জিলহজ  মাসের  কতিপয়  আমল  ও ফজিলত

Spread the love

খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ

 

আর মাত্র কয়েক দিন পরেই ঈদুল আজহা। তাই মনে পড়ে যায়  জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কণ্ঠে গান ‘এল স্মরণ করিয়ে দিতে ঈদজ্জোহার এই সে চাঁদ- (তোরা) ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে, ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ’।  পবিত্র ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ আসন্ন। আরবী ‘কোরবান’ থেকে কোরবানি শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ। পশু কোরবানির মাধ্যমে এ দিনে বান্দা আত্মত্যাগ করত: আল্লাহর নৈকট্য লাভে ব্রতী হয়।

ফলে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে দ্বীনি আমেজে প্রাণস্পন্দন জেগে উঠে। ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব সৌহার্দ্য ও সহানুভূতির গভীর বন্ধনে শান্তির সুবাতাস নেমে আসে ধরাধামে। ঈদের জমায়েতে পারস্পরিক সালাম, কোলাকুলি ও কুশল বিনিময়ে অকৃত্রিম আত্মীয়তা ফুটে উঠে। সমাজের দীনহীন অনাথ এতিম ও হতদরিদ্র শ্রেণি একদিনের জন্য হলেও নিজেদের অধিকার ফিরে পায়। অমলিন হৃদয়ে হাসিমুখে একে অপরের সাথে মিলিত হয়। সবাই সাম্যবাদের মর্মকথা হর হামেশা উচ্চারণ করলেও ঈদুল আযহা বা কোরবানির দিন তার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠে। কোরআন হাদীসের অসংখ্য জায়গায় কোরবানির গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে বলেন, ‘আর আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির এক রীতিনীতি নির্ধারণ করেছি যেন তারা ঐ সব পশুর উপর আল্লাহ পাকের নাম নিতে পারে যে সব তিনি তাদেরকে দান করেছেন।’

(সূরা হজ্জ -৩৪) ।

বর্তমানে আমাদের সমাজে যে কোরবানি প্রথা চালু আছে তার সাথে যে ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত রয়েছে তা আল কোরআনের সূরা আস্ সাফ্ফাতের ১০২-১১২ আয়াতে সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে। ‘যখন সে (ইসমাঈল আ.) তার সাথে চলাফেরার বয়সে পৌঁছলো তখন একদিন ইব্রাহীম (আ.) তাকে বললেন : প্রিয় বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, তোমাকে যেন জবেহ করছি। বল, দেখি কি করা যায় ? পুত্র বিনা দ্বিধায় বললো, আববা, আপনাকে যে আদেশ করা হয়েছে তা শীঘ্রই পালন করুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আমাকে অবিচল দেখতে পাবেন। অবশেষে পিতাপুত্র উভয়ে আল্লাহর কাছে নিজেদের সোপর্দ করলেন এবং ইবরাহীম (আ.) পুত্রকে উপুড় করে শুইয়ে দিলেন (জবেহ করার জন্য)। তখন আমরা তাকে আহবান করে বললাম, ইবরাহীম তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ। আমরা সৎকর্মশীলদের এরূপ প্রতিদানই দিয়ে থাকি। বস্তুত: এ এক সুস্পষ্ট অগ্নিপরীক্ষা। আর আমরা বিরাট কোরবানি ফিদয়া স্বরূপ দিয়ে তাকে (ইসমাঈল আ.) উদ্ধার করেছি। আমরা ভবিষ্যতের উম্মতের জন্য ইবরাহীমের এ সুন্নাতকে স্মরণীয় করে রাখলাম। ইবরাহীম (আ.) এর উপর শান্তি বর্ষিত হোক। এভাবে জীবনদানকারীদেরকে আমরা এ ধরনের প্রতিদানই দিয়ে থাকি। নিশ্চিত রূপে সে মুমিন বান্দাদের মধ্যে শামিল’।

 

জিলহজ মাসের ১ম দশ দিনের ফজিলত :

১. জিলহজ মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পরকালের পুঁজি সঞ্চয় করা যেতে পারে। এ দিনগুলোর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: “কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের”। [সূরা ফাজর, আয়াত: ১-২] ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য জিলহজ মাসের দশ দিন। ২. আল্লাহ তাআলা বলেন: যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।[সূরা হজ, আয়াত: ২৮] এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলতে কোনো দিনগুলোকে বুঝানো হয়েছে সে সম্পর্কে “ইবনে আব্বাস রা.বলেছেন: নির্দিষ্ট দিনসমূহ দ্বারা উদ্দেশ্য জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন”। বিশিষ্ট সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সালল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:  জিলহজ মাসের

প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মত অধিক প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোনো আমল নেই। তারা প্রশ্ন করলেন,হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করাও কি তার চেয়ে প্রিয় নয়? রাসূলুল্লাহ সালল্লাাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তির কথা আলাদা যে তার জান-মাল নিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদে বের হয়ে গেল অতঃপর তার প্রাণ ও সম্পদের কিছুই ফিরে এলো না। [বুখারি: ৯৬৯, তিরমিযি: ৭৫৭] ৩. ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট কোনো দিন অধিক প্রিয় নয়, আর না তাতে আমল করা, এ দিনের তুলনায়। সুতরাং, তাতে তোমরা বেশি করে তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পাঠ কর। [তাবরানী ফীল মুজামিল কাবীর] ৪. সাঈদ ইবনে জুবায়ের রাহিমাহুল্লাহর অভ্যাস ছিল, যিনি পূর্বে বর্ণিত ইবনে আব্বাসের হাদিস বর্ণনা করেছেন: যখন জিলহজ মাসরে ১ম দশ দিন প্রবেশ করত, তখন তিনি খুব মুজাহাদা করতেন, যেন তার উপর তিনি শক্তি হারিয়ে ফেলবেন। [দারামী: ২৫৬৪ হাসান সনদে] ৫. ইবনে হাজার রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন: জিলহজ মাসের দশ দিনের ফযিলতের তাৎপর্যে যা স্পষ্ট, তা হচ্ছে এখানে মূল ইবাদতগুলোর সমন্বয় ঘটছে। অর্থাৎ সালাত, সিয়াম, সদকা ও হজ, যা অন্যান্য সময় আদায় করা হয় না। [ফাতহুল বারী ১/২৬৩]৬. উলামায়ে কেরাম বলেছেন: জিলহজ মাসরে ১ম দশদিন সর্বোত্তম দিন, আর রমযান মাসের শেষ দশ রাত,সবচেয়ে উত্তম রাত।

জিলহজ মাসের আরেকটি মুস্তাহাবি আমল হল, চাঁদ উঠার আগে নখ, চুল আর পশমাদি কাটাছাটার প্রয়োজন হলে কেটেছেটে ফেলা এবং কুরবানির দিন পশুর গলায় ছুরি দেয়ার আগ পর্যন্ত এসবে হাত না দেয়া। এতে করে উক্ত আমলকারী কুরবানি করার ছোয়াব পায়। সুতরাং যারা কুরবানি করল না তারা কুরবানি করার নেকি পেল আর যারা কুরবানি করল, তারা কুরবানির দ্বিগুণ নেকি পেল। তবে সামর্থবান ব্যক্তি যদি কুরবানি না করে, ওয়াজিব তরকের গুনাহ হবে। সতর্কতা: বগল আর নাভির নিচের কেশ যদি কাটতেছাটতে ৪০ দিনের বেশি দেরি হলে বা আপনি ভুলে গেলেন কাটতে, আবার এদিকে কুরবানির চাঁদ উদয় হয়ে গেছে। এমন যদি হয় তাহলে চাঁদ উদয় হলেও আপনি যা কাটার তা কাটতে ছাটতে পারবেন। নারী পুরুষের অভিন্ন হুকুম। কারণ ৪০ দিনের বেশি হয়ে গেলে নামায ইত্যাদি মাকরূহে তাহরিমী হয়। যা পূর্বেকার মুস্তাহাবি আমলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তাকবীরে তাশরিক এর ফজিলত:

জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে নিয়ে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলে এবং এই সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লালাাহু আলাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহহিল হামদ। ’ এই তাকবির পড়া ওয়াজিব। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, এই দিনগুলোতে তাকবিরে তাশরিকের আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল উত্তম নয়। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদ কি (উত্তম) নয়? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়ে জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।  (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৬৯) প্রিয় পাঠক পরিশেষে এই কথাই বলব যে মহান আল্লাহ্  সুরা হজে  ৩৭-৩৮ নং আয়াতের মধ্যে যে কথা বলেছেন ,  কুরবানী করা একটি ইবাদত যা একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার উদ্দেশ্যে না হয়ে যদি মানুষের প্রশংসা পাওয়া, এভাবে যে, অমুক এত বড় কুরবানী করছে, অমুক এতটা কুরবানী করেছে বা এত টাকার পশু কুরবানী দিয়েছে বা না করলে মানুষ কী বলবে এ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে তা কুরবানী হবে না, সে ব্যক্তির কেবল গোশত খাওয়া হবে। কারণ তার উদ্দেশ্য হল মানুষের প্রশংসা পাওয়া। সে জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: তোমরা কত বড় কুরবানী করছো, কত দামের কুরবানী করছো সেটা দেখার বিষয় নয়, কারণ আল্লাহ তা‘আলার কাছে সে কুরবানীর গোশত পৌঁছে না এবং রক্তও পৌঁছে না, বরং তোমরা কোন্ উদ্দেশ্যে কুরবানী করেছ সেটা দেখার বিষয়। মানুষের প্রশংসা পাওয়া বা মানুষের নিন্দা থেকে বাঁচার জন্য কুরবানী করেছো, নাকি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য কুরবানী করেছো। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার জন্য কুরবানী করলে তা কবূল হবে, অন্যথায় হবে না। তাই কুরবানীসহ সকল ইবাদত আল্লাহ তা‘আলাকে খুশী করার জন্য করতে হবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাযার, দরগাহ, ওরশ ও পীর মুর্শেদের জন্য উৎসর্গ করা বা তাদের খুশীর জন্য করা যাবে না, করলে শির্ক বা বিদায়াত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:  “বল:‎ ‘আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ শুধুমাত্র জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’’ (সূরা আন‘আম ৬:১৬২) কুরবানীর ক্ষেত্রে তাক্বওয়ার অন্যতম একটি বহিঃপ্রকাশ হল কুরবানী করে শুধু নিজে না খাওয়া বরং আত্মীয়-স্বজন, গরীব ও মিসকিনদের হক আদায় করা। যেমন সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে: রাসূলুল্লাহ (রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: إِ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের চেহারা ও সম্পদের দিকে লক্ষ্য করেন না, তিনি লক্ষ্য করেন তোমাদের অন্তর এবং আমলের দিকে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৬৪) সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করতে হলে প্রথমে অন্তর বিশুদ্ধ ও একনিষ্ঠ করতে হবে। অন্যথায় মোটা তাজা কুরবানী এবং পাহাড় সমান আমল করেও কোনই লাভ হবে না। কোরআনে বলা হয়েছে,এ বিশাল বড় বড় প্রাণী তোমাদের অধীন করে দিয়ে তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। নচেৎ এ বড় প্রাণীগুলো যারা তোমাদের চেয়ে শক্তিশালী তাদেরকে কিভাবে জবাই করতে পারতে। ‘তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর’‎ । পূর্বে ৩৬ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে, এসব পশু জবাই করার সময় যাতে আল্লাহ তা‘আলার নাম উচ্চারণ কর। এখানে বললেন, যাতে আল্লাহ তা‘আলার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। এ দুয়ের সমন্বয় করে ইবনু উমার (রাঃ) বলেন: যখন কুরবানী করবে তখন বলবে: আল্লাহু আকবার।  আনাস (রা.)  বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মিশ্রিত রঙের শিং বিশিষ্ট দুটি দুম্বা কুরবানী করলেন। বর্ণনাকারী বলছেন: আমি তাঁকে দেখেছি, তিনি স্বহস্তে তা জবাই করছেন। আরো দেখেছি, জবাই করার সময় তাঁর পা পশুর পার্শ্বে রাখা ছিল। আল্লাহ তা‘আলার নাম নিলেন এবং তাকবীর বলে জবাই করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৫৫৬৪, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৬৬) এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি তাঁর মু’মিন বান্দা হতে দুঃখ-কষ্ট, শত্রুর আক্রমণ, অনিষ্টতা ইত্যাদি প্রতিহত করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর মু’মিনদের সাহায্য করা আমার কর্তব্য।” (সূরা রূম ৩০:৪৭) বর্ণিত আছে, এ আয়াতটি নাযিল হয় মক্কার মু’মিনদেরকে কেন্দ্র করে। যখন তাদের ওপর কাফিররা অধিকহারে অত্যাচার চালাতে লাগল তখন কিছু মু’মিন হাবশায় হিজরত করল। আর যারা মক্কায় ছিল তারা পরিকল্পনা করল যে, আমরা যে সকল কাফিরদেরকে করায়ত্ত করতে পারব তাদেরকে হত্যা করব, তাদেরকে ধোঁকা ও প্রতারণা দিব। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা ওয়াদা দেন যে, তিনি তাদের পক্ষ থেকে সকল নির্যাতন প্রতিহত করবেন। মু’মিনদেরকে খেয়ানত ও প্রতারণা করা থেকে বারণ করলেন। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন খিয়ানতকারীর কোমরে একটি ঝান্ডা লাগিয়ে দেয়া হবে। এটা হবে, তার খিয়ানতের পরিচয়। বলা হবে, এ ব্যক্তি অমুকের সাথে খিয়ানত করেছে। (সহীহ বুখারী হা: ১) সুতরাং মু’মিনরা যদি আল্লাহ তা‘আলার প্রতি সঠিকভাবে ঈমান আনে, সৎ আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবেন, কাফিরদের ওপর বিজয় দান করবেন। উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়: ১. আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য পেতে হলে নিয়ত বিশুদ্ধ করতে হবে। ২. অন্যকে খুশী করার জন্য কোন আমল করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। ৩. কোন মাযার, দরগাহ, ওলী-আওলিয়া ও পীর কুতুবের নামে বা তাদের সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করলে বা পশু দান করলে শির্ক হবে। ৪. সঠিক ঈমান ও আমলের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকলে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের শত্রুকে প্রতিহত করবেন।

তাই আসুন আমরা উল্লেখিত আলোচ্য বিষয় হতে নিম্মোক্ত শিক্ষাগুলো গ্রহণ করি ঃ

১) জিলহজ মাসের প্রথম নয়  দিন আমরা ধারাবাহিক সিয়াম পালন করি । বিশেষ করে নয় তারিখ  আরাফাতের দিনের রোজা অবশ্যই রাখব ।

২) এই সময়ে বেশি বেশি তাকবির অর্থাৎ ‘আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ জিলহজ মাসের শুরু থেকেই  তা  পাঠ করব । বিশেষ করে নয় জিলহজ ফজর থেকে  তের  জিলহজ আছর পর্যন্ত  (জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ফজর নামাজের পর থেকে নিয়ে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত সময়কে তাশরিকের দিন বলে। এবং এই সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর অন্তত একবার আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ ’ এই তাকবির পড়া ওয়াজিব।) মোট  পাঁচ দিন  তেইশ ওয়াক্ত । এটি একটি ওয়াজিব আমল । শুধু পুরুষ নয়  ঘরে মা বোনদের ও আমলটির কথা জানা দরকার । যাতে করে ঘরে বসে খুব সহজেই তারা এই ওয়াজিব আমল করতে পারেন।  ছেড়ে না দেয় ।

৩) যারা কোরবানি করব  তারা জিলহজ মাসের চাঁদ ওঠার পর থেকে শুরু করে কোরবানির  পূর্ব সময়  পর্যন্ত চুল ও নখ না কাটা।

৪) দশ জিলহজ ঈদের পর থেকে শুরু করে সর্বশেষ ১২ ই জিলহজ আছর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিজের কোরবানির পশু নিজ হাতে যবেহ করা। এটিই সুন্নাহ  ।

৫) কোরবানির গোশত নিজে খাওয়ার সাথে যারা অভাবী ও দুঃস্থ তাদের মধ্যে বিলিয়ে দিই । যারা  এসে চায় তাদেরকে ও দিই  । যারা অভাবী ও দুঃস্থ কিন্তু চায় না তাদের এবং অভাবী ও দুঃস্থ আত্মীয় স্বজনদেরকে বেশি পরিমাণে কোরবানির গোশত ও অন্যান্য সহযোগিতা ও সাহায্য করার জন্য চেষ্টা করি ।

৬) আমরা এই করোনাকালীন সময়ে এখন অনেকেই ঘরে স্বেচ্ছাবন্দী। তাই অলস সময় না কাটিয়ে বেশি বেশি কোরআন ও হাদিস গ্রন্থ সহ ইসলামী বিষয়ক গ্রন্থ অধ্যয়ন করি । আমাদের ঘরে পরিবার পরিজন নিয়ে  তালিমের বৈঠক সহ বেশি বেশি দোয়া করি। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে কোরআন ও সুন্নাত মোতাবেক জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করুন। আমিন ছুম্মা আমিন

[লেখক ঃ তরুণ আলোচক ও গবেষক খোন্দকার আমিনুল ইসলাম আবদুল্লাহ । প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক, মারকাযুদ্ দাওয়াহ উচ্চতর গবেষণা ও সেবা কেন্দ্র,বগুড়া। সাবেক সম্পাদক অন লাইন পত্রিকা বিডি নিউজ ২৬ ।  ইমেইল ঃ শসধসরহঁষরঁ@মসধরষ.পড়স , মোবাইল  ঃ ০১৪০০-৯৯৫৯২৫ ০১৫১১-৯৯৫৯২৫]
Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD