গাজী সৈদয়দ শুকুর মাহমুদ
গত পরশু দিনের দৈনিক কলম সৈনিক পত্রিকার খবরে প্রকাশÑ শাহজাদপুরের দোলন মা হয়েছে, বাবা হবে কে? যৌবনবতী স্ত্রী রেখে যারা প্রবাসে যায় তাদের প্রায়ই এমনটি হয়। সৌখিন যুবক শখ করে সুন্দরী দোলনকে বিয়ে করেছে। দোলন স্বামীর কাছে সুখ চায়। দোলনের স্বামী সুখ আনতে প্রবাসে যায়। দু’বছর প্রবাসে গত হয়। স্বামী ফিরে আসে না। দোলন এখন জীবনের সুখের আশায় অলিখিত পত্রিকায় টেন্ডার দিয়েছে পাড়ার বাসায় বাসায়। তার দরপত্রে সাড়া দিয়ে টেন্ডারে আমন্ত্রিত অনেকে। দরপত্র ফেলেছে সকলেই কিন্তু সন্তানের জনক হয়েছে কে? তার কোন হিসেবে এখন আর দোলনের খাতায়ও নেই।
এ শুধু শাহজাদপুরের এক দোলনই নয়। সারা বাংলাদেশে বহু প্রবাসীর স্ত্রীই মা হওয়ার গল্প আজ আর নতুন কিছু নয়। কারও যৌবনের বাধ ভেঙ্গে গিয়ে জল উপছে পড়ছে কোন প্রতিবেশীর শয়নকক্ষে। আবার কারো উপর নজর পড়েছে কোন যুবকের। কোন দেবর-ভাসুর এমনকি শ্বশুরেরও লালসার শিকার হয়েছে কোন প্রবাসীর স্ত্রী। এর জন্য কে দায়ী? বর্তমান ভোগ সর্বস্ব, সুখ-সম্ভোগ অন্বেষী ও উন্নয়ন সমৃদ্ধির সমাজে এসব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।
সারা দেশে এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে অসংখ্য, যার হিসেব আমাদের সমাজপতিদের কাছে গাত্রদাহের কিছু নেই। ইসলামি আইনেও শাসন করতে পারছে না ইসলামী সমাজপতিরাও। বর্তমান সমাজ পরিচালনায় যাদের অগ্রণী ভূমিকা দেখা যায় তারাও বয়সে পঁচিশের নিচের কোঠায়। আর প্রবীণেরা পড়েছে পিছনের সারিতে। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় যারা সামনের সারিতে রয়েছেন তারাও বাজারের সহজলভ্য সবজির ভূমিকায় থাকছেন। ইসলামী শরিয়তের আইনে বিচার করলে যদি কিছু হয়, যদি দাওয়াত না মেলে তারও ভয়। হক্কানী আলেম ওলামারা রয়েছেন নিজেদের গা ঢাকা দিয়ে। কিছু বললেই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। তরুণেরা তাল গোছানোর অপেক্ষায় কোন দিকে সমর্থন দিলে নিজের ভাল হয়। যারা প্রবাসে যায় তাদের পরিবারে প্রায়ই এ ধরণের ঘটনা ঘটছে তা দোলনের বিষয়ে নতুন কিছু নয়। এতে আর কোন সামাজিক উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা হওয়ার মতো কিছু না হয়ে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেশের প্রায় ১ কোটি মানুষ বিদেশে।
সমাজপতিদের উদাসীনতা, বিচার ব্যবস্থায় গাফিলতি, পক্ষপাতিত্ব, অবৈধ উৎকোচে বিচার ব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে অর্থ লোভী পিতা মোটা অংকের যৌতুক নিয়ে ছেলেকে বিয়ে করিয়ে একটি বউ ঘরে নিয়ে এসে ছেলেকে প্রবাসে পাঠায় অনেক অর্থ পাবার আশায়। অন্যদিকে কন্যার পিতা কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েই দায় পড়ে যায়। দায় সাড়তে প্রবাসীর সাথে বিয়ে দেয়। এগুলো সবই অন্যায়, অসামাজিক, অমার্জনীয় অপরাধ। এগিয়ে আসুন এই অসুস্থ সমাজকে সুস্থ ও সূচি করতে আমরা সচেতন হই। আর যেন পত্রিকায় না দেখতে হয় দোলন মা হয়েছে, বাবা কোথায়? এটা সভ্য ও শালীনতার পরিপন্থী।
একথা ধর্মে, নৈতিকতায় ও মানবতার দেয়ালে বড় বেশী আপত্তিজনক,বেদনাদায়ক ও দু:খদায়ক।
লেখকÑ কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট, শাহজাপুর, সিরাজগঞ্জ।