তাড়াশের তিন বীরাঙ্গনা : মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও মেলেনি ভাতা

Spread the love

গোলাম মোস্তফা : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বীরাঙ্গনা অর্চনা রানী সিংহ ও পচী বেওয়াকে (মরনোত্তর) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত করা হয় গত বছরের চার জুলাই। গেজেট নং ২০৫। অজ্ঞাত কারণে গেজেট থেকে বাদ পড়ে যায় আরেক বীরাঙ্গনা পাতাসী বেওয়া। পরবর্তীতে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৬০তম সভায় পাতাসী বেওয়াকেও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও রাজকারদের হাতে পাশবিক নির্যাতনের শিকার ওই তিন বীরাঙ্গনা অবশেষে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেলেও আজও তাদের মেলেনি ভাতা।
সরেজমিনে জানা গেছে, মরনোত্তর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া পচী বেওয়া ২০০৫ সালে মারা গেছেন। রেখে গেছেন ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে। এছাড়াও তার পাক সেনার ঔরসজাত এক সন্তান রয়েছে। এদিকে অর্চনার স্বামী পরলোক গমনের পর থেকে ২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে কোন মতে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন পরিবারটি। পাতাসী বেওয়ারও ৪ ছেলে ও ৩ মেয়েকে নিয়ে একই রকম অবস্থা।
এ নিয়ে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনা অর্চনা রানী সিংহ ও পাতাসী বেওয়ার সাথে। দু’জনেই বলেন, ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় তাদের নিজ বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় সামরিক ক্যাম্পে। পরে তাদের দ্বারা সেখানে তারা পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন। স্বাধীনতার এতোগুলো বছর পর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধ ভাতা পেলে তারা মানবেতর জীবন যাপন থেকেও মুক্তি পেতেন।
তাড়াশ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার গাজী আরশেদুল ইসলাম বলেন, ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ওই প্রস্তাব পাশ হয়। এরপর যথারীতি বীরাঙ্গনা অর্চনা রানী সিংহ, পচী বেওয়া ও পাতাসী বেওয়ার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ে আবেদন করা হলে তাদের নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। ইতোমধ্যে তাদের প্রাপ্য ভাতার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন সাপ্তাহিক চলনবিল বার্তাকে বলেন, ভাতার জন্য উর্দ্ধতন বরাবর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশাকরা যাচ্ছে, শিগগিরই বরাদ্ধ পাওয়া যাবে।প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে নির্যাতিত নারীদের অবদান মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে কম নয় বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি দিয়ে সেসময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আজ থেকে পাকবাহিনী কর্তৃক নির্যাতিত মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তারা এখন থেকে বীরাঙ্গনা খেতাবে ভূষিত।” বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের চার দশক পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

Please follow and like us:
Pin Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Website Design, Developed & Hosted by ALL IT BD