প্রতিক্ষার প্রহর গুনছি কবে দেখবো তোমার সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা

Spread the love

গাজী সৈয়দ শুকুর মাহমুদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বজ্রকণ্ঠে বলেছিলে- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম । যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকবে, শত্রুর মোকাবেলা করতে। আরও বলেছিলে -অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তোল যুদ্ধ বিগ্রহ শুরু হলেও করবে। তোমরা আমাকে বাংলার স্বাধীনতা এনে দাও, আমি তোমাদের সোনার বাংলা উপহার দিবো। তোমার সেই বজ্রকণ্ঠের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে বাংলার ছাত্র-জনতা, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম শত্রু সৈনদের উপরে। প্রতিহত করেছিল দখলদার হানাদারদের। মাত্র ন’ মাসের যুদ্ধে দেশ ও মাতৃভূমির মুক্তির, জাতির স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনা হয়েছিল তোমাকে উপহার দিয়েছিলাম স্বাধীনতা। এখন প্রতিক্ষায় প্রহর গুণছি কবে দেখবো তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতার স্বপ্ন একদিনের নয়, বাঙালি জাতি গড়ে উঠার পর থেকে নানাভাবে নির্যাতন আর পরাধীনতার জালে আবদ্ধ ছিলো। বহুবার ফুসে উঠেছে এ জাতি। বারবার আন্দোলন যুদ্ধ বিগ্রহ করেছে, অনেক রক্ত, বহু প্রাণ দিয়েছে বাঙালি জাতি। হাজার বছরের চেষ্টা, সংগ্রাম, আন্দলোন করেও সফল হতে পারেনি। সর্বশেষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ন’ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অর্জিত হয়েছে বাঙালি জাতির পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে এদেশের দামাল ছেলেরা ছাত্র-জনতা এক হয়ে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরনপণ যুদ্ধে দালাল-রাজাকারদের অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধুকে উপহার দিয়েছিলো স্বাধীনতা। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পাওয়ায় এ জাতি তাকেও আরেকটি উপহার দিয়েছিলো ‘বাঙালী জাতির জনক’ শেষ হয়েছে দেয়ার পালা এবার প্রস্তুতি গ্রহণের প্রত্যাশা।
স্বাধীনতা পেয়েছি প্রায় শতার্দ্ধ বছর ধরে, কিন্তু সোনার বাংলা পায়নি। এখনো বাংলাদেশকে সোনার বাংলা বলতে হলে দেশের মানুষকে হতে হবে স্বর্ণতুল্য । রূপকথার কাহিনীতে বলা হয় পরশ পাথরের পরশে লোহা স্বর্ণ হয়, তেমনি বাংলার মাটি স্বর্ণে রূপান্তর হতে হলে দেশের মানুষকে হতে হবে পরশ পাথর তুল্য আর পরশ পাথর তুল্য মানুষ দিয়েই স্বার্থক হবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। কবে হবে সে স্বপ্ন পুরণ? প্রতিক্ষায় প্রহর গুণে গুণে আয়ু শেষ হয়ে আসছে, চোখে পরে যাচ্ছে ছানি। অথচ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল অফিস আদালত ব্যাংক বীমা থানা কোর্ট কাচারীতে ঘুষ না দিলে একটি ফাইলও নড়ে না । দেশের নাগরিকেরাও অন্যায় অবৈধ স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ঘুষ দিতে ঘুরছে অফিসে অফিসে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের পিছু পিছু। এটা সত্য, এখন মানুষের মুখে মুখে উঠে আসছে ঘুষ না দিলে চাকরি হবে না। বর্তমানে এদেশে প্রকৃত মেধার কোন মূল্য নেই, ঘুষ দিয়েই চাকরি নিতে হচ্ছে। এদেশের প্রতিটি নাগরিকই জানে কোন পদে চাকরি নিতে কত লক্ষ টাকা ঘুষ লাগে।
চিকিৎসক আর চিকিৎসালয় হবার কথা মানব সেবার জন্য, অথচ সবচেয়ে বেশী দুর্নীতি এখন ওখানেই। রোগীর হাত দেখা, নাড়ী টেপা ছেড়েই এসব এখন দিয়েছেন ডাক্তারগণ। এখন যেনতেন অসুখেই রকমারী পরিক্ষা আর পরিক্ষা দিলেই সেখানে অংশিদারীত্ব আছে ডাক্তারগণের। সরকারি হাসপাতালে চাকরি করলেও অংশিদারীত্ব রয়েছে তাদের নির্ধারিত ক্লিনিকে অথবা প্যাথলজিতে। তারা কর্মস্থলে কোন রকম হাজিরা দিয়েই ছুটছে ক্লিনিকের দিকে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নেই অথচ শহরের মোড়ে মোড়ে গ্রামাঞ্চলে পাড়া মহল্লায় গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মত ক্লিনিক-প্যাথলজি। ভূক্তভোগী রোগীরা হিসাব মিলিয়ে বলছে আমাদের স্বাধীনতা নেই, সোনার বাংলা কোথায়? শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড হলেও শিক্ষকেরাই সেই মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। সরকারি, আধা সরকারি ও শায়ত্ব-শাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই পড়ালেখার প্রতিযোগিতা। উৎসব চলছে কেজি স্কুল কোচিং সেন্টারের জমজমাট। এক্ষেত্রেও স্বাধীনতা পেয়েছে শিক্ষা বাণিজ্যের সওদাগরা। একজন শিক্ষক জাতির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। অথচ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে শিক্ষক কর্তৃক কন্যাতুল্য শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এ ধরণের যৌন কেলেংকারীর ঘটনা স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসায় অহরহই ঘটে যাচ্ছে। বর্তমানে খুব বেশী আলোচনায় উঠে আসছে ধর্ষণ, খুন আর মাদকের ভয়াবহতা। এ তিনটি অভিযোগের বিষয় নির্মূল করা স্বল্প সময়ের ব্যাপার। আমাদের সচেতন মহল, প্রশাসনিক কর্মকর্তা কর্মচারীর সদিচ্ছা ও সরকারের আন্তরিকতা থাকলেই খুব সহজেই এটা নির্মূল সম্ভব।
প্রতিটি দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নে পুলিশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাংলাদেশের পুলিশ কেউ কেউ ধর্ষণ মামলায় জড়িয়ে পড়েছে আবার অনেকেই হত্যা মামলার আসামী। কোন কোন পুলিশ অফিসার মাদক ব্যবসায় মহাজন হয়ে বসে আছে। এতে আশংকা হচ্ছে, এতো কষ্টার্জিত বাংলার স্বাধীনতা এখন কোথায় যাচ্ছে? বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা আর দেখবো কবে!একটি জাতিকে সভ্যতার উচ্চ শিখরে পৌছাতে যা করণীয় তা হচ্ছে পরিবার প্রধানের সৎ হওয়া। একটি গ্রামের প্রধানগণ সৎ হলে সে গ্রাম কলঙ্কমুক্ত থাকে। একটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অন্যায় অপরাধ থেকে মুক্ত থাকলে তার পরিষদ অপরাধমুক্ত থাকে। একটি সংসদ এলাকার সাংসদ সৎ হলে তার এলাকার ইউএনও সহ উপজেলা প্রশাসন অন্যায় অপরাধ করার সাহস পাবে না। একটি সংসদ এলাকাকে অপরাধমুক্ত করতে তিনজনের ভূমিকাই যথেষ্ট। স্থানীয় সাংসদ, ইউএনও আর অফিসার ইনচার্জ। আমরা একযোগে অন্যায় অপরাধ ত্যাগের অঙ্গিকার করে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করি।
স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। তাঁর অসম্পন্ন দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের উপর বর্তায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, স্বাধীনতা পেয়েছে বাঙালি জাতি। কিন্তু সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা কোথায়? বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা পেতে আর কত দিন লাগবে? স্বাধীনতা ভোগ করছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। কৃষকের উৎপাদিত সামগ্রী নিয়ে করছে সিন্ডিকেট। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ত্রণ করছে তারাই রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। স্বাধীনতা ভোগ করছে কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী। স্বাধীনভাবে সন্ত্রাস করছে ক্যাডার কর্মী কিলাররা। কথিত কালা বাবুর দল জিরো জিরো সেভেন গ্রুপ কার ইশারায় চলছে? নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল আপনা আপনিই বেরিয়ে আসবে। প্রমাণিত হয়েছে অপরাধের উৎস কোথায়? সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রী হত্যা, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রাজপথে প্রকাশ্যে দিবালোকে খুনের মূল আসামী ধরা না পরে খুন, আসল তথ্য আড়ালেই রয়ে গেল। একই মামলার অন্যন্য আসামী দুই ভাই সাংবাদিক সম্মেলন করতে চায়, কি রহস্য ফাঁস করবে তারা ? স্বাধীন দেশে নারীদের স্বাধীনতা নেই তার হিসেব কার কাছে। নারী, শিশু, যুবতী, এমনকি পৌর নারীরাও আজ নিরাপদ নয়। প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হচ্ছে কোন না কোন নারী। ধর্ষণ মামলা গুলো বছরের পর বছর আদালতে ঝুলছে। অনুসন্ধানে উঠে আসছে ধর্ষকেরা রাজনৈতিক কোন নেতার আর্শিবাদপ্রাপ্ত হয়ে আছে। মাদকের বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায় মাদক স¤্রাট-গডফাদারগণ উচ্চ মহলের কোন কোন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় আর্শিবাদপ্রাপ্ত। এহেন পরিস্থিতিতে আশংকায় ভুগছি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলঅ আর কত দিন পরে পাবো।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী সোনার বাংলার স্বপ্ন দ্রষ্টা স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার কাছে আবেদন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে আপনার পরিষদের প্রত্যেক সাংসদকে সততা ও সচ্ছতার পরামর্শ দিন আর রাজনৈতিক ফসলি জমিতে নিড়ানি দিয়ে আগাছা মুক্ত করুন। তবেই বঙ্গবন্ধুর কাংখিত স্বপ্নের সোনার বাংলায় সুফল প্রতিটি নাগরিকের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে পারবেন।
লেখক : কথা সাহিত্যিক ও কলামিষ্ট। শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ। মোবাইল-০১৭৮২-৪৫৭৭৮৩।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD