জাহাঙ্গীর আলম, চাটমোহর
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় লিচু চড়া দামে বিক্রি হলেও ফলনে বিপর্যয়ের কারণে বাগান মালিকদের মুখে হাসি নেই। চলতি মৌসুমে দীর্ঘ সময়ে অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরার কারণে প্রতিটি গাছে লিচু ঝড়ে পড়েছে। যার কারণে আগাম বাগান কিনে রাখা এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। বেশির ভাগ বাগানে লিচু নেই বললেও চলে, তার কারণে এক ফসলি লিচুর ফল বিক্রি করতে না পেরে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। উপজেলার লিচু গ্রাম হিসেবে খ্যাত রামচন্দ্রপুর, জালেশ্বর, নতুনপাড়া, মন্ডলপাড়া, গুনাইগাছা, মল্লি¬কচক, পৈলানপুর, জাবরকোলসহ আশে-পাশের ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে।
এ কয়েকটি গ্রামের মাঠের পর মাঠ আবাদ হয়েছে লিচু। চলতি বছরে লিচুর মুকুল ব্যাপক আসাতে লিচু চাষীরা মনে করেছিলেন এবার বাম্পার ফলন হবে। এ জন্য শতশত বাগান মালিকরা লিচু উচ্চ দামে বিক্রির জন্য বাগানে প্রচুর যতœ নিয়েছিলেন। কিন্তু এর সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে প্রতিয়মান হয়েছে। তীব্র খরা ও দীর্ঘ সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় লিচুর গুটি প্রথমে ঝড়ে পড়ে যায়। যার কারণে তারা ইচ্ছামত বাগান ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করতে পারেনি। এ অঞ্চলের লিচু বাগান যারা পূর্বে অগ্রিম টাকা দিয়ে কিনেছেন তাদের পুরোটাই লোকসান গুনতে হয়েছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম জানায়, এবার চাটমোহরে প্রায় ৩’শ ৫০ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। প্রতি বছর বাগানের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ২০টি মত লিচু চারা রোপন করা যায়। তাছাড়া বাড়ির আঙ্গিনায় অনেক কৃষক লিচু বাগান করেছেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার লিচু উৎপাদন ধরা হয়েছিল সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিকটন। প্রাকৃতিক কারণে ফলন বিপর্যয় ঘটেছে।
উপজেলার ক্ষতিগ্রস্থ রামচন্দ্রপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, সিরাজুল ইসলামসহ অন্যান্যরা জানিয়েছেন, যে সকল বাগান ৩/৪ লাখ টাকায় বিক্রি হত, সে সমস্থ বাগান গুলো মাত্র ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত বারে যে বাগান ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল সে সকল বাগান গুলো মাত্র ৮/১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ বাগান মালিকেরা জানিয়েছেন।
গত বছরে এ অঞ্চল থেকে কোটি টাকা লিচু বিক্রি হলেও এবার কত টাকা বিক্রি হয়েছে তার সঠিক তথ্য কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর ও বাগান মালিকরা দিতে পারেনি। তবে বাগান মালিকদের দাবি খরা ও অনাবৃষ্টি না হলে প্রায় কোটি টাকার উপরে লিচু বিক্রির হওয়ার সম্ভবনা ছিল।
স্থানীয় লিচু চাষীরা জানান, এ অঞ্চলে ব্যাপক পরিমানে লিচুর চাষাবাদ হলেও সর্ব প্রথম কে লিচুর চাষাবাদ করেছিল তার সঠিক ইতিহাস কেউ বলতে পারেনি। তবে যতটুকু জানা যায়, উপজেলার মন্ডলপাড়া গ্রামের প্রয়াত খোকা মন্ডল নামে এক ব্যক্তি প্রায় ৪৫ বছর পূর্বে প্রথমে লিচুর বাগান করেন। তার ঐ ধারাবাহিকতায় পর্যায় ক্রমে লিচু আবাদের চাষাবাদ বাড়তে থাকে।
বর্তমানে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় বানিজ্যিক ভাবে লিচু চাষাবাদ হচ্ছে। এ অঞ্চলের দেশি লিচু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। লিচু চাষীরা জানান, এখানকার লিচু বাগান ২০ হাজার থেকে ৪/৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে এবার সম্পূর্ণ বিপরীত হয়েছে। মাত্র অল্প টাকায় বড় বড় বাগান বিক্রি হয়েছে। লিচু চাষী ওয়াজেদ আলী মাষ্টার, লিয়াকত আলী পেন্টু, ওফাজ, মিঠু জানায়, এ মৌসুমে লিচু রক্ষা করতে রাতভর পাহাড়া দিতে হয়। অন্যস্থায় বাদুরের ঝাঁক এসে লিচু খেয়ে সাভার করে ফেলে। বাগান মালিক গোলাম মোস্তফা, খলিলুর রহমান, লিয়াকত আলী পেন্টু, মোহাম্মদ আলী, শফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, মাসুদ, শামসুল আলম, আঃ কুদ্দুস, মর্তোজা লিচু বাগান বিক্রি করে কম-বেশি সফলতা পেয়েছেন বলে জানা গেছে। বিশিষ্ঠ ব্যাপারী আবুল হোসেন জানায়, গত বছরে এ অঞ্চল থেকে কোটি টাকার উপরে লিচু বিক্রি হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন ব্যাপারী এসে লিচু কেনার জন্য ভীড় জমাতো। প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক ভর্তি লিচু ব্যাপারীরা কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যেত। কিন্তু এ বছরে করোনার প্রভাবে তেমন লিচু ব্যবসার প্রসার লক্ষ করা যায়নি। এবার নিম্ন শ্রেণীর লিচুর হাজার ১৩ হাজার থেকে ১৪’শ টাকা এবং ভালো লিচু ১৮’শ থেকে ১৯’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে তিনি জানান। এব্যাপারে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএ মাসুম বিল্লাহ জানায়, অনাবৃষ্টি ও খরা না হলে এ অঞ্চলে লিচু চাষাবাদে কৃষক বেশি লাভবান হতেন। তবে ফলন কম হলেও লিচু বেশি দামে কৃষক বিক্রি করতে পেরেছেন।