মোঃ তৌহিদুল ইসলাম তমাল তালুকদার
ছোটবেলায় শুনেছি কথার মাঝখানে টিকটিকি টিক্ টিক্ করলে নাকি কথাটি ঠিক সত্য হয়। অন্তরালের বিষয়টি জেনেছিলাম এভাবে, “খনা” ছিল দূরদৃষ্টি সম্পন্ন অসীম প্রজ্ঞাময়ী সত্যবাদী একজন নারী। সত্য বলার অপরাধে শশুরের আদেশে স্বামী তার জিহ্বা কেটে নিলে, খন্ডিত জিহ্বা টিকটিকি খেয়ে ফেলে। তখন থেকেই টিকটিকিকে বলে “সত্যের সংকেত।” কিন্তু এখানেই এ কাহিনীর শেষ নয়। বরঞ্চ এই কাহিনীটির পেছনে সত্য নির্ভর বিস্তৃত ব্যাখ্যাও রয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা কাহিনীটির সাথে জড়িয়ে আছে এক সত্যান্বেষী বাঙ্গালী নারীর গৌরবময় যাত্রা যা আজোও কালের স্বাক্ষী হয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর হয়ে আছে।
আনুমানিক ৫০০ খ্রিষ্টাব্দের কথা। উপমহাদেশের প্রাচীন রাজ্য অবন্তীর রাজা বিক্রমাদিত্য। তার রাজ সভার প্রধান জ্যোতির্বিদ ছিলেন পন্ডিত বরাহ্ মিহির। বরাহ্ মিহির তার নবজাতক পুত্রের কষ্ঠি বিচার করে জানতে পারেন তার পুত্রের আয়ু মাত্র এক বছর। তাই তিনি পুত্রকে একটি পাত্রে ভাসিয়ে দেন নদীর স্্েরাতে। স্্েরাতে ভাসতে ভাসতে সিংহল দ্বীপে রাক্ষস সম্প্রদায়ের কাছে উদ্ধার হয় শিশু মিহির। সে মরে না, বড় হয়ে ওঠে রাক্ষসপুরীতে। ১৬ বছর বয়সে সিংহল রাজকুমারী খনার সাথে তার বিয়ে হয়। খনা জ্যোতিষ শাস্ত্র প্রয়োগ করে জানতে পারে তারে স্বামীর আসল পরিচয়। তারা অবন্তী রাজ্যে ফিরে আসলে পুত্র ও পুত্রবধুকে গ্রহণ করেন বরাহ্ মিহির। এক সময় রাজসভায় খনার জ্যোতিষ শাস্ত্রেও পারদর্শিতা পন্ডিত বরাহ্ মিহিরকেও হার মানিয়ে দেয়। খনার কৃষি সম্পর্কিত রচনাগুলো রাজ্যের কৃষকদের ভাগ্যের দ্বার খুলে দেয়। ফলস্বরূপ রাজা বিক্রমাদিত্য খনাকে রাজ্যের দশম রত্ন হিসেবে আখ্যা দেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ শশুর প্রতিশোধ নিতে পুত্র মিহিরকে দিয়ে তার জিহ্বা কর্তন করান, যাতে সে কখনো ভবিষ্যতবাণী না করতে পারে।
মৃত্যুর আগে খনা কৃষি, আবহাওয়া, গবাদিপশু, রন্ধনশিল্প, গৃহনির্মাণ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক বচন দিয়ে গিয়েছিলেন। এগুলোই খনার বচন নামে পরিচিত। যা বাঙ্গালীর চিরায়ত সংস্কৃতিতে আজো ঐশ্বর্যময় স্থান দখল করে আছে।
উল্লে¬খ্য, কলকাতা শহর থেকে প্রায় ৪২ কি: মি: দূরে ২৪ পরগনা জেলায় অবস্থিত বরাসাত নগরীর নিকটেই একটি জায়গা আছে, নাম বীরচম্পা। জায়গাটির উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মহাসড়কের উত্তর পাশে অনেকটা সমাধিফলকের মত দেখতে একটা ইটের স্থাপনা রয়েছে। এটি খনা মিহিরের মুড়া (গড়ঁহফ ড়ভ কযধহধ গরযরৎ) নামে পরিচিত।