এম.রহমত উল্লাহ্ :
চলনবিলের নাম শুনলে এখন আর সেই অতীত আন্দামান দ্বীপের নির্বাসনের চিত্র স্মৃতিপটে ফুটে ওঠে না। আবার বৃটিশ আমলের সরকারী কর্মচারীদের বদলী ভীতি ও হৃদয়কে প্রকম্পিত করে না। আবার মাছ পাখির অভয়ারেণ্য শিকারীর আনাগোনা তাও তেমন চোখে পরে না। ম্যালেরিয়া, কলেরা, ক্বালাজ্বর, যক্ষা প্রভৃতি দুরারোগ্য রোগের রুগীও এখন আর নাই। বিলে আইশাল-কাইশাল-আড়াইল, পদ্মা, কালাই, ফুপড়ি, ঝোপ-জঙ্গল, কচুরীপানা, দাম-দল, জোঁক, সাপ, শিয়াল, বাঘা, কুমির এখন আর মানব সভ্যতার অন্তরায় নয়। দুই চার গ্রাম ঘুরে একজন পত্র পাঠ উদ্ধারের বিদ্যান তা ভাবাই যায় না। ঢেপের ভাত, শালুক, শেকট, ঘাসের বিচি, ঘেচু ,কচু খেয়ে জীবন ধারণ-এমনটি বর্তমান চলনবিলের দৃশ্য নয়।
কিন্তু বেশী দিন নয় ১৯৫৪ সনের পূর্ব পর্যন্ত চলনবিলের তথৈবচ অবস্থাই বিরাজিত ছিল। খৃষ্টপূর্ব ৩২০ অব্দে গ্রীক বীর আলেকজান্ডার ভারত বর্ষে এসেছিলেন রাজ্য বিস্তারের আশায়। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য ! কিছু এলাকা বিজয়ের পরই তাকে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তিনি জ্বরে অসুস্থ হয়ে পরেন এবং তার সেনাপতি সেলুকাছের হাতে রাজ্য ভার অর্পন করে স্বদেশে ফিরে যেতেই ব্যাবিলনে মৃত্যু বরণ করেন। ভারত বর্ষের জন্য সৌভাগ্য কি দুর্ভাগ্য বুঝি না তবে ভারত আক্রমনের সাধ তার প্রাকৃতিকভাবেই মিটে গিয়েছিল। চলনবিলের ম্যালেরিয়ার শক্তি যে কত ভয়াবহ তা অনুমেয় বটে। ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়া উদ্দেশ্য নয়। আসল ব্যাপার হলো চলনবিল- যা নিয়ে অতীতেও ভাবা হয়েছে এখনও হচ্ছে- ভবিষ্যতে আরও কতদিন ভাবতে হবে ভবিতব্যই জানে। তবে অতীত থেকে বর্তমানে পৌছাতে চলনবিলকে শত শত ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। কোন এলাকার উন্নয়ন কলমের খোঁচা ছাড়া হয় নাই কোন দিন। আর এই কলম যারা ধরে তারাই কলম সৈনিক।
কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক- এই জ্ঞানী মানুষগুলোই- জাতিকে দেশকে দুনিয়াকে সমাজকে নূতন করে ভেঙ্গেচুরে পুন:জনম দিতে পারে সে এই কলমের কালী। সাড়া দুনিয়ায় প্রতিনিয়ত কলমের কালী বেয়ে চলেছে সভ্যতার মাপকাঠি। আর সভ্য-জগতের দর্পণ সংবাদপত্র পত্রিকা- যা দুনিয়াকে সুন্দর করতে জীবন পণে এগিয়ে চলেছে। সত্য প্রচার, সত্য উদঘাটন, সত্য প্রতিষ্ঠার মোক্ষম হাতিয়ার- সংবাদপত্র। আর সংবাদপত্রের প্রাণ কঠোর সাংবাদিকতা। নির্ভিক সত্যদর্শি অনুসন্ধানী সাংবাদিকরাই সভ্যতার ধারক বাহক। কূশাসনের বিরুদ্ধে, ক্বালা কাননের বিরুদ্ধে গঠনমূলক সমালোচনাই এগিয়ে নিয়ে যায় বিশ্ব সভ্যতাকে। আমাদের চলনবিল অন্ধকার থেকে আলোকে হাটি হাটি পা পা করে এখন অনেক এগিয়ে। আশার কথা- চলনবিল অঞ্চলের এখন প্রতিদিন কোন না কোন খবর বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। জাতীয় পত্র-পত্রিকা পিছিয়ে নেই। স্থানীয় পত্রিকা ঘরের খবর প্রতিনিয়ত প্রকাশ করে স্থানীয় সমস্যার নিখুঁত চিত্র তুলে ধরছে। আমরা ঘরে বসে যে কোন সংবাদ জানতে পারছি; শিক্ষা সংস্কৃতি অভার অভিযোগ সুখ দু:খ সবই প্রকাশ হচ্ছে। পূর্বে আমাদের এই সুবিধা ততটা সুন্দর ছিল না। আশার কথা, আনন্দের কথা আজ চলনবিলের নিভৃত পল্লী অঞ্চলাশ থেকে ‘চলনবিল বার্তা’ গত দুই বছর যাবৎ নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে। জানি এতে সম্পাদক-প্রকাশকের গলদঘর্ম কম হচ্ছে না। তবুও মানব সেবা, দেশ সেবা তথা বিশ্ব মানবতার কল্যাণের কঠিক কর্মটি করেই চলেন। এ জন্য কর্তৃপক্ষ ধন্যবাদ পাওয়ার দাবী রাখে।
লেখক: সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি, সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা। দোবিলা, তাড়াশ।