চলনবিল বার্তা ফিচার :
গত ৯ জুলাই ছিল সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার ২য় প্রতিষ্টা বার্ষিকী। ১০ জুলাই এটা তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে।বিগত দুই বছরের পথচলা মোটেও সুখকর ছিল না নানা কারণে। ছিল ঝনঞ্ঝা ক্ষুব্ধ, সংগ্রামমুখর। বিশেষত ২য় বছরে এই ক্ষুদে পত্রিকাকে বিভিন্ন প্রতিকুলতা অতিক্রম করতে হয়েছে। যদিও লেখক-সাংবাদিক ও পাঠক-শুভান্যূধায়ীদের ভালবাসা ও সহযোগীতা-অনুপ্রেরণা অব্যাহত রয়েছে। আমরা জাতীয় পত্রপত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা মোকাদ্দমার খবর জানতে পারি। আগে ভাবতাম, জাতীয় পর্যায়ের বড় বড় পত্রিকাগুলো কর্পোরেট বাণিজ্য বা শিল্প কিংবা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মুখপত্র হিসেবে প্রকাশ পায় বা সে রকম দর্শনে ও মতবাদে চলে।। সে দিক থেকে তাদের সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ থাকে। এমনকি সরকার অথবা রাষ্ট্র পর্যন্ত সময় বিশেষে প্রকাশ্যে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এমনি করে বছরের পর বছর তাদের বিরুদ্ধে সরকারের বৈরীতা সূচক নিষেধাজ্ঞা আরোপ চলতে থাকে বিচিত্র ফন্দি-ফিকিরে বাজে অজুহাত তুলে। সেসব প্রসঙ্গ জাতীয় প্রভাবশালী ইলেকট্রনিক্স বা প্রিন্ট মিডিয়া সম্পর্কে খাটে। কিন্তু অজপাড়া গাঁ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার মতো একটি সীমিত প্রচারের স্বল্পখ্যাত কাগজের পিন্ডেয় কোনো ব্যাক্তি বা গোষ্ঠী ঈর্ষাপরায়ণ হবে তা প্রথমে চিন্তায় আসেনি। সাধারণভাবে দেশের ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিবেশ, ভঙ্গুর গণতন্ত্র,প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, প্রকৃত বিরোধীদলবিহিন পার্লামেন্ট ও কার্যত প্রায় এক দলীয় শাসনের হেতু বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা অনেকটাই আজ ক্ষুন্ন মর্মে জাতীয়-আন্তর্জাতিক মতামতে উঠে এসেছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও সংকুচিত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ কতিপয় কলাকানুন মানুষের স্বতস্ফুর্ত মত প্রকাশের ও মুক্ত চিন্তাভাবনার পরিপন্থী বলে অনেক দিন যাবত বলাবলি ও গণমাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে।
আমরা লক্ষ্য করছি, মূলত প্রযুক্তির অপব্যবহার নিরোধের নামে মানুষের প্রগতিশীল চিন্তা চর্চ্চা অনুশীলনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা হয়েছে। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের পরিধি রাষ্ট্রকে এত ব্যাপকভাইে প্রভাবিত করেছে যে তা অন্য সব সেক্টরের মতো গণমাধ্যম অঙ্গনেও ছোবল মেরেছে। ফলে, সংস্কৃতি , আদর্শ ও প্রকৃত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া অনেকটা গুরুত্বহীন বলে মনে হয়। হীন সংকীর্ণ মতলব ও উদ্দেশ্যপ্রনোদিত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক তথাকথিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী, লাঞ্ছিত ও নিপীড়নের শিকার হয়েছে বহু সাংবাদিক এবং সেই অমানবিক ও অগণতান্ত্রিক ধারা এখনও বিদ্যমান। দেশে-বিদেশে এর সমালোচনা হলে এবং সংশোধনের দাবী জানাওে সরকার তা অবশেষে আমলে নেয় নি। যার ফলশ্রুতিতে প্রায় সদা সর্বদা ভয়, আতংক, আশংকা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিয়ে সাংবাদিকতার কলম চালাতে হয়। প্রবাদে কলম তরবারীর চেয়ে শক্তিশালী বলে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু এখানে সেটা খাটে না। সে দৃষ্টিভংগীতে কেউ চিন্তা-ভাবনাও করে না।
আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে সেই কলম বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠী, রাষ্ট্র ও সরকারে রোসানলে পড়ে ভীরু, ¯œত্রস্থ তথা সেলফ সেন্সরের বৃত্তে বন্দী হয়ে পড়েছে। দেশের রাজনীতিতে যেমন গুম-খুনের ভযের সংস্কৃতিতে অগনিত মানুষ অবিরত সকরুণ অশ্রুপাত করে চলেছে। জাতির বিবেক ও সত্যের পূজারী কলম সৈনিকেরাও অনুরুপ ভয়ের সংস্কৃতির বলয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে অহর্নিশী। কী লিখে কখন কী যে ঘটে -সেই অজানা শংকার ডংকা বাজতে থাকে বুকের মধ্যে। এভাবে দেশের মানুষের অধিকার ও আশা প্রত্যাশার সত্যিকার প্রতিফলন ঘটে না। এতে শুদ্ধ ও মুক্ত সমাজ বিকাশ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন ও উৎকর্ষ ব্যাহত হয়। এভাবেই বিশের¦ দেশে দেশে কর্তৃত্ববাদ, জনতুষ্টিবাদী ও উগ্রজাতীয়তাবাদ প্রসার লাভ করে চলেছে।
তবে দু:খজনক হল,উপরোক্ত আক্ষেপসূচক যেসব কথাবার্তা বলা হল তারই বাস্তব ছায়াপাত ঘটেছে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তার যাত্রা পথেও।গত জাতীয় নির্বাচনে এ পত্রিকার দু’জন সাংবাদিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে অতি সামান্যই দু’তিনটি প্রতিবেদন পেশ করেন পত্রিকায়।তাতেই তেলে বেগুনে জ¦লে উঠলেন স্থানীয় বিশেষ একটি রাজনৈতিক ব্যক্তি বিশেষ। অথচ প্রািতবেদনে কোন নির্দিষ্ট দল কিংবা রাজনীতিকের কথা উল্লেখ ছিল না। ছিল অনেকটাই নৈর্ব্যক্তিক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোনে নির্বাচনী পরিবেশ পর্যালোচনা। তাতেই হুমকি-ধামকি ও চোখ রাঙ্গানো হল আমাদের পত্রিকার ওপর। এব্যাপারে জনৈক স্থানীয় নেতার মন্তব্য ছিল, জাতীয় পত্রিকাও এতটা সমালোচনা করে না।সেজন্যই অসহিসনু রাজনৈতিক নেতাদের হাম্বিতম্বি ও রূঢ় সতর্কতার নোটিশ। এরপরের ঘটনা বিগত উপজেলা নির্বাচন ঘিরে।তখন ¯্রফে প্রতিপক্ষের সাক্ষাৎকার ও ছবি ছাপাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রতিহিংসার বলি করা হল চলনবিল বার্তা পত্রিকাকে। ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপনে ভুলত্রুটির অজুহাত তুলে কোর্টে ডিজিটাল আইনের আওতায় মামলা করার প্রস্তুতি চলল। অথচ এটা ছিল একটা বিবেকহীন ও যুক্তিহীণ আস্ফালণ। একান্ত ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়নতার মানসিকতা থেকে এই সংকীর্ল আক্রমনের সূত্রপাত যেখানে পত্রিকা কোনো পক্ষই না। তাছাড়া আমরা লক্ষ্য ্র করেছি,প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে সরকারি-বেসরকারী তরফ থেকে প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক জানানো হয়েছে যা নিয়মসম্মত নয়।তথাপি আমরা তাদেরকে বিনয়ের সাথে তাদের নিজস্ব লিখিত ভাষ্য বা প্রতিবাদ দিতে বলেছি। অবশ্য তারা তা দেয়নি। এসবের প্রেক্ষিতে পত্রিকা সম্পাদকের পক্ষে ধৈর্য, সহনশীলতা , প্রজ্ঞা ও সংবরণশীলতা প্রদর্শন করা ছাড়া আর কী-ই বা করার থাকে। যে দেশে রাজনীতির মাথামুন্ডু ও গতিপ্রকৃতি ঠিক নেই তথা নীতি আদর্শ বিবর্জিত, সেখানে সংবাদপত্র যে রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ সে অমূল্য বাণী কে মানে কিংবা সেভাবে চিন্তা করে। হয়তো একদিন দেশের শাসন ব্যবস্থা আরো উন্নত ও ভারসাম্যপূর্ণ হলে, শুধু সম্পদে নয়, সভ্যতার সিড়িতেও অগ্রগতি ঘটলে গণমাধ্যমের এই গ্লানিকর ও বিব্রতকর অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা যেতে পারে।।