নেশা একটি আতংকের নাম

Spread the love

মুহাম্মাদ জাকির হোসেন :

নেশা। দু অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর মাঝে লুকিয়ে আছে-“বিন্দুর মাঝে সিন্দুর গভীরতা”। সাধারণ কথায় বলা যায় অভ্যাস্থ। বর্তমান বিশ্বের বালক বালিকা থেকে শুরু করে অশিতিপর বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই নেশা গ্রস্থ। নেশার ঘোরে টালমাটাল। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে বলা চলে নেশা একটি আতংকের নাম। মানুষ নেশাগ্রস্থের কারণে দেশ জাতী সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়ে হাজারো দুর্নীতি,নৈতিক চরিত্রের অধ:পতন, হারিয়ে যাচ্ছে মানবতা-সহিষ্ণুতা। ফলে যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই আজ অশান্তির আগুণ দাউ দাউ করে জ্বলছে। প্রতিনিয়িতই ঘটে চলেছে খুন-জখম-আত্মহত্যা-লুটপাট-শোষণ-হানাহানি-খুনাখুনি-হিংসা-প্রতিহিংসা। মনে হয় দুনিয়া এখন আর বসবাস উপযোগী জায়গা নয়।

ষাট এর দশকে চলনবিলের চরাঞ্চলে চাষ করা হত নেশার এক উপকরণ-তামাক। তখন প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই এ তামাক চাষের প্রচলন ছিল। বিশেষ করে মতিহার তামাকের একচেটিয়া চাষ হত। তখন দেখা গেছে শ্রমিকের জন্য এ তামাক একটি অপরিহার্য বস্তু। তামাক পাতা রোদে শুকিয়ে গুড়া করে খেজুরের ঝোলা গুড় দিয়ে হাতে ডলে নেশার উপযোগী করা হত।  বাঁশের চোঙ্গায় করে রেখে দিয়ে প্রয়োজনের সময় তা কাজে লাগানো হত। কামলা কাজ করতে গেলে তামাকের চোঙ্গা,হুক্কা ও মাটির ঢোকশাতে শুকনা গোবরের টুকরায় আগুন জ্বালিয়ে রাত-দিন ব্যাপী তামাক সেবন চলত। তামাক সেবনের জন্য তখনকার দিনে পাওয়া যেত কাঠের তৈরী ছিদ্র করা নলচে ও কলকে। কলকেতে তামাক সাজিয়ে আগুন দিয়ে নারিকেলের খুলিতে পানি ভর্তি করে খুলির মাঝখানে ছোট্ট ছিদ্র করে ছিদ্রের মুখে মুখ লাগিয়ে সুখ টান দিত।  সম্ভ্রান্ত পরিবারে ও রাজা জমিদারগণ ব্যবহার করতেন রাবারের লম্বা নলযুক্ত বৃন্দাবন হুক্কা। নারিকেলের খুলির পরিবর্তে কাঁসা ব্যবহার করা হত।

তখনকার দিনে দেখা যেত রাত্রির খাবারের কাজ শেষ করে গ্রামের মোড়লের বৈঠক খানায় প্রতিবেশীরা ভীড় জমাত। পূঁথি পাঠ-তাস খেলা ও ঘন্টায় ঘন্টায় তামাক সেবনের পালা চলত। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে হুক্কা-কলকের ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেল। তৈরি হল শালপাতার ঠোঙ্গায় তামাক পাতা দিয়ে বানানো বিড়ি। কাগজের মোড়কে রেখে অনায়েসে পকেটে রেখে ব্যবহান করা হত। সাথে থাকত ম্যাচ বা ম্যাচ লাইট। হুক্কা প্রচলন বন্ধ হওয়ায় তামাক সেবনের  কুফল ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হতে থাকল। হুক্কার  খুলিতে পানি থাকার কারণে তামাকের ধোয়াটা অনেকটাই শোধন হয়ে পেটে যেত। কিন্তু বিড়ির বেলায় সেগুলো বন্ধ। দিন বদলের পরিক্রমায় শাল পাতার বিড়ির প্রস্থান হয়ে কাগজের পাতার আগমন।

পূর্ব পাকিস্তান আমলে দেখেছি গুরুদাসপুর গ্রামের জনৈক খাদেম আলী নামক যুবক রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকত কখন রাস্তায় চলাচলকারী ধুমপায়ী আসেন। প্রতিক্ষায় থাকত কখন বিড়ির মোতাটি ফেলে দিবে আর সে তা নিয়ে সুখটান দিবে। কখনো আধা এক কিলোমিটার ধুমপায়ীর পিছনে পিছনে যেত সেই বিড়ির মোতায় নেশা কাটাতে। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় দিনমজুর শ্রেণী সেবন করে বিড়ি আর ধনী ও অবৈধ উপার্জনকারীগণ পান করেন বিদেশ থেকে আমদানীকৃত দামী দামী সিগারেট। শুরু হল অধিক অপচয়  এবং আভিজাত্যের নেশা পান।

আর একটি নেশা চলে। পানে ব্যবহার করা হয় চুন-সুপারী বাহারী রং ও গন্ধে ভরপুর তামাকের পাতায় তৈরী জর্দ্দা-হরেক রকম মিষ্টি জাতীয় মশলা। পান চাষীগণ পান বরজে  ব্যবহার করেন ১০ ইসি কীটনাশক-সালফার-বোরনসহ নানা ধরণের কেমিক্যাল।  সকালবেলায় এ সমস্ত কীটনাশক ক্যামিক্যাল প্রয়োগ করা পান বিকেলেই বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করেন। পান বিক্রেতা ঢোব দোকানীরা উক্ত পান নাম মাত্র পানির সীট দিয়ে ধুয়ে পান সেবীদের মুখে তুলে দেন।

আমি যখন হাইস্কুলে শিক্ষকতা করি সেই সময়ে আমার এক সহকর্মী ছিলেন পানের নেশাগ্রস্থ। যখন পানের নেশা হত তখন ছাত্রীদের ক্লাস থেকে পাড়ায় পাঠিয়ে দিতেন পান আনার জন্য।  নাটোর সদর উপজেলার জনৈক টমটম চালক হাবিল উদ্দিন গোটা বিশ্বের পান সেবনকারীদের মধ্যে নি:সন্দেহে প্রথম স্থান অধিকার করবেন। কারণ শুধু মাত্র ভাত খাওয়া ও ঘুমানোর সময়টুকু তার মুখে পান থাকেনি। এ ছাড়া সার্বক্ষণিকই তার মুখ ভর্তি পান। বাংলাদেশের দু শ্রেণীর মানুষ পানের প্রতি অভ্যস্ত। বিশেষ করে মহিলাগণ। তারা আলা পাত তে (তামাক পাতা) অভ্যস্ত। আর মাদ্রাসা পড়–য়া উঠতি বয়সের যুবক বা হুজুর টাইপের যুবক বা হুজুরেরা পান সেবী। এক শ্রেণীর নেশাখোর আছে যারা তামাক পাতায় চুন মেখে গালে রাখে ঘন্টার পর ঘন্টা কেউবা তামাকের তৈরী গুল নামক নেশায় মত্ত। সেটা এত আকষর্ণীয় যে কেউ গুলের কৌটা সরিয়ে নিলে গুলসেবী মরিমুখী হয়ে ওঠে।

গাঁজা-ভাঙ আর একটি নেশার নাম। দেশের শহর-গ্রাম-গঞ্জে এ নেশা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে গেছে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেরা এ নেশার শিকার। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে গাঁজা ও ভাংখোরদের আড্ডা জমে ঊঠে। পুলিশকে খবর দিলে পুলিশদের পোয়াবারো। ধমকি ধামকি দিয়ে সেলামি নিয়ে স্বস্থানে প্রস্থান। চোলাই মদ। নেশার  অপর একটি উপাদেয় পানীয়র নাম। জনৈক মদ পানকারীর সাথে আলাপ করে জানা গেল দেশী বা চোলাই মদ দু’ভাবে তৈরী করা হয়। বাবলা গাছের ছাল ও  নিশাদল দিয়ে এবং অন্যভাবে ভাত রান্না করে ভাতের পাতিলে কিছু গাছগাছরা দিয়ে ঢাকনি আটকিয়ে৭/৮দিন রেখে দিলেই পচে তরল আকার ধারণ করে। এ মদ বিক্রি হয় ১০০টাকা লিটার। সন্ধ্যা থেকে রাত যত গভীর হয় মদ পানকার দের  আনাগোনাও তত বেশী হয় মদ বিক্রেতার বাসায়। আলাপচারিতায় জানা গেল, কোন কোন মদ্যপায়ী দু তিন লিটার  পর্যন্ত এ নেশা পান করে।  একদিন সকালে পাকা রাস্তা ধরে হাঁটছি-এমন সময় দেখি একটু অদুরেই বেশ কিছু লোক জমায়েত হয়েছে। কৌতুহল বেড়ে গেল। হাঁটি হাঁটি পা পা করে সেখানে পৌছে গেলাম। দেখি পরিচিত এক মদ্যপায়ী মদ পান করে বেহুশ হযে রাস্তার পাশে পড়ে আছে। পড়নে কাপড় নেই। আছে গলায় জড়িয়ে। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মুখে যাচ্ছে ও বেড়িয়ে আসছে। প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন, এ মদ্যপায়ীর প্রায় আট দশ বিঘা জমি ছিল। এই মদ পান করার কারণে এখন সে নি:স্ব। তারপরও নেশা ছাড়েনি বরং বেড়েছে।

চা আর একটি নেশার উপকরণ। এই নেশায় আসক্ত অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জনগণ। বিশেষ করে দরিদ্র শ্রেণীর লোকজন চা পান করে থাকেন বেশী। চা স্টলে আড্ডা জমানো ও চা পান করে সময় কাটানো অনেক মানুষ আছে। গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুর গ্রামের জনৈক করিম সেখ চিড়কোল গ্রামের মাদার আলী এ অঞ্চরের নামকরা চা খোর হিসেবে পরিচিত। ঝড় বৃষ্টি বাদলা উপক্ষো করে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে চা পান করতেন। চা না পেলে তারা প্রায় পাগল হয়ে যেতেন।

সাংবাদিকতার সুবাদে বেড়গঙ্গারামপুর গ্রামের জনৈক চা পানকারীর সাথে সাক্ষাৎ করে দেখেছি, উনি প্রতিদিন পাচ লিটার চা পান করেন। গোটা বিশ্বে এমন আধুনিকতার ঢেউ লেগেছে যেটা শহর থেকে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ উন্নত হচ্ছে সব কিছুর চিত্রও তেমনি  দ্রুত বদলে যাচ্ছে। নেশার জগতে আধুনিকতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সম্ভ্রান্ত ও ধনী পরিবারের উন্নত মানের মদ ফেন্সিডিল-হিরোইনের মত নেশায় সমগ্র বিশ্ব সয়লাব। ইয়াবা তো ইদানিং প্রাত্যাহিক চর্চার প্রসঙ্গে রুপ নিয়েছে।

মাস কয়েক আগের কথা। হিরোইনের নাম শুনেছি। কিন্তু হিরোইন সেবীর সাথে কখনো সাক্ষাৎ ঘটেনি। আমি শেভ করার জন্য এক সেলুনে ঢুকলাম। দু’জন নাপিত। একজন ২০/২৫ বছরের যুবক,অন্যজন বয়স্ক। লিকলিকে চেহারা। শরীর একদম হাড্ডিসার। ঐ চেয়ারটা ফাঁকা দেখে বসে পড়লাম। উনার হাত সহ সারা শরীর কাঁপছে, তবে বিষয়টা তখনও আঁচ করতে পারিনি। যুবকটি তাকে উদ্দেশ্য করে বলছে, হাত কাঁপছে কেন?  এই বয়সে অভাব অনটনের সংসারে হিরোইন খাওযার ফল এরকমই হয়। ততক্ষণে ক্ষুরের কাজ চলছে। ভয় পেয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম ক্ষুরটা গলায় বসিয়ে না দেয়। অনেকবার মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করলাম। সেদিনই প্রথম প্রত্যক্ষ করলাম হিরোইন সেবী। কাজ শেষে যুবকের সাথে আলাপের মাধ্যমে জানলাম, বহুদিন যাবত সে নেশাগ্রস্থ। সংসারটা ধ্বংস করে ফেলেছে। এসব নেশার সামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সাথে সংবদ্ধ চক্র কাজ করে। তারা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় কাজ চালিয়ে যায়। উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীসহ প্রায় সব বয়সী পুরুষও মহিলারাও এ কাজে জড়িত। ইয়াবা-ঘুমের ট্যাবলেট-ইনজেকশন আর এক জাতীয় নেশা। প্রেমে ব্যর্থ-খুন-খারাবি-চোরাকারবারীর সাথে যারা জড়িত তারাই এ জাতীয় নেশায় অভ্যস্ত। সূধী পাঠক ,এতক্ষণ যেসব নেশা সম্পর্কে আলোচনা করলাম; এবার একটু ভিন্ন স্বাদের নেশা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। নারী জগতে বিচরণও একধরনের নেশা। সত্তরের দশকে তাড়াশ উপজেলার কুশাবাড়ি গ্রামের জনৈক কাঙ্গাল নামক ব্যক্তির ৩/৪টি স্ত্রী ছিল। দিন রাত স্বামী কার ঘরে রাত যাপন করবে এ নিয়ে ঝগড়াঝাটি লেগেই থাকত। কাঙ্গালও বউদের জ্বালায় অতিষ্ঠ। এক পর্যায়ে সে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে আত্মহত্যা করেছিল। অতিসম্প্রতি তাড়াশে ঘটে যাওয়া একটি প্রতিবেদন সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তায় প্রকাশিত হয়েছে। তাড়াশের নওখাদা গ্রামের জনৈক রাতচোরা প্রতিবেশীর বাড়ীতে ঢুকে যৌনাচার করতে গিয়ে তার যৌন যন্ত্রটি চিরতরে খোয়া গেছে। নাইজেরিয়ার জনৈক আ: রহমান নামক ব্যক্তির বয়স ৯৮ বছর। তার ৯৫ জন স্ত্রী । পত্রিকা মারফত জানলাম, এ বয়সেও আরো পতœীর খায়েস রয়েছে তার।

ইদানিং আর এক বড় নেশা অতথ-বিত্ত। অনুন্নত উন্নয়নশীল তথা উন্নত দেশগুলিও অর্থের নেশায় বেপড়োয়া। এক দেশ অন্য দেশের চেয়ে বেশী সম্পদশালী হবার পাল্লা দিচ্ছে। উন্নত দেশ, অনুন্নত ও  উন্নয়নশীল দেশে অস্ত্র বিক্রি-বৈধ অবৈধ পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কামাই করার নেশায় মত্ত। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ অর্থের নেশা অত্যন্ত ভয়াবহ। ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোর্টকাচারী চিকিৎসালয় সর্বত্র এক আতংকজনক অবস্থা বিরাজ করছে। শুধু টাকা,টাকা আর টাকা। এ প্রবণতা উপর লেভেল থেকে শুরু করে গ্রাম গঞ্জের হোমরা চোমরা পর্যন্ত গড়িয়েছে। বৈধ অবৈধ হারাম হালাল কোন কিছুই তোয়াক্কা নাই। চাই শুধু অর্থ। হতে চাই বিত্তশালী। বাড়াতে চাই ব্যাংক ব্যালেন্স। এক্ষেত্রে মাদককেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে অর্থ কামাইয়ের দুর্দমনীয় নেশা।

 

কবি সাহিত্যিক লেখক যারা এ জগতে বিচরণ করেন তারাও নেশাগ্রস্থ। লেখালেখি ছাড়া তাদের ভাল লাগে না, সময়  কাটে না। একজন সাংবাদিক লেখক তার লেখনিতে সামাজিক অবক্ষয় দূর্নীতির খবর জনসমক্ষে তুলে ধরতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন, জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যুদ্ধক্ষেত্রের , সভা সমাবেশের খবর সংগ্রহ করতে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন শুধু এক ধরনের নেশার কারণে। সে নেশা সততা, ন্যায্যতা, মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র , ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা ও সুরক্ষা দেওয়ার মহান লক্ষ্যে। নেশার জগতে  এবার এক নতুন সংযোগ ইন্টারনেট ফেসবুক। এজগতে পদচারণা এখন যুবক যুবতীদের বেশী। দিনের বেলায় কমই ব্যস্ত দেখা যায়। রাত যত গভীর হয় ল্যাপটপ মোবাইল ফোনের ব্যবহার তত বেড়ে যায়। ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ চারিতা শুরু হয়।প্রেম প্রেম খেলা/গড়িয়ে যায় বেলা/অবশেষে ছাড়াছাড়ি/ কুমারী মাতার গলায় দড়ি”। নেশার জগতে নি:সন্দেহে জুয়ার নাম প্রনিধানযোগ্য। বিশ্বের ধনাঢ্য ব্যাক্তি চিন ও ক্রীড়া জগতের নায়ক নায়িকা-খেলোয়ার থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের সাধারণ পরিবারের লোকজন এ নেশাগ্রস্থ। বিশেষ করে বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট শুরু হলে বড় বড় জুয়ারীরা এ নেশায় জড়িয়ে যায়। এ ছাড়া সাধারণ হোমরা চোমরাও রাত জেগে তাস খেরার মাধ্যমে জুয়া খেলে। এ জুয়া খেলায় ও অনেক পরিবার সবর্স্ব খোয়ায়ে পথে বসেছে। এ চিত্র ভুড়িভুড়ি।

সুপ্রিয় পাঠক পাঠিকা , উপরোক্ত আলোচনা পর্যালোচনা থেকে নেশার খারাপ দিকগুলো উঠে এসেছে। এবার আপনাদের উপহার  দেব নেশার জগতে উপকারী কিছু তথ্য বা ভালো মানবতাবাদী নেশার কতিপয় দৃষ্টান্ত।বিশ্ব পরিমন্ডলে যত জ্ঞানী লোকের জন্ম হয়েছিল বা হচ্ছে সবাই জ্ঞান চর্চ্চা তথা অগাধ পড়াশুনা করেছিলেন। এটা ছিল তাদের নেশা । ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। বাতি জ্বালিয়ে পড়াশুনার সামর্থ না থাকায় রাস্তার পাশে জ্বালানো গ্যাসবাতির নীচে দাঁড়িয়ে গভীর রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করতেন। ওয়ারেন বাফেট একজন মার্কিন ব্যবসায়ী। তিনি অবসর কালে শতকরা ৮০ ভাগসময়ই পড়াশুনার কাজে ব্যায় করতেন। সমাজতত্ববিদ আল বেরুনি মৃত্যু শয্যায় শায়িত থেকেও জ্যামিতির একটা অজানা সূত্র জানতে চেয়েছেন। মুসলিম উম্মার গর্বের মুকুট মুসলীমের একটা হাদিস খুজতে গিয়ে সারা রাত ঝুড়িতে রাখা খেজুর খেয়েছেন আর হাদিস খুজেছেন এবং ঐ ভুক্ত খেজুরের ফলেই উনি মারা যান। ড: শহীদুল্লাহ বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে বই পড়তে গিয়ে আটকা পড়েছিলেন।বাংলা সাহিত্যের উজ্জল নক্ষত্র আ: মান্নান সৈয়দ, বৃটিশ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তক জন স্যাকেল, কিশোর জনপ্রিয় বইয়ের লেখিকা জে,কে বাউলিং প্রমূখ ব্যক্তিবর্গ বইয়ের প্রতি অত্যন্ত নেশাগ্রস্থ ছিলেন এবং তাদের অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। সার্বিক দিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যাবে মানুষ মাত্রই কোন না কোন নেশাগ্রস্থ। তবে খারাপ ও ক্ষতিকর নেশার কারণেই বিশে^ হানা হানি-খুন-যখম-যুদ্ধসহ নানাবিধ অশান্তি লেগেই আছে। বিধ্বংসী নেশার কারণেই সামাজিক ও নৈতিক বৈশিষ্টের অবক্ষয়। এসকল সমস্যা মোকাবেলায় এক মাত্র হাতিয়ার নেশা মুক্ত দেশ ও সমাজ গঠন।

 

লেখক: কবি ও সাহিত্যিক। পুরুলিয়া, গুরুদাসপুর।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD