গুরুদাসপুরে অর্ধশত কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কঠিন চ্যালেঞ্জে

Spread the love

আবুল কালাম আজাদ , গুরুদাসপুর, নাটোর :

কোভিড -১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর সংক্রমন প্রতিরোধে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থকে দেশব্যপি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। প্রায় দেড় বছর অতিমার করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘ বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বস্থ্য সুরক্ষা নিয়ম মেনে সিমিত আকারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলা হয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেনি কক্ষে পাঠদান শুরু হলেও শিক্ষক- শিক্ষার্থির অভাবে চরম চ্যালেঞ্জে পড়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার  অর্ধশত কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ক্রোনাকালে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও  কওমি , হাফেজিয়া, মক্তব খোলা থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থি হারিয়ে গেছে কিন্ডার গার্টেন স্কুল থেকে।অর্থের অভাবে অধিকাংশ শিক্ষকও অর্থ উপার্জনে অন্যত্র চলে গেছেন। আবার দীর্ঘ দিন অনির্দিষ্টকাল কিন্ডার গার্টেন বিদ্যালয়গুলি বন্ধ থাকায় ভাড়া দিতে না পারায় বিদ্যালয়ের ঘর ছেড়ে দিয়েছে। অনেকে ব্যাংক থেকে, এনজিও থেকে অন্য উতস থেকে ঋন নিয়ে ঘরভাড়া মিটাতে গিয়ে ঋনে জর্জড়িত হয়েছ প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে গিয়ে।গুরুদাসপুর উপজেলা কিন্ডার গার্টেন সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক জানান,মহামারী করোনা পরিস্থিতির আগে উপজেলার অর্ধশত কিন্ডার গার্টেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো।এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারি মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক বেকার মানুষ কর্মরত ছিলেন। করোনার থাবায় দীর্ঘ দেড় বছর যাবত  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটানা বন্ধ থকায় সকল শিক্ষক কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছেন।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত বেতন বা আর্থিক সুযোগ সুবিধা না থাকায় আয় রোজগার না থাকায় শিক্ষকতা পেশা বদল করে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন।কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক অভাবে তাদের শিক্ষা প্রতষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধার দেনা করে হলেও বিশাল অংকের শিশুদের ভবিষ্যত বিবেচনা করে শিক্ষানুরাগি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান  প্রধান ধার-দেনা করে হলেও প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করছেন।

উপজেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের সভাপতি এমদাদুল হক মোল্লা আরো জানান, তিনি নিজে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। তার পৌর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি স্কুল এন্ড কলেজে আড়াই শতাধিক নিয়মিত শিক্ষার্থীর মধ্যে  করোনাকালিন প্রায় দেড়বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর চালু হলেও গত ১৫ দিনে উপস্থিতি তিন ভাগের এক ভাগও হচ্ছেনা। ১৮ জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে আছে মাত্র ১২ জন। ভাড়া দিতে না পারায় একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-কর্মচারি ধরে রাখতে গিয়ে প্রায় ৩ লাখ টাকা ঋনী হয়েছেন। তার মত আর বেস কয়েকটি প্রতিষ্ঠান  ভাড়ার টাকা না দিতে পারায় বন্ধ করে দিয়েছ বলে তিনি জানান।নাটোর জেলা কিন্ডার গার্টেন এসোসিয়েশনের নেতা গুরুদাসপুর ডঃ জাফ্রুল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইয়াকুব আলী বলেন,আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্লে থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। মহামারী করোনায় ১৮ মাস বিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর তিন ভাগের দুই ভাগই এখনো বিদ্যালয়ে আসেনি।কোন কোন শিক্ষার্থী পড়াশোনা বাদ দিয়ে দিনমজুরি করছে বলে জানা গেছে। সামনে কী হবে জানিনা। তাঁর বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৮ জন শিক্ষক আর ৫ জন কর্মচারি নাই। তারা অন্য পেশায় কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠান ধরে রাখতে মাসে ৯ হাজার টাকা ভাড়া মেটাতে ব্যাংক থেকে ৪ লাখ টাকা  প্রধান শিক্ষক ঋন নিয়েছেন। করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারের কোন অনুদান বা প্রনোদনা পাওয়া যায়নাই।

তোরসা এডভান্স কিন্ডার গার্টেন স্কুলের স্বত্বাধিকারি   প্রধান শিক্ষক মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, করোনাকালিন ১৮ মাস প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়  বেতন না পেয়ে ২৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১২ জন এবং ১ জন কর্মচারি হারিয়ে গেছে।দেড়’শ শিক্ষার্থির মধ্যে ১ ‘শ জনও উপস্থিত হচ্ছেনা। যোগাযোগ করেও সাড়া মিলছেনা।মাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া এবং বিদ্যুত, পানি ইন্টারনেট বিলসহ মোট ১৫ হাজার টাকা হিসেবে ৮ মাসের বিল বাব্দ সোয়া লাখ টাকা এবং শিক্ষকদের বেতন বাবদ ২ লাখ টাকাসহ  সাড়ে ৩ লাখ টাকা ধারকর্জ করে মিটাতে হয়েছে।তারপরও ১০ মাসের ভাড়া বাঁকি আছে। ১২ সেপ্টেম্বর থকে স্কুল চালু হওয়ার পর বাড়ির মালিক ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। জানিনা কিভাবে এই প্রতিষ্ঠান ধরে রাখবো এই দুঃশ্চিন্তা শ্চিন্তা সবসময় তাড়া করছ।উপজেলার অন্যান্য আরও কয়েকটি ম্প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বললে তাঁরা জানান,সামগ্রিকভাবে কিন্ডার গার্টেন স্কুল গুলোর শক্ষক এবং শিক্ষার্থি না পাওয়ার কথাই জানা গেছে। এছাড়া প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির স্মমুখিন হয়েছেন।তবুও ধারদেনা সুদিনের আশায় প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টায় আছেন মাদার শিক্ষা প্রতষ্ঠান কিন্ডার গার্টেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা এবং শিক্ষকরা।

 

 

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD