মোঃ আব্দুস সামাদ, উলিপুর, তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ
মনে পড়ে গেল ’৭১ এর ভাদ্র মাসের এক রাতের কথা
রেডিও খুলে বসে থাকি শুনতে মুক্তি যুদ্ধের বার্তা
বিবিসি’র খবর বস্তÍনিষ্ঠ নির্ভরযোগ্য তাই
উৎকন্ঠায় বসে থাকি পাড়ার সবাই।
পাকিস্তানের কারাগারে তখন বন্দি মুজিব ভাই
রাত দশটায় আমেরিকার খবরে শুনতে পাই
শেখ মুজিবের বিচার শুরু করবে পাক কসাই
মৃত্যু দন্ড তাঁর হতে পারে এমনও সম্ভাবনা তাই।
রুস্তম মাষ্টার শ্রদ্ধেয় চাচা বলেন খবর শুনি
তাহলে আর কার জন্য মোরা মুক্তি যুদ্ধ করি
কি হবে আর যুদ্ধ করে বাংলা স্বাধীন করে
আমারা থাকব কোন্ দেশে, শেখ মুজিব নাই যে দেশে।
দেখা হল এক বন্ধুর সাথে গাঁয়ের হাট বেলায়
অল্প কদিন আগে তার পিতা মারা যায়
সজল চোখে সে বলে, পিতার মৃত্যু সহ্য করা যায়
বঙ্গবন্ধুর বিয়োগ ব্যথা সহ্য করা দায়।
আছারি বিছারি সর্বত্রই করছে হতবিহবল জাতি
সকলের করুণ বিলাপ শুনে ফেটে যায় বুকের ছাতি
বুক ফেটে শুধু কান্নাই আসে বঙ্গবন্ধুর বিরহ বেদনায়
শোকের ভারে প্রকৃতি যেন ভারী হয়ে যায়।
চিতার আগুন বুকে নিয়ে এদিক সেদিক চাই
কেউনি বলে মিথ্যে গুজব বঙ্গবন্ধু মরে নাই
কিন্তু হায়! অভাগা যে দিক পানে চায়
কেউ বলে না বঙ্গবন্ধু আর আছে দুনিয়ায়।
চারিদিকেই বিষাদ বিধুর মাতম শোনা যায়
আকাশ- বাতাস ওরাও যেন করছে হায় হায়
ব্যথা ভরা বুকে, সখেদে আফসোস করছে বাঙ্গালী
আজ হতে বাংলা মায়ের কোল হল খালি।
মনে পড়ে কবি গুরুর সখেদ দুটি উক্তি,
তাঁর কবিতায় পড়েছিলাম কিছু বিলাপ পংক্তি
“—-সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙ্গালী করে, মানুষ করনি।”
বাঙ্গালীদের মানুষ করতেই মহান মুজিব মহান ব্রত করে
বাঙ্গালীরাই সে মহানকে পাঠালো মৃত্যুর ঘরে
এ বীরত্বে প্রমাণিত হল আমরা বাঙ্গালী অমানুষ কত বড়
জানিনা এ পরিচয়ে কাটবে মোদের কতদিন আরও।
এবারের সংগ্রাম “স্বাধীনতার সংগ্রাম ” ছিল তার বজ্র হুংকার
বাঙ্গালীদের হাতে হাতে উঠল হাতিয়ার
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন হল বাংলা
আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হল জয় বাংলা।