চলনবিলের প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম রুহুল আমিনের সাথে আমাদের ক’জনের পথ চলা

Spread the love

১৫ নভেম্বর সাংবাদিক রুহুল আমীনের ৫ম মৃত্যু দিবস স্মরণে প্রকাশিত হল

সৈয়দ সাইদুর রহমান সাঈদ
ভূমিকা: চলনবিল এলাকার প্রখ্যাত সাংবাদিক মরহুম মাও: রুহুল আমিন ছিলেন মুফাচ্ছিরে কুরআন, কাজি, শিক্ষক,সাংবাদিক ও কবি। তিনি ছিলেন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার চলনবিল প্রতিনিধি। তার সাথে আমাদের ক’জনের চলার কথা বলার আগে বিশেষ কিছু তথ্য পরিবেশন করা অতি জরুরী বরে মনে করি। এগুলি হচ্ছে : চলনবিলাঞ্চলের সাংবাদিকতার পথিকৃত ছিলেন কোলকাতা থেকে প্রকাশিত এক সময়ের “লাঙ্গল” পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুর ইসলামের পরম বন্ধু মাওলানা এম সেরাজুল হক। মাওলানা এম সেরাজুল হক সাহেব ছিলেন ভারত উপমহাদেশের সুসাহিত্যিক মাওলানা ইসমাইল হোসেন সিরাজী সাহেবের আধ্যাত্মিক শিষ্য।
মাওলানা এম সেরাজুল হক সাহেবের মানসপুত্রছিলেন বিশিষ্ট সমাজসেবক, সুসাহিত্যিক ,ঐতিহাসিক ,সাংবাদিক ও চৌকষ জ্ঞানের অধিকারী অধ্যক্ষ এম এ হামিদ। হক সাহেবের আধ্যাত্মিক শিষ্য ছিলেন চারণ কবি আব্দুর রহমান বিনোদী এবং তার ভাবশিষ্য ছিলেন মরহুম তোফায়েল উদ্দিন ছিদ্দিক এবং আমাদের প্রাণপ্রিয় সাংবাদিক মাওলানা রুহুল আমিন।
মরহুম মাওলানা রুহুল আমিনের সাথে আমার পরিচয়:
প্রখ্যাত সাংবাদিক রুহুল আমিন সাহেবের সাথে আমার সর্ব প্রথম পরিচয় ঘটে সত্তর দশকের একদম শেষের দিকে। চাঁচকৈড় শিক্ষা সংঘে অবস্থিত সে সময়ের একমাত্র প্রতিষ্ঠিত “ঢ়লনবিল প্রেসক্লাবে”। ঐ সময় আমি মরহুম মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশে সাহেবের গড়া শিকারপুর রাশিদিয়া দাখিল মাদ্রসার শিক্ষক ছিলাম। উক্ত মাদ্রাসার আর একজন শিক্ষক ছিলেন তৎকালের “দৈনিক আজাদ” পত্রিকার সংবাদদাতা মো: জাকির হোসেন সাহেব। সেই দিনের কথা । জাকির হোসেন সাহেব স্কুল ছুটির পর বললেন, তোমাদের তাড়াশের কবি ও সাংবাদিকরা আজ চলনবিল প্রেসক্লাবে আসবেন। চলো, সেখানে অনেক মজা হবে আর সময়ও কাটানো যাবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তাড়াশের কে কে আসবেন। উনি বললেন, রাজু (আব্দুর রাজ্জাক রাজু),সাজু(সাইদুর রহমান সাজু) এবং বিশিষ্ট সাংবাদিক রুহুল আমিন। রাজু এবং সাজু সাহেবকে আমি আগে থেকেই চিনতাম এবং জানতাম ; চিনতাম না মাও: রুহুল আমিন সাহেবকে।
সত্যি বলরতে কি সে সময় আমি সাংবাদিকতার জগতে পা-ই রাখিনি। তবে তখন আমি লিখতাম ছড়া’,কবিতা এবং ফিচার। ছাপা হত সিরাজগঞ্জ থেকে প্রকাশিত এ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান খাঁ সম্পাদিত মাসিক সাহিত্য পত্রিকা “যমুনা” এর তারার মেলা পাতায়। রাজশাহীর দৈনিক বার্তার “কিশোর কুড়ির” পাতায় সাপ্তাহিক রাজশাহী বার্তায়, বগুড়ার দৈনিক সাতমাথায় এবং চিটাগাং থেকে প্রকাশিত ময়ুর পঙ্খী পত্রিকায়। আবদুর রাজ্জাক রাজু সাহেব সাপ্তাহিক কাঁকনে খুব ভাল ভাল ফিচার লিখতেন এবং সংবাদ লিখতেন সাপ্তাহিক রাজশাহী বার্তায়। রাজশাহী বার্তার মফস্বল সম্পাদক ছিলেন আবুল হোসেন মালেক ভাই। রাজু সাহেবের সাথে পরিচয় ঘটেছিল মরহুম ফজলুর রহমান খাঁ সাহেবের সিরাজগঞ্জের সয়াধানগড়ার বাড়ীতে। আর সাইদুর রহমান সাজু সাহেবের সাথে পরিচয় ঘটে দৈনিক বার্তার মফস্বল সম্পাদক মাওলা ভাই এর মাধ্যমে। মাওলা ভাই আমাকে কবি সাহেব বলতেন। একদিন বললেন, তুমি কি আমাদের তাড়াশের সংবাদদাতা সাইদুর রহমান সাজুকে চেনো। আম বললাম না’তো। এরপরে আমি গ্রামের বাড়ী এসে বিনসাড়া হাটে গিয়ে সাজু সাহেবকে খুঁজে বের করলাম। ধান ভানতে শীবের গীত গাইলাম এখন মূল কথায় ফিরে আসি।
সাংবাদিক জাকির হোসেনের সাথে চলনবিল প্রেসক্লাবে ঢুকলাম। খুব মিথ্যা না হলে সেসময় চলনবিল প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন সম্ভবত অধ্যাপক আতাউর রহমান সাহেব। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা রুহুল আমিন,অধ্যাপক শামচছুর রহমান, সাইদুর রহমান সাজু, আবদুর রাজ্জাক রাজু, শহিদুল ইসলাম, জাকির হোসেন এবং নাম না জানা আরও দু একজন। সকলের সাথে সকলেই পরিচিত হলাম। ওনারা চলনবিল প্রেসক্লাব নিয়ে আলোচনায় মেতে উঠলেন। আমি সাক্ষীগোপাল হয়ে বসে বসে শুনলাম। আলোচনা শেষে যার যার মতো চলে গেলেন। আমিও ফিরে এলাম।
সাংবাদিক মাওলানা রুহুল আমিনের সাথে আমাদের পথ চলা :
তাড়াশের তিন তারার সাথে যোগাযোগ দিন দিন বেড়ে যায়। আমিও সংবাদ লিখতে শুরু করি দৈনিক দেশ পত্রিকায়। এর এক পর্যায়ে বিশিষ্ট সাংবাদিক মাওলানা রুহুল আমিনের বাজার বাড়ীর সামনে কাঁঠাল তলায় আমরা ক’জন আলোচনায় বসি। আলোচনা হয় তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠনের। এই আলোচনায় যারা ছিলেন তারা হচ্ছে: সাইদুর রহমান সাজু,আবদুর রাজ্জাক রাজু, আব্দুল কুদ্দুস রহমত এবং মাওলানা রুহুল আমিনসহ আমি। আব্দুল কুদ্দুস রহমত এবং আমি ছাড়া ওরা তিনজন চলনবিল প্রেসক্লাবের সদস্য। শেষে সিদ্ধান্ত হলো আবারও আলোচনা সভায় বসার জন্য। সিদ্ধান্ত মোতাবেক মাস তিনেক পর মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবের আহবানে সারা দিয়ে আমি অধ্যাপক শামচছুর রহমান, সাংবাদিক জাকির হোসেন তাড়াশ আগমন করি। তাড়াশ প্রেসক্লাব সংক্রান্ত প্রথম আলোচনা সভা। স্থান তাড়াশ কলেজের ক^াঁঠাল তলায়। আলোচনায় তাড়াশের সংবাদপত্রের নক্ষত্রগণ প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন না শুধু সাপ্তাহিক জীবন পত্রিকার সংবাদদাতা গাজী আব্দুর রহমান এফ এম। ঐ দিন মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবকে আহবায়ক এবং আবদুর রাজ্জাক রাজু সাহেবকে যুগ্ম আহবায়ক নির্বাচন করে তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন পূর্বক তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠন : ও তার প্রথম কার্যালয়:
তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠন হল। গঠন হল কার্যকরী কমিটি। এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন মাওলানা রুহুল আমিন এবং সাধারণ সম্পাদক হলেন আবদুর রাজ্জাক রাজু। প্রথম কার্যালয় নির্ধারণ হলো গাজী আব্দুর রহমান সাহেবের বাজারের ঘরে। তারপর থেকে অনেক চড়াই উৎড়াই পার দিয়ে তাড়াশ প্রেসক্লাবের স্থায়ী অফিস করা হয়। তাড়াশ প্রেসক্লাবের নিজস্ব জায়গা এবং অফিস নির্মাণ লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন মাওলানা রুহুল আমিন, আবদুর রাজ্জাক রাজু, সাইদুর রহমান সাজু। আমরা ছিলাম সহযোদ্ধা মাত্র। প্রেসক্লাব গঠন হওয়ার পর পরই প্রেসক্লাব থেকে ১৯৮৩ সালে প্রকাশ করা হয় “মাছ পাখীর দেশ” নামক একটি পত্রিকা । যাতে তাড়াশ প্রেসক্লাব গঠনের ইতিহাস স্মরণীয় হয়ে থাকে। এই পত্রিকা প্রকাশেও মাওলানা রুহুল আমিন সাহেবের ভূমিকা অবশ্যই স্মরণযোগ্য।

লেখক : তাড়াশ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং কবি ও সাহিত্যিক।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD