গোলাম মোস্তফা :চলনবিলের বৃহত্তর অঞ্চলে চায়না দুয়ারী জাল পেতে অবাধে মাছ নিধন করা হচ্ছে । এই জাল অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্যও এক মরণ ফাঁদ। এ থেকে সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণীরই রক্ষা নাই। মৎস সম্পদ ও জীববৈচিত্রের জন্য মহা বিপজ্জনক চায়না দুয়ারী জালের ব্যবহার দিনকে দিন বেড়েই চলেছে
চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলা সদরে অবস্থিত তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেছেন, চায়না দুয়ারী জালে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী ধরা পড়ছে। এর মধ্যে বিপন্ন প্রজাতির অনেক মাছ ও জলজ প্রাণীও রয়েছে। জেলেরা মাছ ও কুইচা বিক্রি করছেন। এরপর সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণীই তারা মেরে ফেলছেন। ফলে সেসব মাছ ও জলজ প্রাণী বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারবেনা। চায়না দুয়ারী জাল কারেন্ট জালের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর।
চায়না দুয়ারী জাল নিয়ে কেবল সচেতন মহল নয়, সাধারণ মানুষজনও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, অতি তাড়াতাড়ি এ জালের ব্যবহার বন্ধ করা প্রয়োজন। সেজন্য জেলে সম্প্রদায়কে সচেতন করা জরুরি বলে তারা মনে করছেন। পাশাপাশি মৎস্য দপ্তরের তৎপরতা জোরদার করার প্রতিও গুরুত্ব আরপ করেন। সর্বপরি চায়না দুয়ারী জাল ব্যবহারে জেলেদের নিরুৎসাহিত করা না গেলে অদূর ভবিষ্যতে মাছ কেন, কোন জলজ প্রাণীই খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
গত এক সপ্তাহ সরজমিনে চলনবিল অধ্যূষিত তাড়াশ উপজেলার বিল পাড়ের কামারশন, মাকরশন, কুন্দইল, ভেটুয়া, নাদোসৈয়দপুর ও ধামাইচ গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলনবিলের বিস্তীর্ণ মাঠ, ডোবা, নালা, খাল সব জায়গাতেই চায়না দুয়ারী জাল পেতে মাছ ধরছেন জেলেরা। বেশিরভাগ জালে মাছের চেয়ে অন্যান্য জলজ প্রাণীই আশঙ্কাজনকহারে মারা পড়ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জেলে বলেন, চায়না দুয়ারী জালে খুব ছোট দারকিনা, মলা, ইচা, চান্দা, খলিশা, পুঁটি, টেংরা, বাতাসি মাছ থেকে শুরু করে বড় শোল, বোয়াল, গজার কোন মাছের রেহাই নেই। বেশিরভাগ জালে মাছের চেয়ে সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী ধরা পড়ে। এসব থেকে তারা মাছ ও কুইচা বিক্রি করছেন। বাকি অসংখ্য জলজ প্রাণী মেরে ফেলা হচ্ছে।এদিকে চলনবিল অঞ্চলের মৎস্য চাষীরাও চায়না দুয়ারী জাল নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এই জাল পুকুরে পেতে রেখে দু থেকে তিন দিনের মধ্যে এক পুকুরের প্রায় সব মাছ সাবার করে দেওয়া সম্ভব।
ভুক্তভোগী তাড়াশ সদর গ্রামের শাহালম ফকির নামে একজন মৎস্য চাষী বলেন, দুর্বৃত্তরা তার পুকুরে চায়না দুয়ারী জাল পেতে রেখেছিলেন। এরপর জাল তুলে দেখা যায়, জালের ভেতরে তিন থেকে সারে তিন মণ রুই, কাতল, মৃগেল, বিগহেট ও গোলসা ঢুকে পড়েছে। জানা গেছে, চায়না জালের দুপাশে দুহাত পর পর লোহার তৈরি গোল রিং পড়ানো থাকে। তার মাঝখানে এক হাত পর পর ৩০ টির মতো চারকোনা রিং পড়ানো। চারকোনা রিংয়ের মাঝে একটি করে দুয়ার রয়েছে। এসব দুয়ার দিয়ে মাছ ও জলজ প্রাণী একবার ঢুকে পড়লে বেড় হতে পারেনা। এই জালের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো পানির তলদেশে লম্বালম্বিভাবে পড়ে থাকে। ফলে কোন প্রকার খাদ্য দ্রব্য ছাড়াই দুই দিক থেকে মাছ ও জলজ প্রাণী জালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। চায়না দুয়ারী জাল দেখতে অনেকটা ঢলুকের মতো। এই জাল অনেকের কাছে ঢলুক জাল নামেও পরিচিত।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মসগুল আজাদ বলেন, চলনবিলে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। মাছ নিধন ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতি আইনত অপরাধ।