ফারুক আহমেদ ঃ নবরত্ন মন্দির বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত প্রাচীন মন্দির ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। জেলার হাটিকুমরুল গ্রামে অবস্থিত বলে এই মন্দিরটিকে হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির নামেও ডাকা হয়। তবে স্থানীয়ভাবে লোকদের কাছে এটি দোলমঞ্চ নামে পরিচিত। আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত নবরত্ন মন্দিরগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। জনৈক রামনাথ ভাদুড়ী কর্তৃক মুর্শিদাবাদের নবাব মুর্শিদকুলী খাঁর আমলে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শণ এই নবরত্ন মন্দিরটি তিন তলা বিশিষ্ট। এ মন্দিরে রয়েছে পোড়া মাটির ফলক সমৃদ্ধ ৯টি চূড়া। এজন্য একে নবরত্ন মন্দির বলা হতো। মন্দিরটি অপরূপ কারুকার্য ম-িত। দিনাজপুর জেলার কান্তজীর মন্দিরের সাথে অনেকটাই সাদৃশ্য রয়েছে এই মন্দিরের। বলা চলে কান্তজীর মন্দিরের অনুকরণেই গঠিত তিনতলা এই নবরত্ন মন্দির। বর্গাকার মন্দিরটি প্রায় ২ ফুট প্লাটফরমের উপর তৈরী। মন্দিরের মূল কক্ষটি অনেক বড়।
চারপাশের দেয়ালের বাইরে পোড়ামাটির ফলক দিয়ে সাজানো ছিল। মন্দিরের উপরের চূড়াগুলো বেশিরভাগই নষ্ট হযয়ে গেছে। নীচতলায় ২টি বারান্দা বেষ্টিত একটি ঘর। এর বারান্দার বাইরের দিকে ৭টি এবং ভিতরের দিকে ৫টি প্রবেশ পথ রয়েছে। ঘরটির পূর্ব ও দক্ষিন দিকে ২টি প্রবেশ পথ। মন্দিরটির ২য় তলায় কোন বারান্দা নেই। প্রকৃত অবস্থায় মন্দিরটি পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা সাজানো ছিল সেটা মন্দিরটি দেখলেই বোঝা যায়। এখনও মাটির গায়ে সামান্য কিছু চিত্রফলকের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরটির কোন শিলালিপি পাওয়া যায় নি।অনেকের অনুমান, এই মন্দির খাজনা আদায়ের জন্য তৈরী হয়েছিল।
এখানকার স্থানীয় লোকজনের পূর্বপুরুষেরাও কখনো এখানে পূজা অর্চনা হতে দেখেনি। এটি জমিদারী সম্পত্তি হওয়ায়, প্রজা হিসেবে জমিদারী সম্পত্তি ব্যবহার যথাযোগ্য মনে করেনি এখানকার স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়। তাছাড়া এখানকার হিন্দু পরিবারগলোর আর্থিক অবস্থা এতটা ভালো ছিল না, যে তারা নবরত্ন মন্দিরে পূজা চালিয়ে যাবে। এজন্য এ মন্দিরের ভেতরে পূজা না দিয়ে বাইরেই পূজা দিয়ে থাকেন এলাকার লোকজন। দোচালা ছনের ঘরের আদলে মন্দিরটার নাম নাট মন্দির বা আটকোণা শিব মন্দির, বড় মন্দিরটা নবরত্ন মন্দির আর নবরত্ন মন্দিরটার পেছন দিকে অলংকরণ করা আরেকটা গোলাকার শিব মঠ। এইগুলো নিয়েইই হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দির এলাকা গড়ে উঠেছে। পরিচ্ছন্ন ও নিরিবিলি পরিবেশের এই মন্দিরটি বর্তমানে ভ্রমণের জন্য বেশ উপযোগী। প্রায়শই অনেক পর্যটক এই ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা দেখতে আসেন।