আব্দুল লতিফ সরকার :
সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ আর সাংবাদিক একজন সমাজের বিবেক। একজন সাংবাদিকের বিবেক যত সজাগ ,পত্রিকায় তখনই তার লেখা সমাজে প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট হয়ে ভেসে ওঠে, দৃষ্টিগোচর হয় সমাজের মানুষের কাছে। একজন সাংবাদিকের কোন বন্ধু নাই, দু চোখে যা দেখবে এবং যা শুনবে তাই লিখবে এমন ব্রত গ্রহণ করলেই কেবল একজন সাংবাদিক বস্তনিষ্ঠু সংবাদ ,খবর বা বার্তা লিখতে পারে। সংবাদপত্রে প্রকাশের সংবাদ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারবে। আর তখনই সেই পত্রিকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বাড়তে থাকবে। আমার মনে হয় ইতিমধ্যে সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তা চলনীদের অন্তরের অনেকটা জায়গা জুড়ে বসেছে- চলনীদের মনের কথা তুলে ধরতে পেরেছে বলেই।
পত্রিকায় দেখলাম চলনবিল বার্তা ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে যাচ্ছে জেনে আনন্দিত হলাম। কেননা বর্তমান ডিজিটাল যুগে যেখানে দৈনিক পত্রিকা অনলাইন ও ফেসবুকের ছড়াছড়ি সেই যুগের উপজেলা শহর থেকে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা চ্যালেজিং ও দু:সাধ্য ব্যাপারও বটে। আর এই কঠিন কর্মটিকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে গ্রহণ করেছে আমার বন্ধুবর চলনবিল বার্তার সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক রাজু। চলার পথে গন্তব্য থাকে । তবে মনে করি একটি পত্রিকার চলার কোন গন্তব্যস্থল নাই। শুধু চলতেই থাকে লক্ষ্যকে স্থীর রেখে। আমার বিশ^াস সেই পথে এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে চলনবিল বার্তা। এক্ষেত্রে সাংবাদিকতার আদর্শই তার মূল লক্ষ্য, উদ্দেশ্য।
গত বৎসরে লক্ষ্য করেছি পত্রিকার সম্পাদকীয় উপসম্পাদকীয় প্রবন্ধ, নিবন্ধ, কবিতা ও সংবাদে উঠে এসেছে সমাজে দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার দূ:শাসনের বিরুদ্ধে লেখা পরে। ইতোমধ্যে চলনবিলের বুদ্ধিজীবি মহলের তা নজর কেড়েছে। প্রশাসনের নিষেধ, ক্ষমতাধরদের রক্তচক্ষু হামলা, মামলার ভয় উপেক্ষা করে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে লেখাগুলি। আবার বিভিন্ন অভাব, অভিযোগের পাশাপাশি সরকারী উন্নয়নের খবর ওঠে এসেছে। এতে বোঝা যায় পত্রিকাটি দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন ভূমিকায় কাজ করে যাচ্ছে। যা অত্যন্ত প্রশংশনীয়। মূলত আমাদের ধর্মেরও কথা এটাই যে, ন্যায় ও সত্য কথা বলার একটি দল থাকতে হবে। ইতোমধ্যে লক্ষ্য করা গেছে ক্ষমতাধরদের দুর্নীতির খবর প্রকাশ হওয়ায় সেই কাজগুলো পূণ:করা হয়েছে। এতে পত্রিকাটি একশ্রেণির মানুষের কাছে যেমন ত্রাসের সৃষ্টি করেছে অপরদিকে বুদ্ধিজীবিদের কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছে।
চলনবিল বার্তা পরিবার অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না তা পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে বোঝা যায়। যে সকল বিজ্ঞাপন পত্রিকায় প্রকাশ পাচ্ছে তা থেকে কতটুকু বা সাপোর্ট আসছে, প্রশ্নসাপেক্ষ। কেননা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি ঐ সকল বিজ্ঞাপনের টাকা তুলতে কতবারই দেখা করতে হয়। তারপর অনেকের কাছে ঘুরে বিরক্ত হয়ে যাওয়া হয় না। এমনকি বড় মাপের মানুষেরাও এক্ষেত্রে কথা দিয়ে কথা রাখে না। ব্যবসিক বিজ্ঞাপন কম, ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন সামান্য বেশী। এটা পত্রিকার জন্য সহায়ক নয় নানা কারণে।
তাই চলনবিল বাসীর একমাত্র মুখপত্র চলনবিল বার্তা টিকে থাকতে, বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারী বিজ্ঞাপন ছাপা প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমি একজন চলনবিলবাসী হিসেবে চলনবিলস্থ উপজেলাগুলোর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবদেরর সুদৃষ্টি কামনা করছি। উপজেলার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চলনবিল বার্তা পত্রিকায় দিতে সহযোগিতা করার জন্য ও পত্রিকাটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করে এই সহযোগীতা করা যায়। একাজটির অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য বিশেষ করে তাড়াশ উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেব এগিয়ে আসবেন বলে আশা রাখি। একই উদ্দেশ্যে এলাকার লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক মহলও এগিয়ে এলে ভাল হবে।
চলনবিল উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের উন্নয়ন হওয়ায় গ্রামগুলোতে বাজার সৃষ্টি হয়েছে তাই সব উপজেলার গ্রামগুলোতে চলনবিল বার্তা পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চলনবিল বার্তা পরিবারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিশেষে পত্রিকা পরিবারকে আন্ত্ররিক ধন্যবাদ তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টার জন্য। পত্রিকাটির সাহসী ভূমিকা নিয়ে প্রকাশ হতে থাকুক। এই কামনা রইলো।
লেখক : কবি-প্রাবন্ধিক। পাঁড়িল, তাড়াশ।