তাড়াশে ‘জায়গা আছে ঘর নাই ’প্রকল্পের নামে কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ

Spread the love

লুৎফর রহমান : ‘জায়গা আছে ঘর নাই’ সরকার এমন সব সুবিধা বঞ্চিত মানুষকে ঘর নির্মাণ করে দিবে -এ প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর  ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক হত দরিদ্র মানুষদের কাছ থেকে ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক প্রান্তিক ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর লোকজনও রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এক’শ জন করে তালিকা করে তাদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা হয়েছে। সে হিসেবে ৯টি ওয়ার্ড ও ৩ সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে ১১শ জনের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা লেনদেন করার অভিযোগ উঠেছে। অথচ ওই ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এ কোন প্রকার বরাদ্ধ নেই মর্মে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) অফিস নিশ্চিত করেছে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ ও সরেজমিনে মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাধাই নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মির্জা ও  ১২জন ইউপি সদস্য মিলে প্রায় এক বছর আগে এলাকায় প্রচার চালায় যে, সরকার ‘জমি আছে ঘর নাই’ প্রকল্পের আওতায় দরিদ্র মানুষদের বিনা টাকায় ঘর করে দিবে। তারা উদাহরণ  হিসেবে তুলে ধরেন, তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ ইউনিয়ন ও পাশ্ববর্তী রায়গঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ইতোপূর্বে বাস্তবায়িত  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ সমূহ। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। এ সময় তারা প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে এক’শ জন করে তালিকা তৈরি করে তাদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করে। এসব হত দরিদ্র মানুষদের অনেকেই টাকা দিলেই মিলবে ঘর এ আশায় দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে।

কিন্তু দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় চলে গেলেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যগণ প্রকল্প পাস হচ্ছে বলে আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। চেয়ারম্যানকে ও প্রায়ই ঢাকায় যেতে দেখা যায় প্রকল্পের তদবির করতে। মাধাইনগর  ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের সরাপপুর, ছোট ঘোনার ও ৭ নং ওয়ার্ডের মাধাইনগর গ্রামে গিয়ে কথা হয় শতাধিক ভূক্তভোগী লোকজনের সাথে। সরাপপুর গ্রামের কৃষি শ্রমিক দেলবার হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ডের হায়দার আলী মেম্বরকে ঘরের জন্য এক বছর আগে সে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু আজো সে ঘর তার মেলেনি। একই কথা জানালেন,তারা মন্ডল(৪৫), আব্দুল হামিদ মন্ডল(৪০)সহ ১৭জন ভূক্তভোগী।

পার্শ্ববর্তী মাধাইনগর গ্রামের  ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক সঞ্চনা সিং (৩০), বিমল সিং (২৫),নব কুমার বসাক (৪৫), গোপেন্দ্রনাথ বসাক (৩৫), বিপুল বসাক (৪০) পলাশ উঁরাও (৩৫) সহ প্রায় ৪০ জন ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর লোকজন জানান, তারা কেউ ১৫ হাজার,কেউ ২০ হাজার টাকা করে দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সূদে ঋণ নিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ও মহিলা সদস্য বুলবুলি খাতুনকে দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তারাও  এক বছর যাবৎ কোন প্রকার ঘর পাননি। এ চিত্র পুরো ইউনিয়ন জুড়েই। এ প্রসঙ্গে কথা হয় ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান,হায়দার আলী ও মহিলা সদস্য বুলবুলি খাতুনের সাথে। তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, শুধু আমরা নয় সব সদস্যই টাকা তুলেছেন। এবং তারা সমুদয় টাকাই চেয়ারম্যান মো: আবু হাসান মির্জা কে দিয়েছেন প্রকল্পের জন্য।

চেয়ারম্যান মো: আবু হাসান মির্জার সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের সাথে বসবো। লেখালেখি করলে প্রকল্পটি হবেনা। তাড়াশ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুর মামুন বলেন মোখিকভাবে অভিযোগ শুনেছি লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয়  ব্যাবস্তা নেয়া হবে । এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) মো: ওবায়দুল্লাহ বলেন, মাধাইনগর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এ ধরণের প্রকল্পের কোন প্রকার অস্তিত্ব নেই। তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD