চাটমোহরে নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর

Spread the love

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি :
পাবনার চাটমোহরে ৩টি ইউনিয়নে আলাদা নির্বাচনী সহিংসতায় স্বতন্ত্র এক চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। নৌকার অফিস ভাঙচুরসহ আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। এসময়ে একাধিক মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে।এঘটনায় থানায় পৃথক ২টি মামলা হয়েছে। পুলিশ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে। উপজেলার গুনাইগাছা, হরিপুর ও পার্শ্বডাঙ্গা ইউনিয়নে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নৌকার প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা, মারপিট ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ৪ জনকে আটক ও ২টি মোটরসাইকেল জব্দ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গুনাইগাছা ইউনিয়নে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রজব আলী বাবলুর নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেওয়া ছাড়াও দোকানপাটে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলামের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র (আনারস) চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ অন্যরা গ্রামের মধ্যে ও স্থানীয় বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন।এ সময় ১৫/২০টি মোটরসাইকেল যোগে হেলমেট পরিহিত যুবকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা চেয়ারম্যান প্রার্থী রজব আলী বাবলুকে মারধর করে এবং জীবননগর ও চরপাড়া বাজারে আনারস প্রার্থীর সমর্থকদের দোকান ভাঙচুর ও মারপিট করে।এ সময় লোকজন বেরিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। চরপাড়ায় রায়হান ও সোলেমানের দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থী রজব আলী বাবলুসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে ২টি মোটরসাইকেল। গ্রেফতারকৃতরা হলেন নৌকার সমর্থক চরপাড়া গ্রামের ফয়েজ সরকারের ছেলে আমির হামজা (৩৬), নতুনপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমানের ছেলে ইমরান হোসেন (২০) ও নাটোরের বড়াইগ্রামের দুলাল মন্ডলের ছেলে জুয়েল মন্ডল (২২)।
আহতরা হলেন, বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী রজব আলী বাবলু (৫৫), চরপাড়া গ্রামের রায়হান আলী (৩০), জালেশ্বর গ্রামের বাবু হোসেন (৩০), চরপাড়া গ্রামের মনসুর আলী (৩৫), সাইফুল ইসলাম (২০), আলাল হোসেন (৪৫), আক্কাস বিশ্বাস (৫৫), বড়শালিখা গ্রামের রজব আলী (৫৮) ও গুনাইগাছা গ্রামের ইসরাইল হোসেন (৫৬)।রজব আলী বাবলু অভিযোগ করে বলেন, ভোট চাইতে গেলে নৌকার লোকজন আমার উপর হামলা চালায়। তারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশে হামলা করে। এ সময় আমার অনেক সমর্থক আহত হয়। চরপাড়ায় আমার সমর্থকদের দোকানপাট ভাঙচুর করেছে। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আশঙ্কায় হামলা ও ভাঙচুরের পথ বেছে নিয়েছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি শঙ্কার মধ্যে আছি।তবে নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমার লোকজন হামলা করেনি। অন্য কেউ হয়তো বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজনের উপর হামলা করেছে। তিনি উল্টো দাবি করেন, নৌকার কর্মীদের মারপিট করা হয়েছে। রামচন্দ্রপুর নৌকাসহ অফিস ভাংচুর করে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে। এদিকে একইদিন রাত ৮টার দিকে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ও চড়ইকোল বাজারে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা, মারপিট ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে।
ছুরিকাঘাতে ৩ জনসহ উভয় পক্ষের অন্তঃত ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় স্বতন্ত্র প্রার্থীর ২টি নির্বাচনী অফিস ও ৫টি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়েছে।

নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন দাবি করেন,তার কর্মীরা ভোট চাইতে বের হলে হরিপুর বাজারে আনারসের অফিস থেকে হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীদের ছুরিকাঘাতে ৩ জন আহত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের হাতে নানা রকম ধারালো অস্ত্র ছিল। নৌকার আহত কর্মীদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।তবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক আফজাল হোসেন বলেন, নৌকার কর্মী-সমর্থকরা পরিকল্পিতভাবে আমার ২টি নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। ৫টি মোটর সাইকেল ভাঙচুর করা হয়েছে। নৌকার লোকজনের হামলায় আমার ৩/৪ জন কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে নিতে পারছি না। তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আশঙ্কায় হামলা ও ভাঙচুরের পথ বেছে নিয়েছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (চাটমোহর সার্কেল) সজীব শাহরিন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, হামলা ও মারপিটের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ ঘটনায় কয়েকজনকে হাসপাতালে ভতি করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ রয়েছে। পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে।
২টি ইউনিয়নের ঘটনায় ২টি মামলা হয়েছে। অপর ২জন অভিযোগ দাখিল করেছেন। ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। ২টি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৮ নভেম্বর চাটমোহর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD