ইসলামের দৃষ্টিতে সাংবাদিকতা

Spread the love

ডাঃ আমজাদ হোসেন মিলন
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিকরা দেশের জাগ্রত বিবেক। সাংবাদিকদের প্রধান ও একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে সত্যের সংরক্ষণ এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা। তাই জ্ঞানী গুণী,কবি সাহিত্যিকরা বলে থাকেন, সাংবাদিকদের কলমের ক্ষমতা তরবারির চেয়ে ধারালো ও শক্তিশালী।অতএব সহজেই অনুমেয় যে, কলম একটি অস্ত্র যা সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের চেয়ে মারাত্বক।এই কলমের দ’ুফোটা কালি পৃথিবীর সমস্ত ধন সম্পদের চেয়েও অধিক মূল্যবান। আর সেই কলম যখন কোন সাংবাদিকের হাতের অস্ত্র হয় তখন তার ক্ষমতাও বেড়ে যায় অন্তহীনভাবে। সাংবাদিকগণ সমাজের ও দেশের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় শ্রেণী। সুতরাং তাদের উচিত সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করা। এ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলে সংবাদপত্রের চরিত্র নষ্ট হয়।এ ধরনের সাংবাদিকতাকে সাম্প্রতিক কালে হলুদ সাংবাদিকতা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। সংবাদপত্র হচ্ছে লোক শিক্ষক। জনকল্যাণের জন্য তা যেন সঠিকভাবে কাজ করে সেদিকে সাংবাদিকদের আন্তরিক হতে হবে। তাহলে সংবাদপত্র তার সঠিক ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।সংবাদপত্রের জগতে যেমন আছে সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক, তেমনি আছেন অসৎ ও ধান্দাবাজ সাংবাদিক। অথচ নিরেপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য সংবাদ পরিবেশনই সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকের প্রধান কর্তব্য।
ইসলাম ও সাংবাদিকতা বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে জানা গেল যে,চৌদ্দশ বছর আগে সাংবাদিকতা বিষয়ে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর রাছুল(সাঃ) যে গাইড লাইন দিয়ে গেছেন তা এক কথায় অনন্য। কেননা, ইসলামে সাংবাদিকতা এক ধরনের আমানত।আর এ আমানত হচ্ছে, যে কোন তথ্য ও সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা। নিজস্ব চিন্তা কিংবা দল মতের রংচং মাখিয়ে সংবাদকে আংশিক বা পুরাপুরি পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা কিছুতেই ইসলাম সমর্থিত নয়। সুতরাং এক্ষেত্রে করণীয় হল -কোন রুপ সংযোজন বিয়োজন ছাড়াই সংবাদ পরিবেশন এবং সংবাদের অঙ্গ সজ্জায় কেবল নিরেট সত্যকে এবং বাস্তবতাকে তুলে ধরা। আর এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন– ইয়া আইওহাল্লাজিনা আমানু ত্বকুল্লাহা ওয়াকুলু কওলান সাদিদা-হে ইমানদারগন! তোমরা আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বল। সুরা আল আহজাবঃ ৭০। এ সম্পর্কে অত্যন্ত চমতকার একটি হাদিস বনিণত হয়েছে। রাছুল(সাঃ)বলেনঃ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির চেহারাকে উজ্জ্বল করেন! যিনি আমাদের থেকে যা শুনেছেন তা হুবহু ধারণ করে অন্যের কাছে অবিকল কায়দায় পৌঁছে দিয়েছে। (সুনানে তিরমিযীঃ২৬৫৭)
সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাছুল ( সাঃ) এর এই নির্দেশনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের আগে তথ্য যাচাই বাচাই করতে হয়।আর যে খবরটি মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে তা আদৌ সত্য কিনা তা যাচাইয়ের সুস্পষ্ট নিয়ম-নীতি রয়েছে গণমাধ্যমে। কোন ধর্ম, আদর্শ, মতবাদ ও সভ্যতাই মানুষকে মিথ্যাবাদী হতে শিখায় না, ইসলামও এর ব্যতিক্রম নয়। ইসলামে মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবিরা গুনাহ। রাসূল (সাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদের কবিরা গুনাহ সম্পর্কে অবহিত করবো না? কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন।সাহাবায়ে একরাম(রাঃ)বললেন হে আল্লাহর রাছুল সাঃ! হ্যা,অবশ্যই অবহিত করুন। তিনি তখন বললেন,আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা এবং মা-বাবার অবাধ্য হওয়া।এরপর হেলান দেওয়া থেকে সোজা হয়ে বসে রাসূল সাঃ বললেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়াও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা -সহি (বোখারী)। অতএব সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরুপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য। আর এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনেও রয়েছে চমৎকার দিক- নির্দেশনা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,হে ইমানদারগন! তোমাদের কাছে যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা যাচাই-বাচাই করে নাও,তাতে তোমরা অজ্ঞতাবশতঃ কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত না হতে হয়।”(সুরা আল-হুজরাত:৬) সাংবাদিকের জন্য পবিত্র কুরআনের এই আয়াতটি অতীব গুরুপূর্ণ।সংবাদকর্মীরা যদি কোন তথ্য সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই না করে গণমাধ্যমে প্রচার করে দেন,তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে।যার মাসুল ঐ সংবাদকর্মী দিতে পারবে না। এ কারণে আল্লাহ তায়ালা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই না করে সংবাদ গ্রহণ ও পরিবেশন করতে নিষেধ করেছেন। অনেক সংবাদকর্মী এমনও আছেন, তারা লোক মুখে যা শুনেন তাই নির্বিচারে মিডিয়া তথা গণ-মাধ্যমে প্রচার করে দেন।এটিই ইসলামে নিষিদ্ধ। সুতরাং আসুন, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে কুরআনিক দাওয়াতে অংশীদার হই।

লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক , প্রতাপ, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD