চলনবিলে ধানে চিটা, বাজারে দাম কম, শ্রমিক সংকট- কৃষকের মাথায় হাত

Spread the love

বিশেষ প্রতিনিধি:  চলনবিলের ৩টি জেলার ১০টি উপজেলার প্রায় সর্বত্র বিভিন্ন অঞ্চলের মাঠে- ময়দানে,  বিল ও বড় বড় হাওরে ফসলি মাঠে এসময় ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষক। বছরের প্রধান এই একটি মাত্র ফসলকে ঘিরেই বিল এলাকার মানুষের যত স্বপ্ন। ধান গোলায় উঠলে কৃষক পরিবারগুলো বছরে জুরে খেয়ে পড়ে ভালো থাকে। ধান গোলায় না উঠলে বিষাদদের ছায়া নেমে আসে। চলনবিলের উপজেলাগুলোর বোরো ফসল এলাকার খাদ্যচাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। তবে এবার বৈশাখী ধান গোলায় তোলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলেও কৃষদের বিধি বাম হয়েছে। চলতি বোরো মওসুমে চৈত্রের প্রচন্ড খরায় কিটনাশক দিয়েও কোন কাজ না হওয়ায় চলনবিলের বিভিন্ন  অঞ্চলে বোরো ধানে চিটা হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষক। এ অবস্থা চলনবিলের অন্যান্য অঞ্চলেও।  কৃষকেরা জানিয়েছেন, ধানের চিটার কারণে তারা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ধানে চিটার কথা কৃষি বিভাগ স্বীকার করলেও চিটার পরিমাণ নিয়ে কৃষকদের সাথে তাদের দ্বিমত আছে। কৃষকদের মতে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে না পড়লেও বোরো ধানে চিটা হওয়ার কারণে ৪০-৫০ ভাগ ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কোন কোন জায়গায় কৃষকের কাচি মাঠে যাবে না। কিন্তু কৃষি বিভাগ বলছে  ৮-১০ ভাগের বেশি ক্ষতি হবে না।

বিল এলাকার ৩টি জেলার  ১০টি উপজেলার  লাখ লাখ কৃষক পরিবারের একমাত্র ভরসা কৃষি। কৃষি বিভাগের মতে এবার আবাদকৃত মোট ধানের তিন ভাগের একভাগই বিআর-২৯। কৃষি বিভাগের মতে, বিপুল পরিমান জমিতে চাষ হয়েছে বিভিন্ন জাতের ইরি ধান। এছাড়া সুবুল- লতা ধান তুলনামূলক আগাম ফলন পাওয়া যায়,ধান চিকন খেতে মজা। ডিলারদের এমন প্রচারণায়  কৃষক অঞ্চল ভেদে এই ধানই চাষ করেছিলেন বেশী।  এই ধান চাষ করে ব্লাস্ট রোগের কারণে ব্যাপক ক্ষতিগস্ত হয়েছেন  সলঙ্গার অনেক কৃষকেরাই। এই ধান চাষ করে এবার দেখা দিয়েছে চিটা।ওদিকে সিরাজগঞ্জ জেলার  চলনবিলস্থ ৩টি উপজেলায় সব কয়েকটি গ্রামের জমিতে ধানে চিটা হয়েছে বলে জানান কৃষকেরা। তাই তারা আগাম ফলন পেতে গিয়ে বারবার এই ধান চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন সলঙ্গা তথা ৩টি উপজেলার গরিব,প্রান্তিক, বর্গাচাষিরা। এবারো এই ধানে চিটাসহ বাজারে ধানের দাম কম হওয়ায় মাথায় হাতসহ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ।এনিয়ে চিন্তার শেষ নেই তাদের। বর্গাচাষি কৃষক আব্দুর রহিম ও সাছুল হক বলেন,আগাম জাতের ধানসহ বিআর ২৯ ধানেও চিটার কারণে প্রতি বিঘায় ৬-৮ মণ ধান পাওয়া যাবে। তাদের মতে, এই পরিমাণ জমি চাষে করতে ধান গোলায় তোলা পর্যন্ত যে টাকা খরচ হয়েছে চিটার কারণে অনেক কৃষকই জানিয়েছেন, তারা উৎপাদন মূল্য পাবেন না। এছাড়া কৃষকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান,ধানের চার গারা থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত রায়গঞ্জ উপজেলার একটা কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা যায়নি। তাছাড়া কোল্ড ইনজুরি ও কম তাপমাত্রার কারণেও এই ধরণের চিটা হচ্ছে কিনা পরামর্শ করার জন্য বা ঔষুধ নেওয়ার জন্য একজন কৃষিকর্মকর্তাকেও  কাছে পাওয়া যায়নি।

সলঙ্গার কৃষক রবিউল ইসলাম জানান,আগাম জাতের ধানকাটা একসাথে লাগার কারণে শ্রমিক সংকটে ২৫০০-৩০০০ টাকা বিঘা করে ধান কাটতে হচ্ছে। আর এক্সট্রা  কামলার মজুরি ৮০০-১০০০ টাকা করে তাও পাওয়া যাচ্ছেনা। তাড়াশের এক কৃষক বলেন,বিআর ২৮ ও মিনিগেট ধানের ধান ক্ষেত করে যে মার খেয়েছি সারা বছর সেজন্য পস্তাতে হবে। এক কিয়ারে মাত্র ৬-৭ মণ ধান হবে, কামলা রোজ ৮০০-১০০০টাকা দিয়ে কাটাচ্ছি।

কোনো লাভ নাই। ডাইলে-বেইলে সমানে সমান। তাই চলনবিলের প্রায় সর্বত্র এসব কারণে কৃষকের মাথায় হাত। তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD