পানি ও বায়ু দূষণ পরিবেশের জন্য হুমকি

Spread the love

মো.আবদুর রশিদ

বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত একটি বিষয় হলো পরিবেশ । মানুষসহ উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের বেঁচে থাকা ও সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ। পরিবেশ বলতে আমরা বুঝি আমাাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই। পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো পানি ও বায়ু। পানি-বায়ু ছাড়া কোন প্রাণী বা জীব বেঁচে থাকতে পারে না। পানি ও বায়ুকে আমরা নানাভাবে দূষণ করছি। আধুনিক বিশ্বে শিল্পায়ন , নগরায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বায়ু দূষনের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন কারণবশত মানুষ তথা জীবের কার্যকলাপের দরুন বাতাসে বিদ্যমান কোন গ্যাসের পরিবর্তনের ফলে মানুষ ও অন্যান্য জীচজন্তুর উপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তাকে বায়ু দূষণ বলে। বায়ু বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণে গঠিত। এর মধ্যে নাইট্রোজেন অক্সিজেন, কার্বনডাইঅক্সাইড, অর্গেন,নিয়ন,হিলিমান, হাইড্রোজেন,ক্রিপনি,জেনন, ওজোন , নাইট্রোজেন ও অক্সাইড ইত্যাদি। বায়ুতে বিদ্যামান গ্যাসের বিশেষ করে অক্সিজেনের আয়তনের তারতম্য ঘটলে স্বাভাবিক ভারসাম্যের বিঘœ ঘটে। কেননা, বায়ু ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের একটি চরম সহনশীল মাত্রা আছে। বায়ুতে বিদ্যমান উপাদানগুলোর মাত্রা সীমার বাইরে চলে গেলে জীবজগৎ তথা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ইতোমধ্যেই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাড়া বিশ্বে পরিবেশের মারাত্মক ঝুঁকি তথা বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
বায়ু যেমন দূষণ হচ্ছে তেমনী পানিও দূষণ হচ্ছে । জীবজগতের জন্য পানি একটি প্রাণ রক্ষাকারী অমূল্য উপাদান বা সম্পদ । সাগর,নদ-নদী হ্রদ ও মহাসাগর ইত্যাদির পানি বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষের নিকট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এ পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে মানুষের নানা বিবেকহীন কর্মকান্ডে। পানি দূষণ হল- কোন কারণবশত পানির উপাদানগত পরিবর্তন ঘটলে তাকে পানিদূষণ বলে । জীবের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান হলো পানি। এ পানি দূষিত হলে তখন জীবের জীবন ধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কাজেই পানি দূষণ মানুষ ও জীব যে কাজের জন্য ব্যবহার করত তা অনুপযোগী ও ক্ষতির আশংকা হয়ে দাঁড়ায়। আর এ পানি দুষণ এবং বায়ু দুষণ কোন অঞ্চল বা এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পরে।
পানি দূষণ রোধ করতে হবে। মৃত জীব জন্তু পানিতে ফেলে না দিয়ে তা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। শিল্প কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ পানিতে পড়ার আগেই তা দুষণ মুক্ত করা প্রয়োজন। তেলবাহী জাহাজ ও ট্যাংকার হতে তেল যাতে নদীতে বা সমুদ্রে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্লাস্টিক, পলিথিন,রাবার প্রভূতি যেখানে সেখানে না ফেলে তা মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে।
পৃথিবীর উদ্ভিদ ও প্রাণীকুলের জন্য সর্বদাই বিশুদ্ধ বায়ু অপরিহার্য। তাই আমাদের সকলের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। কলকারখানা হতে যাতে ক্ষতিকর ধোঁয়া না বেরোতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রয়োজনে যানবাহনে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। কোন ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থকে অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে শোধন করতে হবে। বসতি অঞ্চল ও শিল্প অঞ্চলের মধ্য যথাযথ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কীটনাশক ব্যবহার না করে জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কীট পতঙ্গ ধ্বংস করা প্রয়োজন। আমাদের চলনবিল তথা তাড়াশে দখল-দূষণ, ভরাট-খনন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এই বিধ্বংসী তৎপড়তা রুখতে এখনই জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
বর্তমানে বিশ্বে পরিবেশগত সমস্যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো বায়ু দুষণ ও পানি দুষণ। বায়ু ও পানি ছাড়া কোন প্রাণীকুল বেঁচে থাকতে পারে না। তাই আমাদের সকলের ব্যক্তিগত প্রযুক্তি ও আইন সম্মত উপায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে বায়ু দুষণ ও পানি দুষণ রোধ করতে হবে। বড় কথা পরিবেশ বিষয়ে আমাদের সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে যাতে ভবিষ্যত পৃথিবী আরো ধ্বংসের মুখে না পড়ে।
 এএলআরডি’র সহযোগীতায় ও পরিবর্তন আয়োজিত বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৯ এর আলোচনা সভায় লেখক কর্তৃক পঠিত।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা
মো. আশিফ , খালকুলা , তাড়াশ, সিরাজগঞ্জ
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার মৃত্যু ঘটেছে অনেক আগেই। এখন চলছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজ। সেটা সম্পূর্ণ হলেই শিক্ষা জিনিসটা একেবারেই বিদায় হয় দেশ থেকে। শিক্ষা ব্যবস্থা এমনভাবে ভেঙ্গে গেছে যা জোড়া লাগানোর কোন উপায় নাই।বাংলাদেশের জন্মের পরে থেকেই লক্ষ্য করলে দেখা যায়,একেকটা সরকার আসে একেকভাবে কাটাছেড়া করে। আর কিছু না হোক, শিক্ষা ব্যবস্থার উপর কসাইগিরি চলবেই। বিগত দিনে অনেককেই বলতে দেখা গেছে, রাষ্ট্র যেমন শিক্ষার ব্যবস্থা তেমনি হবে। হুমায়ুন আজাদের অসাম্প্রাদায়িক কবিতা নিয়ে আন্দোলন সমাবেশ করলো একটা গোষ্ঠি।সাম্প্রদায়িক কিছু কবিতায় বাদ দিল আরেকটা গোষ্ঠি।এমনি করে চলছে আন্দোলন সমাবেশ টকশো। এখানে প্রশ্ন হল শিক্ষা প্রণেতা যারা আছেন তাদের কি ভাবনার ঊর্দ্ধে বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কেমন দেখতে চাই।
এই পুরো ব্যবস্থাটিকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিয়ে নতুন একটা দেশ নতুন একটা সমাজ যদি তৈরি করতে পারি, তবেই নতুন শিক্ষা পাওয়া সম্ভব। সেই কাজে হাত না দিলে আলাদা করে শিক্ষার আলোচনা কেবল রাতের বেলায় রশি পিটিয়ে সাপ মারার সন্তেষ্টি নেওয়ার মতই হবে। আমি যে ভাঙ্গার কথা বলছি সেটা ভাঙ্গার জন্য নয় গড়ার জন্য ভাঙ্গা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনিরাপদ ইমারত এর মতই হয়ে আছে। এটা না ভাঙ্গলে নতুন ইমারাত তৈরি করা যাবে না। দুঃখের কথা হচ্ছে আমাদের এই সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশের গঠন জনগনের আখাংকার বিপরীত। ইতিহাস থেকে জানা যায় ,আমরা যে দেশ পেয়েছি তা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক কাঠামোর নতুন রূপ। এখন কেউ নতুন সমাজ চাই নতুন রাষ্ট্র চাই বললেই তো সঙ্গে সঙ্গে সেটা আসবে না। তাই আমাদের যা আছে তা সংস্কার বলি আর যাই বলি সে রকম কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু একেকটি সরকার আসে আর তারা শিক্ষা সংস্কারের নাম করে মরা লাশকেই ছিন্নভিন্ন করে যায়।
দেশের একটা কুচক্রী মহল দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে তালগোল পাকিয়ে ঘেঁটে ‘গ’ করে ফেলেছে। সাধারণ শিক্ষার প্রথম ধাপ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে প্রশ্ন ফাঁসের মধ্য দিয়ে।যদি প্রথমিক শিক্ষাই এইভাবে শুরু হয় তবে আমরা আগামিতে কেমন জাতী পাবো! একবার ভেবে দেখেন? যারা ভাববেন বা ভাবতে পারেন না তাদের সন্তান সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ে,সরকারি বা সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এমন উচ্চ বিদ্যালয়ে,মহাবিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান না। তাই তাদের এই বিষয়ে মাথাও ঘামেনা। প্রশ্ন ফাঁস করে তৈরি হচ্ছে দেশের ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,শিক্ষক,বিচারক, ব্যাংক অফিসার বড় বড় গ্রুপ অফ কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা,রাজনীতিবিদ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব ব্যক্তিবর্গ।এদের হাতে আমাদের জাতি কতটা নিরাপদ, কতটা তারা দেশকে নির্ভেজাল উপহার দিতে পারবে ?
বেণিয়াদের পৃথিবীতে সব কিছুই পণ্য তারা সব কিছুতেই ক্রয়-বিক্রয় মুনাফা খোঁজে। কেউ আলু পটলে,কেউ আবার শিক্ষাতে।এখন চমৎকার এবং রমরমা ব্যবসা চলছে ‘এ’ লেভেল ‘ও’ লেভেল, প্রাইভেট স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে।জাতীর চেতনা, জাতীর শিক্ষা তাদের কাছে অবান্তর।বাংলাদেশের মানুষের উৎকর্ষের উপায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে আসছে । তাদের অবস্থা এখন বয়লার মুরগির মতই,এক জায়গায় বসে ঝিমানো আর ডিম পাড়া।
শিক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তির সঙ্গে পুরো দেশ ও জাতির সম্পর্ক রচিত হয়। সব দেশেরই একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে, সামগ্রিক জীবন জাপনের একটা ধরন থাকে।সেটাই জাতীয়তা, সেটাই পরিচয়, চিহ্ন। শিক্ষার মাধ্যমে এসব সম্পর্কে শিক্ষার্থী সচেতন হয়।সমাজের সঙ্গে আবেগগত- মননগত-বুদ্ধিগত সম্পৃক্ততা শেখানো রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব।এই দায়িত্ব পালনে রাষ্ট্র যখন ব্যর্থ হয় তখন তৈরি হয় দেশদ্রোহী, চলে দেশের মধ্য অরাজকতা। বাইরের শত্রু দেশগুলো এইসব এর সুবিধা নিতে থাকে।এর জন্য দায়ী রাষ্ট্র নিজেই। আগে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ঘাটতি ছিল; কিন্তু এখন একেবারে ধ্বংসের পথে। এখন যে মানুষ তৈরি হচ্ছে তা ভাবতে গেলে খুব নিঃস্ব বোধ হয়। এরা আত্মপর, সমাজবিমুখ এবং প্রায় সম্পূর্ণ স্বাথূমুখী।
শেষ কথা হচ্ছে আমরা কেমন শিক্ষা চাই সেটা ঠিক করার আগে আমারা কেমন রাষ্ট্র চাই, কেমন সমাজ চাই,গড়ে তুলতে চাই কেমন দেশ। সেটা যদি আমরা ঠিক করতে পারি তাহলে শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে সে বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD