খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু অতঃপর আমাদের জাতির পিতা

Spread the love

মো. আবুল কালাম আজাদ।।

বিশে^ কোভিড-১৯ অতিমারি করোনা মহামারীর আতঙ্ককে জয় করে সীমিত আকারে হলেও ঘরোয়া ভাবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে উৎসবমূখর পরিবেশে পালিত হচ্ছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।১৭ মার্চ ২০২০ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষীকী উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের মাধমে উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ ই ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বছরব্যাপী জাঁকজমকপুর্ন ভাবে উদযাপন করা হচ্ছে ‘মুজিব জন্মশতবর্ষ’। এই একবছরই ‘মুজিববর্ষ’ নামে ইতিহাসের পাতায় শেখ মুজিবকে নিয়ে রচিত হচ্ছে আরো একটি ইতিহাস। মুজিববর্ষকে ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় করে ধরে রাখতে বৈশি^ক মহামারী করোনাকে জয় করে দেশে বিদেশে দলীয় ও সরকারি-বেসরকারি ভাবে নানা আয়োজনে ব্যাপক কর্মসুচি সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে হলেও পালিত হচ্ছে।২০২১ সালের ২৬ শে মার্চ পর্যন্ত সারা বছরই পালন করার কথা থাকলেও প্রাণঘাতি কভিড-১৯ বৈশি^ক মহামারীর ২য় প্রবাহের আতঙ্কের কারণে ৯ মাস পিছিয়ে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পর্যন্ত বাঙালী জাতির প্রাণপ্রিয় নেতা, বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর নানা কর্মসুচি পালিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে মুজিববর্ষ উদযাপন কমিটি।

পাক হানাদারদের পরাজিত করে দেশ স্বাধীনের পর পাকিস্তনের কারাগারের মৃত্যুকুপ থেকে মুক্তি পেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তনের দিন ১০ জানুয়ারি/২০ থোকে শতবর্ষ জন্মদিন ১৭ মার্চ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষন গননা শুরু হয়েছিল।শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়। শেখ মুজিব একটি দেশ, একটি জাতির মুক্তির সনদ,বাংলাদেশ নামের একটি মানচিত্র আর লাল-সবুজের পতাকার স্থপতি। তিনি শুধু একটি জাতির নেতা নয়, শেখ মুজিব এখন বিশ^নেতা। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি। শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নয় ,তিনি বিশ^বন্ধু হিসেবে নন্দিত। তিনি নিজেই একটি ইতিহাস। তাই বাংলাদেশকে জানতে হলে আগে শেখ মুজিবকে জানতে হবে। কেননা বাঙালীর স্বাধীনতার সংগ্রাম আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক এবং অভিন্ন সুত্রে বাঁধা পড়ে আছেন।আজ থেকে এক শতাব্দী পুর্বে ১৯২০ সালের ১৭ ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপলগঞ্জ মহকুমার মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ বংশে জন্মগ্রহন করেন আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ,মাতা সায়েরা খাতুন। দাদার নাম শেখ আব্দুল হামিদ এবং নানার নাম শেখ আব্দুল মজিদ। শেখ মুজিবের ডাক নাম ছিল ‘খোকা’। বঙ্গবন্ধুর ১৩ বছর বয়সে ৩ বছর বয়সের শেখ ফজিলাতুন নেছা (রেনু) এর সাথে বিয়ে হয়। শেখ ফজিলাতুন নেছার মাত্র ৫ বছর বয়সে মা এবং ৭ বছর বয়সে দাদা মারা যান। শেখ মুজিব ছিলেন বংশের বড় ছেলে।( অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃঃ ৭)

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্ম নেয়া খোকার বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পিছনে রয়েছে অদম্য ত্যাগ, অকুতভয় নেতৃত্ব আর গভীর দেশপ্রেম। পিছিয়ে পড়া নির্যাতিত বাঙালি জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব নেওয়ার মত মহৎ গুন ধারন করেছিলেন শৈশব থেকেই।১৯৩৬ সালে শেখ মুজিব সপ্তম শ্রেনিতে অধ্যয়নকালে ইংরেজের নির্যাতন-জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন চলছিল। সেদিনের খোকা শেখমুজিব নেতাজি সুভাষ বোসের আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ভাবেন-‘ ইংরেজদের এদেশে থাকার অধিকার নাই’ । স্বাধীনতা আনার শপথ নেন। সেই থেকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠেন। স্বদেশীদের সাথে বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দেন।১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় গৃহশিক্ষক কাজী আব্দুল হামিদের সাথে গোপালগঞ্জে একটা‘ মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করে মুষ্টির চাল উঠিয়ে গরিব ছাত্রদের বই,খাতা, পরিক্ষার ফি এবং অন্যান্য খরচ দিতেন। এমনকি ঘুরে ঘুরে জায়গিরও ঠিক করে দিতেন। সর্বপরি আর্ত-মানবতার সেবায় নিয়জিত করেছিলেন তিনি। সেদিনের ছোট্র খোকা বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন অনেক চড়াই- উতড়াই পেরিয়ে।

১৯৩৮ সালে প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপলগঞ্জে এলে শেখ মুজিব তাঁদের দৃষ্টি কাড়েন । সেদিন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে আদর করে কাছে ডেকে নিয়ে পরিচয় জেনে গোপালগঞ্জে মুসলিম লীগ ও ছাত্রলীগ গঠনের দায়িত্ব দেন। সেই থেকে বঙ্গবন্ধু এবংহোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে চিঠি লেনদেন চলতে থাকে।সেই থেকে শিশু শেখ মুজিব হয়ে ওঠেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অন্যতম সাগরেদ।এপ্রিল মাসে গোপালগঞ্জে হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে একটি মারামারিকে কেন্দ্র করে মিথ্যা মামলায় বঙ্গবন্ধু প্রথম গ্রেপ্তার হন। তিনি ছিলেন নির্ভীক ও সাহসী। গ্রেপ্তার এড়াতে সবাই পালিয়ে যেতে বললেও তিনি ভয়ে পালিয়ে যান নাই।

১৯৩৯ সালে কলকাতায় গিয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং ছাত্রনেতা আব্দুল ওয়াসেক সাহেবের সাথে দেখা করে ফিরে এসে ছাত্রলীগ এবং মুসলিম লীগ গঠন করেন। তিনি নিজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং মুসলিম লীগেরও ডিফেন্স কমিটির সেক্রেটারী হন। সেই থেকে শুরু হলো শেখ মুজিবের রাজনীতি।শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতিক জীবন ১৯৩৯ সাল থেকে শুরু হলেও ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজন- পরবর্তী পুর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে তিনি একজন প্রখ্যাত তরুন ছাত্রতো হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। স্বাধীনতার জন্য তিনি বাংলার এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন।প্রতিটি বাঙালীর কাছে পৌছে দিয়েছেন পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার মর্মবানী।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,১৯৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন,১৯৬৬ সালের ৬ দফ, ১৯৬৯ সালর দফা,১১ দফার দাবীতে গন অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি অধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমান। শত জেল-জুলুম অত্যাচারের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রস্তুত করে নেন। তাই বঙ্গবন্ধু বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা পেশ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ পিন্ডিতে সর্বদলীয় বৈঠকে বঙ্গবন্ধু ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধানের প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন।আগরতলা ষঢ়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরদিন ১৯৬৯ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় তৎকালীন ছাত্র নেতা তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবুর রহমানকে “ বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাঙ্গালী জাতির বন্ধু নয়, তিনি বিশ^-বরেন্য রাজনীতিক ‘বিশ^বন্ধু’ উপাধিতে বিশ^নন্দিত।

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল- এই ২৪ বছরে পাকিস্তান অধিকৃত বাংলার রাজনীতি ও সাহিত্য- শিল্প- দর্শন-সংস্কৃতি প্রতিবাদ- প্রতিরোধ এবং সংরক্ষনের কারনে স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বে বিকশিত ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব হলো তিনি শুধু বাঙলাদেশ নামক রাষ্ট্রের একজন স্বপ্নদ্রষ্টাই ছিলেননা, তিনি বাঙালী জাতিকে অনন্য সাধারন ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে হাজার বছরের বাঙালী জাতির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে( বতমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান বজ্রকন্ঠে বাঙালী জাতির মুক্তি এবং স্বাধীনতার ডাক দিয়ে জনগনকে সর্বাত্বক পাকিস্তানী সেনা শাাসকের নির্যাতন, জেল-জুলুমের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করেন। ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চে এক মহাকাব্যিক ভাষনে স্বাধীনতার আকাঙ্খার পাশাপাশি এক অকৃত্রিম দরদ ফুটে উঠেছিল গরিব মেহনতি মানুষের প্রতি। বঙ্গবন্ধুর আগে ও পরে এ যাবৎ বহু খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ এসেছেন কিন্তু এমন করে কেউ বাঙালীকে জাগাতে পারেননি। বঙ্গবন্ধু তাঁর নেতৃত্বের সম্মোহনী শক্তির এক যাদুকরী স্পর্শে ঘুমন্ত ও পদানত বাঙ্গালী জাতিকে জাগিয়ে তুলে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্দিপ্ত করেছিলেন। বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে পরাধীনতার গ্লানি থেকে জাতিকে মুক্ত করে তিনি এনে দিয়েছেন রক্তিম লাল-সবুজের পতাকা খচিত স্বাধীন সার্বভৌম এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ছিল তাঁর অকৃত্রিম ভালোবাসা।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংরাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়াদিয়ে দেশ থেকে পাকিস্তানী হানাদারমুক্ত করতে বীর বাঙালী শসস্ত্র পাক-সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।১৯৭২ সালের এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রষ্ট বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনার শক্তি কোথায়? তিনি অকপটে সে প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘ আমি আমার জনগনকে ভালোবাসি,। সাংবাদিক আবারো প্রশ্ন করলেন, আপনার দুর্বল দিকটা কী? বঙ্গবন্ধু সে প্রশ্নের উত্তরেও বলেছিলেন, ‘ আমি আমার জনগনকে খুব বেশী ভালোবাসি’। তাই তিনি কখনই মনে করেননি যে, এ বাঙালীই একদিন তাঁকে হত্যা করবে। তিনি চেয়েছিলেন তার এ বাংলাদেশকে সোনার বাংলা হিসেবে বিশ^ মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত করবেন। কিন্ত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টে সেই বাঙালী ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাত তার স্বপ্নকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল।১৯৭১ সালের ২৩ শে মার্চ ৩২ নম্বর ধানমন্ডি নিজ বাসভবনের সামনে এক বিরাট জনসমাবেশে বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বললেন,“ আমরা তা বরদাশত করবোনা। আমাদের দাবী অত্যন্ত স্পষ্ট, ন্যায়সংগত এবং ওদের তা মেনে নিতে হবে। কোন রকম ‘ রক্তচক্ষু ’ দেখিয়ে লাভ নেই। আমাদের দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।আমরা কোন শক্তির কাছে মাথা নত করবোনা। আমরা বাংলাদেশের জনগনকে মুক্ত করবই। সাত কোটি বাঙালী আর দাস হয়ে থাকবেনা”। বাস্তব ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর একথা প্রমানিত হয়েছে-বাঙালী অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। পাক-বহিনীর নির্মম গনহত্যা ও অস্ত্রের ভাষার জবাব অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও পারদর্শিতা দেখিয়েছে।

১৯৭৫ পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে স্বৈরশাসক ও স্বাধীনতা বিরোধীদের দ্বারা এ দেশ শাসিত হওয়ায় সেই সময়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি তো দুরের কথা, তারা সমগ্র বাংলাদেশকে ভয়াবহ সঙ্কট ও ঝুঁকির মধ্যে নিমজ্জিত করে রেখেছিল। ফলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানের স্বপ্ন বিঘিœত হয়েছে বারবার। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তেই তার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের হাল ধরেছেন শক্ত হাতে।অনেক বাধাবিপত্তি ও চড়াই উতরাই পেরিয়ে গত ১২ বছরের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতিই বঙ্গবন্ধুর সোনার বঙলাদেশ বিনির্মানের পথে অন্যতম মাইলফলক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সমুন্নত রেখে বর্তমান সরকার দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখ চলেছে। বাংলাদেশ দারিদ্রের কঠিন স্তর পাড়ি দিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবমান।তলাবিহীন ঝুড়ির বদনাম ঘুচিয়ে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশী দেশের মর্যাদা লাভ করে বিশ^কে তাক লাগিয়ে মাথা উঁচু করে নেতৃত্বের আসনে আসীন। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের ব্যপারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমানে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয় ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সূচকে অভূতপুর্ব অগ্রগতি করেছে। দারিদ্রের হার কমেছে ,মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। খাদ্য উৎপাদনেও বাংলাদেশ এখন স্বাবলম্বী । ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপন এ সময়ের বড় সাফল্য।বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপনেরও প্রস্তুতি চলছে। বিশে^ আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত।

বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ হলো মেগা প্রকল্প। এ মেগা প্রকল্পগুলো হলো-পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ,বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর উদ্বোধন, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান, ঢাকার মেট্রোরেল, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মান, কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মান এবং মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প। এই সব মেগা প্রকল্পের বাইরেও ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০ টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ( ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহন এবং ডেল্টা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন। কাঙ্খিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দেশের সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে আর্থিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতেই শেখ হাসনার সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসেবে বিশ^ দরবারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। বেকারত্ব, ক্ষুধা, ও দারিদ্র সম্পুর্নরূপে দুরীভূ ত হবে এতে কোন সন্দেহ নাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন ও সাফল্য অনেক। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।সেই সোনার বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবর্ষ পুর্ন হয়েছে ১৭ মার্চ ২০২০ সাল। তাই বাংলাদেশ সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষনার পর থেকে দেশ –বিদেশের মাটিতে যথাযোগ মর্যাদার সাথে পালন করছে । ২০২০সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়ের বাউসার বছরব্যাপী মুজিববর্ষ ঘোষনা করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন , ‘এই সস্বাধীন দেশে মানুষ যখন পেট ভরে খেতে পাবে, পাবে মর্যাদাপুর্ন জীবন ; তখনই শুধু এই লাখো শহীদের আত্মা তৃপ্তি পাবে’। ফলে আজ বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ ও মুজিববর্ষ তথা সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিতে মুল্যায়ন করার সময় এসছে।হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘ ২০২০-২০২১ মুজিব বর্ষ ’ পালনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি গড়তে যাচ্ছে আরো একটি ইতিহাস।

#মো. আবুল কালাম আজাদ # সভাপতি, চলনবিল প্রেসক্লাব, গুরুদাসপুর, নাটোর# মোবা. ০১৭২৪ ০৮৪৯৭৩ # ২/১২/২১ #

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD