১৩ নভেম্বর পাকবাহিনী তাড়াশ থানার আমবাড়িয়ায় গণহত্যা চালায়। শিক্ষক-সাংবাদিক ইয়ার মোহাম্মদ সহ শহীদ হোন ১৪ জন নিরীহ বাঙালি।
এ পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী তাড়াশ কে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। পাকহানাদার বাহিনী পিছু হটতে থাকে। ১৩ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা তাড়াশ থানা চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে তাড়াশ থানাকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD