তাড়াশে অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান প্রকল্পের টাকা হরিলুট

Spread the love

স্টাফ রিপোর্টার : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সাত ইউনিয়নে চলমান ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে “অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। বাস্তবে সব প্রকল্পে কাজ করছেন অর্ধেকের মতো শ্রমিক। অথচ হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হচ্ছে শতভাগ।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ থেকে একযোগে আট ইউনিয়নে “অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান” কর্মসূচির আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ের ওয়েজ কষ্ট এর প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ৪০টি প্রকল্পে কাজ করছেন ১ হাজার ৫শ’ ৮৯ জন উপকারভোগী শ্রমিক। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন খরচ ধরা হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ১২ হাজার টাকা। প্রতিটি ইউনিয়নে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যদের তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এসব কর্মসূচির কার্যক্রম। পাশাপাশি নয়জন সরকারি কর্মকর্তা ট্যাক অফিসার হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তালম ইউনিয়নে তারাটিয়া আব্দুস সাত্তারের বাড়ি ভরাট প্রকল্পে ৪২ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ২৪ জন। বারুহাস ইউনিয়নের মনোহরপুর মোহাম্মদ মাষ্টারের বাড়ী হতে পৌতা রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৫০ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ২৩ জন। সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল হাইস্কুল মাঠ ও মাকরশোন মসজিদে মাটি ভরাট প্রকল্পে ৭৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩২ জন। মাগুড়া ইউনিয়নের ঘরগ্রাম পাইকনিলি ওয়াপদা স্লোপে মাটি ভরাট প্রকল্পে ৭৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩৬ জন। নওগাঁ ইউনিয়নের বিরৌহালী আয়নালের বাড়ি হতে নওগাঁ রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৫২ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ৩৫ জন। দেশীগ্রাম ইউনিয়নের দুলিশ্বর কবরস্থানে মাটি ভরাট প্রকল্পে ৩৩ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন ১৬ জন শ্রমিক। মাধাইনগর ইউনিয়নের গুয়ারাখি হান্নানের বাড়ি হতে মসজিদের রাস্তা মেরামত প্রকল্পে ৩৫ জন শ্রমিকের স্থলে কাজ করছেন মাত্র ১৭ জন। অনুরুপ অবস্থা সাতটি ইউনিয়নের অন্যসব প্রকল্পেরও। অথচ হাজিরা বহিতে উপস্থিতি ১ হাজার ৫শ’ ২২ জন শ্রমিকেরই।
নাম প্রকাশে না করার শর্তে এসব প্রকল্পে কর্মরত শ্রমিকদের অভিযোগ, রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দিন-রাত খাটাখাটুনির পর তাদের শ্রমের মজুরি পান। অথচ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের স্বজন প্রীতির কারণে এমন অনেকেই আছেন, যারা কাজ না করেই টাকা পাচ্ছেন। অথবা কাজে যোগদান না করা এসব শ্রমিকের নাম ভাঙিয়ে তারা নিজেরাই টাকা পকেটে ভরছেন।
তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে তাড়াশ সদর ইউনিয়নে। এই ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ড পৌরসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। চারটি ওয়ার্ডের দু’টি প্রকল্পে কাজ করছেন ৬৭ জন শ্রমিক। সরেজমিনে চকজয়কৃষœপুর হিন্দুপাড়া ইটের সোলিং রাস্তা পূণনির্মান ও বোয়ালিয়া দক্ষিণপাড়া দুর্গা মন্দির রাস্তা পূণনির্মান প্রকল্প ঘুরে ৬৪ জন শ্রমিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনজন অসুস্থতাজনিত কারণে অনুপস্থিত।
সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবুল শেখ জানান, তার দুটি প্রকল্প তিনি ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা নিয়মিত দেখভাল করছেন। যে কারণে শ্রমিক উপস্থিতি শতভাগই রয়েগেছে।
এদিকে অভিযুক্ত সাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এখনকার দিনে শ্রমিকদের ২শ’ টাকা মজুরি অপ্রতুল। বাস্তবে যে ক’জন শ্রমিক কাজ করছেন কেবল তাদেরই বিল করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নুর-মামুন বলেন, অনুপস্থিত শ্রমিকদের মজুরি কর্তন করে প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচ দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফ্ফাত জাহান বলেন, সাত ইউনিয়নের শ্রমিক অনুপস্থিতির বিষয়টির যথাযথ তদন্ত করে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD